কাঁদলেন প্রধানমন্ত্রী কেঁদেছে বাংলাদেশ
জঙ্গি হামলায় নিহতদের প্রতি জাতির শ্রদ্ধাঞ্জলি
রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সর্বস্তরের নাগরিক ভারাক্রান্ত হৃদয়ে স্মরণ করেন গুলশানের নৃশংস হামলায় নিহত ১৭ বিদেশি ও তিন বাংলাদেশিকে। সবাই শ্রদ্ধা জানান ফুল হাতে।
উত্তরণ প্রতিবেদন: গুলশানে জঙ্গি হামলায় নিহতদের অশ্রুসিক্ত বিদায় জানানো হয়েছে। দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয় সম্মান। শুধু আর্মি স্টেডিয়াম নয়, গোটা দেশটাই যেন চোখের জলে তাদের বিদায় জানায়। নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন ইতালির রাষ্ট্রদূত মারিও পালমার। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর চোখ বেয়েও নেমে আসে অশ্রুধারা। শুধু প্রধানমন্ত্রী আর রাষ্ট্রদূত নন, আর্মি স্টেডিয়ামে উপস্থিত সকলের চোখই ছিল অশ্রুসিক্ত। সার বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকা স্বজনদের কান্না চাপা চোখ-মুখ বলছিল তাদের অব্যক্ত বেদনার কথা।
গত ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে নারকীয় জঙ্গি হামলার ঘটনায় স্তম্ভিত হয় সারাদেশ। জিম্মি সংকট নিরসনে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে চালানো হয় কমান্ডো অভিযানÑ অপারেশন থান্ডারবোল্ট। পরদিন বিকেলে আইএসপিআরের পক্ষ থেকে জানানো হয় রেস্টুরেন্ট থেকে ২০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এদের ১৭ জনই বিদেশি। সবাইকে গলা কেটে, খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। যারা এই নৃসংশ হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তারা বাইরের কেউ নয়, এ দেশেরই সন্তান। এমন খবর শোনার পর বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন সবাই। কেমন যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন।
গুলশানের এই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী গত ৩ ও ৪ জুলাই দুদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন। শোক পালনের দ্বিতীয় দিনে আর্মি স্টেডিয়ামে নিহতদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানানো হলো।
রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সর্বস্তরের নাগরিক ভারাক্রান্ত হৃদয়ে স্মরণ করেন গুলশানের নৃশংস হামলায় নিহত ১৭ বিদেশি ও তিন বাংলাদেশিকে। সবাই শ্রদ্ধা জানান ফুল হাতে। সকাল থেকেই আর্মি স্টেডিয়ামে আসতে থাকেন সাধারণ মানুষ। স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে করা মঞ্চে রাখা হয় তিন বাংলাদেশির কফিন।
মঞ্চের সামনে কালো কাপড়ের ওপর সাদা অক্ষরে লেখা ছিলÑ ‘হলি আর্টিজান বেকারিতে নিহতদের জন্য বাংলাদেশের মানুষ গভীরভাবে শোকাহত’।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই জানানো হয়, জাপানি রীতি অনুয়ায়ী তাদের নিহত নাগরিকদের জন্য ৩ জুলাই রাত থেকেই সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে শ্রদ্ধা নিবেদন।
প্রথমে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পক্ষে মঞ্চের সামনে কালো বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে রাষ্ট্রপতি তখনও ভুটানে অবস্থান করায় তার পক্ষে ফুল দেন বঙ্গভবনে দায়িত্বরত কমান্ডার মিনহাজ আলম। রাষ্ট্রপতির পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিহতদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর বেদীতে ফুল দিয়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান ভারত, ইতালি, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতরা। এরপর নিহতদের পরিবারের সদস্য, বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিক, আওয়ামী লীগ, ১৪ দল, এফবিসিসিআই, নিহত পুলিশের পরিবারের সদস্য এবং ঢাকার দুই মেয়র ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর সাধারণ মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
আর্মি স্টেডিয়ামের মঞ্চে হেঁটে গিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধানমন্ত্রী কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী আর্মি স্টেডিয়ামে উপস্থিত নিহতদের মধ্যে ইশরাত আখন্দ এবং ফারাজ হোসেন ও অবিন্তা কবীরের স্বজনদের সমবেদনা জানান। এরপর মঞ্চের সামনে উপস্থিত ভারত, ইতালি, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতদের সাথে কথা বলেন শেখ হাসিনা। চার কূটনীতিকের সাথে কথা বলে স্টেডিয়াম থেকে বের হওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী আবারও নিহতদের স্বজনদের সান্ত¡না দেন।
শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী প্রধান, পুলিশ মহাপরিদর্শক, র্যাব মহাপরিচালক এবং উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মৃতদেহ হস্তান্তরের পর বেলা ১২টা পর্যন্ত এই শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠান সর্বস্তরের জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের একটি প্রতিনিধি দল এ সময় বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
গুলশানের ওই হামলায় নিহতদের মধ্যে ৯ জনই ইতালির নাগরিক। তারা হলেনÑ নাদিয়া বেনেদিত্তো, ভিনসেনজো দ আলেস্ত্রো, ক্লদিও মারিয়া দান্তোনা, সিমোনা মন্টি, মারিয়া রিবোলি, আডেলে পুগলিসি, ক্লদিও চাপেলি, ক্রিস্টিয়ান রোসিস ও মারকো তোনডাট। তাদের মরদেহ ৫ জুলাই বিশেষ বিমানে দেশে নিয়ে যাওয়া হয়।
নিহতদের মধ্যে সাতজন জাপানের নাগরিক। একজন ভারতীয়। তার নাম তারিশি জৈন। ৪ জুলাই দুপুরেই জেট এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে তার লাশ দিল্লি নেওয়া হয়েছে। অন্য তিনজন বাংলাদেশি। ইশরাত আখন্দ, অবিন্তা কবীর ও ফারাজ হোসেন। এদের মধ্যে অবিন্তার দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে। বাংলাদেশের পাশাপাশি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকও।
অন্য দুজন পুলিশ কর্মকর্তা। রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলার পরপরই সেখানে আটকেপড়াদের উদ্ধারে গিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার রবিউল করিম ও বনানী থানার ওসি সালাউদ্দীন খান হামলাকারীদের ছোড়া গ্রেনেডের স্পিøন্টারে নিহত হন।
গুলশান এবং শোলাকিয়া হামলা
দেশবিরোধী শক্তির অপচেষ্টা
জুলাইয়ের ২ তারিখ, ২০১৬ সাল। গুলশান লেকপাড়। অভিজাত হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁ। দেশি-বিদেশি অতিথিদের সৌম্য উপস্থিতি। ফটকে হঠাৎ গুলির শব্দ। তলোয়ার-আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে ঢুকে পড়ে সাত জঙ্গি। তৎক্ষণাৎ ছুটে আসে পুলিশ-র্যাব। জঙ্গিদের অতর্কিত বোমা হামলা। শুরুতেই নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তা। দেশে-বিদেশে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। রাতভর জিম্মি উদ্ধারের প্রস্তুতি। ৩ জুলাই সকালে যৌথবাহিনীর কমান্ডো অভিযান। ছয় জঙ্গির মৃত্যু। নিয়ন্ত্রণে পুরো রেস্তোরাঁ। কিন্তু এরপরের দৃশ্য ভয়ঙ্কর। একে একে মিলল ২০ জিম্মির লাশ। স্তম্ভিত বাংলাদেশ।
৭ জুলাই। কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগা মাঠ। সকালে জামাত শুরুর সোয়া ঘণ্টা বাকি। শোলাকিয়া ময়দানের পুলিশ চেকপোস্টে হামলা চালায় জঙ্গিরা। বোমা মেরে, চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে এমনকি গুলি করে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের হতচকিত করে দেয় জঙ্গিরা। মুহূর্তের ঘোর কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ান পুলিশ সদস্যরা। পাল্টা গুলি ছোড়েন। জঙ্গিদের গুলি, বোমা ও চাপাতির কোপে দুই পুলিশ কনস্টেবল মারা যান। মৃত্যু হয় এক জঙ্গি দলের সদস্যের। আর পাশেই নিজ বাড়িতে ঘরের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ঝর্ণা রানী ভৌমিক নামে এক গৃহবধূ। প্রায় দুঘণ্টা ধরে জঙ্গিদের সাথে পুলিশের গোলাগুলি চলে। গ্রেফতার হয় দুই জঙ্গি। তাদের কাছ থেকে অস্ত্র, গুলি ও চাপাতি উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের কঠোর নিরাপত্তার কারণে বড় ধরনের ম্যাচাকার থেকে রক্ষা পায় মানুষ। বিপুল সংখ্যক মানুষকে হতাহত করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। অনেকে বলেছেন, জঙ্গিদের হামলার আসল টার্গেট ছিলেন মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসঊদ। কারণ যে মাঠে হেলিকপ্টারে তার নামার কথা তার পাশেই হয়েছে এই হামলা। পুলিশের আইজি একেএম শহীদুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, গুলশান আর শোলাকিয়া একই সূত্রে গাঁথা। জেএমবির জঙ্গিরাই এই হামলা চালিয়েছে।
গুলশান হামলার পরের দিন ৩ জুলাই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গুলশানে জঙ্গি হামলায় বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে ইতালি ও জাপানের সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রাণ হারান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীকে ফোন করে বিয়োগান্তক ঘটনায় সমবেদনা জানান ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাওলো জেনতিলোনি ও জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। এ ছাড়াও ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং টোবগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে সমবেদনা জানান।
৩ জুলাই সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে ১২ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা শেষে সাঁজোয়া যান নিয়ে দেয়াল গুঁড়িয়ে রেস্তোরাঁর ভেতরে ঢুকে পড়েন সেনা কমান্ডোরা। শুরু হয় ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’। ১৩ মিনিটের মধ্যে সাত সন্ত্রাসীকে কাবু করে গুলশানের ওই রেস্তোরাঁয় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন কমান্ডোরা। জীবিত উদ্ধার করেন ১৩ জিম্মিকে। ৫০ মিনিট পর অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। সন্ত্রাসীরা সেদিন তিন বাংলাদেশিসহ ২০ জিম্মিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৭ বিদেশি নাগরিক। এর মধ্যে সাত জাপানি এবং ৯ ইতালির নাগরিক। একজন ভারতীয় নাগরিক। অভিযান চালাতে গিয়ে মারা যান পুলিশের দুই কর্মকর্তা।
উদ্ধার অভিযানের পর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অপারেশন সফল হয়েছে, কমান্ডো অপারেশনে ১৩ জনকে বাঁচাতে পেরেছি। সন্ত্রাসীদের ছয়জনই মারা যায়। একজন ধরা পড়েছে। তিনি বলেন, জঙ্গি দমন করতে গিয়ে আমাদের দুজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। তবে তাদের পদক্ষেপের কারণে কোনো জঙ্গি পালিয়ে যেতে পারেনি। নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে দুদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।
ঘটনা সম্পর্কে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনস পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী ৩ জুলাই সংবাদ ব্রিফিং করেন। সেখানে তিনি বলেন, দুষ্কৃতকারীরা ১ জুলাই রাতে গুলি ছুড়তে ছুড়তে রাতে ওই রেস্তোরাঁর ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর সবাইকে জিম্মি করে। রাতে সেখানে অভিযানকালে দুই পুলিশ কর্মকর্তা শাহাদাতবরণ করেন এবং ২০ জনের বেশি পুলিশ সদস্য আহত হন। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীকে সরকারপ্রধান কর্তৃক আদেশ প্রদান করা হয়। সেই মোতাবেক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়।
ঘামলার দিন ওই রেস্তোরাঁর কাছেই গুলশানের ৭৮ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) থেকে শুরু করে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা রাত থেকে বৈঠক করতে থাকেন। ২ জুলাই রাত ৩টার পরপরই বিভিন্ন অভিযান পরিচালনার জন্য প্রস্তুত হয়। ভোরে সেনাবাহিনীর ৮টি সাঁজোয়া যান ঘটনাস্থলে আসে। এরপর সেনাসদস্যরা পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেন। অভিযানে আরও ছিল পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, নৌবাহিনীর কমান্ডো এবং পুলিশের বিশেষ বাহিনী সোয়াট। তারা ৭৫, ৭৬, ৭৭, ৭৮, ৭৯ ও ৮০ নম্বর সড়কসহ ওই রেস্তোরাঁর চারপাশে অবস্থান নেয়। ওই রেস্তোরাঁর আশপাশেই ইতালি, কাতার, ইরান ও রাশিয়ার দূতাবাস। অভিযানকে কেন্দ্র করে পুরো গুলশান এলাকার রাস্তাঘাট বন্ধ করে কড়া নিরাপত্তা বসানো হয়।
এদিকে গুলশানের জঙ্গি হামলার রেশ কাটতে না কাটতেই জঙ্গিদের হামলা হয় শোলাকিয়ায়। টার্গেটস্থল কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ। পুলিশের আইজি একেএম শহীদুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেছেন, গুলশান আর শোলাকিয়া একই সূত্রে গাঁথা। জেএমবির জঙ্গিরাই এই হামলা চালিয়েছে। নিহত জঙ্গির নাম আবির রহমান (২৩)। সে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ত্রিবিদ্যা গ্রামের সিরাজুল ইসলাম সরকারের পুত্র এবং ঢাকার নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র। শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের পাশে বোমা হামলার ঘটনায় সাত থেকে আট জনের একটি দল অংশ নেয় এবং তারা ছিল ক্ষিপ্র গতিসম্পন্ন। প্রত্যক্ষদর্শীরা এই তথ্য জানান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক এই ময়দানে হামলাকারীরা সংখ্যায় সাত থেকে আটজন ছিল। বোমা হামলার পর পুলিশ ও হামলাকারীদের মধ্যে দফায় দফায় গুলিবিনিময় হয়।
শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের পাশে বোমা হামলার ঘটনায় নিহত সন্দেহভাজন যে পোশাক পরেছিল তা ছিল চাপাতি রাখার বিশেষ ধরনের পোশাক। নীল রঙের ওই পোশাকের ভেতরে বিশেষ কায়দায় চাপাতি জাতীয় অস্ত্র রাখার চেম্বার ছিল বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, অল্পবয়সী ওই ছেলের পরনে ছিল নীল রঙের ঢোলা পাঞ্জাবি ও ঢোলা পায়জামা এবং পায়জামার ভেতরেও জিনসের একটি প্যান্ট পরা ছিল। সেই প্যান্টের মধ্যেই কোমর থেকে হাঁটুর ওপর পর্যন্ত বিশেষ চেম্বার বানানো ছিল। ওই চেম্বারে চাপাতি জাতীয় লম্বা অস্ত্র রাখা যায়। পুলিশ আরও জানায়, হামলার পর পোশাক বদলে হামলাকারীরা সাধারণ জনগণের সাথে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং হামলার পর আজিম উদ্দিন স্কুলের আশপাশের বিভিন্ন বাড়িতে ঢুকে যায়।
পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক সেদিনই জঙ্গিদের হামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি হামলার সময় গুলিতে নিহত ঝর্ণা রাণী ভৌমিকের বাড়িতে যান এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। পরে আইজিপি ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, জেএমবি সদস্যরা এই হামলার সাথে জড়িত। এরাই ঢাকার গুলশানে হোটেলে হামলা চালিয়েছিল। গ্রেফতারকৃত একজন হামলার সাথে জেএমবির সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে।
শ্রম ও জনশক্তি প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক চুন্নু ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে তিনি নিহত গৃহবধূ ঝর্ণা রাণী ভৌমিকের বাসায় যান এবং পরিবার-পরিজনদের সান্ত¦না দেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক এমপি, অ্যাডভোকেট সোহরাবউদ্দিন এমপি, মো. আফজল হোসেন এমপি, জেলা প্রশাসক মো. আজিমুদ্দীন বিশ্বাস ও পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন খান প্রমুখ।
দেশের অস্থিরতার ক্ষেত্র তৈরি করতে জামাত-বিএনপি জোট সব ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তারা বলছেন, বিএনপি-জামাত কোনো কিছুতে সফল না হওয়ায় দেশের ভিন্ন এলাকায় জঙ্গি আস্তানা গড়ে তুলেছে। জিএমবি, হরকাতুল জেহাদসহ সব জঙ্গি গঠনগুলো একত্র করতে কাজ শুরু করেছে জামাত। শুধু তাই নয়, জামাত জঙ্গিদের আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। জঙ্গি ছদ্মবেশে তারা নাশকতার ছক আঁকছে। বিএনপি তাতে ঘি ঢালছে। মূলত, তাদের নেতৃত্বে শুরু হয় জঙ্গি হামলা। একে একে খুন করা হয় শিক্ষক, ব্লগার, লেখক-প্রকাশক, পুরোহিত, ভিক্ষুকসহ অনেককে। উদ্দেশ্য, দেশে ইসলামিক স্টেট বা আইএস আছে তা প্রতিষ্ঠিত করা এবং সরকারকে বেকায়দায় ফেলা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ট নেতৃত্ব যখন তাদের সকল ষড়যন্ত্র ধূলিসাৎ হয়ে যায় তখন তারা বড় ধরনের জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করে। গুলশান এবং শোলাকিয়া হামলা ছিল তারই প্রতিফলন বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা।