কয়েকদিন পর শর্ত দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয় : হামিদা
একাত্তরের কোনো একদিনের কথা। বিকেলে হঠাৎ খান সেনারা তাদের গ্রাম আক্রমণ করলে গ্রামের অন্য বাসিন্দারা পালিয়ে গেলেও তারা পালানোর আগেই খান সেনাদের হাতে ধরা পড়েন। তাদের ধরে নিয়ে যায় স্বজনপুকুর গ্রামের পার্শ্বে খান সেনাদের ক্যাম্প জিএম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে তার সামনে তার স্বামী মুনছুর আলীকে বেধমভাবে মারপিট করে আহত করে।
এ সময় তিনি খান সেনাদের পায়ে ধরে তার স্বামীর প্রাণভিক্ষা চান। কিন্তু কেউই তার আর্তনাদ শোনেনি। বরং খান সেনাদের বুটের লাথি আর বন্দুকের বাঁটের আঘাতে চরমভাবে আহত হন মুনছুর আলী।
এর পর সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে শুরু হয় তার ওপর পাশবিক নির্যাতন। এভাবে কয়েক দিন পর তাদের শর্ত দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। এর পর তারা সেখান থেকে পালিয়ে যান। সেই দিনের খান সেনাদের নির্যাতনের ফলে পরবর্তী সময়ে তার স্বামী অন্ধ হয়ে যান। তারপর থেকে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন হামিদা বেওয়া।
২০০৭ সালের ২০ মার্চ স্বামী মনছুর আলীর মৃত্যু হয়। এর পর থেকে তার অবস্থা সঙ্গীন হয়ে পড়ে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার নামে হয়নি বিধবা কিংবা বয়স্ক ভাতার কার্ড। পাননি কোনো বীরাঙ্গনা কিংবা মুক্তিযোদ্ধার সম্মান। জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় এসেও অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে তার জীবন চলছে। দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার পৌর এলাকার স্বজনপুকুর বুন্দীপাড়া গ্রামের মৃত মনছুর আলীর স্ত্রী হামিদা বেওয়া। তিনি জানান, ১৯৭১ সালের খান সেনাদের হাতে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, স্বাধীনতার ৪৪ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো স্বীকৃতি পাননি। পাননি কোনো সাহায্য-সহযোগিতা।
তার বয়স এখন প্রায় সত্তরের কাছাকাছি। স্বামী মারা গেলেও এখনো তার কপালে জোটেনি বয়স্ক কিংবা বিধবা ভাতা। তার দুই ছেলে আনিছুর রহমান ও বেলাল হোসেন। পেশায় ওরা দিনমজুর। দিনমজুরের কাজ করে তারা নিজ নিজ পরিবার নিয়ে ব্যস্ত। তাই মা হামিদা বেওয়ার জীবন নির্বাহ অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেই চলে।
হামিদা বেওয়া বলেন, লোক-লজ্জার ভয়ে সেই দিনের সে কথা কাউকে জানাননি তার পরেও গ্রামের লোকরা একে অন্যের কাছে বলে, ঘটনাটি সবাই জানে কিন্তু কেউ কোনো দিন তার খবর নিতে আসেনি। তার ২ ছেলে দিনমজুর তাদের আয় দিয়ে কোনোমতে জীবন চলতে পারে না তাই সে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।