কারাগারের রোজনামচা : অন্তরঙ্গ অবলোকন-২
ড. মোহাম্মদ সেলিম: ‘আব্বা বালি চলো’
বঙ্গবন্ধুর কারা জীবনে তিনি সীমাহীন শারীরিক, মানসিক নির্যাতন, কষ্টের শিকার হয়েছেন। অপমান, অবহেলাও কম সহ্য করেন নি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর বন্দী থাকাকালীন তাঁর সংসার, সন্তান, সহধর্মিণীর জীবন কতটা কষ্টের, দুর্বিষহ ও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেÑ সে বিষয়ে আমরা খুব বেশি মনোযোগী নই। অবশ্য বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী এবং রোজনামচা প্রকাশের পূর্বে অন্ধকারেই ছিল সেই ইতিহাস।
দু’বছরের ছোট্ট শিশু, রাসেল মুখে বোল ফোটেনি, ভালো করে উচ্চারণ করতে পারে না। কিন্তু বাবার ¯েœহ বোঝে, বাবা যে বাড়িতে থাকে না তা জানে। বাবার ভালোবাসা পেতে চায়, ¯েœহের দাবিতে যখন বলে, “আব্বা বালি (বাড়ি) চলো।” বঙ্গবন্ধু তাঁর আদরের সন্তানকে কী উত্তর দেবেন ভেবে পান না। তিনি লিখেছেন,
“দুঃখ আমার লেগেছে। শত হলেও আমি তো মানুষ আর ওর জন্মদাতা। অন্য ছেলে মেয়েরা বুঝতে শিখেছে। কিন্তু রাসেল এখনও বুঝতে শিখে নাই। তাই মাঝে মাঝে আমাকে নিয়ে যেতে চায় বাড়িতে।”
আর্থিক সংকট
বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে নানা সময়ে আর্থিক সংকটে পড়তে হয়েছে। ভরসা ছিল পিতা শেখ লুৎফর রহমান আর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন্নেছা। পারিবারিক ব্যয় হ্রাসের জন্য বেগম মুজিব বললেন, “যদি বেশি অসুবিধা হয় নিজের বাড়ি ভাড়া দিয়ে ছোট বাড়ি একটা ভাড়া করে নিব।” বঙ্গবন্ধু আশ্বাস দিতে গিয়ে বললেন, পারিবারিক সম্পদের আয় থেকে সংসার চলে যাবে। বেগম মুজিব সুস্পষ্টভাবে বললেন, “চিন্তা তোমার করতে হবে না।” বাস্তবে বঙ্গবন্ধু ছিলেন সার্বক্ষণিক রাজনীতিবিদ। আন্দোলন, সংগ্রাম, জনগণ, দেশ ছাড়া তাঁর ভাবনার জগতে আর কিছু ছিল না। এমনি যোগ্য সহধর্মিণী পেয়েছিলেন বলে বঙ্গবন্ধু অখ- মনোযোগ দিতে পেরেছিলেন দেশ ও জাতির জন্য।
‘তার নিষেধ না শুনে পারলাম না’
বঙ্গবন্ধু তাঁর আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা গ্রন্থদ্বয়ে অগণিত স্থানে তাঁর সহধর্মিণীর প্রতি গভীর ভালোবাসা, আস্থা, বিশ্বাস ও পরম নির্ভরতার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি অকুণ্ঠ চিত্তে বেগম মুজিবের ধৈর্য, ত্যাগ ও অবদানের বিবরণ দিয়েছেন। প্রায় ৪০ বছরের দাম্পত্য জীবনে বেগম মুজিব ভালোবেসে তাঁর স্বামীর সংগ্রামমুখর, ঝুঁকিপূর্ণ জীবনে সঙ্গী ছিলেন। তবে বেগম মুজিব সব সময় তাঁর স্বামীর শারীরিক অবস্থা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতেন। গোপালগঞ্জ থানায় বেগম মুজিব তাঁর স্বামীকে কিছু কথা বলেছিলেন, যা বঙ্গবন্ধু তাঁর আত্মজীবনীতে লিপিবদ্ধ করেছেন,
“রেণু আমাকে যখন একাকী পেল, বলল, ‘জেলে থাক আপত্তি নাই, তবে স্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখ। তোমাকে দেখে আমার মন খুব খারাপ হয়ে গেছে। তোমার বোঝা উচিত আমার দুনিয়ায় কেউ নাই। ছোট বেলায় বাবা-মা মারা গেছেন… তোমার কিছু হলে বাঁচব কি করে?”
বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী যেমন তাঁর ওপর নির্ভরশীল ছিলেন আবার বঙ্গবন্ধুও বেগম মুজিবের ওপর কোনো অংশে কম নির্ভরশীল ছিলেন না। শুধু পারিবারিক জীবন নয় বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী রাজনৈতিক জীবনে ঝুঁকি ও সংকটকালীন মুহূর্তে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বেগম মুজিব নিয়ামক ভূমিকা পালন করেছেন। বেগম মুজিবের রাজনৈতিক পরামর্শ বঙ্গবন্ধু গ্রহণ করেছেন এমন দৃষ্টান্ত কম নয়।
বঙ্গবন্ধুর শারীরিক অবস্থা নিয়ে বেগম মুজিবের দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না। বঙ্গবন্ধু প্রায়ই মাথা ব্যথায় আক্রান্ত হতেন। তাই ব্যথা হলেই ব্যথানাশক স্যারিডন সেবন করতেন। বেশি ব্যথা করলে ২/৩টা একসঙ্গে খেয়ে নিতেন। বেগম মুজিব ব্যথানাশক ঔষধ খেতে নিষেধ করতেন, কিন্তু বঙ্গবন্ধু খুব একটা আমল দিতেন না। কারাগারে তীব্র মাথা ব্যথ্যায় আক্রান্ত হবার পর তাঁর প্রিয় সহধর্মিণীর কথা মনে পড়েছে। লিখেছেন,
“রেণু স্যারিডন খেতে দিতে চাইত না। ভীষণ আপত্তি করত। বলত, হার্ট দুর্বল হয়ে যাবে। আমি বলতাম আমার হার্ট নাই। অনেক পূর্বেই শেষ হয়ে গেছে। বাইরে তার কথা শুনি নাই, কিন্তু জেলের ভিতর তার নিষেধ না শুনে পারলাম না।”
‘একুশ মাসের ছেলের সাথে রাজনীতি’
রোজনামচায় বঙ্গবন্ধুর জেল জীবনের কষ্ট-বেদনার কথার পাশাপাশি রসবোধের পরিচয় পাবেন পাঠক। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর স্ত্রী, পুত্র, কন্যারা দেখা করতে এসেছেন। বেগম মুজিবের সঙ্গে মামলা ও সাংসারিক নানা বিষয়ে আলাপের ফাঁকে ছোট্ট রাসেল তার বাবার সঙ্গে নতুন খেলায় মেতে উঠেছে। তখন তার বয়স মাত্র ২১ মাস। কানে কানে কথা বলে বা কানের কাছে মুখ নিয়ে চুপ করে থাকে আর হাসে। জেলের আইন অনুযায়ী গোয়েন্দা দফতরের দু’জন কর্মকর্তার সামনে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে আলাপ করতে হতো। সরকারের গোয়েন্দা দফতরকে ব্যঙ্গ করে লিখেছেন, “আমার কানে কানে কথা বললে আইবি (গোয়েন্দা দফতর) নারাজ হবে, ভাববে একুশ মাসের ছেলের সাথে রাজনীতি নিয়ে কানে কানে কথা বলছি।”
‘বড় মেয়ের বিবাহের প্রস্তাব’
বঙ্গবন্ধুর তিন পুত্র, দুই কন্যার মধ্যে কে তাঁর সবচেয়ে বেশি প্রিয় ছিলেন। তা আমরা স্পষ্টভাবে জানি না। কারণ বঙ্গবন্ধুর এযাবৎ প্রকাশিত কোনো রচনায় এ বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত নেই। আত্মজীবনীতে তিনি সন্তানদের মধ্যে সবচেয়ে অধিকবার উল্লেখ করেছেন শেখ হাসিনা সম্পর্কে, অন্যদিকে রোজনামচায় সবচেয়ে বেশি উঠে এসেছে রাসেল প্রসঙ্গ। রাসেল নিতান্তই শিশু, আদর-আবদার বেশি থাকাটা স্বাভাবিক। তবে বঙ্গবন্ধুর প্রকাশিত রচনাতে জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনার প্রতি একটু বেশি দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে।
শেখ হাসিনার বিয়েতে প্রথমে বঙ্গবন্ধু সম্মত হননি। তিনি চেয়েছিলেন বিএ পাস করার পর কন্যার বিয়ে দেবেন। তবে বেগম মুজিবের আগ্রহের কারণে শেষ পর্যন্ত তিনি সম্মত হন। কিন্তু কন্যাও বেঁকে বসেছিলেন, দুটো কারণে। প্রথমত, তাঁর পিতা তখন কারাগারে বন্দী, দ্বিতীয়ত, বিয়ের আগে বিএ পাস করতে চান। শেষ পর্যন্ত কন্যার সম্মতি আদায়ের দায় পড়লো পিতার ওপর, তিনি শেখ হাসিনাকে বললেন,
“মা আমি জেলে আছি, কতদিন থাকতে হবে, কিছুই ঠিক নাই। তবে মনে হয় সহজে আমাকে ছাড়বে না, কতগুলি মামলাও দিয়েছে, ব্যবসা-বাণিজ্য ধ্বংস হয়ে চলেছে। তোমাদের আবারও কষ্ট হবে। তোমার মা যাহা বলে শুনিও।”
বঙ্গবন্ধুর ফুপাতো ভাই মমিনুল হক খোকা, তাঁর অস্তরাগে স্মৃতি সমুজ্জ্বল গ্রন্থে ১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত শেখ হাসিনার শুভ পরিণয়ের বিবরণ দিয়েছেন। দাদা, দাদী ও পিতার অনুপস্থিতিতে একান্ত ঘরোয়া পরিবেশে, অনাড়ম্বরভাবে ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার বিবাহ সম্পন্ন হয়।
‘পশ্চিম পাকিস্তানে চাঁদ দেখেছে, এখানে নামাজ পড়তেই হবে’
পাকিস্তানি শাসকবর্গ কেবল ভাষা, সংস্কৃতি বা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বাঙালিদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে তাই নয়, এমন কী ধর্ম পালনের ক্ষেত্রেও জবরদস্তি করেছে। ১৯৬৭ সালের ঈদুল ফিতরের ঘটনা। হঠাৎ রাত ১০টায় সরকার ঘোষণা দিল, পরের দিন ১২ জানুয়ারি সারা পাকিস্তানে ঈদ হবে। যদিও পূর্ব পাকিস্তানে কোথাও চাঁদ দেখা যায়নি। সিপাহি, জেল কর্মচারী তারা রোজা ভাঙতে রাজি হয়নি। তাদের ন্যায্য কথা “চাকরি করে বলে নামাজও সরকারের ইচ্ছায় পড়বে নাকি?” ১১ জানুয়ারি বেগম মুজিব সন্তানদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কারাগারে দেখা করতে যান। সন্তানরা কেউ ঈদের কাপড় নিবে না। কারণ বাবাকে কারাগারে রেখে ঈদের আনন্দ হয় কী করে? তারপরও তিনি বেগম মুজিবকে বললেন, ভালোভাবে ঈদ উদযাপনের জন্য, না হলে বাচ্চাদের মন ছোট হয়ে যাবে।
যা হোক ঈদ পালনের সরকারি ঘোষণায় বঙ্গবন্ধুও ক্ষুব্ধ হয়ে লিখেছেন,
“শুনলাম পশ্চিম পাকিস্তানে সরকারি লোক চাঁদ দেখেছে। পশ্চিম পাকিস্তানে উন্নতি হলে পূর্ব বাংলার উন্নতি হয়! হাজার মাইল দূরে পশ্চিম পাকিস্তানে চাঁদ দেখেছে, এখানে নামাজ পড়তেই হবে। আমাদের (কয়েদিদের) আবার নামাজ কি! তবুও নামাজে গেলাম, কারণ সহকর্মীদের সাথে দেখা হবে।”
‘পাখি দুইটা যে আমার কত বড় বন্ধু’
কারাগারের চার দেয়ালে বন্দী অবস্থায় বঙ্গবন্ধু নিসর্গের যে অপূর্ব বিবরণ দিয়েছেন তা এককথায় অসাধারণ বললে মোটেই অত্যুক্তি হয় না। আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধু দিল্লির ঐতিহাসিক নিদর্শনাবলীর মনোজ্ঞ বিবরণ দিয়েছেন। রোজনামচায় পাচ্ছি প্রকৃতির নানা রূপের বিবরণ। ঘুরে ফিরে এক জোড়া হলুদ পাখির জন্য তাঁর ব্যাকুলতার কথা লিখেছেন। এছাড়া চড়–ই, কাক ও কবুতর নিয়েও আলোচনা আছে। তিনি একটা মুরগি পালতে শুরু করেছিলেন। মুরগির হাঁটা, চলা, খাওয়ার নিখুঁত বিবরণ দিয়েছেন। মুরগির মৃত্যুতে তিনি শিশুর ন্যায় কষ্ট পেয়েছেন। সুন্দর একটি ফুলের বাগান তৈরি করেছেন। এসব কিছুর মধ্য দিয়ে তাঁর প্রকৃতি প্রেম উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। ১৯৫৮ সালে প্রথম এক জোড়া হলদে পাখি দেখেছিলেন। আট বছর পরে আবার হলদে পাখি দুটিকে দেখার তীব্র বাসনা নিয়ে তাঁর চোখ দুটি গাছের ভেতরে খুঁজে ফিরেছে সেই প্রিয় পাখি দুটি। বঙ্গবন্ধু লিখেছেন,
“বড় ব্যথা পাব ওরা ফিরে না আসলে। পাখি দুইটা যে আমার কত বড় বন্ধু যারা কারাগারে একাকী বন্দী থাকেন নাই তারা বুঝতে পারবেন না। আমাকে তো একেবারে একলা রেখেছে। গাছপালা, হলদে পাখি, চড়ই পাখি আর কাকই তো আমার বন্ধু এই নির্জন প্রকোষ্ঠে।”
‘কলম ফেলে দিন, লাঠি, ছোরা চালান শিখুন’
বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বাধীন চিন্তা ও জ্ঞানের কেন্দ্র বলে মনে করতেন। যে কারণে মুক্ত চিন্তা ও সৃজনশীলতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনকে তিনি বেশ গুরুত্ব দিতেন। ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের অযাচিত হস্তক্ষেপে তিনি উদ্বিগ্ন না হয়ে পারেন নি। কিন্তু শিক্ষকম-লী প্রতিবাদ না করায় হতাশ হয়ে লিখেছেন,
“কলম ফেলে দিন। লাঠি, ছোরা চালান শিখুন, আর কিছু তেল কিনুন রাতে ও দিনে যখনই দরকার হবে নিয়ে হাজির হবেন। লেখাপড়ার দরকার নাই। প্রমোশন পাবেন, তারপরে মন্ত্রীও হতে পারবেন।”
স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে সংসদে আইন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু আজ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকম-লী স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা কতটুকু রক্ষা করতে পেরেছেন? পাকিস্তান আমলে শিক্ষকরা তেলবাজি, দালালি করেছে মন্ত্রী হওয়ার জন্য স্বাধীন বাংলাদেশে শিক্ষকদের একটা বড় অংশ সহকারী প্রক্টর, আবাসিক শিক্ষক হওয়ার জন্য দলবাজি করছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ড. এমএন হুদার (মীর্জা নূরুল হুদা) প্রতি ইঙ্গিত করে বঙ্গবন্ধু মন্ত্রী হওয়ার কথা বলেছেন। ড. হুদা ১৯৬৫-৬৯ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। মন্ত্রী থাকাকালীন তিনি ৬-দফা ও আওয়ামী লীগের তীব্র সমালোচনা করেন। বঙ্গবন্ধু লিখেছেন,
“একজন শিক্ষিত ভদ্রলোক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ছিলেন, হঠাৎ একজনের দয়ায় মন্ত্রী হয়ে রাজনীতিবিদ হওয়ার চেষ্টা করছেন। …মন্ত্রীত্বের লোভে ভদ্রলোক এত নিচে নেমে গিয়েছেন যে একটা দলের বা লোকের দেশপ্রেমের উপর কটাক্ষ করতেও দ্বিধাবোধ করলেন না।”
উল্লেখ্য বঙ্গবন্ধুর নিমর্ম হত্যাকা-ের পর বিচারপতি সায়েম তাঁকে উপদেষ্টা, জিয়াউর রহমানের সময়ে অর্থমন্ত্রী এবং বিচারপতি সাত্তার তাঁকে উপ-রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত করেন। বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগের বিরোধিতার ‘পুরস্কার’ ড. হুদা পাকিস্তান আমলে এবং স্বাধীন বাংলাদেশে যথাযথভাবে পেয়েছিলেন!
স্বল্প পরিসরে কারাগারের রোজনামচা গ্রন্থের আলোচনা অত্যন্ত দুরূহ। অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু আলোকপাত করেছেন। এসব বিষয়ে আলোচনা, বিতর্ক, বিশ্লেষণ হওয়া প্রয়োজন। কারণ বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্বের (১৯৬৬-৬৯) দিনলিপি এই গ্রন্থ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অমূল্য উৎস হিসেবে গণ্য হবে এই গ্রন্থ। বাঙালির জাগরণের দলিল বলাই যুক্তিসংগত। বাঙালি জেগে উঠেছিল শৃঙ্খলা মুক্তির সংগ্রামে। জাতিকে জাগিয়ে তোলার গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
একটি তথ্য বিভ্রাটের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। তা হলো বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেছেন ন্যাপ নেতা মশিহুর রহমানের (১৯২৪-৭৯) কথা, যিনি ‘যাদু মিয়া’ নামে অধিক পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার কারণে স্বাধীনতার পর দালাল আইনে গ্রেফতার হন। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমানের জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট এবং বিএনপিতে যোগ দেন। টিকা অংশে পরিচিতি দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা যশোরের মশিউর রহমান (১৯২০-৭১)। তবে টিকা অংশে আরও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও ঘটনার বিবরণ যুক্ত করা প্রয়োজন। প্রচ্ছদ ও গ্রন্থ নকশার জন্য তারিক সুজাতকে অভিনন্দন। এই গ্রন্থ প্রকাশ করে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ মহান জাতীয় দায়িত্ব পালন করেছেন। আশা করি পরবর্তী সংস্করণ আরও নির্ভুল হবে এবং আরও সুলভ মূল্যে সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।