জন্মদিনে শেখ রাসেলের প্রতি ভালোবাসা
নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে গত ১৮ অক্টোবর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে শেখ রাসেলের ৫৩তম জন্মদিন পালিত হয়েছে। ১৯৬৪ সালের এই দিনে শেখ রাসেল ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মদিন উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কেক কাটা, আলোচনা সভা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আনন্দ র্যালি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, দরিদ্রদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়। এসব কর্মসূচি থেকে বিধিয় আত্মার শান্তি কামনাসহ তার হত্যার পলাতক খুনিদের দেশে আনার দাবি জানানো হয়।
এদিন সকাল ৮টায় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপির নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত শেখ রাসেলসহ ১৫ আগস্টে নিহত সকল শহীদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শহীদদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, আওয়ামী যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগ, শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদ, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, শেখ রাসেল শিশু সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠন।
মাগরিবের নামাজের পর ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। শেখ রাসেলের বড় বোন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিলাদ মাহফিলে অংশ নেন। মিলাদ মাহফিলে বিশেষ মোনাজাতে শেখ রাসেল এবং বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্টের অন্য শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়। বিশেষ মোনাজাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করা হয়।
বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠিত হয় শেখ রাসেল জাতীয় শিশুতোষ চলচ্চিত্র উৎসব। মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি উৎসবের উদ্বোধন করেন। সন্ধ্যায় একাডেমির শেখ রাসেল মুক্তমঞ্চে আনন্দ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এমপি। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের অস্থায়ী রাজনৈতিক কার্যালয়ে জন্মদিন উপলক্ষে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এক আলোচনা সভার আয়োজন করে।
যুবলীগ আয়োজিত রমনা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। যুবলীগ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এমপি।
জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের সামনে যৌথভাবে শিশু সমাবেশের আয়োজন করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ও স্মৃতি জাদুঘর। ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মো. মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ আলোচনা সভা ও কেক কাটাসহ দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি। সভায় সভাপতিত্ব করেন ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ।
শেখ রাসেলের শিক্ষালয় ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলে বিকেলে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সন্ধ্যায় প্রদীপ ও মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়।
ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির দুরন্তপ্রাণ এই শিশু তার পিতার রাজনৈতিক জীবনকে দেখতে শুরু করেছিল মাত্র। বাবার বুকের গভীরে মুখ রেখে সাহস আর বীরত্বের উষ্ণতা নেওয়ার যখনই ছিল শ্রেষ্ঠ সময়, ঠিক তখনই ঘাতকের দল তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। মৃত্যুর আগে শিশু রাসেল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘আমি মায়ের কাছে যাব’। ঘৃণ্য ঘাতকরা নিয়ে যায় মৃত মায়ের কাছে। মায়ের লাশ দেখার পর অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে মিনতি করেছিলেন ‘আমাকে হাসু আপার (শেখ হাসিনা) কাছে পাঠিয়ে দিন’। কোনো কাকুতি-মিনতি কিংবা নিষ্পাপ মুখশ্রী নিষ্ঠুর দুর্বৃত্তদের মন টলাতে পারেনি। খুনিরা তাকে হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। তাদের অপচেষ্টা শতভাগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। শহীদ শেখ রাসেল যেন এখনও বেঁচে আছে বাংলাদেশের সব শিশুর অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে। অবহেলিত, পশ্চাৎপদ, অধিকার বঞ্চিত শিশুদের আলোকিত জীবন গড়ার প্রতীক হয়ে শেখ রাসেল পরিণত হয়েছে এক মানবিক সত্ত্বায়।
সরদার মাহামুদ হাসান রুবেল