চট্টগ্রামে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের উন্নয়নের ৯০ শতাংশ কাজ এখন নিজেদের অর্থে হচ্ছে। আমরা উন্নয়ন করব। কিন্তু কারও কাছে হাত পাততে পারব না। তাই দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম চালিয়ে নিতে তিনি ব্যবসায়ীদের সময়মতো ট্যাক্স প্রদানের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ব্যবসা ও বাণিজ্যবান্ধব সরকার। তবে আমরা ব্যবসা করি না। ব্যবসা আপনারাই করবেন, আমরা পরিবেশ সৃষ্টি করে দেব। তিনি ব্যবসায়ীদের প্রতি উৎপাদন বহুমুখীকরণ ও বহির্বিশ্বে নতুন নতুন বাজার অনুসন্ধানের জন্য আহ্বান জানান।
গত ৩০ জানুয়ারি নগরীর আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নিজস্ব অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি। এই সেতু নির্মাণকে আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। এই নির্মাণ কাজ বহির্বিশ্বে দেশের মর্যাদাকে সম্মুন্নত করেছে। রাজস্ব হিসেবে প্রাপ্ত অর্থ দেশের উন্নয়ন কাজে ব্যয় হচ্ছে। বর্তমান সরকারের একমাত্র লক্ষ্য দেশের উন্নয়ন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উদ্বোধন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের জন্য একটি গর্বের বিষয়। বিশ্বের বহু বড় বড় শহরের ন্যায় চট্টগ্রামেও ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার প্রতিষ্ঠা হলো। বাংলাদেশ উন্নত দেশের কাতারে শামিল হওয়ার ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগিয়ে গেল। তিনি বলেন, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার যে কোনো দেশের জন্য অর্থনীতির সমৃদ্ধির প্রতীক। এই সেন্টারে দেশের সকল রপ্তানি পণ্য একই ছাদের নিচে প্রদর্শনের যে ব্যবস্থা রয়েছে তা এক কথায় অসাধারণ। বিদেশিরা এখানে এসে আমাদের পণ্যের গুণগত মান সম্পর্কে জানতে পারবে, যা দেশের রপ্তানি বৃদ্ধি করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত সাত বছরে এই সরকার চট্টগ্রামে নতুন নতুন সড়ক ও ফাইওভার নির্মাণসহ এই নগরীর যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। ঢাকা-চট্টগ্রামের হাইওয়ের চার লেনের কাজ শেষ হয়েছে। এই হাইওয়েকে আট লেনে উন্নীত করার কাজও শুরু করা হবে। বর্তমান সরকারের উদ্যোগে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ করা হচ্ছে। যাতে কর্ণফুলীর দুই পাড়ে সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ হিসেবে গড়ে তোলা যায়। চট্টগ্রাম বন্দর প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বন্দর এ বছর ২০ লাখ টিইউইএস কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। বর্তমান সরকার বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৬ কিমি বে-টার্মিালের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে এই সরকার মহেশখালিতে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ ছাড়া ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে গ্যাস আনা যায় কিনা তা নিয়েও আলোচনা করা হবে। মহেশখালি থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত মূল পাইপ লাইন বসানোর দরপত্রের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও মহেশখালিতে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। বন্দর সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের মাধ্যমে শিল্পায়নের লক্ষ্যে সরকার মীরসরাইয়ে একটি এবং আনোয়ারায় দুটি স্পেশাল ইকোনমিক জোন স্থাপনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাবেক সভাপতি ও শতবর্ষ উদযাপন পরিষদের চেয়ারম্যান এমএ লতিফ এমপি। বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমপি ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এমপি। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেনÑ পূর্তমন্ত্রী, ভূমি প্রতিমন্ত্রী, চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যগণ, সিটি মেয়র, এফবিসিসিআই সভাপতি, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং বিভিন্ন ট্রেডবডির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ।
উল্লেখ্য, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে বিভিন্ন তলায় রয়েছে এক্সিভিশন হল, সুইমিং পুল, ট্রেড ইনস্টিটিউট, আইটি জোন, পাঁচ তারকা হোটেল, কনভেনশন হল, কনফারেন্স সেন্টার, টেম্পোরারি অ্যান্ড পারমান্যান্ট এক্সিভিশন হল, ৪০০ গাড়ির ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ৩টি বেজমেন্ট কার পার্কিং, ব্যাংক, শপ, ফুডকোর্ট, হেলিপ্যাডসহ বিশ্বমানের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা। ২৯৮ ফুট উচ্চতার এ ভবনটি চট্টগ্রামের সর্বোচ্চ ভবন। এই ভবনটি নির্মাণ করতে নিউইয়র্কভিত্তিক ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হতে হয়েছে বাংলাদেশকে। বর্তমানে বিশ্বের ৯১টি দেশে ৩৩০টি ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার একটি নেটওয়ার্কে যুক্ত।
আওয়ামী লীগ মানেই উন্নয়ন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ মানেই উন্নয়ন। এই দল সরকারে এলে দেশ ও জাতির উন্নয়ন হয়। আর বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় থাকলে কোনো উন্নয়ন হয় না। বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় এলে লুটপাট আর দুর্নীতি মানিলন্ডারিং হয়। তারা এতিমদের টাকা মেরে খায়।
চট্টগ্রামে নব প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, তার দল ক্ষমতায় গেলে জনগণ কিছু পায়। বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যেখানে শতভাগ বেতন বাড়ানো হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা এদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করব। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ প্রতিষ্ঠা করব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দেবে, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করা হবে।
৫ হাজার কোটি টাকার ৬ প্রকল্পের উদ্বোধন : প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার ৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। চউক গৃহীত প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার টাইগার পাস থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত চিটাগাং সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্প, ১৭২ কোটি টাকার বায়েজিদ থেকে ফৌজদার হাট পর্যন্ত লুপ রোডের নির্মাণকাজ, ৪৫ কোটি টাকায় বাস্তবায়িত বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, ৫৮ কোটি টাকায় নির্মিত কদমতলী ওভারপাস এবং ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে কুয়াইশ এলাকায় নির্মিত দেশের সবচেয়ে উঁচু বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল।