প্রতিবেদন

জঙ্গিদের স্থান হবে সর্বনিকৃষ্ট জাহান্নামে

বাংলাদেশে গত কয়েক বছরের ধর্মের নামে জঙ্গিবাদী তৎপরতার অব্যাহত ঘটনা ও জনমনে উদ্বেগ, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থানের প্রেক্ষাপটে গত ৬ এপ্রিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ওলামা-মাশায়েখ মহাসম্মেলনের দিকে বিশেষ নজর ছিল পুরো দেশবাসীর। তবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ওলামা-মাশায়েখ মহাসম্মেলনে আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন সৌদি আরব থেকে আগত দুই অতিথি মসজিদে নববীর খতিব ও ইমাম শায়েখ ড. আবদুল মহসিন বিন মোহাম্মদ আল কাশেম এবং মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববী কর্তৃপক্ষের ভাইস প্রেসিডেন্ট শায়খ ড. মুহাম্মদ বিন নাসের আল খুযাইম। তাদের একবার সচক্ষে দেখা ও তারা কী বলেন তা শোনার জন্য অধীর আগ্রহে ছিলেন দেশের মানুষ, বিশেষত সারাদেশ থেকে আসা ওলামা-মাশায়েখসহ লাখ লাখ মুসল্লি। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তারা কী দিক-নির্দেশনা দেন সেদিকে বিশেষ নজর ছিল সচেতন জনগোষ্ঠীর।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গত ৫ এপ্রিল প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে আসেন মসজিদে নববীর ইমাম ও খতিব ড. আবদুল মুহসিন আল কাশেম এবং মক্কার হারাম শরিফের দ্বিতীয় প্রশাসনিক প্রধান ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. মুহাম্মাদ বিন নাসের আল খুযাইম। মহাসম্মেলনে তাদের দুজনের কণ্ঠেই ছিল ইসলামের নামে চলা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে মুসলিম বিশ্বকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান। তারা দুজনেই বলেছেন, বাংলাদেশ হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম দেশ, যারা জঙ্গি দমনে সফলতা দেখিয়েছে। এ সম্মেলন দুই দেশের সম্পর্ক জোরদার ছাড়াও জঙ্গিবাদবিরোধী লড়াই জোরদারে সহায়তা করবে বলেও মন্তব্য করেন তারা। বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে বলে আশার কথা বলেছেন মক্কার মসজিদুল হারামের ইমাম মুহাম্মদ বিন নাসের আল খুযাইম। তিনি বলেছেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দুই দেশ ঐক্যবদ্ধভাবে লড়ছে। এ লড়াই আরও কার্যকরভাবে চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকারও করেছেন তিনি।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ ইসলামের শিক্ষা নয় জানিয়ে মুহাম্মদ বিন নাসের আল খুযাইম বলেছেন, যারা জঙ্গিবাদ ছড়াতে ইসলামের নাম ব্যবহার করছে, তাদের মুখোশ খুলে দিতে তার দেশের বাদশাহ কাজ করছেন। আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি, যারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান মক্কা শরিফের ইমাম। তিনি বলেন, তিনি (শেখ হাসিনা) দুই দেশের সম্পর্ক স্থাপনে অনেক উত্তম পদক্ষেপ নিয়েছেন। আমার বিশ্বাস, এ সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপিত হবে। মুহাম্মদ বিন নাসের আল খুযাইম বলেন, আমাদের বাদশাহ অঙ্গীকার করেছেন, যেসব দেশে ইসলামের নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ ছড়ানো হচ্ছে তাদের মুখোশ খুলে দেবেন।
ইসলামে নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করা বড় অপরাধ বলে জানিয়েছেন সৌদি আরবের মসজিদুল হারাম ও মসজিদুন নববী কর্তৃপক্ষের ভাইস প্রেসিডেন্ট শায়খ ড. মুহাম্মদ বিন নাসের আল খুযাইম। তিনি বলেন, হে মুসলমান ভাইয়েরা, নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা ইসলামে বড় অপরাধ। আমরা নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করতে পারি না। কোনো মুসলমানকে কোনো মুসলমান হত্যা করতে পারে না। বিধর্মীকেও অন্যায়ভাবে হত্যা করতে পারে না। অন্যায়ভাবে হত্যা করলে হাশরের ময়দানে জাহান্নামের আগুন রয়েছে। এ আগুন থেকে কেউ তাকে বাঁচাতে পারবে না।
মসজিদে নববীর ইমাম ড. আবদুল মহসিন বিন মোহাম্মদ আল কাশেম বলেন, যারা মানুষ হত্যা করে তাদের জন্য জাহান্নাম রয়েছে। যারা দেশের শান্তি বিনষ্ট করতে চায়, দেশে অশান্তি নিয়ে আসতে চায়, যারা জঙ্গিবাদের সাথে সম্পর্কিত তারা জাহান্নামে যাবে। মনে রাখবেন, ইসলামে কয়েকটি হারাম কাজের মধ্যে যারা মানুষকে ভয়ভীতি দেখায়, যারা সন্ত্রাস-জঙ্গি কর্মকা- করে এদের সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা দুজনই স্পষ্ট করেছেন, ইসলামের নামে যারা সন্ত্রাসী কর্মকা- চালাচ্ছে তারা ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করছে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে ছাত্রদের গোমরাহ করার জন্য দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে ব্যবহার করা হয়। তাদের বলুন, তাদের সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। যেসব মাদ্রাসায় জঙ্গি ট্রেনিং হয় সেগুলো ইসলামি মাদ্রাসা নয়। এদের পরিচয় জঙ্গি মাদ্রাসা। এসব বিষয়ে শতর্ক থাকার জন্য আলেম-ওলামা-মাশায়েখদের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
মহাসম্মেলনে আসা লাখ লাখ মুসল্লিকে উদ্দেশ্য করে তারা বলেন, জঙ্গিরা ইসলামের মর্যাদাকে নষ্ট করছে। ওরা ইসলামের কেউ নয়। কিন্তু ইসলামের ভাবমূর্তি তারা নষ্ট করছে। তাই জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়তে বিশ্বের সব মুসলমানকে এখন নামতে হবে। লড়তে হবে।
মুসল্লিদের প্রতি ইসলামের ব্যাখ্যা তুলে ধরেন তারা দুজনেই। বলেন, যারা দেশে অশান্তি নিয়ে আসতে চায়, যারা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সাথে সম্পৃক্ত তারা ওয়েল জাহান্নামে (সর্বনিকৃষ্ট দোযখ) যাবে। ইসলামে কয়েকটি হারাম কাজ বলা আছে। যারা মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে, যারা হত্যা করতে চায়, যারা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করতে চায়, তাদের জন্য আজাব রয়েছে। তাদের সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *