প্রতিবেদন

তাঁতী লীগ, মহিলা লীগ ও যুব মহিলা লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত

ঐতিহ্যবাহী মসলিনকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কল্যাণে ও ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। একটি সুষ্ঠু নীতিমালার মাধ্যমে কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে গেলে যে সাফল্য অর্জিত হয়, আওয়ামী লীগই তা প্রমাণ করেছে। একমাত্র আওয়ামী লীগই যে দেশের উন্নয়ন করতে পারে, দেশ এগিয়ে যায় এবং আমরা সেটি প্রমাণও করেছিÑ সেটি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। সরকারের উন্নয়ন ও সাফল্যগুলো দেশের মানুষের সামনে ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে।
২০২১ সাল নাগাদ দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে নেতাকর্মীসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালে আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন উদযাপন করব। এ জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ প্রতিষ্ঠার যে লক্ষ্য আমরা নিয়েছি, সেটি বাস্তবায়নে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশকে যেন আমরা উন্নত ও সমৃদ্ধশালী করে গড়ে তুলতে পারি, সেই লক্ষ্যেও সবাইকে কাজ করতে হবে।
গত ১৯ মার্চ রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন তাঁতী লীগের প্রথম জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁত শিল্পকে আরও আধুনিক ও বহুমুখীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এই শিল্পের প্রসারে সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপই তার সরকার নেবে। মসলিনের ওপর চার ইঞ্চির জরির কাজ করতে পুরোটা দিন লেগে যায়। এই তাঁতীরা মনোযোগ দিয়ে একটি বস্ত্র তৈরি করছেন এটাও তো একটি উন্নতমানের শিল্প। কাজেই এটাকে আরও বেশি সহযোগিতা করার জন্য আমাদের সরকার সব সময় প্রস্তুত এবং আমরা তা করে যাব। এই শিল্প যেন আরও উন্নত হয়, সম্প্রসারিত হয়, সেদিকেই আমরা নজর দিচ্ছি। উদ্যোগ নিচ্ছি মসলিনকে ফিরিয়ে আনার।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ তাঁতী লীগের আহ্বায়ক এনায়েতুর রহমান চৌধুরী। স্বাগত বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ তাঁতী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাধনা দাসগুপ্তা। প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক খগেন চন্দ্র দেবনাথ সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন। শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার মো. শওকত আলী। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। তিনি সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এ সময় সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হয়।
প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী তাঁত শিল্প ও তাঁতীদের কল্যাণে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে দেশে তৈরি কাপড়, বিশেষ করে তাঁতীদের বোনা কাপড়ের প্রশংসা করে তিনি বলেন, আমাদের তাঁতীদের মেধা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। সবাই লক্ষ করেছেন, তাঁতী ভাইয়েরা লক্ষ করেছেন, আমি কিন্তু কখনও ফেঞ্চ শিপন পরি না। বাংলাদেশে তৈরি, আমাদের তাঁতীদের তৈরি কাপড়ই সবসময় ব্যবহার করি। এটি সুতির কাপড় হোক, সিল্কের কাপড়, এমনকি খদ্দর শাড়ি আছে তা-ও পরি। বিদেশে যত উপহার দেই, সেখানেও উপহারের খাতায় কিন্তু সবসময় দেশে তৈরি কাপড় রাখি, উপহার দিয়ে থাকি।
নারীদের পাশাপাশি পুরুষদেরও তাঁতীদের বোনা কাপড় ব্যবহারে উৎসাহিত করে শেখ হাসিনা বলেন, শাড়ি আমরা পরি। আমার তো মনে হয় ছেলেরাও শার্ট, পাঞ্জাবি সবকিছু তাঁতীদের তৈরি কাপড় থেকে পরতে পারে। এগুলো দেখতেও সুন্দর। আমাদের ছেলে-মেয়েদেরও উন্নতমানের খদ্দর কাপড় কিনে দেই, পাঞ্জাবিও কিনে দেই। তারা পরে।
তাঁত বোর্ডকে ডিজিটালাইজড করার ক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে আমরা একটা টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ও দেশে প্রতিষ্ঠা করেছি। আর আমাদের তাঁতীদের মেধা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। তিনি বলেন, আমাদের তাঁত শিল্পের কাপড় শুধু পরিধান নয়, গৃহে নানামুখী কাজে এর ব্যবহারেরও সুযোগ রয়েছে। আমি আশা করব, সকলে সেদিকে নজর দেবেন। কাজেই এই তাঁত শিল্পকে আমরা আরও উন্নত এবং সমৃদ্ধশালী করতে চাই। সেদিকে আমাদের দৃষ্টি রয়েছে এবং এ জন্য যা যা করণীয় আমরা তা করব।
তিনি বলেন, স্বতন্ত্র জামদানি পল্লী, বেনারসি পল্লী ও তাঁত পল্লী স্থাপনেরও কাজ চলছে। নারায়ণগঞ্জের তারাবো-তে ক্ষুদ্র তাঁতীদের জন্য প্লট বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তাঁতীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তাদের ঋণ দেয়া হচ্ছে। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পরই এদের সরকার ঋণ দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে বলে তিনি বলেন, তাঁতীদের কল্যাণে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। বাজেটে সুতা ও রং আমদানি ৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর রহিত করা হয়েছে। যাতে দাম কমে। মাদারীপুরের শিবচর এবং শরীয়তপুরের জাজিরায় ১২০ একর জমিতে তাঁত পল্লী স্থাপন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
সভাপতি শওকত সাধারণ সম্পাদক খগেন : দীর্ঘ ১৪ বছর পর নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পেল তাঁতী লীগ। জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে ১৯ মার্চ বিকেলে গঠনতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী আলাপ-আলোচনা শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বাংলাদেশ তাঁতী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নবনির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন। এতে নতুন সভাপতি হয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার মো. শওকত আলী এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন খগেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ। নবনির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পরে বৈঠক করে পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করবেন।
মহিলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষায় দেশের মানুষের মন জয় করার জন্য নেতা-কর্মীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। নারী উন্নয়নসহ সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-গুলো দেশের সর্বত্র মা-বোনদের সামনে তুলে ধরার জন্য মহিলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, সমাজের অর্ধেক হচ্ছে নারী। তাই মা-বোনদের কাছে নেতা-কর্মীদের যেতে হবে। আগামী নির্বাচনকে মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। সেবা করে মানুষের মন জয় করতে হবে, যেন আমরা আগামী নির্বাচনেও জয়ী হতে পারি। সরকারের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে আরও অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।
দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণ ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকার প্রশংসা করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বক্তব্যের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষুদ্র ঋণে দারিদ্র্য বিমোচন হয় না, লালন-পালন হয়। ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবসা যারা করেন, তারাই ধনী ও সম্পদশালী হন। আর ক্ষুদ্র ঋণ নয়, সরকারের পদক্ষেপের ফলেই দেশে দারিদ্র্য বিমোচন হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী এসব বিবেচনায় না নিয়ে এমন একজনের প্রশংসা করলেন, যার কারণে পদ্মাসেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাতিল ও কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
গত ৪ মার্চ রাজধানীর ফার্মগেটের বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক বিশেষ সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সংগঠনের সভাপতি আশরাফুন্নেসা মোশাররফের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি।
সম্মেলনের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় পতাকা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এ সময় সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। এরপর সাংস্কৃতিক সমন্বয় পরিষদের শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এরপরই শোক প্রস্তাব পাঠ করেন মহিলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক শিরিন রোকসানা।
সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও মহিলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাফিয়া খাতুন স্বাগত বক্তৃতা করেন। শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং আওয়ামী লীগের মহিলা ও শিশুবিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুননেছা ইন্দিরা এমপি। সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পিনু খান এমপি। দীর্ঘ ১৩ বছর পর অনুষ্ঠিত এ সম্মেলন ঘিরে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। সারাদেশ থেকে আসা বিপুলসংখ্যক নারী নেতৃবৃন্দের পদচারণায় দিনভর মুখর ছিল সম্মেলনস্থল। অনুষ্ঠান শুরুর আগেই মিলনায়তনে জায়গার স্থান সংকুলান না হওয়ায় কয়েকশ মহিলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে বাইরে দাঁড়িয়েই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনতে দেখা যায়। সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ মহিলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন নিয়ে আলোচনা হয়। পরে কাউন্সিলরদের ভোটে নতুন নেতৃত্ব গঠন করা হয়। গঠনতন্ত্রে সংশোধনী এনে কেন্দ্রীয় কমিটির সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়।
মহিলা আওয়ামী লীগের নতুন সভাপতি সাফিয়া, সম্পাদক মাহমুদা
দীর্ঘ ১৩ বছর পর অনুষ্ঠিত ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব পেল আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন, বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ। গত ৪ মার্চ সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে মহিলা আওয়ামী লীগের নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন সাফিয়া খাতুন। সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর মাহমুদা বেগম ক্রিক। রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে সংগঠনের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে নির্বাচিতদের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি।
সারাদেশ থেকে আগত কাউন্সিলরদের প্রস্তাব ও সমর্থনের মধ্য দিয়ে মহিলা আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়। শুধু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই নয়, এই প্রথম মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগকেও উত্তর ও দক্ষিণে ভাগ করা হয়। সংগঠনটির উত্তর-দক্ষিণের সভাপতি আর সাধারণ সম্পাদকও নির্বাচন করা হয়েছে সম্মেলন থেকে।
উত্তরের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক কাউন্সিলর শাহেদা তারেক দীপ্তি এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন শবনম শীলা। মহানগর দক্ষিণের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন সাবেরা বেগম ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন নার্গিস রহমান। নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শিগগিরই বৈঠকে বসে কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির নাম চূড়ান্ত করে অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে প্রেরণ করবে।
যুব মহিলা লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি ও সাফল্যের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসা মানেই দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি। আর বিএনপি-জামাতের ক্ষমতায় আসা মানেই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি-অর্থপাচার আর দুঃশাসন। এরা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না বলেই দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি হোক তা চায় না। দেশের মানুষ সুন্দর, উন্নত ও সমৃদ্ধ জীবন নিয়ে এগিয়ে যাবে এটা খালেদা জিয়া ও জামাতিদের সহ্য হয় না। এ বিষয়গুলো দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরে তাদের মন জয় করার জন্য দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
গত ১১ মার্চ রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার মাত্র আট বছরেই দেশের যে পরিমাণ উন্নয়ন করেছে, ২১ বছর ক্ষমতায় থেকে তারা পারেনি কেন? তার একমাত্র কারণই হচ্ছেÑ এরা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। এদের দিলে পেয়ারে পাকিস্তান। এদের (বিএনপি-জামাত) ব্যাপারে দেশের মানুষকে সচেতন থাকতে হবে। দেশের উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রায় কেউ বাধা দিতে না পারে সে জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।
জাতীয় সংগীতের সুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় পতাকা এবং যুব মহিলা লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আখতারের সভাপতিত্বে সম্মেলনে সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপিকা অপু উকিল।
সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামাত জোটের শাসনামলে দেশব্যাপী অত্যাচার-নির্যাতন-হত্যার বিবরণ তুলে ধরেন বলেন, একাত্তরের পাকিস্তানি হানাদাররা বাংলাদেশে যেভাবে গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন ও অত্যাচার করেছে, ঠিক একই কায়দায় বিএনপি-জামাত জোট দেশে অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে। নৌকায় ভোট দেওয়ার অপরাধে ছয় বছরের শিশু রাজুফাকে গণধর্ষণ করেছে বিএনপি-জামাতের সন্ত্রাসীরা। অন্তঃসত্ত্বা মা রেহাই পায়নি, মা-মেয়েকে একসঙ্গে ধর্ষণ করেছে।
নারীর ক্ষমতায়নে আওয়ামী লীগের বিশাল অর্জনগুলো সারাদেশের মা-বোনদের সামনে ব্যাপকভাবে প্রচারের জন্য দলের নারী নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আগে দেশে কোনো সচিব, জেলা প্রশাসক, এসপি, জজ, বিচারপতি নারী ছিল না। সেনা-নৌ ও বিমানবাহিনীতে কোনো নারী কর্মকর্তা ছিল না। আমরা ক্ষমতায় এসে সবক্ষেত্রে নারীদের পদায়ন করেছি। সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করেছি। কর্মসংস্থানের ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছি। তিনি বলেন, আন্তরিকতা নিয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করছি বলেই দেশের মানুষ এর সুফল পাচ্ছেন। এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলবই ইনশাল্লাহ।
নাজমা-অপু পুনর্নির্বাচিত : ১৩ বছর পর দ্বিতীয় সম্মেলনেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যুব মহিলা লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পুনর্বহাল হলেন নাজমা আকতার ও অধ্যাপিকা অপু উকিল।
একই সাথে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নতুন কমিটিও ঘোষণা করা হয়েছে। উত্তরের সভাপতি সাবিনা আক্তার তুহিন এমপি ও সাধারণ সম্পাদক তাহেরা খাতুন লুৎফা এবং দক্ষিণের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ঝুমা ও সাধারণ সম্পাদক নিলুফা রহমানের নাম ঘোষণা করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *