আওয়ামী লীগ কখনও সশস্ত্র বাহিনীকে ব্যবহার করেনি
সশস্ত্র বাহিনীকে কখনও ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করিনি। ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বারবার ক্যু করে সশস্ত্র বাহিনীর শত শত কর্মকর্তা বা সৈনিকের হত্যাকা- ঘটাই নি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে কাজ করেছে। কারণ, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। সশস্ত্র বাহিনীকে কখনও ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করিনি। ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বারবার ক্যু করে সশস্ত্র বাহিনীর শত শত কর্মকর্তা বা সৈনিকের হত্যাকা- ঘটাই নি। বরং শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করে একটি সুন্দর সংগঠন গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। শুধু বাংলাদেশের জনগণের নয়, বিশ্বব্যাপী যাতে সশস্ত্র বাহিনী আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে গত ২১ নভেম্বর বিকেলে সেনাকুঞ্জে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সেনাকুঞ্জে পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ ও বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারেক আহমেদ সিদ্দিক, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান স্মরণ করে বর্তমানে বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর খ্যাতি অর্জনে সরকারের নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত সশস্ত্র বাহিনী জাতির অহঙ্কার। সশস্ত্র বাহিনীকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম করে গড়ে তুলতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে তারা উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে। আন্তর্জাতিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা রক্ষায় আমাদের সশস্ত্র বাহিনী বিশ্ব দরবারে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতিমালার আলোকে ফোর্সেস গোল-২০৩০ এর আওতায় তিন বাহিনীর পুনর্গঠন ও আধুনিকায়নের কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, সশস্ত্র বাহিনী আজ নানা ধরনের জনসেবামূলক কর্মকা-ের জন্য জনগণের আস্থা অর্জন করেছে। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলাসহ উদ্ধার তৎপরতা ও অন্যান্য অভ্যন্তরীণ সংকট নিরসনে সশস্ত্র বাহিনী দেশপ্রেমের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ়করণ এবং সেনাবাহিনীর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে নতুন পদাতিক ডিভিশন ও বেশ কিছু ব্রিগেড প্রতিষ্ঠা করেছে। সরকারের বর্তমান মেয়াদে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ, অস্ত্র, সরঞ্জামাদি ও জনবলের ক্ষেত্রে অনেক উন্নয়ন সাধন হয়েছে। সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন হয়। পদ্মা সেতুর অবকাঠামো নির্মাণ ও নিরাপত্তায় একটি কম্পোজিট ব্রিগেড গঠন করা হয়েছে। মিঠামইনে একটি রিভারাইন ব্রিগেড প্রতিষ্ঠার কাজও শুরু হয়েছে। শিগগিরই পটুয়াখালীর লেবুখালীতে একটি পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, নৌবাহিনীর উন্নয়নে নানা কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। যুদ্ধজাহাজ, মেরিটাইম হেলিকপ্টার ও মেরিটাইম প্যাট্রল এয়ারক্রাফট যুক্ত হয়েছে। শিগগির এই বাহিনীতে যুক্ত হচ্ছে দুটি সাবমেরিন। এর মাধ্যমে নৌবাহিনী ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে পরিণত হবে। এ ছাড়া বিমানবাহিনীতে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন ইউনিট। বাড়ানো হয়েছে জনবল। অনুমোদিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু অ্যারোনটিক্যাল সেন্টার। পূর্ণাঙ্গ ঘাঁটি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে বঙ্গবন্ধু ও কক্সবাজার বিমান ঘাঁটি। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের উন্নত চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য বিভিন্ন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে আধুনিক যন্ত্রপাতি সন্নিবেশিত হয়েছে। চিকিৎসার বিভিন্ন নতুন নতুন শাখা ও সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকা সিএমএইচে ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্যানসার নিরাময় কেন্দ্র স্থাপনে সরকার অনুমোদন দিয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সবই করব
এর আগে সকালে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনমানের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সব কিছু করার প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশকে যে গড়ে তুলতে পারছি, বাঙালি জাতি হিসেবে বিশ্বে যে সম্মান আমরা পাচ্ছি; এখানে আপনাদের বিরাট অবদান রয়েছে। আপনাদের মহান আত্মত্যাগের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়েছে। কাজেই আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের কল্যাণে যা যা করণীয় আমি তা করে যাব।
ঢাকা সেনানিবাসের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে ওই অনুষ্ঠানে খেতাবপ্রাপ্ত ৭০ মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এর মধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর ২০ মুক্তিযোদ্ধাকে পরিচয়পত্র দেওয়া হয়। এটি ব্যবহার করে তারা ট্রেন, সরকারি সংস্থার ফেরি ও বাসে বিনা ভাড়ায় ভ্রমণ, বাংলাদেশ বিমানের আন্তর্জাতিক রুটে বিনা ভাড়ায় বছরে একবার এবং পবিত্র হজ/ওমরাহ পালনের জন্য একবার ভ্রমণ ছাড়াও বিমানবন্দরগুলোয় ভিআইপি লাউঞ্জ ইত্যাদি ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা আপনজন হারিয়েছেন বা পঙ্গু হয়ে আছেন বা যারা অবদান রেখেছেন, তাদের আমি সবসময় সম্মানিত হিসেবে গণ্য করি এবং তাদের কল্যাণে কাজ করে যাওয়া কর্তব্য হিসেবে মনে করি।
মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে শেখ হাসিনা তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন কর্মসূচির কথা তুলে ধরে বলেন, প্রতি জেলা ও ৪২২টি উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ৪৩ জেলা ও ১৬১ উপজেলায় কমপ্লেক্স নির্মাণ শেষ হয়েছে। এসব কমপ্লেক্সে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন তথ্য ও প্রদর্শনী থাকবে। তিনি আরও বলেন, এগুলোর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জাতি জানতে পারবে। ইতিহাস বিকৃতি করতে কেউ সাহস পাবে না।
সরকার সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন, ভৌত ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং বিবিধ কল্যাণমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর বলে জানান তিনি। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ২০১৫-১৬ সালের ভূমিকার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর পাঁচজনকে ‘শান্তিকালীন সেনা’, ‘বাহিনী পদক’ ও ‘অসামান্য সেবা পদক’ প্রদান করেন।
সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী একেএম মোজাম্মেল হক, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ ও বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।