অত্যন্ত সাদামাটা জীবনযাপন করত শেখ কামাল
শেখ কামালের ৬৬তম জন্মবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রী
গত ৫ আগস্ট বিকেলে ধানমন্ডিস্থ আবাহনী মাঠ প্রাঙ্গণে ক্লাবটির প্রতিষ্ঠাতা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র শহীদ শেখ কামালের ৬৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী শেখ কামালের ব্যক্তিজীবনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, শেখ কামাল আমার দু’বছরের ছোট হলেও সে ছিল আমার খেলার সাথী, ঝগড়াঝাটি-মারামারিসহ সবকিছুর সঙ্গী। একজন প্রধানমন্ত্রী ও জাতির পিতার সন্তান হলেও অত্যন্ত সাদামাটা জীবনযাপন করত শেখ কামাল। কোনো লোভ-লালসা ছিল না তার। তার একটিমাত্রই লক্ষ্য ছিল ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের উন্নয়ন। আমৃত্যু শেখ কামাল তা করে গেছে।
আবাহনী লিমিটেড আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঐতিহ্যবাহী এই ক্রীড়া সংগঠনটির চেয়ারম্যান ও দেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমান। বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেই প্রথমে প্রধানমন্ত্রী আবাহনী লিমিটেডের সকল পরিচালক ও কর্মকর্তাকে সাথে নিয়ে সেখানে প্রতিষ্ঠিত শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর ক্লাব প্রাঙ্গণে নির্মিতব্য শেখ কামাল বয়সভিত্তিক একাডেমির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী ক্রীড়া সংগঠক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও রাজনীতিক শেখ কামালের জীবনভিত্তিক একটি প্রমাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আবাহনী লিমিটেডের পরিচালক ও বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এমপি, কাজী নাবিল আহমেদ এমপি, বিশিষ্ট শিল্পপতি অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু, সাবেক এমপি হারুন অর রশিদ, আবাহনী সমর্থক গোষ্ঠীর সভাপতি মীর নিজামউদ্দিন আহমেদ ও স্থানীয় সংসদ সদস্য বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস। স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে আবাহনী মাঠ প্রাঙ্গণে নির্মিতব্য আন্তর্জাতিকমানের শেখ কামাল ক্রীড়া কমপ্লেক্সের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন সালমান এফ রহমান ও নাজমুল হাসান পাপন এমপি।
প্রতিবারের মতো এবারও ক্রীড়া ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ছয়জনকে আবাহনী লিমিটেডের পক্ষ থেকে শেখ কামাল স্বর্ণপদক প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী।
সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৩১ মে সবাইকে রেখে শেখ রেহানাকে নিয়ে জার্মানিতে গেলাম। মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে সব শেষ হয়ে গেল। মাত্র এক রাতেই বাবা-মা, তিন ভাই, আত্মীয়-পরিজন সবাইকে হারালাম। তিনি বলেন, জার্মানিতে যাওয়ার আগে শেখ কামালকে জিজ্ঞাসা করলাম তোর জন্য কী আনব? অন্যরা হলে সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর জন্য কিছু আনত বলত। কিন্তু শেখ কামাল আমার ডায়রিতে কী আনতে হবে তা লিখে দিল। পড়ে দেখলাম শেখ কামাল লিখেছেÑ জার্মানি থেকে আবাহনীর খেলোয়াড়দের জন্য অ্যাডিডাস বুট আনতে হবে। এ-ই ছিল শেখ কামাল।
তিনি বলেন, শেখ কামাল ছিল বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। পড়াশোনায় ছিল মেধাবী। পড়াশোনার পাশাপাশি সে গান, নাটক, খেলাধুলা এবং অসম্ভব সুন্দর সেতার বাজাতে পারত। রাতে যখন ৩২ নম্বর বাসার তিনতলায় শেখ কামাল একমনে সেতার বাজাত, সেই সেতারের সুমধুর ঝংকার যেন ধানমন্ডির ওই এলাকার প্রতিটি জিনিসকে আলোড়িত করত। তিনি বলেন, শেখ কামাল একজন দক্ষ রাজনৈতিক কর্মীও ছিল। ঢাকা কলেজে পড়ার সময় ঐতিহাসিক ৬-দফার আন্দোলনসহ প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে সে ছিল সর্বাগ্রে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের একজন দক্ষ সংগঠক ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের সময় শেখ কামাল জেনারেল ওসমানীর এডিসিরও দায়িত্ব পালন করেছে। স্বাধীনতার পর শেখ কামাল সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিল এবং ক্যাপ্টেনের দায়িত্বও পালন করেছে। কিন্তু মা’র (ফজিলাতুন্নেছা মুজিব) ইচ্ছা ছিল শেখ কামালকে পড়াশোনা শেষ করাতে। তাই মা’র ইচ্ছায় শেখ কামাল সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স পাস করে মাস্টার্সে ভর্তি হয়। কিন্তু তার মাস্টার্স পাস করা হয়নি, তার আগেই ঘাতকদের হাতে তাকেও বঙ্গবন্ধুর সাথে জীবন দিতে হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু পরিবারের প্রতিটি সদস্যই ছিল ক্রীড়ামোদী। আমার দাদা ছিলেন খেলোয়াড়, বাবাও খেলাধুলা করেছেন। শেখ কামাল, শেখ জামাল ও তাদের স্ত্রীরাও ক্রীড়ার সাথে জড়িত ছিল। শেখ কামালই বাংলাদেশে আধুনিক ফুটবলের জন্ম দিতে ঐতিহ্যবাহী আবাহনী ক্রীড়াচক্র প্রতিষ্ঠা করে গেছে। তিনি বলেন, একটি সমাজকে উন্নয়ন করতে হলে সেই সমাজে শিশু-কিশোর কিংবা যুবকদের চরিত্র সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে হয়। সততার সাথে চলবে, সৎসঙ্গে চলবে, বিশ্বের কাছে নিজেদের উপযুক্ত করে গড়ে তুলবে। এদিক লক্ষ্য রেখেই শেখ কামাল ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আমৃত্যু কাজ করে গেছে। প্রধানমন্ত্রী চরম দুঃসময়েও আবাহনী ক্রীড়া চক্রকে টিকিয়ে রাখতে জড়িতদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, এই আবাহনীকে টিকিয়ে রাখতে অনেককে অনেক ঝড়ঝাপটা সহ্য করতে হয়েছে। এখানে আন্তর্জাতিকমানের শেখ কামাল ক্রীড়া কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হচ্ছে। এটা হলে শুধু এই এলাকার জনগণই নয়, গোটা দেশের মানুষই ক্রীড়াক্ষেত্রে উপকৃত হবে। এই অত্যাধুনিক ক্রীড়া কমপ্লেক্স গড়ার কাজে আবাহনী ভক্ত ও অনুরাগীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।