প্রতিবেদন

তুমুল সমালোচনার মুখে ট্রাম্প

আসন্ন মার্কিন নির্বাচন ঘিরে মুসলমানসহ কিছু বিষয়ে মন্তব্য করায় তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছেন দেশটির রিপাবলিকান দলের সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশেষ করে মুসলমানদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ সম্পূর্ণ বন্ধ তার ওই মন্তব্যে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় ওঠে। সারাবিশ্বের মুসলমানরা এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। এমনকি এই নিন্দায় শামিল হয়েছে হোয়াইট হাউস, পেন্টাগন, ব্রিটিশ ও ফরাসি নেতা এবং জাতিসংঘ উদ্বাস্তু বিষয়ক সংস্থা। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির অঙ্গন হয়ে উঠেছে সমালোচনার ঢেউয়ে উত্তাল। ফেসবুক, টুইটারে চলেছে তুমুল আলোড়ন। কেউ কেউ এমনও বলেছেন, ট্রাম্পের মুখে হিটলারের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়, বিশ্বের নাগরিকবৃন্দ, রাজনীতিক এবং উদ্বাস্তু বিষয়ক কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থিতার দৌড়ে এগিয়ে থাকা ট্রাম্পের মন্তব্যকে ঘৃণা সৃষ্টিকারী মন্তব্য বলে অভিহিত করেন এবং এটি দেশটিতে বিরাজমান ইসলামভীতিজনিত পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তোলার ইঙ্গিতবহ বলে মন্তব্য করেন। ট্রাম্প গত ৯ ফেব্রুয়ারি এক বিবৃতিতে মুসলমানদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়ার আহ্বান জানান। ওই দিনই তিনি দক্ষিণ ক্যারোলাইনাই এক সমাবেশে একই আহ্বান জানান। সেখানে সমবেত জনতা তার নামে ধ্বনি দিয়ে তার মন্তব্যকে স্বাগত জানায়। পরের দিন ১০ ফেব্রুয়ারি এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারেও একই মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের ওই মন্তব্যের পর হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মুসলিমদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের মাধ্যমে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছেন। হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রিপাবলিকান দলের অন্য সব প্রার্থীর এখনই বলা উচিত যে তারা ট্রাম্পকে সমর্থন করেন না। ট্রাম্পের মন্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পেন্টাগনও। পেন্টাগনের মুখপাত্র বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসলামের বিরুদ্ধে ক্রুসেড চালিয়ে যাচ্ছে মর্মে আইএস যে প্রচারণা চালাচ্ছে ট্রাম্পের মন্তব্য আইএসের সেই প্রচারণাকেই সমর্থন জোগাবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বক্তৃতায় আরও মন্তব্য করেন, লন্ডনের একটি অংশে চরমপন্থার এতটাই বিস্তার ঘটেছে যে, শহরটির পুলিশ বাহিনী এখন নিজেদের জীবন নিয়ে শঙ্কিত। প্রভাবশালী ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের খবরে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ওই মন্তব্যের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ট্রাম্পের মন্তব্য বিভেদ সৃষ্টিকারী এবং তা একেবারেই ভুল।
ব্রিটেনের বিরোধীদলীয় নেতা জেরেমি করবিন ট্রাম্পের নিন্দা জানিয়ে বলেন, তার মন্তব্য গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর হামলা এবং সাধারণভাবে মানবতার বিরুদ্ধে। করবিন জাতিগত বিদ্বেষের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী জেহ জনসন বলেছেন, ট্রাম্পের মন্তব্য কেবল যে আক্রমণাত্মক তাই নয়, এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এনবিসি টেলিভিশনের সাথে এক সাক্ষাৎকারে জনসন ট্রাম্পের মন্তব্যকে ‘দায়িত্বহীন’ বলে এর নিন্দা জানান এবং তা প্রত্যাখ্যান করেন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে গণমিছিল বের করে ১১ ফেব্রুয়ারি। আর ফ্লোরিডার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরের মেয়র রিক ক্রিসম্যান তার শহরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছেন। এই নিষেধাজ্ঞার কথাটি টুইটারে জানিয়ে হঠাৎ করেই বিপুলভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন রিক ক্রিসম্যান।
এদিকে অনেক নাটকীয় দৃশ্যের অবতারণা ঘটেছে মার্কিন নির্বাচনে। ২১ ফেব্রুয়ারি সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন জেব সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ হারবার্ট ওয়াকার বুশের ছেলে এবং আরেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের ছোট ভাই। প্রচারণার মাঠে নেমেছিলেন বড় ভাইয়ের পাশাপাশি মা-ও। এরপরও শেষ রক্ষা হলো না জেব বুশের। সাউথ ক্যারোলাইনা পরীক্ষায় হেরে গিয়ে মনোনয়ন দৌড় থেকে বিদায় নিয়েছেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *