এ বছরই দুটি অত্যাধুনিক সাবমেরিন
নৌবহরে যুক্ত হলো নতুন ৩টি যুদ্ধজাহাজ
দেশের নৌবহরে যুক্ত হয়েছে আরও নতুন ৩টি যুদ্ধজাহাজ। এ বছরই নৌবহরে প্রথমবারের মতো আসছে দুটি অত্যাধুনিক সাবমেরিন। এ ছাড়া সরকারের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় হাতে নেওয়া হয়েছে যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ কার্যক্রম। নৌবাহিনীকে আরও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে চীনে নতুন দুটি করভেট নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থানগত ও কৌশলগত কারণে বাংলাদেশের জলসীমা ও তার সম্পদ রক্ষায় নৌবাহিনীকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। নতুন ৩টি যুদ্ধজাহাজ কমিশনিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী আরও একধাপ এগিয়ে গেল। চলতি বছর নৌবাহিনী পায় গৌরবময় স্বাধীনতা পদক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৯ মার্চ চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর ঘাঁটিতে নবযুক্ত তিন যুদ্ধজাহাজ বানৌজা সমুদ্র অভিযান, স্বাধীনতা ও প্রত্যয়-এর কমিশনিং করেন এবং জাহাজের অধিনায়কদের হাতে কমিশনিং ফরমান তুলে দেন। এই প্রক্রিয়ায় জাহাজ ৩টি নৌবাহিনীতে আনুষ্ঠানিকভাবে অপারেশনাল কার্যক্রমে যুক্ত হলো।
এ উপলক্ষে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বিএনএস ঈসা খাঁ নৌঘাঁটিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বসভায় মাতৃভূমিকে মাথা উঁচু করে দাঁড় করাতে ঐক্যের আহ্বান জানান। নৌবাহিনী সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা আপনাদের নিয়ে ২০২১ সালে উচ্চ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে চাই। আগামী প্রজন্মের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় রূপ দিতে চাই। আমরা আমাদের মাতৃভূমি যেন বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে চলতে পারে সে লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি এবং এ জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে চলি।
বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী নৌবাহিনীকে একটি আধুনিক শক্তিশালী ও সক্ষম ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনীতে রূপান্তরে বর্তমান সরকারের আন্তরিক প্রয়াসের কথা আবারও তুলে ধরেন। বলেন, আমাদের সরকারের আমলে নৌবাহিনীতে মেরিটাইম হেলিকপ্টার এবং মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট সংযুক্ত হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ইতোমধ্যে দ্বিমাত্রিকে পরিণত হয়েছে। ত্রিমাত্রিকে পরিণত হতে খুব বেশি সময় নেবে না। তিনি যুদ্ধবহর বৃদ্ধির পাশাপাশি নৌবাহিনীর নিজস্ব বিমান ঘাঁটিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয় তুলে ধরেন। বাংলাদেশের সামুদ্রিক সম্পদ রক্ষা ও দুর্যোগ মোকাবিলায় বঙ্গবন্ধু যে আধুনিক নৌবাহিনীর স্বপ্ন দেখেছিলেন তা শ্রদ্ধার সাথে তিনি স্মরণ করেন। নব সংযোজিত জাহাজ ৩টি নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্তির ফলে দেশের বিশাল জলসীমার সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি সমুদ্রে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান রোধ, গভীর সমুদ্রে উদ্ধার তৎপরতা বৃদ্ধি, মৎস্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ, তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ব্লকসমূহে অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি সার্বিকভাবে দেশের ব্লু ইকোনমির উন্নয়নে সহায়ক হবে। তিনি বলেন, ক্রমাগত সম্পদ আহরণের ফলে বিশ্বের স্থলভাগের সম্পদ আজ সীমিত। তাই সারাবিশ্ব এখন নতুন সম্পদের খোঁজে রয়েছে। এই সরকার ব্লু ইকোনমির মাধ্যমে সমুদ্রসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করে। প্রসঙ্গক্রমে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌবাহিনীর অবস্থান আরও সুসংহত এবং বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রাখতে শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। নৌবাহিনী সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিশাল সমুদ্র আপনাদের কর্মক্ষেত্র। লোকচক্ষুর অন্তরালে উত্তাল সমুদ্রে দিবারাত্রি কঠোর পরিশ্রম ও কর্তব্যনিষ্ঠার যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আপনারা স্থাপন করেছেন, দেশবাসী তা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।
প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন, আমাদের সরকার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় দেশে যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। ভবিষ্যতে এই চট্টগ্রামের ডাইডকে যুদ্ধজাহাজ তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ বছরই বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নৌবহরে দুটি অত্যাধুনিক সাবমেরিন (ডুবোজাহাজ) আসছে। এর ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জ শিপইয়ার্ডে নিজস্ব প্রযুক্তিতে সাবমেরিনের জন্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, সদ্য সংযোজিত বানৌজা ‘সমুদ্র অভিযান’ যুক্তরাষ্ট্র থেকে এবং বানৌজা ‘স্বাধীনতা’ ও ‘প্রত্যয়’ চীন থেকে সংগৃহীত। সমুদ্র অভিযান জাহাজটি ঘণ্টায় প্রায় ২৯ নটিক্যাল মাইল গতিতে চলতে সক্ষম। অন্যদিকে, স্বাধীনতা ও প্রত্যয় জাহাজ দুটি বিমান বিধ্বংসী কামান, জাহাজ বিধ্বংসী মিসাইল ও সমুদ্র তলদেশে টার্গেটে আঘাত হানতে সক্ষম। নৌবাহিনী সূত্রে জানানো হয়েছে, বানৌজা সমুদ্র অভিযান বাংলাদেশ নৌবহরের নবম ফ্রিগেট স্কোয়াড্রনের দ্বিতীয় যুদ্ধজাহাজ। এই স্কোয়াড্রনের প্রথম যুদ্ধজাহাজ বানৌজা সমুদ্র জয় ২০১৩ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে কমিশনিং করা হয়। ৩ হাজার ৩১৩ টন ওজন বিশিষ্ট জাহাজটির দৈর্ঘ্য ১১৫ মিটার। এতে দুটি ডিজেল ইঞ্জিন, দুটি গ্যাস টারবাইন রয়েছে। অন্যদিকে, চীন থেকে সংগৃহীত করভেট কাসের মিসাইল ফ্রিগেট স্বাধীনতা ও প্রত্যয় জাহাজ দুটির দৈর্ঘ্য ৯০ মিটার, যা সর্বোচ্চ ২৫ নটিক্যাল মাইল গতিতে চলতে সক্ষম। কমিশনিং অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী নতুন সংযোজিত ৩টি যুদ্ধজাহাজ পরিদর্শন করেন। তিন যুদ্ধজাহাজের কমিশনিংয়ের পর স্বাধীনতার অধিনায়ক কমোডর এম ফারুক হাসান, সমুদ্র বিজয়ের অধিনায়ক ক্যাপ্টেন মো. ওয়াসিম মাকসুদ এবং প্রত্যয়ের অধিনায়ক ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের হাতে কমিশনিং ফরমান তুলে দেন।