জাতির পিতার স্বপ্ন ও আজকের বাংলাদেশ

১৯৭৫ থেকে ২০১৯- দীর্ঘ ৪৩ বছর পেরিয়ে আবারও এসেছে আগস্ট। পঁচাত্তরের এই আগস্টেই বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। হত্যাকারীরা শুধু জাতির পিতাকেই হত্যা করেনি, ওরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে বিলীন করে দিতে চেয়েছিল। ওরা গোটা দেশকে বধ্যভূমিতে পরিণত করতে চেয়েছিল। জাতির পিতার প্রয়াণের পর পেরিয়ে গেছে ৪৩ বছর। আজ কোথায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ? ষড়যন্ত্রকারীদের নীলনকশা কি বাস্তবায়িত হয়েছে? নাকি জাতির পিতার স্বপ্নেরই জয় হয়েছে?

বঙ্গবন্ধু আজীবন একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি তাঁর জীবনের শুরু থেকেই রাজনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে সংগ্রাম করেছেন। শহরের পাশাপাশি গ্রামের কৃষক, কামার, কুমারসহ সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে চেয়েছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু গ্রামের কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নের জন্য একটি আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার রূপকল্প তৈরি করেছিলেন।

১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘শ্মশান বাংলাকে আমরা সোনার বাংলা করে গড়ে তুলতে চাই। ক্ষেত খামার, কল-কারখানায় দেশ গড়ার আন্দোলন গড়ে তুলুন। কাজের মাধ্যমে দেশকে নতুন করে গড়া যায়।’

জাতির পিতার সেই ভাষণের পর পেরিয়ে গেছে ৪৮ টি বছর। এর মাঝে নানা বাঁধা বিপত্তি ষড়যন্ত্র পেরিয়ে আজ বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী অর্থনীতির ওপর দাঁড়িয়ে। ক্ষেত-খামার থেকে শুরু করে কল-কারখানা সর্বত্রই বাঙালি নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে শ্মশান বাংলাকে সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করেছে। এদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) পরিমান এখন ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। জিডিপি’তে কৃষির পাশাপাশি শিল্প খাতেরও অবদান বাড়ছে।

বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশ বর্তমানে ৪১তম দেশ ও দ্রুত বর্ধনশীল দেশের তালিকায় পঞ্চম। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২০ শতাংশ। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি বিবেচনায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান এখন প্রথম সারিতে। গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের মতো ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারেনি বিশ্বের কোনো দেশ।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের বিশ্লেষণে দেখানো হয়েছে, আগামী পাঁচ বাছরের মধ্যে বিশ্ব প্রবৃদ্ধিতে প্রভাবশালী ২০ দেশের তালিকায় উঠে আসবে বাংলাদেশের নাম। উন্নয়নের এই গতিধারা চলতে থাকলে ২০২৪ সালের মধ্যে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে দশমিক ৯ শতাংশ অবদান রাখবে বাংলাদেশ, যা কিনা নে বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ কানাডার সমান।

একসময় যে দেশটিকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলা হতো, সেই দেশটিই আজ অর্থনৈতিক উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায় যে, জাতির কুলাঙ্গাররা যতই ষড়যন্ত্র করুক না কেন তারা পরাজিত হয়েছে। আর জয় হয়েছে বাঙালীর, জয় হয়েছে জাতির পিতার স্বপ্নের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *