কল্যাণপুরে পুলিশের গুলিতে ৯ জঙ্গি নিহত
রাজধানীর কল্যাণপুরে জঙ্গিদের একটি আস্তানায় ২৫ জুলাই রাতে হানা দিয়েছিল পুলিশ। টের পেয়ে পুলিশের ওপর গ্রেনেড নিক্ষেপ করে জঙ্গিরা। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। অস্ত্র-বোমা নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে জঙ্গিরা। একপর্যায়ে পুলিশের বিশেষায়িত টিম সোয়াত ‘অপারেশন স্টর্ম-২৬’ নামে অভিযান চালায়। এই অপারেশনে পুলিশের গুলিতে মারা যায় ৯ জঙ্গি। ধরা পড়ে একজন। একজন পালিয়ে গেছে। কল্যাণপুরের ওই ভবনটির একটি ফ্ল্যাটে ১১ জঙ্গি অবস্থান করছিল। পরে ওই ফ্ল্যাট থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার হয়েছে।
প্রাথমিক তথ্যে পুলিশ জানতে পেরেছে, মিরপুর বাঙলা কলেজের ভুয়া আইডি কার্ড দেখিয়ে ফ্লাটটি ভাড়া নিয়েছিল জঙ্গিরা। মাস খানেক আগে গত ২০ জুন এই ফ্লাটে ওঠে তারা। নিহত জঙ্গিদের মধ্যে আটজনের পায়ে কেডস্ পরা ছিল। পোশাকও ছিল কালো। এদের বয়স ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। এরা সবাই উচ্চশিক্ষিত বলেই ধারণা করছে পুলিশ।
পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া সাংবাদিকদের বলেছেন, গুলশানের হামলাকারীদের সাথে এদের মিল রয়েছে। তবে এরা আইএস নয়, দেশীয় জেএমবির সদস্য। এরা বড় হামলার পরিকল্পনা করছিল। পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে হাসান নামে এক জঙ্গি।
প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ২৫ জুলাই সন্ধ্যার পর থেকে রাজধানীর কল্যাণপুরের বিভিন্ন বাড়ির মেসে তল্লাশি অভিযান শুরু করে পুলিশ। মেসের বাসিন্দারা পুলিশ কর্তৃক সরবরাহ করা ভাড়াটিয়া ফরম পূরণ করেছে কি-না, মেসের সদস্যরা পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য মূলত এই অভিযান শুরু হয়। রাত ১০টার পর ৬নং সড়কের কয়েকটি মেসে তল্লাশি অভিযান শেষে ১২টায় ৫নং সড়কের ছয়তলা বিশিষ্ট ‘জাহাজ বিল্ডিং’ বাসায় অভিযান শুরু হয়। তিনি বলেন, রাত ১২টা ১০ মিনিটে ওই বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলায় পুলিশ উঠলে হঠাৎ একটি গুলির শব্দ শুনতে পাই। পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বেশ কয়েকটি গুলি ছোড়ে জঙ্গিরা। পাঁচতলা থেকে দুজন পালানোর চেষ্টা করলে হাতেনাতে হাসান নামে এক জঙ্গিকে পুলিশ আটক করে। আরেকজন পালিয়ে যায়। রাত সাড়ে ৩টায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আল্লাহ আকবর স্লোগান দিয়ে জঙ্গিরা বোমা ও গুলি ছুড়লে অল্পের জন্য আমরা রক্ষা পাই। তবে জাহাজ বিল্ডিংয়ের পাঁচতলা থেকে গুলি ছোড়া হলে মিরপুর থানার এক এসআইয়ের হাতে লাগে। বুলেট প্রুফ জ্যাকেট থাকার কারণে ওই পুলিশ সদস্য রক্ষা পান। রাত সোয়া ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত জঙ্গিদের সাথে পুলিশ সদস্যদের গোলাগুলি হয়। ভোররাত ৫টা ৫১ মিনিটে পুলিশের বিশেষায়িত বাহিনী সোয়াত অপারেশন শুরু করে। তখন মুহুর্মুহু গুলির শব্দে আশপাশের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ঠিক ৬টা ৫১ মিনিটে গুলির শব্দ থেমে যায়। মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মারুফ হাসান ভবন থেকে বেরিয়ে এসে জানান, অপারেশন শেষ। অভিযানে ৯ জঙ্গি নিহত হয়েছে।
পুলিশের ওপর হ্যান্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ : আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানান, জঙ্গি আস্তানায় অভিযান শুরু করলে জঙ্গিরা আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিয়ে পুলিশকে প্রতিহত করা শুরু করে। তারা পুলিশের ওপর গুলি ও হাত বোমা নিক্ষেপ করে। পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে এক জঙ্গি গুলিবিদ্ধ হয়। তাকে আহতাবস্থায় আটক করে পুলিশ। অভিযান চালানোর পরে ওই ভবন থেকে পুলিশের ওপর একটি হ্যান্ড গ্রেনেডও নিক্ষেপ করা হয়। এতে এক পুলিশ সদস্য আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাত ১টার পর থেকে ওই বাড়িটি ও আশপাশের এলাকা ঘিরে রেখেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। কল্যাণপুর মেইন রোড থেকে ৫ নম্বর রোডের চারপাশে এক-দেড় কিলোমিটার এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শতাধিক গাড়ি মোতায়েন করা হয়। জাহাজ বিল্ডিংয়ের পাশের ভবনগুলোর ছাদে অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঘটনাস্থলের আশপাশের সবকটি সংযোগ সড়কেও ব্যারিকেড দেয় পুলিশ। ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার শেখ মারুফ হাসানসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।
জঙ্গি আস্তানা থেকে অস্ত্র, গ্রেনেড ও বিস্ফোরক উদ্ধার : কল্যাণপুরের জাহাজ বিল্ডিংয়ে অপারেশন স্টর্ম-২৬ নামের অভিযান শেষে ২৬ জুলাই দুপুরে ৪টি আগ্নেয়াস্ত্র, ২২টি গুলি, ২৩টি গ্রেনেড ও ৫ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে যৌথবাহিনী। এর মধ্যে ভবনটির পঞ্চম তলায় কথিত জঙ্গি আস্তানা থেকে ৩টি পিস্তল এবং এর পাশের ভবনের ছাদ থেকে আরেকটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। পুলিশের একটি সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। এ ছাড়া ঘটনাস্থল থেকে আরও কিছু জিহাদি বই, কালো পোশাক, কালো পতাকা ও আরবি ভাষায় লেখা আইএসের পতাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ।