প্রতিবেদন

জঙ্গিবিরোধী অভিযান : অপারেশন ‘টোয়ালাইট’

২০১৬ সালের ২৬ জুলাই কল্যাণপুরের জাহাজ ব্লিডিংয়ে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে নিহত হয় ৯ জঙ্গি। ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জে পাইকপাড়ায় অভিযানে নিহত হয় নব্য জেএমবির সমন্বয়ক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডীয় নাগরিক তামিম আহম্মেদ চৌধুরী। এ সময় তার সাথে ধানমন্ডির তওসিফ হোসেন ও যশোরের ফজলে রাব্বী নিহত যায়, যারা ছিল তামিমের সহযোগী। ২০১৬-এর ২ সেপ্টেম্বর মিরপুরের রূপনগরে পুলিশের অভিযানে নিহত হয় নব্য জেএমবির সামরিক প্রশিক্ষক মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম। ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরে অভিযানের সময় আত্মঘাতী হয় নব্য জেএমবির সংগঠক তানভীর কাদেরী। সেখান থেকে আটক করা হয় জঙ্গি মারজান, তানভীর কাদেরী ও বাসারুজ্জামানের স্ত্রী এবং তানভীরের ১৪ বছর বয়সী এক ছেলেকে। সে বছরের ৮ অক্টোবর একই দিন তিন স্থানে অভিযান চালায় পুলিশ ও র‌্যাব। গাজীপুরে পুলিশের অভিযানে নিহত হয় নব্য জেএমবির সংগঠক আকাশসহ সাতজন। ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর আশকোনায় অভিযানের সময় এক নারী ও কিশোর জঙ্গি আত্মঘাতী হয়েছে। র‌্যাবের অভিযানে আশুলিয়ায় আত্মঘাতী হয় নব্য জেএমবির সংগঠক সরোয়ার জাহান এবং গাজীপুর ও টাঙ্গাইলে নিহত হয় চারজন।
২০১৭ সালেও জঙ্গিবিরোধী কর্মকা- ও অভিযান অব্যাহত থাকায় জঙ্গিরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। মার্চ মাসেই ১০০-এর বেশি জঙ্গি গ্রেফতার করা হয়। তবে তাদের অবস্থা জানান দিতে এরা আত্মঘাতী হচ্ছে, আসলে দুর্বলতা ঢাকতে নিজেদের শেষ করে দিচ্ছে বলে মত দিয়েছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। কারণ আগের মতো এরা বিস্তৃত হয়ে কোনো হামলা করতে পারছে না। তাই এমন আত্মঘাতী ব্যবস্থা। যদিও অনেক উদ্বেগের সৃষ্টি করলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর তৎপরতা বিদ্যমান রয়েছে। ১৫ মার্চ চট্টগ্রামের সীতাকু-ে ১৯ ঘণ্টার অভিযানে চার জঙ্গিসহ পাঁচজন নিহত হয়। এ ছাড়া ১৭ মার্চ আশকোনায় ও ১৮ মার্চ খিলগাঁওয়ে একজন করে জঙ্গি নিহত হয়। ২৫ মার্চ রাত আড়াইটায় সিলেটের শিববাড়ির আতিয়া মহলে জঙ্গি অভিযান চালানো হয়। সেনাবাহিনীর কমান্ডো বাহিনীও অংশ নেয়। অপারেশন টোয়ালাইট  নামক অভিযানের মধেই বোমা বিস্ফোরণে দুই পুলিশসহ ছয়জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়। প্রায় ৮৭ ঘণ্টার এই অভিযানে বাড়ির ভেতরে থাকার চার জঙ্গিই নিহত হয়। ৭৮ জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। ২৯ মার্চ মৌলভীবাজার ও কুমিল্লায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়।
মৌলভীবাজার পৌরসভার বড়হাট ও নাসিরপুর গ্রামে যে দুটি বাড়ি জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে পুলিশ ঘিরে রেখেছে সেই দুই বাড়ির মালিক সাইফুর রহমানের শ্যালক মীজানুর রহমানকে (৪০) গ্রেফতার করা হয়েছে। ২৯ মার্চ দুটি বাড়ি ঘেরাও করার সময়ই মীজানুরকে গ্রেফতার করা হয়। জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে মৌলভীবাজার পৌরসভার বড়হাট এলাকায় একটি বাড়ি এবং খলিলপুর ইউনিয়নের সরকার বাজার এলাকার নাসিরপুর গ্রামের একটি বাড়ি ঘিরে রেখেছে পুলিশ ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিটের (সিটিটিসি) সদস্যরা। দুটি আস্তানাতেই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-বিস্ফোরক আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মৌলভীবাজারে নাসিরপুর গ্রামের একটি বাড়ি জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে  ২৮ মার্চ গভীর রাত থেকে ঘিরে রাখার পর ঘরে ২৯ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হয় ‘অপারেশন হিট ব্যাক’। শেষ হয় ৩০ মার্চ বিকেলে। এ অভিযানে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সাথে আছে সোয়াত। নাসিরপুর জঙ্গি আস্তানা ঘিরে দুদিনের অভিযান শেষে ভিতরে বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন ৭-৮টি লাশের অংশ দেখা গেছে। ২৯ মার্চ রাত দেড়টায় শহরের বড়হাট আবুশাহ দাখিল মাদ্রাসা গলিতে দোতলা একটি বাড়ি ‘জঙ্গি আস্তানা’ হিসেবে শনাক্ত করে ঘিরে ফেলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এরপর ভোরে শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে নাসিরপুর গ্রামে আরেকটি জঙ্গি আস্তানা শনাক্ত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *