একমাত্র গণতন্ত্রই উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে পারে
আইপিইউ সম্মেলন: সক্ষমতার জানান দিয়ে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গত ১ এপ্রিল শুরু হয় আন্তর্জাতিক শীর্ষ সংসদীয় সংস্থা ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন-আইপিইউ’র পাঁচ দিনব্যাপী ১৩৬তম সম্মেলন। সারাবিশ্বের ১৩২টি দেশের দেড় সহ¯্রাধিক সংসদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বর্ণিল আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা গণতন্ত্রকে শুধু একটি ব্যবস্থা হিসেবে দেখি না; বরং গণতন্ত্রকে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বাহন হিসেবে গণ্য করি।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর রাখতে হলে জনগণের আস্থা সংরক্ষণ ও লালন করাই হচ্ছে জনপ্রতিনিধিদের অগ্রাধিকারভিত্তিক নৈতিক দায়িত্ব। আমি মনে করি, একমাত্র গণতন্ত্রই মানুষের মৌলিক অধিকারসমূহ পূরণ করে উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে পারে। আমি এও আশা করি, দারিদ্র্য বিমোচন, বিশ্ব শান্তি স্থাপন এবং মানবতার কল্যাণে আইপিইউ সম্মেলনে বাস্তবধর্মী সুপারিশমালা প্রণয়ন করা হবে। তিনি বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। অনেক সংগ্রামের পথ ধরেই আমাদের এই গণতান্ত্রিক ধারা রক্ষা করতে পেরেছি। গত ১ এপ্রিল সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) বৃহৎ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিবাদকে বৈশ্বিক সমস্যা উল্লেখ করে বলেন, বিশ্ব নতুন উপদ্রবের মুখোমুখি হয়েছে। সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ নিরীহ মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে। মানুষের শান্তি বিনষ্ট করছে। জঙ্গিবাদ আজ কোনো নির্দিষ্ট দেশের সমস্যা নয়, এটি বৈশ্বিক সমস্যা। আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এ সমস্যার মোকাবেলা করতে হবে।
ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়তে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোকে আরও সহানুভূতি নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব আজ এগিয়ে যাচ্ছে। দৃশ্যমান অগ্রগতি সাধিত হয়েছে বৈশ্বিক ক্ষুধার ক্ষেত্রেও। তবুও বিশ্বের প্রায় ৮০০ মিলিয়ন মানুষ এখনও অপুষ্টিতে ভুগছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর এক বিরাট সংখ্যক শিশু পুষ্টির অভাবে সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারছে না। অসুখে-বিসুখে চিকিৎসার অভাবে সুবিধাবঞ্চিত তারা। সুযোগ পাচ্ছে না বিদ্যালয়ে যাওয়ার। অথচ প্রাচুর্যে ভরা এই বিশ্বে মানব জাতির বেঁচে থাকার সব ধরনের রসদ বিদ্যমান। তাই একটু সহানুভূতি, সহযোগিতা, পরস্পরের প্রতি মমতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ বিশ্বকে এক নিমিষেই ক্ষুধামুক্ত করতে পারে।
আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনে প্রথমেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজক জাতীয় সংসদের স্পিকার ও ১৩৬তম আইপিইউ অ্যাসেম্বলির সভাপতি ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। সম্মেলন উপলক্ষে প্রদত্ত জাতিসংঘ মহাসচিব এন্টোনিও গুতেরেসের বাণী পড়ে শোনান জাতিসংঘের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মেরেসøাব ইয়ানকা। আগত অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন আইপিইউ’র বর্তমান সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী ও সংস্থাটির সেক্রেটারি জেনারেল মার্টিন চুনগুং। এরপর সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনের উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী সংসদীয় এই বিশ্ব সংস্থার প্রথম ওয়েভ টেলিভিশন চ্যানেল ‘সিপিইউ ওয়েব টিভি’র উদ্বোধন এবং সম্মেলন উপলক্ষে একটি স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করেন। সব শেষে জাতীয় সংসদের পক্ষ থেকে সম্মেলনে আগত অতিথিদের নৈশভোজ আপ্যায়ন করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্য, সামরিক-বেসরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, দেশের বিশিষ্টজনসহ কয়েক সহ¯্রাধিক অতিথি উপস্থিত ছিলেন।
বর্ণিল-মনোলোভা উদ্বোধনী অনুষ্ঠান : বিশ্বের ১৩২টি দেশের সংসদের নির্বাচিত প্রায় দেড় হাজার জনপ্রতিনিধিদের মিলনমেলা বসেছিল জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায়। ‘বৈষম্যের প্রতিকার : সকলের জন্য মর্যাদা ও কল্যাণ নিশ্চিত’Ñ এই মূল প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ১৩২টি দেশ ও ৪২টি সহযোগী সংস্থার ৫৩ স্পিকার, ৪০ ডেপুটি স্পিকারসহ অংশগ্রহণকারী ৮৯৬ সংসদ সদস্যদের মধ্যে ২০৯ নারী সংসদ সদস্য সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষক রয়েছে ২০০-এরও বেশি।
পাঁচ দিনব্যাপী এই জমকালো ও বর্ণাঢ্য আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে। ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের পর পরিবেশন করা হয় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : আর্কিটেড অব ডেমোক্র্যাসি’ শীর্ষক একটি প্রামাণ্যচিত্র। সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ সংগ্রাম, ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ, একাত্তরের ২৫শে মার্চ পাকহানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যাযজ্ঞ, স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে জাতিসংঘ অধিবেশনে প্রথম বাংলায় বঙ্গবন্ধুর ভাষণ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলের উন্নয়ন ও সাফল্যের প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরে পরিবেশন করা হয় ৩৫ মিনিটের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রথমে কোরিওগ্রাফির মাধ্যমে বাঙালির লড়াই-সংগ্রামের সুদীর্ঘ ইতিহাস ও আবহমান বাংলার সংস্কৃতি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সামনে তুলে ধরা হয়। এরপর থ্রিডি ম্যাপিং ও অটো প্রজেকশনের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনার শাসনামল পর্যন্ত বিভিন্ন উন্নয়ন ও বাংলার ঐতিহাসিক স্থাপনার চিত্র। সেখানে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখানো হয় একাত্তরের ২৫শে মার্চে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যাযজ্ঞের বর্বরতার চিত্র।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুতেই ভাষা আন্দোলনের ওপর একটি বেদনাবিধুর সংগ্রামের কোরিওগ্রাফি দেখানো হয়। হঠাৎ রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই, বাংলা চাই সেøাগানে মুখরিত হয়ে ওঠে নৌকার ওপর বসানো দৃষ্টিনন্দন সুবিশাল মূল মঞ্চ। এরপর ভাষা সংগ্রামীদের ওপর নির্মম অত্যাচারের চিত্র। এরপর চলে আসে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানের চিত্র। মাটিতে বসে লক্ষাধিক জনতা। মঞ্চে ভাষণ দিচ্ছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের স্বাধীনতা ঘোষণা সংবলিত বঙ্গবন্ধুর বর্জনির্ঘোষ ভাষণটি শুনে শিহরিত হয়ে ওঠেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বিদেশি দেড় সহ¯্রাধিক জনপ্রতিনিধি ছাড়াও কয়েক হাজার অতিথি। কোরিওগ্রাফির মাধ্যমে ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের মুহূর্তগুলো ফুটিয়ে তোলা হয়।
আইপিইউ সম্মেলনে প্রস্তাব গৃহীত : অন্য রাষ্ট্রে হস্তক্ষেপ নয়
টানা তিন দিন আলোচনা-বিতর্কের পর গত ৪ এপ্রিল কোনো সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বন্ধের প্রস্তাবটি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাস হয়েছে। উন্নয়নশীল ৪৪ দেশের কাছে হেরে গেল উন্নত ১০ দেশ। পাঁচ দিনব্যাপী বিশ্বের সর্বোচ্চ সংসদীয় ফোরাম ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) আন্তর্জাতিক সম্মেলনের চতুর্থ দিন ৪ এপ্রিল শান্তি ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাবিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে আলোচনা শেষে প্রস্তাবটি ভোটে দিলে ৪৪ : ১০ ভোটে তা পাস হয়। একটি দেশ বেলিজিয়াম ভোট প্রদানে বিরত থাকে। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণবিষয়ক হস্তক্ষেপ বন্ধে গৃহীত এ প্রস্তাবটি ৫ এপ্রিল আন্তর্জাতিক সম্মেলনের নির্বাহী কমিটিতে অনুমোদনের পর তা ঢাকা ঘোষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
প্রস্তাবের পক্ষে বাংলাদেশ, ভারত, চীনসহ অবস্থান নেওয়া দেশের নেতারা কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বন্ধের ব্যাপারে প্রথমবারের মতো দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করায় সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, কোনো দুর্বল সার্বভৌম দেশও তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সবল রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ চায় না। ভোটের পরিসংখ্যানই তার প্রমাণ। যদি খুবই প্রয়োজন হয় তবে কোন দেশে হস্তক্ষেপ করতে চাইলে অবশ্যই জাতিসংঘের অনুমোদন নিতে হবে। আর প্রস্তাবটি শুধু কাগজে-কলমে নয়, বাস্তব প্রয়োগে সব দেশকেই সোচ্চার হতে হবে। বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া জার্মানি, পোল্যান্ড, নরওয়ে, আইসল্যান্ডসহ ১০ দেশের নেতারা বলেন, এ ধরনের একটি প্রস্তাব গ্রহণ সত্যিই দুঃখজনক। এটা কার্যত গণতন্ত্রকেই ধ্বংস করার শামিল।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলায় শান্তি ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাবিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে সভাপতি প্রথমে প্রস্তাবটির ওপর কণ্ঠভোট দেন। কিন্তু কয়েকটি উন্নত দেশ সরাসরি ভোটের দাবি জানালে সভাপতি প্রস্তাবটি ভোটে দেন। ভোট গ্রহণের পর কমিটির সভাপতি ৪৪ : ১০ ভোটে প্রস্তাবটি গৃহীত হলো বলে ঘোষণা প্রদানের পরপরই সমর্থনকারী দেশগুলোর তুমুল করতালিতে পুরো মিলনায়তন প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। অন্য দেশের দ্বারা আক্রান্ত কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিদের প্রস্তাবটি পাসের পর একে অপরের সাথে কোলাকুলি ও হ্যান্ডশেক করতেও দেখা যায়।
ভোটাভুটির পর অনুষ্ঠিত আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রস্তাবের পক্ষে অবস্থান নেওয়া বাংলাদেশের প্রতিনিধি ও জাসদের কার্যকরী সদস্য মইন উদ্দীন খান বাদল বলেন, বাংলাদেশ পরিষ্কারভাবে বলতে চায় যে, অতীত ইতিহাসে আমাদের দেশটি এ ব্যাপারে অনেক ভুগেছে, কষ্ট পেয়েছে। আমরা কখনই অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নিজেদের নাক গলাই না, হস্তক্ষেপে বিশ্বাস করি না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এ বিষয়ে এক দেশ অন্য দেশকে দোষারোপ করছে। তিনি বলেন, ৫০০ বছর আগের ইতিহাস খুঁজলেই দেখা যাবে কোনো দেশ অন্য দেশের ওপর হস্তক্ষেপ করেছে। তবে আমাদের অবশ্যই গণতন্ত্রকে শ্রদ্ধা জানাতে হবে। প্রস্তাবটি ৪৪ দেশ সমর্থন করেছে। মাত্র কয়েকটি দেশ পক্ষে ভোট না দিলেও তাদের উচিত ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রতি সম্মান জানানো।
ভারতের প্রতিনিধি প্রস্তাবটি সমর্থন করে বলেন, কোনো রাষ্ট্রের অধিকার নেই যে অন্য কোনো সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে। এমন অবৈধ হস্তক্ষেপ কেউ মেনে নিতে চায় না, নেবেও না। যদি হস্তক্ষেপ করতেই হয় তবে জাতিসংঘের মতামত নিতে হবে। আর এ জন্যই তো জাতিসংঘ গঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, এই বাংলাদেশে সম্মেলনটি হচ্ছে। অথচ এই দেশটিরও লাখ লাখ মানুষের ওপর চরম নিপীড়ন, নির্যাতন হয়েছে, অসংখ্য মানুষ হত্যাকা-ের শিকার হয়েছেন। কিন্ত তখন তো অনেক বড় দেশই কোনো কথা বলেন নি। তাই, সব সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা রাখতে হবে। সব দেশেরই উচিত অন্য কোনো রাষ্ট্রে হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ করা।
প্রস্তাব সমর্থনকারী চীনের প্রতিনিধি বলেন, প্রস্তাবটির প্রত্যেকটি সংশোধনী ঐকমত্য বা ভোটের মাধ্যমে গৃহীত হয়েছে। আর এটি গণতন্ত্রেরই ফল। বেশিরভাগ দেশেরই অন্য রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের অভিজ্ঞতা রয়েছে। দীর্ঘদিন পর হলেও আজ যে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছে তা বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বাস্তবিক। প্রস্তাবটি গ্রহণের ক্ষেত্রে অনেক দেশকেই কিছুটা কম্প্রোমাইজ (আপস) করতে হয়েছে বিশ্বের বৃহত্তর স্বার্থেই।
আইপিইউকে ‘একটি পরিবার’ উল্লেখ করে রাশিয়ার প্রতিনিধি বলেন, পারস্পরিক সহযোগিতা ও শান্তির কারণেই প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছে। এ ব্যাপারে নতুন কোনো রাজনৈতিক বাধা সৃষ্টি আমাদের পরিবারের মধ্যে কাম্য নয়। আন্তর্জাতিক সুরক্ষায় ৪৮ রাষ্ট্রের সমর্থন কার্যত গোটা বিশ্বেরই বিজয়।
প্রস্তাবটির বিরোধিতা করে জার্মানির প্রতিনিধি বলেন, আইনের শাসন ও মানবাধিকার রক্ষার ব্যাপারে আমরা সব সময়ই সোচ্চার। এ কারণেই প্রস্তাবটি পাসের পর বিপদ যেন একটু বেড়েই গেল। অনেক দেশের গণতন্ত্রও হুমকির মুখে পড়তে পারে।
ভোট প্রদানে বিরত থাকার কারণ ব্যাখ্যা করে বেলজিয়ামের প্রতিনিধি বলেন, প্রস্তাবটি আমাদের কাছে খুবই অস্পষ্ট। যে খসড়াটি আনা হয়েছে তা আমাদের কাছে ঠিক মনে হয়নি। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বন্ধের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বিশ্বের সেই অবস্থা কি এখনও এসেছে? সবকিছু বিষয়ে অস্পষ্টতা থাকায় আমরা ভোট প্রদানে বিরত থেকেছি।
কিউবার প্রতিনিধি বলেন, মাত্র একটি বিষয়েই তিন তিনবার আমাদের ভোটে যেতে হয়েছে। আর এই মতপার্থক্য প্রথম নয়। প্রস্তাবটি এভাবেও মেনে নেওয়া ঠিক হয়নি। কি নিয়ে ভোট হচ্ছে তাও অনেকে বুঝতে পারেনি।
ফিনল্যান্ডের প্রতিনিধি বলেন, পূর্বের খসড়া এবং এখনকার খসড়ার বিষয়গুলো খুব স্পষ্ট নয়। কিছু কিছু জায়গায় সংশোধনীর প্রয়োজন রয়েছে। আর আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ প্রতিরোধের সিদ্ধান্তও সঠিক নয়। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বলেই কিছু সংশোধনীর প্রয়োজনের কথা বলেছি।
ইউক্রেনের প্রতিনিধি বলেন, কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশের হস্তক্ষেপ কখনই কাম্য হতে পারে না। মানবাধিকার রক্ষার নামে কোনো দেশের হস্তক্ষেপ অবশ্যই প্রতিরোধ করতে হবে। এ সময় অবৈধ হস্তক্ষেপের ব্যাপারে রাশিয়ার বিগত দিনের কথাও সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
আইপিইউ কর্তাব্যক্তিরা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে হস্তক্ষেপ বন্ধে এবারই প্রথম শান্তি ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাবিষয়ক কমিটি প্রস্তাবটি গ্রহণ এবং ভোটের মাধ্যমে তা অনুমোদন দিয়েছে। কমিটি কোনো সুপারিশ করলে নির্বাহী কমিটি সাধারণত তা অনুমোদন দেয়। গত ৫ এপ্রিল সম্মেলনের সমাপনী দিনে নির্বাহী কমিটির বৈঠকে গ্রহণ করা হবে এবং ঢাকা ঘোষণায় তা অন্তর্ভুক্ত করা হবে।