সাক্ষাৎকার

উত্তরণের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এমপি

জাতীয় স্বার্থ, আন্তঃরাষ্ট্র সহযোগিতা, উন্নয়ন ও বিশ্বশান্তি সমুন্নত রাখাই পররাষ্ট্রনীতির উদ্দেশ্য

বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতির মৌলিক ভিত্তি সম্পর্কে আলোকপাত করুন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী : বাংলাদেশের জন্মলগ্নে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল প্রণীত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে সুস্পষ্টভাবে জাতিসংঘ সনদের প্রতি বিশ্বস্ততা এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ভুক্ত একটি জাতি হিসেবে সব দায়-দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশের সংবিধানে পররাষ্ট্রনীতির মূলনীতিগুলো সন্নিবেশিত হয়। সংবিধানের প্রস্তাবনায় “মানব জাতির প্রগতিশীল আশা-আকাক্সক্ষার সহিত সঙ্গতি রক্ষা করিয়া আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে পূর্ণ ভূমিকা পালন” করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করা হয়। এরই অনুসৃতিতে সংবিধানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির অভিমুখ নি¤œরূপ নির্ধারণ করা হয়Ñ
১. জাতীয় সমতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা, বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা,
২. শক্তি প্রয়োগ পরিহার এবং সাধারণ ও সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ প্রয়াস,
৩. নিজস্ব আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা নির্ধারণ ও গঠনে প্রত্যেক জাতির অধিকারের স্বীকৃতি,
৪. বিশ্বের সর্বত্র নিপীড়িত জনগণের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামের সমর্থন।
স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতির মৌলিক ভিত্তি হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নির্দেশিত “সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরিতা নয়” নীতি। বিগত মেয়াদসমূহের ন্যায় এবারও ৫ জানুয়ারি ২০১৪-তে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ অনুসরণক্রমে “সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরিতা নয়” নীতির আলোকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধসমৃদ্ধ বলিষ্ঠ পররাষ্ট্রনীতির অনুশীলন অব্যাহত রয়েছে। ফলে বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্বকীয় ও গতিশীল প্রবাহ সংযোজিত হয়েছে। ‘রূপকল্প-২০২১’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ মেয়াদে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি প্রতিবেশী দেশসহ বিশ্বের সকল দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভাবমূর্তি শক্তিশালী করা ও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে।
উত্তরণ : বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিতে আমাদের পররাষ্ট্রনীতির বৈশিষ্ট্যগুলো কী?
পররাষ্ট্রমন্ত্রী : বিভিন্ন ধরনের বাস্তবতা ও পারিপার্শ্বিকতা একটি রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির প্রণয়ন ও বাস্তবায়নকে প্রভাবিত করে। ভূ-রাজনীতি এমনই একটি বাস্তবতা, যা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। একই সঙ্গে বৈশ্বিক পরিম-লে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গতি-প্রকৃতিও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ১০টি প্রধান দিক নি¤œরূপÑ
১. প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ বিদেশের সঙ্গে ভারসাম্যমূলক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক,
২. বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ,
৩. বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি পণ্য ও সেবার শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণ ও সংরক্ষণ,
৪. বিদেশে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ এবং নতুন শ্রমবাজার সন্ধান,
৫. প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বার্থ সংরক্ষণ,
৬. জাতিসংঘ ব্যবস্থায় সক্রিয় অংশগ্রহণ, আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রসার এবং ক্রমবিকাশমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক রীতিনীতি প্রণয়নে সক্রিয় অংশগ্রহণ,
৭. বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারকরণ,
৮. বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষা ও শান্তিপ্রতিষ্ঠা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ,
৯. বিদেশে বাংলাদেশের সংস্কৃতির যথাযথ প্রদর্শনীর মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি উন্নয়ন এবং
১০. পর্যটন শিল্পের বিকাশে যথোপয্ক্তু পদক্ষেপ গ্রহণ।

সমুদ্র বিজয় (মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে) এর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক তাৎপর্য কী?
পররাষ্ট্রমন্ত্রী : দেশের সামুদ্রিক সম্পদসমূহকে সাফল্যের সঙ্গে ব্যবহার দেশের উন্নতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর দেশের আইনসিদ্ধ সমুদ্রসীমার ওপর নিরঙ্কুশ অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই সেটা করা সম্ভব। আন্তর্জাতিক আইন-আদালতের সহায়তায় বঙ্গোপসাগরে সমুদ্রসীমা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ অবশেষে সে অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নিশ্চিতকরণের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক তাৎপর্য অসীম।
ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণী মামলার রায় ঘোষিত হওয়ার পর বঙ্গোপসাগরের সীমাহীন সম্পদসমূহের ওপর আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সাথে সাথে এই সীমাহীন সম্পদের টেকসই, কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার নিয়েও আমাদের নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। বঙ্গোপসাগর, মৎস্য ও খনিজ সম্পদসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদের আধার। সম্পদসমূহের যথাযথ ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। শুধু তাই নয়, সমুদ্রকেন্দ্রিক অভিনব ও সৃষ্টিশীল অর্থনৈতিক কর্মকা-ে বাংলাদেশে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব হবে।
স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গোপসাগর এবং এর সম্পদসমূহের তাৎপর্য অনুধাবন করে এই সম্পদের ওপর বাংলাদেশের জনগণের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে ‘The Territorial Waters and Maritime Zones Act’ শীর্ষক একটি পূর্ণাঙ্গ আইন জাতীয় সংসদে পাস করেন। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনাও শুরু করেন। ফলস্বরূপ ১৯৭৪ সালেই মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের ১২ নটিক্যাল মাইল Territorial Sea-এর সীমানা নির্ধারণী বিরোধের নিষ্পত্তি হয়। কিন্তু পরবর্তী সরকারগুলো বঙ্গোপসাগরে আমাদের অধিকার সুসংগত করতে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বাংলাদেশ ১৯৮২ সালেUnited Nations Convention on the Law of the Sea (UNCLOS) স্বাক্ষর করলেও কোনো সরকার অণুস্বাক্ষরের ব্যবস্থা নেয়নি। কনভেনশনটি স্বাক্ষরের ১৯ বছর পর ২০০১ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার অণুস্বাক্ষরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অণুস্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশ কনভেনশনটির সদস্যপদ লাভ করে এবং এর সকল অধিকার এবং দায়িত্ব বাংলাদেশের ওপর বর্তায়। UNCLOS অণুস্বাক্ষরের ১০ বছরের মধ্যেই অর্থাৎ জুলাই ২০১১ সাল নাগাদ ২০০ নটিক্যাল মাইলের বাইরে মহীসোপানের সম্পদের ওপর বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার দাবি জাতিসংঘে বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি তথ্য-উপাত্তসহ (সাইসমিক ও ব্যাথিমেট্রিক) পেশ করার বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি হয়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দ্রুতগতিতে অত্যাধুনিক সাইসমিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে ২০১১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০ নটিক্যাল মাইলের বাইরে মহীসোপানে সব সম্পদের ওপর বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্বলিত প্রয়োজনীয় সব তথ্য-উপাত্তসহ জাতিসংঘে পেশ করা হয়। ২০১২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণী সংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তি হয়। জার্মানির হামবুর্গে অবস্থিত International Tribunal for the Law of the Sea (ITLOS)-এর ২৩ সদস্য বিশিষ্ট বিচারক পর্যদ মিয়ানমার কর্তৃক সমুদ্রসীমা নির্ধারণে প্রস্তাবিত সমদূরবর্তী পদ্ধতি প্রত্যাখ্যানপূর্বক ন্যায্যতার ভিত্তিতে বাংলাদেশের অনুকূলে রায় দেয় এবং এতে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে অমীমাংসিত ২০০ নটিক্যাল মাইলের একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল (Exclusive Economic Zone) এবং ২০০ নটিক্যাল মাইলের বাইরে মহীসোপান (Continental Shelf) অঞ্চলে ন্যায্য হিস্যা লাভ করে। অন্যদিকে ২০১৪ সালের সালিশি ট্রাইব্যুনালের রায় ভারতের সঙ্গে আমাদের সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করে দেয়।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সমুদ্র সম্পদের তাৎপর্য পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, রায়ের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরের ২০০ নটিক্যাল মাইলের বাইরেও মহীসোপানে প্রাণীজ ও অপ্রাণীজ সম্পদের ওপর বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে প্রায় ৪৭৬ প্রজাতির মাছ রয়েছে। এখন বাংলাদেশের জেলেরা ২০০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে একচ্ছত্র অর্থনৈতিক এলাকায় এবং ২০০ নটিক্যাল মাইলের বাইরে High Sea-তে অবাধে মাছ শিকার করতে পারবে। বর্তমানে প্রায় ৫৫ হাজারটি কাঠের তৈরি নৌকার মাধ্যমে উপকূলের ২০-৩০ কিমির মধ্যে জেলেরা মাছ শিকার করে। অন্যদিকে জেলেরা ১৫০-২০০টি ট্রলার ব্যবহার করে, যা উপকূল থেকে বড়জোর ৫০-৬০ কিমি সীমানার মধ্যে মাছ শিকার করে। এ ছাড়া শৈবাল চাষ, একুয়াকালচার, মেরিকালচারের মাধ্যমে বিপুল কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব। সমুদ্র পরিবহন এবং পর্যটনও অদূর ভবিষ্যতে আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ একসময় বাংলাদেশকে সমুদ্র পরিবহনের আঞ্চলিক কেন্দ্রে পরিণত করবে।
সমুদ্রসীমা নিশ্চিতকরণের ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ৪০ বছরের বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়েছে। এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সমুদ্রসীমা বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছে, যা শান্তিকামী দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। বঙ্গোপসাগরের ভূ-কৌশলগত ও ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। তাই বঙ্গোপসাগরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশকে জয়ী হতেই হবে।
উত্তরণ : ভূ-ম-লায়ন বা গ্লোবালাইজেশনের ফলে সাধারণভাবে স্বল্পোন্নত দেশগুলো লাভবান হয় নি এবং এসব দেশের ওপর বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার অসম শর্ত বা নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। বাংলাদেশের ওপর এর প্রভাব কতটুকু? আমরা লাভবান হচ্ছি না ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি?
পররাষ্ট্রমন্ত্রী : বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা হলো বহুপাক্ষিক বাণিজ্য আলোচনার বৈশ্বিক প্লাটফর্ম ও কাঠামো। বহুপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে বাণিজ্য সংস্থার বিভিন্ন Normative Decision-এ ফোরামে নেওয়া হয়। বিভিন্ন দেশ তাদের স্বীয় বাস্তবতায় সেসব Normative Decision-এর সুফল বিভিন্ন মাত্রায় ভোগ করে। এটি সত্যি যে ডব্লিউটিও-এর কাঠামোগত কিছু সমস্যা রয়েছে যেখানে অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার কিংবা সমতাভিত্তিক বাণিজ্য নিশ্চিত করার সুযোগ রয়েছে। এটি আশার বিষয় যে চলমান ‘২০১৫-পরবর্তী টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচি’ আলোচনায় জাতিসংঘের ওপেন ওয়ার্কিং গ্রুপ এ বিষয়ে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে তাদের সুপারিশ পেশ করেছে। তবে পাশাপাশি এটিও সত্য যে, বিদ্যমান কাঠামোর ভেতরে থেকেও যতটুকু সুবিধাদি আদায় করা যায়, স্বল্পোন্নত দেশসমূহ তাও করতে পারেনি। তা হয়নি মূলত দুটি কারণে। এক. এলডিসি দেশসমূহের নিজেদের মধ্যে ঐক্যের অভাব। দুই. আর সে কারণেই এলডিসি দেশসমূহের বাণিজ্য বিষয়ক সমন্বিত নেগোসিয়েশনের ক্ষেত্রে এ দুর্বলতা। একটি সমন্বিত অবস্থান না থাকার ফলে ডব্লিউটিও-এর ইতোপূর্বে গৃহীত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত যেমন Hong Kong Ministerial-G Duty Free Quota Free Access সংক্রান্ত গৃহীত সিদ্ধান্তের সম্পূর্ণ সুবিধা এলডিসি দেশসমূহ আদায় করতে পারছে না। অতি সম্প্রতি গৃহীত ‘বালি প্যাকেজ’-এর সিদ্ধান্তগুলো যেমন Service Waiver সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত থেকে সুবিধা আদায় করতে হলেও স্বল্পোন্নত দেশসমূহের মধ্যে নিবিড় আলোচনার মাধ্যমে 23একটি একক অবস্থান তৈরির বিষয়টি হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব ছাড়াও সামগ্রিক বিবেচনায় এই বাস্তবতা মনে রাখা প্রয়োজন যে ডব্লিউটিও-এর আওতায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে বা গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে উন্নত, উন্নয়নশীল এবং স্বল্পোন্নত দেশসমূহ সমমাত্রার শক্তি প্রয়োগ করে না বা করতে পারে না। সে বাস্তবতা মেনে নিয়েই স্বল্পোন্নত দেশসমূহকে নিজেদের সামর্থ্য বিনির্মাণের মাধ্যমে বাণিজ্য আলোচনায় দক্ষতার মাধ্যমে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
উত্তরণ : বিশ্বব্যাংক আমাদের পদ্মা সেতুতে সাহায্য দেয় নি। একটি মহল এজন্য সরকারকেই দায়ী করছে। এমতাবস্থায় বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ অথবা অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ককে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
পররাষ্ট্রমন্ত্রী : বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণে বাংলাদেশ সরকারকে সাহায্য যে দেয় নি তার জন্য সরকারের কোনো দায় নেই। দেশের উন্নয়নে বিশ্বাস করে না এমন কুচক্রীমহলের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিয়ে বিশ্বব্যাংক অবিবেচকের মতো একতরফাভাবে এ দুর্ভাগ্যজনক সিদ্ধান্ত নেয়। দুদক দীর্ঘ সময় ধরে তদন্ত করেও এ বিষয়ে কোনো ধরনের দুর্নীতি খুঁজে পায় নি।
তথাকথিত দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতু নির্মাণে বাংলাদেশ সরকারকে সাহায্য না দেওয়া যে ভুল হয়েছে তা বোধহয় বিশ্বব্যাংক এতদিনে বুঝতে পেরেছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের বিষয়টি বাদ দিলে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বেশ ভালো। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণে বাংলাদেশ সরকারকে সাহায্য না দেওয়ার ঘোষণার পরও অন্য কোনো প্রকল্প থেকে যেমন নিজেকে প্রত্যাহার করে নি তেমনই সবক্ষেত্রে আর্থিকসহ অন্য সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে।
আইএমএফসহ অন্যান্য উন্নয়ন আন্তর্জাতিক সহযোগী সম্পর্কেও একই কথা প্রযোজ্য।

প্রায়ই বৃহৎ শক্তির কোনো দেশ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে অযাচিত চাপ দেওয়ার চেষ্টা করে। বৃহৎ শক্তিধর দেশগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ব্র্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কি কোনো টানাপড়েন চলছে?
পররাষ্ট্রমন্ত্রী : বৃহৎ শক্তিধর দেশগুলো প্রায়ই বাংলাদেশের ওপর অযাচিত চাপ প্রয়োগ করে কথাটা এভাবে বলা ঠিক নয়। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। বৃহৎ শক্তিধর দেশ বা সংগঠন যেমনÑ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমাদের উন্নয়ন সহযোগী ও বাণিজ্য অংশীদার। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আমাদের নিবিড় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অন্যান্য বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে এসব দেশ বিভিন্নভাবে তাদের মতামত তুলে ধরে। ভালো কাজের এবং অর্জনের যেমন প্রশংসা করে তেমনি অন্যান্য বিষয়ে কখনও কখনও উদ্বেগ প্রকাশ করে। উদাহরণ স্বরূপ বিগত ১৬ জানুয়ারি ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে বাংলাদেশের ওপর যে রেজ্যুলেশন পাস হয় তাতে বাংলাদেশকে উন্নয়ন সহযোগী ও সম্পর্কের অংশীদারিত্ব স্বীকার করে নিয়েই তাদের মতামত তুলে ধরে এবং নির্বাচনকালীন সহিংসতার জন্য (acts of violence) নিন্দা জানায় এবং বিএনপিকে জামাতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানায়। তেমনিভাবে ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট যে রেজ্যুলিওশন গ্রহণ করে তাতেও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন ও এমডিজি লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশের প্রশংসা করে। অনুরূপভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন বিভিন্ন সময়ে বিষয়ভিত্তিক মতামত প্রকাশ করে থাকে। যেহেতু এসব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক সার্বিক অংশীদারিত্বমূলক ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত, তাই এসব দেশের মতামত ও পরামর্শ বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে থাকে। এখানে চাপ প্রয়োগ করার কিছু নেই।
আমরা আমাদের সংবিধান নির্দেশিত পথে বিদেশি দেশের সঙ্গে আমাদের পররাষ্ট্র সম্পর্ক নির্মাণ ও অনুশীলন করে থাকি। সেখানে অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাই না; কিন্তু আন্তর্জাতিক পরিম-লে আমরা সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার থাকি, নিপীড়িত জনগণের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামকে সমর্থন করি এবং জোট নিরপেক্ষ স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি বজায় রাখি।
সুতরাং, বৃহৎ দেশ বা অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কে বাংলাদেশের কোনো টানাপড়েন নেই। কোনো কোনো বিষয়ে তাদের সাথে অবস্থানগত অস্পষ্টতা বা পার্থক্য থাকতে পারে। বাংলাদেশ তার নীতিগত অবস্থান বিভিন্ন বহুপাক্ষিক ফোরামে জোরালোভাবে তুলে ধরে এবং যেসব বিষয়ে মতপার্থক্য দেখা দেয় সেসব বিষয়ে নিজস্ব যুক্তি তুলে ধরে বিতর্কে অংশ নেয়। এটিই পররাষ্ট্র সম্পর্ক নির্মাণের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে এ প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে যাবে।

বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতের সাথে আমাদের বেশ কিছু অমীমাংসিত সমস্যা রয়ে গেছে। অনেকেই বলেন, বাংলাদেশ উদারভাবে ভারতকে যতটা সম্ভব বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা দিচ্ছে, ভারত ততটা দিচ্ছে না। তিস্তা নদীর পানির হিস্যা, স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন, বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস এবং পারস্পরিক স্বার্থে যৌথ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত অগ্রগতি হয় নি। আমাদের দুই দেশের দ্বি-পাক্ষিক বিষয়ে কিছু বলুন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী : বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সম্প্রীতি এবং বোঝাপড়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত। সরকারের পূর্বের এবং বর্তমান মেয়াদে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে অনেক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির খসড়া এ সময়কালেই চূড়ান্ত হয়েছে। ১৯৭৪-এর স্থলসীমানা চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১১-এর প্রটোকলটিও এ সময়েই স্বাক্ষরিত হয়েছে। ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমস্যার কারণে এগুলো চূড়ান্ত রূপ পায়নি। তবে ভারতের পূর্বের সরকার ও বর্তমান সরকারেরও এগুলো নিষ্পন্নের ব্যাপারে আন্তরিকতার কোনো কমতি নেই। তিস্তার ব্যাপারে ভারতের বর্তমান সরকার অভ্যন্তরীণ ঐকমত্য গড়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আর স্থলসীমানা চুক্তি ভারত কর্তৃক অণুুসমর্থনের বিষয়টি তাদের পার্লামেন্টারি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। ভারতের বর্তমান সরকার এ দুটি বিষয়ের গুরুত্ব সম্বন্ধে সম্যক অবহিত এবং তারা এগুলো সমাধানের ব্যাপারে আন্তরিক ও সক্রিয় প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এবং আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসের জন্য আমরা বিদ্যমান নন ও প্যারা ট্যারিফ প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূরীকরণে ভারতের সঙ্গে প্রচেষ্টা চালাচ্ছি এবং ইতোমধ্যে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা দূরও হয়েছে। তবে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে আমাদেরও অনেক কিছু করার আছে। আমাদের রপ্তানিজাত পণ্যের সংখ্যা বাড়াতে হবে। যৌথ অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ভারতের ৮০০ মিলিয়ন ডলারের সহজ ঋণে বাংলাদেশে বেশ কিছু অবকাঠামোগত প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে/হচ্ছে। এ ছাড়াও ছোট ছোট উন্নয়নমূলক প্রকল্পও ভারতের আর্থিক সহায়তায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। ভারত থেকে আমদানিকৃত বিদ্যুৎ আমাদের বিদ্যুৎ ঘাটতি হ্রাসে সহায়তা করছে। আরও বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে নীতিগত সম্মতি হয়েছে। ভারত থেকে জ্বালানি তেল আমদানির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এগুলো আমাদের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম নিয়ামক হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। এ ছাড়া মৎস্য, পাট ও বস্ত্র, স্বাস্থ্য, সুন্দরবন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ইত্যাদিসহ বেশ কয়েকটি নতুন নতুন ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগিতার পথ উন্মোচিত হয়েছে। দুদেশের মধ্যে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নিষ্পত্তির মধ্য দিয়ে সাগর সম্পর্কিত অর্থনৈতিক কর্মকা-ের বিপুল সম্ভাবনার দ্বার খুলে গেছে। এসবই আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। দুদেশের সরকারের মধ্যে আস্থার ভিত আগের তুলনায় অনেক শক্ত হয়েছে। ভারতে সরকার পরিবর্তনের পরও তা অটুট আছে, যা একটি বড় অর্জন। এরূপ বন্ধুত্ব ও আস্থার সম্পর্ক থাকলে যে কোনো সমস্যারই সমাধান সময়ের ব্যাপার। কাজেই বর্তমান সরকারের পূর্ববর্তী ও বর্তমান আমলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে বললে অত্যুক্তি হবে না।
উত্তরণ : আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে অগ্রগতি ও সম্ভাবনা কতটুকু?
পররাষ্ট্রমন্ত্রী : দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের Comparative advantage-কে কাজে লাগিয়ে এবং তা একত্রে সন্নিবেশ করে এই অঞ্চলের সব দেশের সামষ্টিক উন্নতির অপার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা এ মতাদর্শে বিশ্বাসী ও তা বাস্তবায়নে অত্যন্ত আগ্রহী। এ কারণে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ব্যাপারে আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছি। SAARC, BIMSTEC, BCIM-EC-এর সবগুলোতে রয়েছে আমাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ। মূলত বাংলাদেশের একক প্রচেষ্টাতেই বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটানকে নিয়ে জলসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও জলবিদ্যুৎ/বিদ্যুৎ এবং আন্তঃযোগাযোগ বিষয়ে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার আওতায় ত্রিপক্ষীয় কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ২০১৩-এর এপ্রিল মাসে এ বিষয়ে প্রথম রাউন্ডের ত্রি-পক্ষীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরবর্তী রাউন্ডের সভা শিগগিরই অনুষ্ঠিত হবে এবং তাতে এবার নেপালেরও শামিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ত্রি-পক্ষীয়/চতুর্পক্ষীয় উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা বর্ণিত ক্ষেত্রসমূহে বিপুল সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে বলে আমরা আশাবাদী, যা এ দেশগুলোর সামষ্টিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

ঢাকায় বিমসটেক হেড কোয়ার্টার স্থাপনের বিশেষ গুরুত্ব কী?
পররাষ্ট্রমন্ত্রী : ঢাকায় বিমসটেক সচিবালয় স্থাপনের গুরুত্ব বহুবিধ। উল্লেখযোগ্য হচ্ছেÑ
১. বিমসটেক সচিবালয় ঢাকায় স্থাপিত প্রথম কোনো আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান কার্যালয় বা হেড কোয়ার্টার্স। ফলে বহির্বিশ্বে সরকার তথা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।
২. বিমসটেক সচিবালয় এতদঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক জোরদার করবে।
৩. বিমসটেক মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গঠনের প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়েছে। আগামী বছরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি বাস্তবায়িত হলে বিমসটেক সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়।
৪. বিমসটেক আন্তঃআঞ্চলিক কানেকটিভিটি কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হবে। ফলে এ অঞ্চলে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ছাড়াও পর্যটন, জনগণের মধ্যে যোগাযোগ ও জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি পাবে।
৫. বিমসটেক সচিবালয় স্থাপন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের জন্য বিশাল এক কূটনৈতিক সাফল্য।
৬. সর্বোপরি, ঢাকায় বিমসটেক সচিবালয় অবস্থিত হওয়ায় এখানে অনেক আন্তর্জাতিক সম্মেলন হবে, যা আন্তর্জাতিক পরিম-লে বাংলাদেশের পরিচিতি বৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা যায়।
উত্তরণ : জলবায়ু ও পরিবেশ বিপর্যয়ে বাংলাদেশ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অন্যতম। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সম্ভাবনা কতটুকু?
