আলেমদের নিয়ে সেল গঠন করুন প্রয়োজন আরেকটি জনযুদ্ধ
আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা জঙ্গিবাদ দমনে পীর-মাশায়েখ, আলেম ও বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে আলাদা সেল গঠন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, ধর্মের নামে জঙ্গিবাদ ইসলাম সমর্থন করে না। দেশের জনগণকে এ বিষয়ে সচেতন ও সতর্ক করতে সেল গঠন করা প্রয়োজন।
গত ৩০ জুলাই রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার কক্ষে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-পরিষদের উদ্যোগে ‘ইসলামের আলোকে জঙ্গি ও সন্ত্রাস মোকাবেলায় আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। বক্তারা আরও বলেন, কেবল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচার চালালে হবে না। দেশের সব আলেমকে এতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এবং আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-পরিষদ চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম জঙ্গিবাদ দমনে জনযুদ্ধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিএনপি-জামাতের ১০০ দিনের অগ্নিসন্ত্রাস ও হেফাজতের তা-ব রুখে দেওয়া হয়েছে। জনগণের শক্তির ওপর কিছুই নেই। জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধকে জনযুদ্ধে পরিণত করে বিজয়ী হয়েছিলাম। এবারও আরেকটি জনযুদ্ধ দরকার। আলেম-ওলামা, মন্ত্রী, শিক্ষক-ছাত্র সবাই মিলে মাঠে নামলে এবারের জনযুদ্ধে জঙ্গিদেরও বিতাড়িত করা যাবে।
আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপি বলেন, জঙ্গিবাদ বৈশ্বিক সমস্যা হলেও বাংলাদেশে রাজনৈতিক সমস্যা। এর সামনে জেএমবি-হরকাতুল জিহাদ, পেছনে বিএনপি-জামাত। এটিকে ‘সার্টিফিকেশন’ দিতে আন্তর্জাতিক চক্রান্তের অংশ হিসেবে ‘আইএস’ নাম দেওয়া হচ্ছে, যাতে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী বাংলাদেশে নাক গলাতে পারে।
ত্বরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভা-ারী বলেন, সারাদেশে লাখ লাখ আলেম-ওলামা ইসলামের নাম নিয়ে ওয়াজ-নসিহত করে যাচ্ছেন। তাদের অনেকে জামাত-শিবিরের প্রতিনিধি হয়ে ওয়াজে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে নসিহত ও সরকারবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন কি-না, খতিয়ে দেখা দরকার। কেউ কোরআন-সুন্নতের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ওয়াজ করলে তা বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
জঙ্গিবাদের জন্য জামাতে ইসলামীকে দায়ী করে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, জামাতকে ছোট করে দেখলে হবে না। জামাতিদের সব প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। জঙ্গিবাদে জড়িয়ে যারা মারা যাচ্ছে, তাদের লাশ নেওয়ার লোকও নেই। দেশের মানুষ জঙ্গিবাদকে ঘৃণা করে।
শোলাকিয়া ঈদগাহের প্রধান ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসঊদ বলেন, দেশে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনমত গড়তে আলেমসমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারের উচিত হবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পাশাপাশি দেশের আলেমসমাজকে নিয়ে এ বিষয়ে কাজ করা। জামাতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, যারা পেট্রলবোমা মেরে মানুষ হত্যা ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করেছে এবং যারা গুলশানে ক্যাফেতে ঢুকে মানুষ হত্যা করেছেÑ তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক। ধর্মীয় জ্ঞানে দুর্বল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জঙ্গিবাদের মদতদাতারা টার্গেট করে মগজধোলাই করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গোলটেবিল আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য খন্দকার গোলাম মাওলা নক্শবন্দী, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আহসান উল্লাহ, ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্য আমিনুল ইসলাম আমিন প্রমুখ। গোলটেবিল আলোচনায় আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, প্রচার উপ-কমিটির সদস্যবৃন্দসহ অন্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
জঙ্গিরা কাপুরুষ, কোনো যুদ্ধে তারা জয়ী
হতে পারবে না : সৈয়দ আশরাফ
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি বলেছেন, দু-একটি জঙ্গি হামলা করে আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কেউ ধ্বংস করতে পারবে না। সুতরাং ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরা ভীত না। অতীতে দু-একটি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। ভবিষ্যতেও এমন দু-চারটি ঘটনা ঘটতে পারে। তবে তা সরকার যথাযথ ও কঠোরভাবে মোকাবিলা করেই গণতান্ত্রিক ধারাকে অব্যাহত রাখবে।
গত ৩০ জুন বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যুব-সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দ আশরাফ আরও বলেন, বিশ্বব্যাপীই জঙ্গি সন্ত্রাসী হামলা ঘটছে। এটা শুধু বাংলাদেশের সমস্যা না। এ সমস্যার পিছনে যেতে হবে। কারণগুলো চিহ্নিত করতে হবে। তিনি বলেন, সন্ত্রাসী-জঙ্গিগোষ্ঠীর কোনো জনশক্তি নেই বা ভিত্তি নেই। যারা গুপ্তহত্যা করে তারা বীরের জাতি না, তারা কাপুরুষ। তারা রাতের আঁধারে মানুষ হত্যা করে। তারা কোনো সংগ্রামে, কোনো যুদ্ধে জয়ী হতে পারবে না। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশের জনগণের শক্তির কাছে তারা পরাজিত হবে। ভবিষ্যতে জঙ্গি তো দূরের কথা জঙ্গির ‘জ’ও থাকবে না।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে এই যুব সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগ। সংগঠনের সভাপতি মাঈনুল হোসেন খান নিখিলের সভাপতিত্বে যুবলীগের নেতা-কর্মীদের শপথ বাক্য পাঠ করান যুবলীগ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী। উত্তর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেনের পরিচালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এসএম কামাল হোসেন, কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম এমপি, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ আরও বলেন, নিরীহ বিদেশিকে হত্যা করে, দু-একজনকে হত্যা করে বিশ্বে পবিত্র ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। একজন, দুজন মানুষ হত্যা করে জিহাদ করা যায় না। তিনি বলেন, দেশে দু-একটি ঘটনা ঘটলেই যে শহীদ মিনারে বড় সমাবেশ করার দরকার নেই। আমরা ভীত নই। আমরা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মানুষ। যে রাষ্ট্রের শাসন কাজ পরিচালনা করছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বে আমরা অনেক পাহাড় ডিঙ্গিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে।
মধ্যপ্রাচ্যের সন্ত্রাসবাদের প্রসার তুলে ধরে জনপ্রশাসনমন্ত্রী বলেন, লিবিয়ায় গাদ্দাফিকে পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। ইরাকেও না। সেখানে আমরা দেখছি বিশৃঙ্খলা, সন্ত্রাসী কর্মকা-। সেসব দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। তারা কখনও গণতন্ত্র পরিবেশ পায়নি, চর্চাও করেনি। আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দীর্ঘদিনের। আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আছি। দু-একটি জঙ্গি হামলা করে সরকার পতন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা যাবে না। আমরা চাই না, দেশে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের সৃষ্টি হোক।
আশরাফ বলেন, আমরা কোনো ধর্মকে কটাক্ষ করব না। তা হলে তারাও আমাদের পবিত্র ইসলাম ধর্মকে নিয়ে কটাক্ষ করবে। তখন সেটা আমাদের কাছে ভালো লাগবে না। সব ধর্মের প্রতি সম্মান রেখেই আমাদের কথা বলতে হবে। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস কোনো ধর্মের সমস্যা না, কোনো দেশের সমস্যা না। এটা বৈশ্বিক সমস্যা। তিনি বলেন, মিথ্যা দিয়ে হাজার হাজার মানুষকে ভুল বোঝানো যায়। কিন্তু লাখ লাখ-কোটি কোটি মানুষকে মিথ্যা দিয়ে ভোলানো যায় না।
আওয়ামী লীগের ২০ তলা নতুন ভবন নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু
আওয়ামী লীগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও আন্দোলন-সংগ্রামের স্মৃতিবিজড়িত কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পুরনো ভবন ভাঙার কাজ গত ১৭ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে। ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ঐতিহাসিক পুরনো এই ভবনটির স্থলেই গড়ে তোলা হবে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ একটি প্রযুক্তিনির্ভর দলীয় কার্যালয়।
কার্যালয় ভাঙার কাজ শুরুর সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এমপি, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, দলের অর্থবিষয়ক সম্পাদক এইচএন আশিকুর রহমানসহ অন্য নেতৃবৃন্দ।
এ সময় হানিফ বলেন, বহুতল ও দৃষ্টিনন্দন আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত দলীয় কার্যালয় নির্মাণের জন্যই ভবনটি ভাঙা হচ্ছে।
দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় নির্মাণের কাজের তদারকির দায়িত্বে আছেন গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তিনি জানান, ২০ তলা এই ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হবে ১০ কোটি টাকা। সময় লাগবে দেড় বছর। ভবনের ছয়-সাত তলা পর্যন্ত থাকবে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কার্যালয়। এ ছাড়া থাকবে সম্মেলন কক্ষ, সেমিনার কক্ষ, ডিজিটাল লাইব্রেরি, ভিআইপি লাউঞ্জ, ডরমেটরি, ক্যান্টিন ও সাংবাদিক লাউঞ্জ। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের জন্য পৃথক কক্ষ ও সাথে ব্যালকনি থাকছে। পুরো কার্যালয়টি করা হবে ওয়াইফাই জোন। এরই মধ্যে নতুন ভবনের ত্রিমাত্রিক নকশা অনুমোদন দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৯ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলীয় কার্যালয় প্রস্তুত করছেন ছাত্রলীগ। ১৯ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ঠিকানা হয়েছে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ও ২৫ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে নতুন ঠিকানা হয়েছে যুবলীগের। যুব মহিলা লীগ রাজধানীর ধানমন্ডির সভাপতির কার্যালয়ে তাদের অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করবে। ৩৪ এয়ারপোর্ট রোডে আওয়ামী আইনজীবী লীগের প্রধান কার্যালয়।
যথাসময়েই আওয়ামী লীগের সম্মেলন
গত ২৩ জুলাই গণভবনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্ধারিত সময়েই দলের জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রসহ অন্যান্য প্রক্রিয়ায় সকল দায়িত্বপ্রাপ্তদের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন তিনি। একই সাথে তিনি যেসব জেলায় দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি, সেখানে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার উদ্যোগ নিতে সাংগঠনিক সম্পাদকদের প্রতি নির্দেশ দেন।