আমার বাবার মুক্তিযুদ্ধ
সেপ্টেম্বর, ১৯৭১।
টাঙ্গাইলের ২টি গ্রামে সফল অপারেশন শেষে আব্বা গ্রামের বাড়ীর বাঙ্কারে ফিরলেন গভীর রাতে প্রচন্ড জ্বর নিয়ে। কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম এবং হাবিবুর রহমান বীর বিক্রম-এই দুজন মুক্তিযোদ্ধা, আব্বাকে বললেন রেস্ট নিতে, কারণ, তিনি জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকছেন। এই বলে উনারা বাঙ্কার আড়াল করে অন্য অপারেশনে চলে গেলেন। ভোরের দিকে RAJAKAR হাসান মাস্টার (২০০২ সালে মারা গেছেন), দুজন সঙ্গীকে নিয়ে বাঙ্কারে আসলেন। তিনি বাঙ্কার চিনতেন এবং বিশ্বাসঘাতক ছিলেন। প্রথমে তিনি এমন ভাব দেখাতেন, যে তিনিও স্বাধীনতা চান। যাই হোক, বাঙ্কারে এসে তিনি নিরস্ত্র অবস্থায় আব্বাকে ধরে ফেলেন, কারণ প্রচন্ড জ্বর আর ডেলিরিয়ামে, আব্বার অবস্থা ভালো না।
যাই হোক, আব্বার এই দূর্বল অবস্থা দেখে, তারা তিনজন আব্বাকে বহন করে নিয়ে যাবার ঝামেলা নিতে চান নি। আব্বাকে বেঁধে রেখে তারা পাকিস্তানী ক্যাম্পে গেলেন বাকীদের খবর দিতে।
এই ফাঁকে আব্বা কোন রকমে উঠে, বাঙ্কারে রাখা একটা ভাঙ্গা বালতির কোনার সাহায্যে বাঁধন মুক্ত হন (ওই সময় আব্বার ডান হাতের কণিষ্ঠা আঙ্গুল প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এখনো বল পাননা ওই আঙ্গুলে)। বাঁধন মুক্ত হবার পর তিনি বাঙ্কারের দরজার পাশে রাখা খাটিয়ার পিছনে লুকিয়ে থাকেন। পরে তিন জন RAJAKAR আর ২ জন পাকি সেনা ঘরে ঢোকে। তাদের চোখে আলো থেকে অন্ধকার সয়ে আসার জন্য মাত্র ৩ সেকেন্ড সময় পান আব্বা। ওইটুকু সময়ে মধ্যে আব্বা তাঁর হাঁটুর কাছে গোপনে বেঁধে রাখা গ্রেনেডটির (ঘুমন্ত অবস্থায় তখন অনেক মুক্তিযোদ্ধাই নাকি অন্তত ১টা গ্রেনেড/ছুরি লুকিয়ে রাখতেন শরীরের সাথে বেঁধে।) পিন খুলে ঘরে ফেলে এসে বাইরে থেকে দরজা চাপিয়ে দেন। তারপর ঝেড়ে দৌড়!
ফলাফলঃ
২ পাকি+১ RAJAKAR গায়েব।
২ RAJAKAR অন্ধ।
এবং আব্বাকে একটু আগে দেখলাম মাথা উঁচু করে মুক্তিযোদ্ধা বন্ধুদের সাথে রিক্সায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
তিন জন বৃদ্ধ যুবক এক রিক্সায়!
সুন্দর দৃশ্য না?