পররাষ্ট্রমন্ত্রী : জলবায়ু ও পরিবেশ বিপর্যয়ে বাংলাদেশ যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অন্যতম সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহই নেই। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যাগুলো বাংলাদেশের উন্নয়নকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে, যা নিকট ভবিষ্যতে নিশ্চিতভাবেই আরও প্রকট রূপ ধারণ করবে। বাংলাদেশ ক্রমাগতভাবে অভিযোজনের জন্য নতুন ও অতিরিক্ত বৈদেশিক সাহায্যের সংস্থান এবং সহজে প্রযুক্তি হস্তান্তরের দাবি জানিয়ে আসছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার দেশসমূহের অভিযোজন ও প্রশমন কর্মসূচি বাস্তবায়নে উন্নত দেশসমূহ থেকে সহায়তা প্রাপ্তির বিষয়ে বাংলাদেশ জোরাল দাবি জানিয়ে আসছে। যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বের সামগ্রিক টেকসই উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি, সে কারণে এই হুমকি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা ক্লাইমেট চেঞ্জের ব্যাপারে নিবিড়ভাবে চলমান এই নেগোসিয়েশনের প্রধান কাঠামো UNFCCC-এর Conference of the Parties (COP)-এর মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য উন্নত দেশসমূহের কাছে পর্যাপ্ত অর্থায়ন প্রস্তাব করে আসছে। এটি আশ্বস্ত হওয়ার বিষয় যে UNFCCC-এর আওতায় Green Climate Fund (GCF)
এখন চালু হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের জন্য GCF থেকে দেশের জলবায়ু বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ অর্থাৎ অভিযোজন সম্পর্কিত প্রকল্পে অধিক ও অর্থায়ন দাবি ও প্রাপ্তির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। Copenhagen Commitment অনুযায়ী ২০২০ পরবর্তী প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিতকরণ প্রক্রিয়া এখনও Climate Negotiation-এর মাধ্যমে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ২০১৫-এর মধ্যে আইনি বাধ্যবাধকতা সম্পন্ন যে Climate Agreement হতে যাচ্ছে তাতে আশা করা যায় যে, উন্নয়নশীল দেশসমূহ প্রয়োজনীয় জলবায়ু অর্থায়নের নিশ্চয়তা পাবে। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য একটি অগ্রগতি হলো COP-19-G Warsaw International Mechanism for Loss and Damage শীর্ষক একটি কাঠামো সৃষ্টি হয়েছে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশসমূহের আর্থিক সহায়তা পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
উত্তরণ : আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশের অবদানÑ
পররাষ্ট্রমন্ত্রী : জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মৌলিক মূল্যবোধের সঙ্গে সম্পর্কিত। ১৯৮৮ সালে ক্ষুদ্র পরিসরে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ সংখ্যক শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে নিজের অবস্থান সুসংহত করেছে। এ পর্যন্ত পৃথিবীর ৩৯টি দেশে ৫৪টি মিশনে চ্যালেঞ্জিং পরিবেশে বাংলাদেশের ১ লাখ ২৮ হাজার ১৩৩ সেনা ও পুলিশ শান্তিরক্ষী অত্যন্ত সুনাম ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে আমাদের জাতীয় পতাকার মর্যাদাকে সমুন্নত করেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের ১১৯ শান্তিরক্ষী তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের ৮ হাজার ৪৫৫ শান্তিরক্ষী মোট ১০টি মিশনে নিয়োজিত আছেন। নারীর ক্ষমতায়নে আমাদের অর্জনের প্রতিভূ হিসেবে আমাদের নারী পুলিশ সদস্যরা সর্বোচ্চ সংখ্যায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত আছেন। সঙ্গত কারণেই জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন ২০১১ সালে বাংলাদেশ সফরকালে এই উক্তি করেছিলেন ‘No country has done more for global peace than you.’
গত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪-তে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অধিবেশনকালে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কিত শীর্ষপর্যায়ের এক বৈঠকে যৌথ সভাপতি হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগামী দিনগুলোতে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আরও জনবল, বিমান ও সামরিক সরঞ্জামাদি এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক পর্যায়ের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের অবদানকে আরও বিস্তৃত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এ প্রসঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঢাকার অদূরে অবস্থিত Bangladesh Institute of Peace Support Operation Training (BIPSOT)-কে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বিশেষত নারী শান্তিরক্ষীদের প্রশিক্ষণের জন্য একটি Centre of Excellence-এ পরিণত করার আগ্রহ ব্যক্ত করেন। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি বিভিন্ন সংঘাত-পরবর্তী পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের আওতায় শান্তি নির্মাণ (Peace Building) কার্যক্রমেও বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাত্রা ও পরিধি আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে আমাদের উদ্যোগ প্রত্যাশিত অগ্রগতি অর্জন করেনি বলে অনেকে অভিযোগ করেন। অন্যান্য কারণ ছাড়াও এ জন্য বাংলাদেশের আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রিতা ও দুর্নীতির কথা বলা হয়ে থাকে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী : বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকারের সার্বিক প্রচেষ্টার কথা সর্বজনবিদিত। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশ সরকার সব মিলিয়ে যে ধরনের সুবিধাদি দিয়ে থাকে তা দক্ষিণ এশিয়া তো বটে, বিশ্বের যে কোনো দেশেই বিরল। বিদেশি বিনিয়োগ সুরক্ষার জন্য দেশের বিদ্যমান আইনি কাঠামো যেমন অত্যন্ত কার্যকর তেমনই সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিনিয়োগ সুরক্ষার জন্য দ্বিপাক্ষিক চুক্তিও সম্পন্ন করছে। সরকারের এসব ব্যবস্থার কারণে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ প্রতিবছরই উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির এ গতি যে প্রত্যাশার চেয়ে কম তা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে। প্রতিবেশী ভারত ও নিকটবর্তী অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আশাপ্রদ নয়। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও অবকাঠামোর অভাব, আমলাতন্ত্রের অদক্ষতা, কোথাও কোথাও দুর্নীতি এজন্য দায়ী। সরকার এসব বিষয়ে অবহিত আছে এবং এসব সমস্যা দূর করার জন্য সচেষ্ট রয়েছে।
উত্তরণ : আমাদের মধ্যপ্রাচ্য নীতি কতটা ফলপ্রসূ হয়েছে?
পররাষ্ট্রমন্ত্রী : পররাষ্ট্রনীতির সফলতার সকল মাপকাঠিতেই বাংলাদেশের মধ্যপ্রাচ্য নীতি অত্যন্ত সফল। এক্ষেত্রে আমি কয়েকটি বিষয়ের দিকে আপনাদের দৃষ্টি আকর্যণ করতে চাই।
ভিভিআইপি/ভিআইপি ভিজিট : বাংলাদেশের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ২০০৯ এবং ২০১২ সালে সৌদি আরব এবং ২০১১ ও ২০১২ সালে কুয়েত সফর করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০০৯ সালে সৌদি আরব এবং কাতার, ২০১০ সালে কুয়েত, ২০১১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ২০১২ সালে কাতার ও ইরান সফর করেন। ২০১৩ সালে তিনি পুনরায় সৌদি আরব সফর করেন। রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান পর্যায়ের এ সফরগুলোর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিগত কয়েক বছরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পরিবেশমন্ত্রী, কাতারের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী ও সহকারী মন্ত্রী, সৌদি আরবের প্রিন্স আল ওয়ালিদ বিন তালাল এবং প্রিন্সেস আমিরাহ, সৌদি মজলিস-এ সূরার স্পিকার, বাহরাইনের সংসদীয় প্রতিনিধি দল, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রীসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি দল সরকারি এবং বেসরকারিভাবে বাংলাদেশ সফর করেন। বাংলাদেশ থেকেও পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি দল বহুবার মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ সফর করেন। মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি প্রবাসীদের স্বার্থরক্ষাসহ ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিল্প, সংস্কৃতি, ক্রীড়া ইত্যাদি দ্বি-পাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো এসব সফরে আলোচিত হয়, যা সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে সম্পর্কের সার্বিক উন্নয়নে বহুমাত্রিক ভূমিকা রেখেছে।

২০০৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব সফর এবং দুদেশের শীর্ষনেতাদের মধ্যে ঐতিহাসিক বৈঠকের ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সৌদি সরকার সে দেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাধারণ ক্ষমা ও ইকামা পরিবর্তনের সুযোগ প্রদান করায় সে দেশে কর্মরত লাখ লাখ বাংলাদেশি উপকৃত হয়েছেন। বাহরাইন, কাতার ও ওমানে বিগত কয়েক বছরে জনশক্তি ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে জনশক্তি রপ্তানি সংশ্লিষ্ট কয়েকটি চুক্তি/সমঝোতা স্মারক সম্পাদনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন, যা সম্পন্ন হলে সেসব দেশে অধিক হারে জনশক্তি রপ্তানির পথ উন্মুক্ত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। গতানুগতিকভাবে জিসিসিভুক্ত দেশগুলোকে বাংলাদেশের শ্রমবাজার হিসেবে বিবেচনা করা হলেও সরকারের সফল নীতির ফলে বিগত কয়েক বছরে জর্ডান, লেবানন ও ইরাকে লক্ষাধিক শ্রমিক প্রেরণ করা সম্ভব হয়েছে, যা সরকারের মধ্যপ্রাচ্য নীতির বিশেষ সফলতা হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
অর্থনৈতিক/বাণিজ্যিক সম্পর্ক : বর্তমান সরকারের আমলে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি/সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ ছাড়া বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আরও অনেকগুলো চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য প্রক্রিয়াধীন আছে। বিগত কয়েক বছরে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইরানের মধ্যকার যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন, ইরানের সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত কয়েক বছরে এসব দেশের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিনিয়োগ : মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের নতুন দিক উন্মোচিত হয়েছে। আগে শুধু জনশক্তি রপ্তানি বিষয়টিই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও দিক-নির্দেশনায় উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ, অবকাঠামো খাত, তৈল শোধনাগার, বিমানবন্দর, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ ইত্যাদি খাতে বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা চলছে। আশা করা যাচ্ছে, এসব দেশ অচিরেই বাংলাদেশে এসব খাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগ করবে।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা : মধ্যপ্রাচ্যে দেশসমূহের সাথে বাংলাদেশ বিশ্বসভায় অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুসমূহে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। সম্প্রতি গাজা সংকটে বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে জাতিসংঘ, ওআইসি, ন্যামসহ সকল ফোরামে জোরাল বক্তব্য রেখেছে, যা বিশ্বসভা বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। এ সংকটের শিকার বিপর্যস্ত ফিলিস্তিনিদের বাংলাদেশ মানবিক সহায়তা প্রদান করে এবং আরও সহায়তা প্রদানের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। ইরাক সংকট, সিরিয়া সংকট, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ইত্যাদি সংবেদনশীল ইস্যুতে আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘের প্রস্তাবাবলি, বাংলাদেশের সংবিধান ও পররাষ্ট্রনীতি এবং গণপ্রত্যাশার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সরকার অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে অবস্থান নিয়েছে, যা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সমাদৃত হয়েছে এবং এতদঞ্চলে বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণে ভূমিকা রেখেছে।
নতুন কূটনৈতিক মিশন স্থাপন : মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের কূটনৈতিক উপস্থিতি বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণ ও প্রবাসীদের অধিকতর সেবার লক্ষ্যে লেবাননের বৈরুতে দূতাবাস স্থাপন করেছে। বিভিন্ন দূতাবাসের জনশক্তি ও অবকাঠামো সম্প্রসারণ করা হয়েছে। নিবিড় কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতে ওমান সরকার বাংলাদেশে ২০১২ সালে পূর্ণ দূতাবাস স্থাপন করেছে এবং বাহরাইন নতুন দূতাবাস খোলার আশ্বাস দিয়েছে।

ধর্মীয় মৌলবাদ-জঙ্গিবাদ এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ বিশ্ব শান্তির পক্ষে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে আমাদের দেশেও তার রক্তাক্ত উত্থান দেখেছি। জঙ্গিবাদ-আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় আমাদের সাফল্যকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
পররাষ্ট্রমন্ত্রী : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের ধর্মীয় মৌলবাদ-জঙ্গিবাদ এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদবিরোধী কঠোর অবস্থান বিশ্বজুড়ে সর্বজনবিদিত ও প্রসংশিত। বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি ধর্মীয় মৌলবাদ-জঙ্গিবাদের লীলাভূমিতে পরিণত হয়েছিল। মৌলবাদী-জঙ্গিবাদীদের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হতো। এ দেশের মাটি প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেওয়া হতো। বিশ্ববাসী এখন জানেন যে বাংলাদেশ সে দুরবস্থা থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে এসেছে। ধর্মীয় মৌলবাদী-জঙ্গিবাদীদের এ দেশের মাটি থেকে সমূলে চিরতরে উৎখাত করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে তার সাম্প্রতিক ভাষণেও দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন যে, বাংলাদেশের মাটি আর কখনও বিদেশিদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হবে না। ধর্মীয় মৌলবাদ-জঙ্গিবাদ এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদবিরোধী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ অবস্থান বিশ্বজুড়ে সমাদৃত হয়েছে।
উত্তরণ : দক্ষ মানবশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে আমাদের সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন আছে। আপনার ব্যাখ্যা কী?
পররাষ্ট্রমন্ত্রী : অন্যান্য ক্ষেত্রের মতোই জনশক্তি রপ্তানি কোনো একপাক্ষিক প্রক্রিয়া নয়। দুটি পক্ষের চাহিদা ও সরবরাহের মেলবন্ধনের ফলেই জনশক্তির আমদানি রপ্তানি হয়। এটি সত্য যে, বিশ্বে নির্মাণ ও এই ধরনের কাজ যে গতিতে বেড়ে চলেছে, তাতে শ্রমিক প্রেরণকারী দেশসমূহ থেকে আধাদক্ষ শ্রমিকের চাহিদাই আসলে বেড়ে চলেছে। দক্ষ শ্রমিক বলতে আমরা যেসব পেশাজীবীদের বুঝে থাকি বিশ্ববাজারে তাদের চাহিদা বৃদ্ধির বিষয়টি এর সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশ থেকে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা যেমন বৃদ্ধি পায়Ñ বর্তমান সরকার সে লক্ষ্যে যথেষ্ট প্রস্তুতি ও সক্ষমতার জন্য বিভিন্ন নীতি ও আইন ইতোমধ্যেই প্রণয়ন করেছে ও করে যাচ্ছে। বৈদেশিক কর্মসংস্থান নীতি ২০০৬ হালনাগাদ করে বৈদেশিক কর্মসংস্থান নীতি ২০১৩-এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। Bureau of Manpower, Employment and Training (BMET) ৩৭টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে গুরুত্বারোপের ফলে নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির পরিবেশ সৃষ্টি হবে বলে আশা করা যায়।
উত্তরণ : রেমিট্যান্স আমাদের জাতীয় আয়ের একটা সিংহভাগ। জনশক্তি রপ্তানি এবং রেমিট্যান্স বৃদ্ধিকে সরকারের সাফল্যের একটা মানদ- বলা হয়ে থাকে। প্রশ্ন হচ্ছে, শ্রমশক্তি রপ্তানি এবং মেধা পাচারের সঙ্গে এই প্রপঞ্চটির সমীকরণ কীভাবে করবেন? বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ উন্নয়নের জন্যই মেধা পাচার বা ব্রেনড্রেন বন্ধ হওয়া দরকার। এ ব্যাপারে আপনার কী মত?
পররাষ্ট্রমন্ত্রী : এ কথা এখন সন্দেহাতীতভাবে সত্য যে আমাদের জাতীয় আয়ে রেমিট্যান্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। দেশের বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অর্জনের পশ্চাতে এর রয়েছে ব্যাপক অবদান। জনশক্তি রপ্তানির ফলেই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আজ এ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

শ্রমশক্তি রপ্তানি বলতে মূলত বোঝায় অদক্ষ, আধাদক্ষ ও দক্ষ মানবসম্পদ সুনির্দিষ্ট চুক্তি (বেতন ও সময়কাল) এর মাধ্যমে নির্ধারিত দেশে প্রেরণ। এটি মোটামুটি সরকার নিয়ন্ত্রিত একটি ব্যবস্থাপনা বা প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় যারা বিদেশ যান তারা নির্ধারিত দেশে নির্ধারিত কর্মসম্পাদনের মাধ্যমে যা আয় করেন তা রেমিট্যান্স আকারে দেশে প্রেরণ করেন।
অন্যদিকে ব্রেনড্রেন বলতে বোঝায় উচ্চ শিক্ষিত ও প্রতিভাবান ব্যক্তিরা যখন নিজ দেশে প্রত্যাশিত কর্মসংস্থানের অভাবে বিদেশে গিয়ে চাকরি গ্রহণ করেন এবং সে দেশেই স্থায়ী হন। ফলে মাতৃভূমি তাদের মেধা তথা আয় থেকে বঞ্চিত হয়।
ব্রেনড্রেন ধারণাটি আগে যতটা নেতিবাচক ছিল এখন কিন্তু তা আর নেই। দেশের উচ্চ শিক্ষিত ও প্রতিভাবান সন্তানরা এখন বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা শেষে সেখানে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন এবং একপর্যায়ে অর্জিত সম্পদ, মেধা ও দক্ষতা নিয়ে দেশে ফিরে এসে এসব কাজে লাগাচ্ছেন। এ কারণেই হয়তো ব্রেনড্রেন ধারণাটি এখন আর আগের মতো এতটা আলোচিত বিষয় নয়।
শ্রমশক্তি রপ্তানি বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। দক্ষ শ্রমশক্তি রপ্তানি বহির্বিশ্বে একটি দেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। তাই আধাদক্ষ শ্রমিক রপ্তানির পাশাপাশি দক্ষ শ্রমিক রপ্তানিও একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বহির্বিশ্বে একটি দেশের ইতিবাচক ইমেজ তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি হস্তান্তরেও একটি দেশের ডায়াসপোরাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার সুযোগ রয়েছে। তাই শ্রমশক্তি রপ্তানি ও অর্থনীতির অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন বিষয় দুটিকে যে কোনো একটি দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা না করে সমন্বিতভাবে বিশ্লেষণের সুযোগ রয়েছে। শ্রমশক্তি রপ্তানি, অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন ও ডায়াসপোরা ব্যবস্থাপনা এই ৩টির মধ্যে এক ধরনের কার্যকর ও যথাযথ ভারসাম্য বজায় রাখার মাধ্যমে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উন্নয়ন এবং একই সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তাদের অবদান নিশ্চিতকরণের বিষয়ে সরকার সচেষ্ট রয়েছে।
উত্তরণ : কতগুলো দেশের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে? কতগুলো দেশে বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ দূতাবাস আছে? নতুন কী পরিকল্পনা আছে?
পররাষ্ট্রমন্ত্রী : বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়”-এর আলোকে শুধুমাত্র ইসরায়েল ছাড়া বিশ্বের প্রায় সব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের ৫২টি দেশে বাংলাদেশের ৬৮টি মিশন রয়েছে, যার মধ্যে ৫১টি পূর্ণাঙ্গ দূতাবাস, ২টি স্থায়ী মিশন, ৮টি কনস্যুলেটে জেনারেল, ৩টি ডেপুটি হাইকমিশন, দুটি সহকারী হাইকমিশন, একটি কনস্যুলেট এবং একটি ভিসা অফিস। এ ছাড়া আরও ৬৯টি দেশের সাথে সমবর্তী দায়িত্ব অর্পণের মাধ্যমে বিদেশস্থ আমাদের দূতাবাসগুলোর সাহায্যে কূটনৈতিক যোগাযোগ রক্ষা করা হয়। বাকি দেশগুলোর সঙ্গে অবৈতনিক কনসাল জেনারেল নিয়োগের মাধ্যমে কূটনৈতিক যোগাযোগ রাখা হয়। সম্প্রতি অস্ট্রিয়া, পোল্যান্ড ও ডেনমার্কে আরও ৩টি পূর্ণাঙ্গ দূতাবাস স্থাপনের সব প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। চলতি বছরেই উক্ত ৩টি দূতাবাসের কার্যক্রম শুরু করা হবে। এ ছাড়াও, আফগানিস্তানের কাবুল, সুদানের খার্তুম ও সিয়েরা লিয়নের ফ্রিটাউনে ৩টি মিশন স্থাপনের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি প্রাপ্তির পর প্রস্তাবগুলো অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতির জন্য প্রক্রিয়াধীন আছে। তা ছাড়া রুমানিয়ার বুখারেস্ট (পুনঃস্থাপন), নাইজেরিয়ার আবুজা ও আলজেরিয়ার আলজিয়ার্সে পূর্ণাঙ্গ দূতাবাস স্থাপন, ভারতের চেন্নাইয়ে উপ-হাইকমিশন ও গৌহাটিতে সহকারী হাইকমিশন স্থাপনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি গ্রহণ করা হয়েছে।

পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে আমাদের বর্তমান অগ্রাধিকার এবং আশু ও দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য কী?
পররাষ্ট্রমন্ত্রী : মহান স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকেই “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়” অনুসরণ করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি পরিচালিত হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানেও প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও জোরদারকরণের মাধ্যমে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের উজ্জ্বলতর উপস্থিতি দৃশ্যমান করার প্রচেষ্টা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা সমাধানকে বিশেষভাবে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ভারতের সঙ্গে আন্তর্জাতিক নদীসমূহের পানি বণ্টন চুক্তি বিশেষ করে তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন, সীমান্তে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সীমান্তে হত্যা বন্ধ, বাণিজ্য ঘাটতি দূরীকরণ, সড়ক ও নৌপথে যোগাযোগ আরও সহজতর করাসহ অন্য সব ইস্যুতে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা আদায় নিশ্চিতকরণ, মিয়ানমারের সঙ্গে শরণার্থী সমস্যা সমাধান, বঙ্গোপসাগরের মহীসোপানে আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, এশিয়ান হাইওয়েতে সংযুক্তির মাধ্যমে মিয়ানমারের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বৃদ্ধিকরণ এবং নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে অভিন্ন পানি ও জ্বালানি নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা আমাদের পররাষ্ট্রনীতির অগ্রাধিকার। বিদেশে বাংলাদেশি শ্রম ও পণ্যের নতুন বাজার সৃষ্টি এবং প্রতিষ্ঠিত বাজার সুসংহতকরণ, জনকূটনীতি (Public Diplomacy)-এর যথার্থ প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরা, প্রবাসী বাংলাদেশিদের উন্নততর কনস্যুলার সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া, বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন আলোচিত ইস্যু, যেমনÑ জলবায়ু পরিবর্তন, Millinium Development Goals (MDG), Sustainable Development Goals (SDG), অভিবাসন কূটনীতি, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা ইত্যাদি আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের অধিকার নিশ্চিত করা আমাদের পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম প্রাধিকার। এক কথায়, সরকারের ‘রূপকল্প-২০২১’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখাই স্বল্পমেয়াদে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সব প্রয়াসের মূল লক্ষ্য।
সরকারের ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণ, MDG-এর বিভিন্ন লক্ষ্যে অর্জনে সরকারের সাফল্য তুলে ধরার পর SDG-এর অর্জনযোগ্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং তা বাস্তবায়নে সহায়তা করা, উন্নততর দেশগুলোর সঙ্গে প্রযুক্তি স্থানান্তর বা Technology Transferএর চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে দেশকে প্রযুক্তিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বৃহৎ পরিসরে সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করার লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া, অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশ চীন ও জাপানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে শিল্প স্থাপনসহ নানা ধরনের অর্থনৈতিক কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, BCIM-EC এবং BIG-B-এর লক্ষ্য বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে শক্তিশালী করার উদ্যোগে কার্যকরী ভূমিকা রাখা পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম উদ্দেশ্য। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশ সব সময়ই জোরাল ভূমিকা পালন করে আসছে। ভবিষ্যতে এসব সংস্থায় আরও দৃশ্যমান ভূমিকা পালন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনসমূহ দেশকে একটি অবদানক্ষম রাষ্ট্র হিসেবে পৃথিবীর বুকে পরিচিত করতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদেও বাংলাদেশের পণ্য ও শ্রমবাজার সম্প্রসারণ এবং প্রচলিত রপ্তানি পণ্যের পাশাপাশি নতুন নতুন রপ্তানি ক্ষেত্র সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ, মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর সকল দেশে অদক্ষ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *