ইতিহাস : প্রবন্ধ

ডিজিটাল বাংলাদেশ একটা বিশাল ক্যানভাস : তরুণরাই এর কুশীলব

ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী : বিশেষ সাক্ষাৎকারে ওবায়দুল কাদের

শত সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের পতাকাবাহী বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৬৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ৪ জানুয়ারি। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের এককালীন সভাপতি এবং বর্তমানে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উত্তরণ-কে একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার প্রদান করেন। সাক্ষাৎকারটিতে ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগের ৬৭ বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, ভূমিকা, বর্তমান করণীয় এবং প্রত্যাশা সম্পর্কে খোলাখুলিভাবে তার মতামত তুলে ধরেছেন।

উত্তরণ : ছাত্রলীগের ধারাবাহিক-গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সম্পর্কে কিছু বলুন। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৬৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশের ইতিহাস বিনির্মাণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ভূমিকার মূল্যায়ন কী?
ওবায়দুল কাদের : আওয়ামী লীগেরও আগে ছাত্রলীগের জন্ম। ছাত্রলীগ ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি এবং আওয়ামী লীগের জন্ম ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন। তো বঙ্গবন্ধু নিজেই বলেছিলেনÑ ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালির ইতিহাস। ছাত্রলীগ আসলে যে পাকিস্তানি কলোনিয়াল শাসন-শোষণ, ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আজকের বাংলাদেশÑ পূর্ব বাংলা বলা হতোÑ এই পূর্ব বাংলার ছাত্রসমাজকে স্বাধীনতা ও মুক্তির লক্ষ্যে; স্বাধীনতা একটি শব্দ এবং মুক্তি আর একটি শব্দ। স্বাধীনতা ও মুক্তির লক্ষ্যÑ এটা বঙ্গবন্ধুর যে ভিশনারি লিডারশিপ। তিনি অনেক দূরের স্বপ্ন দেখেছেন। তিনি ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে ছিলেন একজন লড়াকু নেতা। কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে যখন তিনি পড়তেন। তখনও ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে তার উত্থান। তখনকার হলওয়েল মুভমেন্টের বঙ্গবন্ধু একজন দুর্দান্ত সংগঠক। এবং মরহুম হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরেবাংলা একে ফজলুল হক ও মওলানা ভাসানীর তিনি ছিলেন খুব কাছের মানুষ। তখনকার নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানি কাঠামোর মধ্যে বাঙালিদের অধিকার আন্দোলনের বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু তিনি পৃথক দেশের চিন্তা করেন নি। এ চিন্তাটা ছিল মওলানা ভাসানীর। কিন্তু এটাকে বাস্তবের রূপ দেওয়ার মতো কোনো সংগঠন গড়ে তোলা বা সেরকম ম্যাজিক লিডারশিপ তিনি দিতে পারেন নি। এটা হলো বাস্তবতা। তার কমিটমেন্টেও কোনো ঘাটতি ছিল না। স্বপ্নের মধ্যে কোনো ত্রুটি ছিল না। স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন। স্বপ্ন অনেকেই দেখেন। কিন্তু সেই স্বপ্নকে সত্যি করা ভারি চ্যালেঞ্জিং। তখনকার কলোনিয়াল পিরিয়ডÑ এক উপনিবেশবাদ থেকে আরেক উপনিবেশবাদ। ব্রিটিশ থেকে পাকিস্তান। সে সময় ছাত্রলীগের মতো একটা সংগঠনের প্রতিষ্ঠাÑ এটা ছিল বঙ্গবন্ধুরই একটি লালিত স্বপ্নের সোনালি ফসল। এবং এই ছাত্রলীগই ১৯৪৮ সাল থেকে প্রথমেই বাংলা ভাষার দাবিতেÑ ৫৬ শতাংশ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। যখন শাসকদের মধ্য থেকে একেবারেই একটা বৈষম্যমূলক স্টেট ল্যাঙ্গুয়েজের কথা বলা হলোÑ উর্দুই হবে রাষ্ট্রভাষা। তখন এর প্রতিবাদে পাকিস্তান সৃষ্টির উষালগ্ন থেকে ভাষা আন্দোলনের সূচনা। এর পুরোভাগে ছিলÑ ভ্যানগার্ড ফোর্স ছিল ছাত্রলীগ। এবং এটা বঙ্গবন্ধুই নেতৃত্ব দিয়েছেন। কখনও জেলে থেকে। ভাষা আন্দোলনের সময় বঙ্গবন্ধু ছিলেন জেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে তাকে জেলে যেতে হয়েছে। এমনকি তার ডিগ্রি পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে। কিছুদিন আগে এটা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা একটা কলঙ্ক মুক্তির জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ কাজটা করেছে। বিলম্বে হলেও একে আমি সাধুবাদ জানাই।
এরপর ছাত্রলীগের যে আন্দোলনÑ ভাষা আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণতি তার পুরোভাগে ছাত্রলীগই ছিল। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ আরও নাম না জানা অনেকে শহীদ হয়েছে। এদের রক্তের বিনিময়ে, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলা স্বীকৃতি পায় উর্দুর পাশাপাশি। পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে। এরকম একটি বিষয় বিজয় দিয়েই ছাত্রলীগের যাত্রা শুরু। সেখান থেকেই অঙ্কুরিত হয় স্বাধীনতার বীজ। সেখান থেকেই মূলত ’৫২ সালের ভাষা সংগ্রামের বিজয়ের মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়।
এবং এই ভিত্তিপ্রস্তর থেকে এর পরের যাত্রা। ’৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনÑ সেখানেও ছাত্রলীগ একটি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে। তারপর ’৫৮ সালের মার্শাল ল’Ñ এই মার্শাল ল’-বিরোধী আন্দোলনেও ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত বলিষ্ঠ ও সাহসী। ’৬২-র শিক্ষা আন্দোলনÑ ছাত্রলীগ, তখন ছাত্র ইউনিয়নও ছিল। ’৬২ সাল থেকেই ছাত্রলীগ-ছাত্র ইউনিয়ন শিক্ষা আন্দোলনে একটা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এবং ছাত্রলীগ ছিল পুরোভাগে। তারপরে ’৬৬-র ৬-দফা আন্দোলনÑ যখন আমাদের নেতারা কারাগারে বঙ্গবন্ধুসহ। বঙ্গবন্ধু তো এই জেল থেকে মুক্তি পেলে পরে আবার অন্য জেলে। এই করে তার যৌবনের প্রায় ১১ বছর তিনি জেলে কাটিয়েছেন। জেলেই তার আরেক বাড়ি ছিল। এটা হলো বাস্তবতা। তিনি বলেছেন, প্রিজন ইজ মাই এনাদার হোমÑজেল ইজ মাই এনাদার হোম।
এর পরের ধারাবাহিকতা ’৬৯-এর গণ-আন্দোলন। সেই গণ-আন্দোলনে তো নেতৃত্বে ছিল সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ। সেখানেও নেতৃত্বে ছিল ছাত্রলীগ। তারপর তো ’৭০-এর নির্বাচন বা ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ। সেখানেও বঙ্গবন্ধুর ডাকেÑ এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ২৬ মার্চ, ২৫ মার্চ রাত ১২টা ১ মিনিটে ইথারে ইথারে ভেসে গেল চট্টগ্রাম ইপিআরের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরীর কাছে স্বাধীনতার বার্তা। বঙ্গবন্ধুর যে ঘোষণা স্বাধীনতা। এবং সেখান থেকে সারাবাংলায় ছড়িয়ে পড়ে।
উত্তরণ : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয় আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা সম্পর্কে কিছু বলবেন কী?
ওবায়দুল কাদের : আসলে স্বাধীনতার ঘোষণাটা ৭ মার্চেই হয়ে গিয়েছিল। যেটি মরহুম জিয়াউর রহমান নিজেই বলেছেনÑ ৭ মার্চে উনি বিচিত্রায় একটা লেখায় লিখেছিলেন যেÑ ৭ মার্চেই আমরা বঙ্গবন্ধুর ভাষণ থেকে স্বাধীনতার গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে গিয়েছিলাম। এটাই হলো বাস্তবতা। আজকে বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেক কথাই বলেন। জিয়াউর রহমান নিজে কোনোদিন বলেন নি তিনি স্বাধীনতার ঘোষক। কারণ তিনি জানেন তিনি ঘোষণাটি পাঠ করেছিলেন। তার কণ্ঠ এখনও আছে। এ কথাটা আমাদের এখনও কানে বাজে। জিয়ার কণ্ঠই আমরা শুনেছি। ‘আই মেজর জিয়া অন বিহাফ অব আওয়ার গ্রেড ন্যাশনাল লিডার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হিয়ার বাই ডিক্লেয়ার দি ইনডিপেন্ডেন্স অব বাংলাদেশ।’ সেই কণ্ঠ এখনও আছে। এ সত্যকে যারা চাপা দিতে চান। যারা ইতিহাস দখল করতে চান। যারা ইতিহাস নিয়ে কানামাছি খেলতে চানÑ তারা জানেন না যে ইতিহাস তার নিজস্ব গতিতে চলে। যারা ইতিহাসকে বিকৃত করেন তারাই একদিন ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়ে যান। এবং অনেকেই আজ ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন। আমি নাম বলতে চাই না।
এই সমুদয় সংগ্রামের সেন্ট্রিফিউগাল ফোর্স ছিলেন বঙ্গবন্ধু। একজন ব্যক্তিÑ কেন্দ্রাতিক শক্তি। সেখান থেকে স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের মোহনা। ’৭০-এর নির্বাচন তাকে সাংবিধানিকভাবে বৈধ নেতাÑ সারাদুনিয়ার কাছে তিনি জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন। মেজরিটি পার্টির লিডার হিসেবে স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন। এবং এই অধিকার একমাত্র তারই ছিল জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে এবং মেজরিটি পার্টির লিডার হিসেবে। আর কারও স্বাধীনতার ঘোষণার সেদিন বৈধ কোনো অধিকার ছিল না। এদিক থেকে এটাকে চ্যালেঞ্জ করার কোনো উপায় নেই। স্বাধীনতা সংগ্রামেও, মুক্তির সংগ্রামে ছাত্রলীগ নেতারাই আসলে মুজিব বাহিনীÑ এটা তো পুরোপুরি ছিল বিএলএফ। এটা ছিল ছাত্রলীগ এবং এর সঙ্গে কিছু কিছু ছাত্র ইউনিয়নের, তারাও অনেকে এর সঙ্গে ছিলেন। তবে মূলত ছাত্রলীগই এখানে মূল ভূমিকা নিয়েছিল। এ ছাড়াও মুক্তিবাহিনীÑ ফ্রিডম ফাইটার যেটা সেখানেও বিভিন্ন রকম ছিল তখন। মানে এটাকে সুবিধার জন্য দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছিল। একটি হলো ফ্রিডম ফাইটার, অন্যটি বিএলএফ। বেঙ্গল লিবারেশন ফোর্স। মানে মুজিব বাহিনী। এই বিএলএফটা মূলত ছাত্রলীগারদের দ্বারাইÑ এই যে তোফায়েল আহমেদ, সিরাজুল আলম খান, শেখ ফজলুল হক মণি, আবদুর রাজ্জাকÑ এরা ছিলেন নেতা। এই চারজন নেতা ছিলেন। এর পরের লেয়ারে ছিলেনÑ আ স ম আবদুর রব, আবদুল কুদ্দুস মাখন, নূরে আলম সিদ্দিকী, শাহজাহান সিরাজ। এদের সবাই ছাত্রলীগার। ছাত্রলীগই আসলে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধের সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেছে। তারাই কিন্তু এ দায়িত্ব সুচারুভাবে সম্পন্ন করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠন, ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমাদের সাবেক নেতাদের একটি বিশাল ভূমিকা ছিল। যারা মুজিব বাহিনীর কমান্ডার তাদের।
উত্তরণ : বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বা সপরিবারে হত্যাÑ এসব ট্র্যাজিক পরিস্থিতিতে ছাত্রলীগ এবং সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে আপনার ব্যাখ্যা।
ওবায়দুল কাদের : স্বাধীন বাংলাদেশের সাড়ে তিন বছরে ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল দেশ গড়ার সংগ্রামে। এর মধ্যে ছাত্রলীগের বিভক্তি আসে। সে বিভক্তিটা আসে এখানেÑ আসলে বিপ্লবের পরে একটা প্রতিবিপ্লব হয়ে গেল। তরুণ সমাজের একটা বিরাট অংশÑ সেদিন যারা এখান থেকে বিভক্ত হয় ছাত্রলীগের সম্মেলনেÑ স্বাধীনতার পর যে সম্মেলন হয় তাতে বিভক্তি আসে। এবং সিরাজুল আলম খান ও আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বে আলাদা একটি ছাত্রলীগের জন্ম হয়। অপ্রিয় হলেও সত্যÑ তরুণদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তখন ওই যে ছাত্রলীগ জাসদÑ যেটা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের স্লোগান দিয়ে যাদের জন্ম সেখানে চলে যায়। মূল সংগঠনের যারা তারা কিন্তু অপেক্ষাকৃতভাবে দুর্বল ছিল। আমি মূল সংগঠনেই ছিলাম। তখন বলত বৈজ্ঞানিক ছাত্রলীগ ওইদিকে আর এদিকে মুজিববাদী ছাত্রলীগ। তখন যে অবস্থাটা সেটা হচ্ছেÑ আমি একটা কথা নির্দ্বিধায় বলব, এটা আমার পার্সোনাল ওপেনিয়ন যে, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতার পর যদি ছাত্রলীগের এ বিভক্তিটি না আসত এবং জাসদ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের জন্ম না হতো তা হলে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমাদের দুর্বলতার ওপরেই যে আঘাত এসেছিল সেদিন তা ঘটত না। সাংগঠনিকভাবে আমি মনে করি, যদিও সারা বাংলাদেশের জনগণ বঙ্গবন্ধুর পক্ষে, জনগণ ’৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুকে ভোট দিয়েছে এবং ’৭৫-এ যদি কোনো ভোট থাকতÑ তখন তো দেশের অবস্থা স্বাভাবিক, এই যে জ্বালাও-পোড়াও, থানা লুট-ফাঁড়ি লুট, ঈদের জামাতে আমাদের এমপি হত্যা, এসব অনেক ঘটনা এবং গণবাহিনী সৃষ্টি করে জাসদ যে অবস্থার সৃষ্টি করেছিল তখন সারা বাংলাদেশেÑ প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও এ ধরনের ঘটনা ঘটত; নাশকতামূলক কার্যকলাপ চলত। তারা এটাকে রাজনীতি বললেও এটি আসলে নাশকতা-সহিংসতার কাজগুলো তখন গণবাহিনী করত। তাদের নেতারাও পরবর্তীতে স্বীকার করেছেÑ তাদের এ ধরনের বাহিনী গড়ে তোলা এবং বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা, এটা তাদের বড় ভুল ছিল। এটা মুক্তিযুদ্ধেরই ক্ষতি ডেকে এনেছিল।
’৭৫-এ যে প্রতিবিপ্লব সংগঠিত হয়েছিল এবং যে স্প্রিন্টার বুফ সেদিন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল, সেদিন বিদেশি শক্তিরও ইন্ধন ছিল। এ ঘটনাটি কীভাবে ঘটত আমি জানি নাÑ তবে আমার মনে হয়, জাসদ-গণবাহিনী এবং ছাত্রলীগের যে বিভক্তি সেখান থেকেই তো মূলত গণবাহিনী-জাসদ তৈরি হয়। এই জাসদের সঙ্গে তো যারা পরাজিত শক্তি তাদেরও একটা অংশ যোগ দিয়েছিলÑ সাপোর্ট দিয়েছিল। তাদের নেতৃত্বে হয়তো মেজর জলিল, আ স ম রব ছিল। কিন্তু তাদের সাপোর্টার, জেলা পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মী, তৃণমূল পর্যায়ে তখন পাকিস্তানের যারা হানাদার বাহিনীর যারা সাপোর্টার ছিল তাদের অনেকেই কিন্তু তাদের সাথে মিশে গিয়েছিল। এসব অনেক কারণে আমার মনে হয়, স্বাধীনতার পরে এই যে বিভক্তির রক্তক্ষরণÑ এটা ঘটতে ঘটতে পরিণতিটা আমাদের শত্রুদের সাহায্য করেছিল বঙ্গবন্ধুর মতো এক বিশাল ব্যক্তিত্বকে আঘাত করা। তারা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। তারা আমাদের মধ্যে থেকে যারা বেরিয়ে গেছে, যারা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, যারা আলাদা সংগঠন করে, আলাদা বাহিনী করে সেদিন বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে তারা প্রকাশ্যে অনেকটা যুদ্ধ ঘোষণার মতো একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। তরুণদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ তাদের সঙ্গে চলে গিয়েছিল। যে কারণে তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক একটা শক্তশালী অবস্থানও তাদের ছিল। এটা বাস্তবতা। সে সময় ছাত্রলীগের এর পরের যে ভূমিকাটাÑ ’৭৫-পরবর্তী। তখন কিন্তু ছাত্রলীগই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
উত্তরণ : আপনি তো সভাপতি ছিলেন ছাত্রলীগের এবং আপনার সমসাময়িক যে পরিস্থিতি ছিল সে সম্পর্কে বলুনÑ
ওবায়দুল কাদের : আমি জেল থেকেই সভাপতি হই। আমার সাথে চুন্নু ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। তখনই বঙ্গবন্ধু হত্যার সেন্টিমেন্ট এবং আবেগÑ এটাকে আমরা সারা বাংলাদেশে কাজে লাগিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগের পরিস্থিতি ভালো করি। ’৭২-’৭৫ পর্যন্ত অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাসদ ছাত্রলীগ জয়লাভ করত। কিন্তু ’৭৫-এর পরে এটা ঘুরে গিয়েছে। শুধু ডাকসুতে একটু ভিন্ন হয়েছে। তাও ভিপি-জিএস; কিন্তু অন্যান্য পদে কিন্তু আমরা জিততাম। হলগুলোতে আমরা, অন্যান্য পদে আমরা, একবার তো ১৯টি পদের মধ্যে ১৬টি পদে আমরা জিতেছিলাম। কিন্তু ভিপি-জিএস আমরা জিততাম না। নানান ইকুয়েশন ছিল। বা যে কোনো কারণে আমরা হয়তো পাইনি। কিন্তু ছাত্রলীগ তখন অনেক স্ট্রং ছিল। সে জন্যই আজকে অনেক সময় ভাবতে কষ্ট লাগে যেÑ কি ছাত্রলীগ রেখে এলাম!
উত্তরণ : আপনি যখন সভাপতি ছিলেন তখনকার বিশেষ কোনো স্মৃতি যা আপনাকে প্রভাবিত করে?
ওবায়দুল কাদের : বিশেষ মুহূর্ত মানেÑ সব সময়ই আমরা চ্যালেঞ্জের মুখে ছিলাম। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম প্রতিবাদ তো আমরাই করেছিলাম। ২০ অক্টোবরÑ ১৫ আগস্টের পর। ছাত্র ইউনিয়নও ছিল। তখন করেছিলাম জাতীয় ছাত্রলীগÑ যেখানে ছাত্র ইউনিয়ন ছিল। লেনিন ভাই ছিল, মাহবুব জামান, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ইসমত কাদির গামা, রবিউল আলম চৌধুরী, মমতাজ হোসেন, সৈয়দ নুরুল ইসলাম। পরে সৈয়দ নুরুল ইসলাম কাদের সিদ্দিকীর সাথে কাদেরিয়া বাহিনীতে চলে যায়; কিন্তু যে কোনো কারণে একটি দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান।
উত্তরণ : নেত্রী ফিরে এলেন কখন?
ওবায়দুল কাদের : নেত্রী ফিরে এলেন ১৯৮১ সালের ১৭ মে। তখন আমি ছিলাম ছাত্রলীগের সভাপতি। এবং আমরাই প্রথম নেত্রীকেÑ মিজানুর রহমান চৌধুরী সংসদে বললেনÑ বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হোক। আর বাইরে থেকে আমিই প্রথম শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে স্বদেশে ফিরিয়ে আনা হোকÑ এ দাবি তুলেছিলাম ছাত্রলীগের ব্যানারে। আমরা স্টেটমেন্টও দিয়েছিলামÑ কাদের-চুন্নু যে ছাত্রলীগÑ ব্রাকেটেড ছিল। তারপর তো নেত্রী এলেন। নেত্রী আসার মাস তিন-চারেক পরেই আমি ছাত্রলীগের সম্মেলন করে দেই। তারপর আবার বিভক্তি। রাজ্জাক ভাই তখন বাকশাল করেন। এবং ছাত্রলীগের একটা ভালো অংশÑ তারুণ্যের একটা উজ্জ্বল অংশÑ তখন বাকশালে চলে যায়। এই যে বিভক্তি এর ভিতরে এদিকের নেতৃত্ব ত্যাগী কিন্তু একটু দুর্বল ছিলÑ মেইনস্ট্রিমের। জালাল-জাহাঙ্গীর ত্যাগী নেতৃত্ব। কিন্তু তারপরও আমার মনে হয়, রাজ্জাক ভাই যেহেতু বিষয়গুলো দেখতেন তাই তরুণদের বেশির ভাগ কোয়ালিটিফুল নেতৃত্ব ওদিকে চলে যায়। যেহেতু শেখ হাসিনা আমাদের, তাই এতে কোনো শূন্যতা সৃষ্টি হয়নি। তার প্রমাণ রাজ্জাক ভাই আবার বাকশাল থেকে আওয়ামী লীগে ফিরে আসেন। যার প্রমাণ হলোÑ শেষ পর্যন্ত টিকতে পারেন নি; কিন্তু প্রথমেই একটা ধাক্কা দিয়ে চলে গেছেন। এ ধাক্কাটা আমাদের জন্য একটা হোঁচট ছিল। বিশেষ করে তারুণ্যেÑ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। সেই আঘাতের পর সেখানেই একটা রক্তক্ষরণ ঘটে গেছে। তারপরই সেই অবস্থাকে নেত্রীর নির্দেশে আমি অনেকদিন ছাত্রলীগ ছেড়ে দিয়েও দেখাশোনা করি এবং ছাত্রলীগকে মোটামুটি একটা অবস্থায় নিয়ে আসি। আমরা দু-তিনটা ইলেকশনও করিয়ে দেই। কিন্তু তারপরও দেখা যায় রুলিং পার্টিতে আসলে ছাত্রলীগ তার আগের সত্তাটা হারিয়ে ফেলে। রুলিং পার্টিতে এলেই ঐতিহ্যগত জায়গা থেকে একটু বিচ্যুতি ঘটে। এটা সবার ক্ষেত্রে না। ক্ষমতার সঙ্গে কিছু আবর্জনা পরগাছা ঢুকে পড়ে। এই আবর্জনাগুলো এখানে এসে নানান ঝামেলা করে। আর রাজনীতিতে কিছু কিছু দলীয় লোকÑ নির্বাচনী রাজনীতিতে অনেক প্রতিনিধি আসেন, যাদের কোনো পলিটিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। এসব লোক নানা জায়গায় ছাত্রলীগকে প্রভাবিত করেন। এবং স্থানীয়ভাবে প্রত্যেকে নিজ নিজÑ আর সরকার দল হলে প্রত্যেকেই নিজের আধিপত্য এবং ক্ষমতার প্রমোশনে একটা সিঁড়ি হিসেবে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে। এই প্রবণতা ১৯৯৬-২০০১ ছাত্রলীগের ক্ষতি করেছে। এ সময়ও এই ধরনের প্রবণতা আছেÑ এই ধরনের ট্রাসেস-তলানি এসে ঢুকে পড়েছে।
উত্তরণ : আমি একটু অতীতে ফিরে যাচ্ছি। নব্বইয়ের গণ-আন্দোলন একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। সেখানেও ছাত্রলীগের একটা বিশেষ অবদান ছিল। আপনার সে সময়কার পর্যবেক্ষণ কী ছিল বা তাদের কন্ট্রিবিউশিন কী?
ওবায়দুল কাদের : না তখন ভালো ছিল। ডাকসুটা আমরা পেলাম। ভিপি ছিল আমাদের, জাসদের ছিল জিএস। সুলতানের সাথে জিএস ছিল মুস্তাক। মুস্তাক ছিল জাসদের। এরপরই তখনও ছাত্রলীগ একটা ভালো জায়গায় অবস্থান করছিল। তখনও ছাত্রলীগের মধ্যে এসব নৈতিক বিচ্যুতিÑ কিছু লোকের অপকর্ম, কিছু লোকের বেপরোয়া কর্মকা-, এই বেপরোয়া কর্মকা-গুলো এভাবে প্রসারিত হয়নি। যেটা এবার প্রথম থেকেই ফুটেছে। গতবার বিশেষ করে ওয়ান ইলেভেনের পর।
উত্তরণ : এখানে নিবিড় একটা পর্যবেক্ষণ বা…
ওবায়দুল কাদের : আমি মনে করি দু-তিনটা বিষয় দেখতে হবে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনটা মাস্ট। গত ২২ বছরে ৪৪ জন ভিপি-জিএস হতো। এরা কিন্তু জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দিত। এদের মধ্যে অনেকেইÑ ডাকসুর ভিপি-জিএস সবাই যে মূল ধারার রাজনীতিতে আছে তা ঠিক না। কিন্তু তারপরও লিডারশিপ। এই লিডারশিপের মধ্যে হয়তো ১০ জন বিচ্যুৎ হতে পারে। কিন্তু একটা ভালো নেতৃত্ব আসত জাতীয় পর্যায়ে। কলেজ সংসদ, বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি ইলেকশনগুলো যথারীতি হতো ’৭৫-এর পর। কিন্তু সেই ইলেকশনগুলো এখন বন্ধ হয়ে গেছে। সেই ইলেকশনগুলো না হওয়ার কারণে ছাত্র রাজনীতির ভিতরেও এই যে ইলেকশন না হওয়া এই যে অগণতান্ত্রিক, অসুস্থ প্রতিযোগিতা সেটা আরও বেড়ে গেছে। এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা বেড়েছে, গণতান্ত্রিক পরিবেশের অনুপস্থিতিতে অসুস্থ ধারার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এই অসুস্থ ধারা আরও অসুস্থ হতে থাকে। আমি এটাই বলবÑ ছাত্র সংসদ নির্বাচন যদি ঠিকমতো হয়, যথারীতি, সময়মতো, তা হলে ছাত্রসমাজের মধ্যে নেতৃত্বে যারা থাকে বা যাদের নেতা হওয়ার শখ থাকে তারা ভাবে আমাকে আগামী বছর ইলেকশনে দাঁড়াতে হবে। কাজেই আমি ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে এমন কোনো কাজ করব যে কাজের কারণে আমি ভোট পাব না। আমি এ কথা বারবার বলেছি এখানে ইমেজের একটা ব্যাপার আছে। সেখানে ইমেজটা নিজে নিজেই ঠিক করত। এটাই হলো এক নম্বর ক্রাইটেরিয়া। আর দুই নম্বর বলি যে, ছাত্র রাজনীতিতে যেমন ছাত্রলীগ, আমার মনে হয় ছাত্র সংগঠনগুলোর কনফারেন্স-কাউন্সিল সময়মতো হওয়া দরকার। কিন্তু সময় কেউ রাখতে পারে না। সময়মতো হচ্ছে না। অনেক সময় দেশের প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য হয় না। কিন্তু এতে নেতৃত্বে ট্র্যাফিক জ্যাম হয়ে যায়। এবং অসুস্থ প্রতিযোগিতাও বেড়ে যায়। অপকর্মকারীরা প্রশ্রয় পায়। অবমূল্যায়ন হয়। অনেকে মনে করে আমার তো ছাত্রজীবনই শেষ হয়ে গেল। কিছু হতে পারলাম না। হতাশা থেকেও সে নানান অপকর্মে লিপ্ত হয়। এগুলোর বাস্তবতাও আমাদের উপলব্ধি করতে হবে। তা হলে আমি মনে করি, নেক্সট হলো ছাত্র সংগঠনগুলোর কাউন্সিলগুলো যথারীতি যথাসময়ে হওয়া উচিত। তাতে ছাত্র সংগঠনের মধ্যে একটা গণতান্ত্রিক সুস্থ প্রতিযোগিতার সুযোগ থাকে। নেতৃত্বে রেগুলার স্টোন থাকা। এটা একদম মাস্ট করতে হবে।
উত্তরণ : নেত্রী তো ছাত্রলীগের বয়স কমিয়ে দিলেনÑ
ওবায়দুল কাদের : আমি বলছি যে বয়স কমিয়ে ফেলেছেন। নেত্রী হয়তো ওপরের দুজন করেছেন। কিন্তু বাস্তবে হয়তো কেন্দ্রীয় কমিটিটা আছে। কিন্তু জেলা পর্যায়ে ধারাটা ঠিক রাখা হয়নি। অনেক সময় দেখা যায় যে সেন্ট্রালের চেয়ে অনেক জেলার প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারির বয়স বেশি। এতে কিন্তু ভারসাম্য রক্ষা হয় নি। এই যে সেন্ট্রালের সাথে নেত্রী যা করে দিয়েছেন, তার সাথে সঙ্গতি রেখে শাখা সংগঠনগুলো সেভাবে নতুন মডেলে রিক্যাশ করে উঠতে পারে নি। পারেনি বলেই এখানে একটা ইমব্যালেন্স সৃষ্টি হয়েছে। অথরিটির ইমব্যালেন্স, পাওয়ারের ইমব্যালেন্স। এবং এই সুযোগে অনেক কিছু ডিস্ট্যাবিলাইজ হয়ে গেছে। এটাই আমি বলতে চাই। কাজেই দু-তিনটা বিষয় দেখতে হবে। নিয়মিত ছাত্রদের দিয়ে নেতৃত্ব, তারপর রেগুলার কাউন্সিল করা। আর এক নম্বরে আমি যেটা বলছি ছাত্র সংসদ নির্বাচন।
উত্তরণ : ছাত্রলীগের কাছে আপনার প্রকৃত প্রত্যাশা কী?
ওবায়দুল কাদের : শোনেন আমি স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধে যে ছাত্রলীগ, স্বাধীনতা-পরবর্তী ছাত্রলীগের রোল সেটি এক থাকবে না। ভূমিকা পাল্টাবে, সময়ের পরিবর্তনে ভূমিকা বদলাবে। তারপর ’৭৫-পরবর্তী যে ভূমিকা ছিল সেই ভূমিকা পাওয়ারে আসার পর বদলাবে। কারণ তখন পাওয়ার আসার পর আমাদের নেত্রীর একটা ভিশন আছে, সেই ভিশনকে সামনে রেখে কতগুলো বিষয় তিনি ছাত্রদের সামনে তুলে ধরেছিলেন যেমনÑ বোমার পরিবর্তে বই হাতে নাও, অস্ত্রের বদলে কলম হাতে তুলে নাও। এটা ঠিকমতো অনুসরণ করা গেলেÑ যেমন ছাত্র সংগঠনগুলো ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম করে। আমি অনেকবার শুরু করিয়েছিলাম। কিন্তু সেটি আর থাকে না। এই ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামটা ঢাকা থেকে একদম তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত থাকে এবং সেটা লোক দেখানো না। এটা বাস্তবেÑ এগুলো চর্চা করতে হবে। পড়াশোনা করতে হবে করাতে হবে।
উত্তরণ : ডিজিটাল বাংলাদেশের…
ওবায়দুল কাদের : ডিজিটাল বাংলাদেশ একটা বিশাল ক্যানভাস। এখানে ছাত্র সংগঠনের তরুণদের ভূমিকা থাকবে আগে। কারণ আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশটাকে উৎসর্গ করেছেন। তরুণরাই কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশের কুশীলব-কারিগর। এখানে সজীব ওয়াজেদ জয়Ñ কম্পিউটার সায়েন্টিস্ট। তার একটা বিশাল ভূমিকা আছে। তিনি কিন্তু নীরবে নিঃশব্দেÑ বাংলাদেশে কিন্তু একটা নীরব বিপ্লব ঘটে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে। এবং সজীব ওয়াজেদ জয় এখানে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করছে। এবং আমার বিশ্বাস যে, ছাত্রলীগ এখন যদি এই প্রোগ্রামের দিকে, যে ভিশন নেত্রী দিয়েছেন সেটাকে সামনে রেখেÑ ২০২১ সালকে সামনে রেখে এই কাজগুলোতে নিজেদের ব্যাপৃত করে, অংশগ্রহণ করে এবং কমিটমেন্ট নিয়ে আচরণগত দিক থেকে নিজেদের সংশোধন করে, তা হলে আমি তাদের নিয়ে অনেক আশা আমরা করতে পারি।
উত্তরণ : এর জন্য কোনো পরিকল্পনা…
ওবায়দুল কাদের : আমি তো বলে দিলাম, এই বিষয়গুলো করতে হবে। ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামটা দরকার। ঠিকমতো কাউন্সিল করা দরকার। নিয়মিত ছাত্রদের হাতে তৃণমূল পর্যন্ত দায়িত্ব দেওয়া দরকার। ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলো করা দরকার। আর মূল সংগঠনে নেত্রী আমাদের অভিভাবক। তিনি ঠিক আছেন। বঙ্গবন্ধু আমাদের আদর্শের গুরু। তিনি আমাদের আদর্শের পিতা। এটুকু ঠিক রেখে আমাদের এই যে বিভিন্ন নেতার স্বার্থ সংরক্ষণের পাহারাদার হিসেবে ছাত্রলীগ ব্যবহৃত হয়Ñ এ প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। থ্যাংক ইউ!

সাক্ষাৎকার গ্রহণ : মাসুদ পথিক
বাণীবদ্ধ : মো. আরিফুল ইসলাম
অনুলিখন : মো. জাকির হোসেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *