বঙ্গবন্ধু শুধু একটি নামমুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা

এক নিরীহ গৃহবধু থেকে বীরাঙ্গনা নারীর কাহিনী

ঘটনাটি আমার বড় খালুর মায়ের কাহিনী।গতকাল আমার মায়ের মুখে শুনলাম।বড় খালুর মায়ের নাম ছিল কমলা বানু।বড় খালুর নাম রজলু।

ঘটনাস্থল কুষ্টিয়ার মজমপুর গেট মঙ্গল বাড়ি এলাকার আলফার মোড়।৭১সাল।রজলুর বাবা এলাকার খুব প্রভাবশালী একজন।আমার বড় খালু মোট তিনভাই।বড় খালু সবার ছোট।বড় ভাইয়ের বিয়ে হয়েছে,বাকী দুজন বিয়ের বয়স হয় নি তখনও।যাই হোক ঘটনাটি ৭১সালের জুন মাসের দিকে।তখন এলাকায় অনেক কুলাঙ্গার রাজাকারে যোগ দিচ্ছে আবার অনেকে দেশের টানে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে ঘর ছাড়ছে।রজলুর বাবা এলাকায় খুব প্রভাবশালী,তাই তাকে রাজাকারে যোগ দেবার আমন্ত্রন জানানো হইল।কিন্তু খালুর বাবা তথা আমার নানা কালক্ষেপন করতে লাগলেন,তিনি গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতেন প্রকাশ্যে কিছু করতেন না।কিন্তু কোন ভাবে খবর পেয়ে যায় রাজাকারের দল।তারা তখন এক সন্ধ্যায় নানার বাসায় হামলা চালায়,তখন আমার খালু আর খালুর মেজো ভাই যশোরে কোন এক কাজে গেছিলো।বাসায় ছিলো খালুর মা বাবা বড় ভাই আর ভাবী।রাজাকারেরা বিভিন্ন মানসিক চাপ সৃস্টি করে তথ্য বের করার চেষ্টা চালায়।কিন্তু কিছুতেই না পেরে তখন বাড়ীর উঠোনের উপর খালুর নানী আর ভাবীকে বেঁধে ফেলে আর দুজনকেই উলঙ্গ করে দেয় (উফ!)
তারপরও খালুর বড় ভাই আর বাবা কোনভাবেই মুখ খোলে নাই।শেষে বেজন্মার বাচ্চারা তাদের দুজনকে খালুর নানী আর ভাবী এর সামনেই জবাই করে ফেলে।(উফ!পাঠক বুঝতে পারছেন কতটা নৃশংস দৃশ্য?)তারপর রাজাকারেরা খালুর ভাবীকে নির্যাতন করে চলে যায় আর ভাবী ঐখানেই মারা যায়।নানী কিন্তু তখনও বাঁধা অবস্থায় আছে আর তাঁর মুখটিও ছিলো বাঁধা।
সারারাত ঐভাবে ই ছিলো নানী,ভোরবেলায় নানীদের রাখাল উঠনেই ঢুকেই দৃশ্য দেখে চিল্লায় ওঠে।সেই রাখালের নাম ছিলো কানু।কানু তখন কোমড়ের গামছা খুলে নিজের চোখ বেঁধে ফেলে।তারপর কোনভাবে নানীর বাঁধন খুলে নানীকে কাপড় এনে দেয়।তারপর তাঁরা দুজন মিলে তিনটা লাশকে কবর দেয়।উফ!নানি তার নিজের স্বামী,সন্তান আর ছেলের বউকে কবর দিলো চিন্তা করা যায়?কতটা কঠিন পরিস্থিতি?

দু দিন পর খালু আর মেজো ভাই বাড়ী আসলে তাদের তখনই টাকা পয়সা দিয়ে ভারত পাঠিয়ে দেয়।

এরপর থেকে নানীর সাহস বেড়ে যায়,যে মহিলা চোখের সামনে জবাইকৃত স্বামি ছেলেকে কবর দেয় সে তখন হিংস্র।খুব শান দিয়ে একটা বড় রামদা বানায় সে।ওটা সব সময় সঙ্গেই রাখত আর তাঁর সামনে যদি কোন রাজাকার পরত ঐলাকায় সে কোন ভাবে জান নিয়ে ফিরতে পারত না।কোন ভাবে যদি নানী খবর পেয়েছে রাজাকার আসছে জান তখনই কতল।একবার নানীর বাসায় তিনজন মুক্তিযোদ্ধা আশ্রয় চায়,নানী আশ্রয় দেয়।ভোরবেলা কয়েকজন মিলিটারী নিয়ে দুজন রাজাকার আসে তাদের বাড়ি,উঠোনে এসে হাঁক পারে বাড়িতে কেউ আছে কিনা? ভেতরে মুক্তিযোদ্ধারা পজিশন নিয়ে নেয়,কিছু আলাপ করে নানী বাইরে আসে শাড়ির আঁচলে লুকিয়ে রাখা রামদা নিয়েই বের হন তিনি,দুজন রাজাকার এসে নানীর চুল মুঠি করে ধরতে যায় আর সঙ্গে সঙ্গে নানী দুজনের দেহ থেকে মাথা আলাদা করে দেন ভিতর থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্রাশ ফায়ারে বাকী মিলিটারী গুলোও মারা পড়ে।এরপর থেকে নানী একটু পালায় থাকত,কারণ তখন মিলিটারী রা নানীকে খুজত,কি৮ন্তু নানী পালায় থাকলেও সুযোগ পাইলেই একলা রাজাকার পাইলে কোপ দেওয়ার চেষ্টা করত,ফলে ঐ এলাকায় আর কোন রাজাকার চলার সাহস পাইতো না নানীর ভয়ে।

নানী এতটাই ঘৃণা করত এ স্বাধীন হবার পরও বেশ কয়েকজন রাজাকারের হাত কেটে ফেলেছিল।

পাঠক বলুনতো একজন সাধারন গৃহবধু কতটা কষ্ট পেলে এতটা ভয়ংকর হতে পারে?

আসুন মনের সবটুকু ঘৃণা ছিটিয়ে দেই সেই বেজন্মা রাজাকারদের।

আর শত সহস্র শ্রদ্ধা জানাই এইরকম জানা অজানা সেই সব নারী পুরুষের প্রতি।

মহান স্বাধীনতা দিবস অমর হোক,বাংলাদেশ বেঁচে থাকুক হাজার বছর।


বিঃদ্রঃ আম্মুর কথা তে সামান্য সংশোধন করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *