প্রতিবেদন

দলের নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে

‘দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি আমি ব্যর্থ হই তা হলে কাগজ, পোস্টারের ছবি ছিঁড়ে যাবে। পাথরে লেখা নাম ক্ষয়ে যাবে। যদি আপনারা আমার নাম হৃদয়ে লেখেন তা হলে তা থেকে যাবে।’ নিজ জেলা নোয়াখালী জিলা স্কুল মাঠে লাখো জনতার সিক্ত ভালোবাসায় সংবর্ধিত জনসভায় বললেন আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি। এ সময় লাখো মানুষের করতালিতে মুখরিত হয় সভাস্থলসহ পুরো মাইজদী শহর। আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে নব গঠিত কমিটিকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে। এতে করে মাঠপর্যায়ে সংগঠনকে গতিশীল করতে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা।
গত ১২ নভেম্বর বিকেলে নগরীর লালদীঘি মাঠে চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে চট্টগ্রাম থেকে অন্তর্ভুক্ত নেতৃবৃন্দের বীরোচিত সংবর্ধনা সভায় নেমেছিল মানুষের ঢল। মাঠের চতুর্দিকে নেতা-কর্মীদের সরব ও আন্তরিক উপস্থিতি। ওবায়দুল কাদের বলেন, বসন্তের কোকিল ও মৌসুমি পাখির স্থান আওয়ামী লীগে নেই। দুঃসময়ে হাজার পাওয়ারের বাতি জ্বালিয়েও এসব বসন্তের কোকিল ও মৌসুমি পাখিদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। মন্তব্য করে ক্ষান্ত হননি, উপস্থিত নেতা-কর্মীদের কাছে রসিকতা করে নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় জানতে চান, ‘হাছা কইলাম নাকি মিছা কইলাম।’ উপস্থিত নেতাকর্মী উচ্চৈঃস্বরে জবাব দেন ‘হাছা কইছেন।’ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে দলের অন্তর্কোন্দল প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, কাউকে ছাড়ব না। দল করলে দলের নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। যারা মানবে না তাদের দলে থাকার কোনো অধিকার নেই। গুটিকয়েকের জন্য গোটা দলের বদনাম হতে পারে না। ওই গুটিকয়েক কারা, তাদের দল থেকে বের করা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এভাবে দল চলতে পারে না। তিনি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, মঞ্চের দিকে তাকিয়ে দেখুন। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ, অভিন্ন। আপনারা ওখান থেকে টুকটাক এটা-সেটা করবেন, ওই দিন চলে গেছে। এটা আর করতে দেওয়া হবে না। ‘ঠিক হয়ে যান, অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে। কাউকে ছাড়া হবে না। শেখ হাসিনার অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, আমার রাজনৈতিক পিতা বঙ্গবন্ধু জনগণের হƒদয়ে নাম লিখিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনাও তার পিতার মতো জনগণের হƒদয়ে নাম লিখিয়েছেন। এই নাম কোনোদিন মুছে যাবে না। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের জনগণের হƒদয়ে নাম লেখানোর আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাকে খুশি করার দরকার নেই। নেতাদের খুশি করে লাভ নেই, জনগণকে খুশি করুন। জনগণের কাছে যান। যদি অপকর্ম কিছু করে থাকেন, ক্ষমা চান। জনগণের কাছে গিয়ে ক্ষমা চান, জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে কোনো লজ্জা নেই। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন এমপি, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ ইসহাক মিয়া, উপদেষ্টা ড. অনুপম সেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপি, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপ-দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়–য়া, কার্যনির্বাহী সদস্য দীপঙ্কর তালুকদারকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
গত ১৬ নভেম্বর বিকেল ৫টায় কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠে জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে নব গঠিত কমিটিকে বিশাল সংবর্ধনা জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি প্রেস ব্রিফিং সীমাবদ্ধ দল। তাদের ঘরেই গণতন্ত্র নেই, তারা গণতন্ত্র রক্ষা অভিযানের নামে তামাশা করে।
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, পুলিশ মামলা নেয় না, আমরা বলে দিয়েছি মামলা নেওয়ার জন্য। কেন মামলা নেবে না, মামলা নিতে হবে। তিনি বলেন, কয়েকজন স্থানীয় লোকের ওপর আক্রোশ থাকায় সাঁওতালরা খাবার নিচ্ছিল না। তাদের বাদ দিয়ে সরকারিভাবে সাঁওতালদের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ব্যাপারে সরকারের অবস্থান কঠোর ও কঠিন। এ ঘটনার সাথে এমপি, মন্ত্রী, স্থানীয় প্রতিনিধি, আওয়ামী লীগের দলীয় বা দলের বাইরে যে-ই জড়িত হোক না কেন, তাকে দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হবে না। দেখা হবে তার অপরাধকে। যারা সংখ্যালঘুদের বাড়ি, মন্দিরে হামলা চালাবে, শাস্তি তাদের পেতেই হবে। জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলের নেতাকর্মীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, যারা বিভেদ করবে, শৃঙ্খলা মানবে না, তাদের আওয়ামী লীগে থাকার অধিকার নেই। সব বিভেদ ভুলে গিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হোন। নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। জনসভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এমপি বলেছেন, কুষ্টিয়া সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বারবার পরাজিত হতো। সরকারি কলেজ মাঠে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করেছে যে দিন বদলে গেছে। এখন কুষ্টিয়ার মাটি আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি। আগামী নির্বাচনে সবগুলো আসন আওয়ামী লীগের দখলে থাকবে। বিএনপি গত নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তাদের প্রতি আহ্বান রাখব আগামী নির্বাচনে অংশ নেন, জনপ্রিয়তা যাচাই করুন। কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আজগর আলীর পরিচালনায় জনসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ডা. দীপু মনি এমপি, আবদুর রহমান এমপি, আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক এমপি, এনামুল হক শামীম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, দেলোয়ার হোসেন, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, মির্জা আজম এমপি, এসএম কামাল, আমিনুল ইসলাম আমিন, বিপ্লব বড়–য়া, ইকবাল হোসেন অপু, আনোয়ার হোসেন, গোলাম রাব্বানী চিনু, পারভীন জামান কল্পনা, মারুফা আক্তার পপি, উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং-সহ জেলার সরকার-দলীয় এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
১৯ নভেম্বর নিজ জেলা নোয়াখালীর মাইজদী জিলা স্কুল মাঠে সংবর্ধিত জনসভায় মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন ওবায়দুল কাদের। নোয়াখালীসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি জেলা থেকে নেতাকর্মীরা আসেন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। প্রিয় নেতাকে শুভেচ্ছা ও সংবর্ধনা জানাতে বাহারি রঙের ব্যানার, লিফলেট, ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে ৯টি উপজেলার হাটবাজার, পাড়া-মহল্লা, অলিগলি। সকাল থেকে সদর, সুবর্ণচর, হাতিয়া, কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট, সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, চাটখিল, সোনাইমুড়ীসহ বৃহত্তর নোয়াখালীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার মানুষ দলে দলে ওবায়দুল কাদেরের প্লেকার্ড হাতে সভাস্থল জিলা স্কুল মাঠে সমবেত হন। বেলা ১২টার পর থেকে মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে মাইজদী প্রধান সড়ক লোকে লোকারণ্য হয়ে লাখো জনতার জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সংবর্ধনাস্থলের আশপাশের রাস্তা ছিল জন¯্রােতে পরিপূর্ণ। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এই সংবর্ধনাকে ঐতিহাসিক বলে মন্তব্য করেন। তারা বলেন, নিকট অতীতে নোয়াখালীতে এত মানুষের উপস্থিতিতে কোনো সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হয়নি। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ খায়রুল আনম সেলিমের সভাপতিত্বে জনসভায় প্রধান বক্তা ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী এমপি। সংবর্ধনায় নোয়াখালীর শিক্ষিত তরুণদের আওয়ামী লীগের পতাকাতলে আসার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, একজন রাজনীতিবিদের জীবনে মানুষের ভালোবাসার চেয়ে বড় আর কিছু নেই। রাজনীতি করতে গিয়ে এটা আমি শিখেছি। এখানে আমি সংবর্ধনা নিতে আসিনি। অতীতে এমপি-মন্ত্রী হয়েছি। দলের একাধিক দায়িত্ব পালন করেছি। তারপরও সংবর্ধনা নিই নি। কারণ আমার সংবর্ধনার প্রয়োজন নেই। মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছি, এর থেকে বড় সংবর্ধনা আর কী আছে।
ওবায়দুল কাদের স্থানীয় সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীকে পাশে ডেকে নিয়ে বলেন, আপনি নোয়াখালীর জন্য যেসব দাবি-দাওয়া তুলেছেন তা পূরণ করেছি কিনা সাক্ষ্য দেবেন। তিনি বর্ণনা দিয়ে বলেন, নোয়াখালীর জন্য একনেকে ৩২৪ কোটি টাকার প্রকল্প পাস করানো হয়েছে। এলজিইডির ৪০০ কোটি টাকার কাজ চলছে। ১৮৩ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আঞ্চলিক ভাষায় নোয়াখালীর বিভিন্ন সেতু ও সড়কের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, এসব কাজ দ্রুত শুরু ও শেষ হবে। বলেন, আমার আর দেওয়ার কিছুই নেই। আছে শুধু ভালোবাসা। এ সময় অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুুব-উল-আলম হানিফ এমপি, জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী এমপি, আবদুর রহমান এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক সাবেক এমপি ফরিদুর নাহার লাইলী, বিএম মোজ্জাম্মেল হক এমপি, খালেদ মাহমুদ এমপি, হারুনুর রশিদ, অসিম কুমার উকিল, মির্জা আজম এমপি, এইচএম ইব্রাহীম এমপি, মোর্শেদ আলম এমপি, আয়েশা ফেরদৌস এমপি, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া, ইকবাল হোসেন অপু, আনোয়ার হোসেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *