উত্তাল মার্চের আজ তৃতীয় দিন। এদিন ‘বাংলাদেশ’ নামটি নির্ধারণ করা হয়
উত্তাল মার্চের আজ তৃতীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো হরতাল পালন করেন স্বাধিকার আন্দোলনে শরিক বাঙালিরা। এদিনই পূর্ব পাকিস্তানের নতুন নাম ‘বাংলাদেশ’ নির্ধারণ করা হয়। একই সঙ্গে জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণ করা হয় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা’কে।
স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আয়োজনে পল্টনের সমাবেশ থেকে এদিন অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন বঙ্গবন্ধু। এ সমাবেশ থেকেই স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করা হয়। ইশতেহার পাঠ করেন তৎকালীন স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা ও অবিভক্ত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ। সমাবেশে ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও। ভাষণে তিনি শান্তিপূর্ণভাবে অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। লুটপাট,
অগ্নিসংযোগ ও অরাজকতায় জড়িতদের যে কোনো মূল্যে প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে সমাবেশ কর্মসূচির চূড়ান্ত ঘোষণা দেন। এদিনই পূর্ব পাকিস্তানের নতুন নাম ‘বাংলাদেশ’ নির্ধারণ করা হয়। একই সঙ্গে জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণ করা হয় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা’কে।
উইকিপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী, শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠনের অধিকার অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক সরকার পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে রাজি ছিল না। যদিও ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের তারিখ নির্ধারিত হয়। কিন্তু ভেতরে ভেতরে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পশ্চিম পাকিস্তানের নেতা জুলফিকার আলি ভুট্টো এবং সামরিক বাহিনীর অফিসারদের নিয়ে ষড়যন্ত্রের নীলনকশা বুনতে শুরু করেন। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ কোনো কারণ ছাড়াই ৩ তারিখের নির্ধারিত অধিবেশন বাতিল করা হয়। এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়। সারা দেশে বিক্ষোভের বিস্ফোরণ হয়। ঢাকা পরিণত হয় মিছিলের নগরীতে। বঙ্গবন্ধু সারা দেশে পাঁচ দিনের হরতাল এবং অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। তার আহ্বানে সারা পূর্ব পাকিস্তান কার্যত অচল হয়ে পড়ে। সামরিক সরকার কারফিউ জারি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে, কিন্তু এতে আন্দোলন প্রশমিত হয়নি।
এদিকে পূর্ব পাকিস্তানের আন্দোলনের সুতিকাগার ঢাকার প্রতিরোধের সংবাদ যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেজন্য পাকিস্তানি সামরিক জান্তা সংবাদপত্রে সেন্সর আরোপ করে। ৩ মার্চ ১৯৭১-এ ১১০ নম্বর সামরিক আদেশ জারি করা হয়। ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসক লে. জেনারেল সাহেবজাদা মো. ইয়াকুব খান সামরিক আদেশবলে পত্রপত্রিকাগুলোয় পাকিস্তানের বা সার্বভৌমত্বের পরিপন্থি খবর, মতামত বা চিত্র প্রকাশ নিষিদ্ধ করেন। শুধু সেন্সরশিপ আরোপই নয়, কোনোভাবেই যাতে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের সংবাদ কোনো সংবাদপত্রে ছাপা না হয়, সেজন্য প্রতিটি সংবাদপত্রের অফিসে ফোন করে বা প্রতিনিধি পাঠিয়ে হুমকি-ধমকিও দেওয়া হয়।