এসো ৭১ এর গল্প শোনাই সবাই মিলে – জ্বিনের বাদশা
আজ অনেকদিন পর উত্তরে হাওয়া বইছে, গাছগুলো বাতাসে দোল খাচ্ছে। ঘরে বসেও স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি বাতাসে গাছের শো- শো শব্দ। একটু পর কোথা থেকে যেন উটকো, পোড়া গন্ধ নাকে আসলো। নাক চেপে ধরে উত্সুক হয়ে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালাম। চোখে পড়লো না কোন পরিবর্তন। হঠ্যাত্ মনে পড়েগেল আছিয়ার কথা , সেই ছোটবেলা থেকেই আমরা একসাথে খেলতাম। কিন্তু এখন তার কোন চিহ্ন নেই দুনিয়াতে। মনেকরেই বুকের ভেতরটা কেমন মুচরিয়ে উঠলো, আমার সর্বস্ব পেতে চাইলো এক শান্তির আশ্রয়। তারপর মনে পড়ল সেই যুদ্ধের সময়কার কথা, আছিয়া আর ফুলভানুর কথা। সেদিন দুপুরে সারা গ্রামে হই হই শুরু হল।
“গ্রামে নাকি মেলেটারি আইবো” আমরা বাদে সবাই গ্রাম থেকে পালাতে লাগলো। আমি দাদুর সাথে বারান্দায় বসে ছিলাম।” হঠ্যাত্ দেখি ১০/১২ জন মেলেটারি আছিয়া আর ফুলবানুরে ধইরা নিয়া যাইতেছে। ওরা কান্দিতে কান্দিতে বলতাছে আমারে ছাইরা দেন গো আপনাগো পায়ে পড়ি… আল্লায় আপনাগো ভালো করবো আমাগো ছাইরা দেন। গেঙ্গিয়ে গেঙ্গিয়ে সেকি কান্না। পেছনে আজগর মেম্বার ও তার ভাগনে কান্ধে বন্দুক ঝুলায়া আসতিছে। ফুলবানু আর আছিয়ারে বলতাছে কান্দিস না আমরা আছি তোগো কিচ্ছু হবো না। তার পর মেলেটারিরা দাদুর সাথে কথা বলে আমাদের বাড়িতে উঠলো। তখন আমি বুঝলাম পাঁচ কি ছ’দিন আগে কেন আমাদের বাড়ির সবাই নির্ধারিত স্থাগে গিয়েছে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই আমরা বের হলাম। উঠান পেরুতেই শুনতে পেলাম আছিয়ার বুকফাটা আর্ত চিত্কার আল্লাগোউ .. আমারে ছাইরা দেন গো.. তার পর আর্তস্বরে গো গো শব্দ শুনতে শুনতে আমরা চলে এলাম।” কথাগুলে শেষকরে আমার দিকে তাকালো গমির মিয়া। আমি তখনো তাকিয়ে আছি চোখ বেয়ে জল পড়ছে নিচে।