প্রতিবেদন

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই এদেশের মানুষের সব অর্জন হয়েছে

৬৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী অর্থ হচ্ছে জনগণ। আর আওয়ামী লীগ হচ্ছে মাটি ও মানুষের সংগঠন। এদেশের মানুষের সব অর্জন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই হয়েছে। বঙ্গবন্ধু একটি শক্তিশালী সংগঠন (আওয়ামী লীগ) করেছিলেন বলেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসেছে, মানুষের অধিকারও অর্জন হয়েছে। দেশ ও জাতির জন্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অনেক ত্যাগ ছিল বলেই আজ স্বাধীনতার সুফল মানুষের ঘরে ঘরে যাচ্ছে। যে কেউ ইতিহাস লিখতে গেলে আওয়ামী লীগকে বাদ রেখে লিখতে পারবে না। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ত্যাগ-তিতিক্ষাকে উপেক্ষা করতে পারবে না।
গত ২৩ জুন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের ৬৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলীয় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, শহীদের রক্ত ও মানুষের আত্মত্যাগ কখনও বৃথা যায় না। দীর্ঘ ৬৬ বছরে দেশ ও জাতির জন্য আওয়ামী লীগের বিশাল ত্যাগের কথাও চিরদিন অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ আজ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ কারণেই বাংলাদেশকে এখন কেউ আর অবহেলা কিংবা উপেক্ষার চোখে দেখে না। অবহেলা নয়, বিশে^র কাছে আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।
ভাষা আন্দোলন থেকে বাঙালির স্বাধীনতা অর্জনসহ এদেশের মানুষের সব অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামে উপমহাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এই সংগঠন এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করেছে। ক্ষমতায় থাক বা না থাক, আন্দোলন-সংগ্রাম করে জনগণের অধিকার আদায়ও করেছে। আওয়ামী লীগ শক্তিশালী সংগঠন বলেই ’৯০ সালে আমরা আন্দোলন করে এরশাদের পতন ঘটিয়েছি, ’৯৬ সালে খালেদা জিয়াকে পদত্যাগে বাধ্য করিয়েছি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ প্রতিটি ক্ষেত্রে এদেশের মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতাই শুধু এনে দেয়নি, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের পথেও আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। বাংলাদেশ আর পিছিয়ে থাকবে না। বিশে^র সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। ইনশাল্লাহ এদেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেনÑ দলের জ্যেষ্ঠ নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এমপি, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এমপি, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এমপি, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি, বিশিষ্ট সাংবাদিক আবেদ খান, পূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ আজিজ, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম এমপি ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি। ড. হাছান মাহমুদ এমপি ও অসীম কুমার উকিলের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে লেখা স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।
সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এমপি বলেন, দেশের নতুন প্রজন্মের কাছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ আত্মত্যাগ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বলিয়ান করতে হবে। দেশ ও জাতিকে রক্ষায় সবকিছু হারিয়েও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসে দলের হাল ধরেছিলেন বলেই আর সবক্ষেত্রে দেশের এত উন্নয়ন হচ্ছে।
আমির হোসেন আমু এমপি বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ৩৪ বছর ধরে ধাপে ধাপে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি দেশের জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণের মাধ্যমে তাদের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করেছেন। এদেশের মানুষের যা কিছু অর্জন তা সবই দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ২১ বার শেখ হাসিনাকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে, এখনও ষড়যন্ত্র চলছে। তবে সব বাধা অতিক্রম করে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে দেশকে গড়ে তুলবেনই।
তোফায়েল আহমেদ স্মৃতিচারণ করে বলেন, আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে অপশক্তির কোনো ষড়যন্ত্রই বাস্তবায়ন হবে না। ২০১৩ এবং ২০১৫ সালে খালেদা জিয়া দুবার দীর্ঘ সময় ধরে নাশকতা-সন্ত্রাস ও পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছেন। বলেছিলেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরবেন না। কিন্তু খালেদা জিয়াকে আত্মসমর্পণ করে শূন্য হাতেই ঘরে ফিরতে হয়েছে।
বিশিষ্ট সাংবাদিক আবেদন খান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তির ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে বলেন, শেখ হাসিনা যদি না থাকেন তবে বাংলাদেশ পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের চেয়েও পরিণতি খারাপ হবে। জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তিরা আমাদের ওপর আঘাত হানতে চায়। তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সংঘটিত থাকলে সকল হুমকি মোকাবিলা করা সম্ভব। বিএনপি-জামাত জোট বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের আস্তানা গড়তে চায়। রুখতে হলে সকল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থেকে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে।

আওয়ামী লীগের সবাই মোশতাক হয় নাই
বেইমানি করে নাই
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, আওয়ামী লীগের সবাই মোশতাক হয় নাই, বেইমানি করে নাই। অনেক নেতা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অবিচল থেকেছেন। আওয়ামী লীগের ৬৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গত ২৩ জুন বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের গৌরবময় ৬৬ বছরের পথচলা সুখের ছিল না উল্লেখ করে দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, বারবার আওয়ামী লীগের ওপর আঘাত এসেছে। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে জীবন দিতে হয়েছে। হাজার হাজার বঙ্গবন্ধুর কর্মী এবং সমর্থক বিভিন্ন আন্দোলনে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে এমন নজির পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের গৌরবময় পথচলার ৬৬ বছরের পথচলার মধ্যে ৩৪ বছর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ ও দেশের জনগণের পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, এই ৩৪ বছর হুমকি-ধমকি এবং অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে জননেত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। উনি যখন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পান বয়স ছিল অনেক কম। ছোট দুটি সন্তান। এক ছেলে এবং এক মেয়ের মা। তার ওপর ছিল বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের হত্যাকা-ের ঘটনা।
মন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনাকে হত্যা করার কতবার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু তারপরও তিনি বিচলিত হন নাই। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা তিনি প্রতিষ্ঠা করবেন। সেই সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করার জন্য শেখ হাসিনা ৩৪ বছর মানুষের মধ্যে ছিলেন, রাজপথে ছিলেন। ত্যাগ-তিতিক্ষায় শেখ হাসিনার চেয়ে দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি নেই এই বাংলাদেশে।
আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের স্মৃতিচারণ করে সৈয়দ আশরাফ বলেন, বঙ্গবন্ধু জেলে। আমার পিতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেবকে তখন অ্যাকটিং প্রেসিডেন্ট। তখন ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক হতো। তখন আমার বাবার কোনো গাড়ি ছিল না। ময়মনসিংহের স্টেশনে যাওয়ার জন্য আগের দিন রিকশাওয়ালাকে বলতে হতো, আমি কালকে গাড়ি ধরব। তুমি এসে নিয়ে নিও। আমার বাবা রেডি। কিন্তু রিকশা আসে না, আসে না।
আমাদের বাড়ি থেকে ময়মনসিংহ স্টেশন ২ কিলোমিটার দূরে উল্লেখ করে তিনি বলেন, হঠাৎ করে আমার বাবা বলে উঠলেন, রিকশা আসুক আর না আসুক আমাকে যেতেই হবে। কালকে আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক আছে। উনি সুটকেসটা হাত ধরে মাথায় তুললেন। হেঁটে শহরের ভিতর দিয়ে স্টেশনে চললেন। তাদের নিষ্ঠা ছিল এরকম। তারা বঙ্গবন্ধুর কর্মী ছিলেন, বঙ্গবন্ধুর বন্ধু ছিলেন। জীবনে কোনোদিন তারা বেইমানি করেন নাই। নিজের জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *