জাতির পিতার স্বপ্ন ও আজকের বাংলাদেশ
১৯৭৫ থেকে ২০১৯- দীর্ঘ ৪৩ বছর পেরিয়ে আবারও এসেছে আগস্ট। পঁচাত্তরের এই আগস্টেই বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। হত্যাকারীরা শুধু জাতির পিতাকেই হত্যা করেনি, ওরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে বিলীন করে দিতে চেয়েছিল। ওরা গোটা দেশকে বধ্যভূমিতে পরিণত করতে চেয়েছিল। জাতির পিতার প্রয়াণের পর পেরিয়ে গেছে ৪৩ বছর। আজ কোথায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ? ষড়যন্ত্রকারীদের নীলনকশা কি বাস্তবায়িত হয়েছে? নাকি জাতির পিতার স্বপ্নেরই জয় হয়েছে?
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে চুড়ান্ত বিজয়ের পর বাংলাদেশ এক ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে ছিল। নয় মাসের যুদ্ধে এই ভূখণ্ডের আইন-শৃংখলা, প্রশাসন, অর্থনীতি, অবকাঠামো সবকিছুই ভেঙে পড়েছিল। যুদ্ধের ফলে বাংলাদেশের প্রাণ হিসেবে পরিচিত কৃষিখাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাক বাহিনী চাষাবাদের কাজে ব্যবহৃত পশু, চাষের উপকরণ, বীজ সবকিছুই ধ্বংস করে দিয়েছিল। মাইলের পর মাইল উর্বর ভূমিতে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল তারা। মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশে খাদ্যশস্যের ঘাটতি দাঁড়ায় চল্লিশ লক্ষ টন। রাস্তা-ঘাট, কল-কারখানাসহ সব অবকাঠামোও ধ্বংস করেছিল পাক হায়নার দল।
সেই ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের মানুষ। আমাদের মাটি আছে, আমার সোনার বাংলা আছে। আমার পাট আছে, আমার গ্যাস আছে, আমার চা আছে, আমার ফরেস্ট আছে, আমার মাছ আছে, আমার লাইভস্টক আছে। যদি ডেভেলপ করতে পারি ইনশাআল্লাহ এদিন থাকবে না।’
জাতির পিতা দেশ গড়তে মাত্র ৩ বছর সময় পেয়েছিলেন। এই স্বল্প সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশকে খাঁদের কিনারা থেকে টেনে তুলেছিলেন তিনি। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলতে একের পর এক প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু পঁচাত্তরের পর সবকিছুই থমকে গিয়েছিল। এরপর নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে বাংলাদেশ আজ সবক্ষেত্রেই সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে।
বর্তমানে এদেশে খাদ্যশস্যের উৎপাদন ৪০০ লক্ষ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে গেছে। চাল উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে বাংলাদেশ। সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, মাছ উৎপাদনে চতুর্থ, ছাগল উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ আর আলু উৎপাদনে এদেশ অষ্টম অবস্থানে রয়েছে। ফসলের জাত উদ্ভাবনেও শীর্ষে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এই সমৃদ্ধি এবং এগিয়ে চলা এটারই প্রমাণ দেয় যে, ষড়যন্ত্রকারীদের বাংলার মানুষ ঘৃণার আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করেছে। আর জাতির পিতার স্বপ্নেরই জয় হয়েছে।