সাক্ষাৎকার

দিনবদলের সনদ বাস্তবায়নে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত সাফল্যের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে : ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে যে ঐতিহাসিক নির্বাচনী ইশতেহার তথা দিনবদলের সনদ ঘোষণা করেছিলেন, তাতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমস্যা সমাধানে একটি দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত সার্বিক জ্বালানি নীতিমালা গ্রহণের কথা বলেছিলেন। সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নীতিমালা সম্পর্কে কিছু বলবেন কি?
তৌফিক-ই-এলাহী : ধন্যবাদ, আমাদের সরকারের পূর্ব মুহূর্তে যে সময়কাল এবং সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সার্বিকভাবে জাতির সামনে তুলে ধরা হয়েছেন। এবং সেখানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকারের একটা পরিকল্পনার রূপরেখাও তুলে ধরা হয়েছিল।
আপনারা জানেন, আমাদের দেশে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিদ্যুতের একটা ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ চলছিল, শহরে যেসব জায়গায় বিদ্যুতায়িত খাতা-কলমে সেসব জায়গায়ও ৫-৭ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছিল। কৃষি উৎপাদন যেখানে সেচের জন্য বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল সেখানেও ব্যাহত হচ্ছিল। এটা সারা অর্থনৈতিক উন্নতিকে অনেকাংশে স্থবির করে রেখেছিল। এ প্রেক্ষাপটে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিনবদলের সনদে যে লক্ষ্যমাত্রার কথা বলেন তা অনেকটা দুঃসাহসিক বলা যায়। সেদিন সেখানে উপস্থিত কিছু সাংবাদিক ও কিছু অ্যাকাডিমেশন সংশয় প্রকাশ করে বলেছেন, ২০১১ সালের মধ্যে ৫০০০ মেগাওয়াটে এবং ২০১৩ সালের মধ্যে ৭০০০ মেগাওয়াটে নিয়ে যাওয়ার যে অঙ্গীকার শেখ হাসিনা করলেন, তিনি কোথা থেকে এত টাকা পাবেন?

আমি বললাম, যারা দেশকে পরিচালনা করে, দেশকে নেতৃত্ব দেয় তারা দেশের স্বপ্ন লালন করে। তাদের স্বপ্ন জগতের সেই বাউন্ডারিÑ এগুলো সাধারণ মানুষ বুঝতে পারবে না। তবে এই অর্জনের পেছনে যা ছিল তা হলো, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব। নেতৃত্ব হলো একটা লক্ষ্যকে বাস্তবায়নের জন্য একটা দুঃসাহসিক অভিযানে নামা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাই নিয়েছেন। তার নির্দেশ ছিল তোমরা যেভাবে পার উৎপাদন বাড়াও, করতে হবে। এর থেকে কোনো পিছপা হওয়া যাবে না।

এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে দীর্ঘমেয়াদি সময় লাগে; কিন্তু কীভাবে স্বল্প সময়ে তা সম্ভব হলো। এ সাফল্য কীভাবে অর্জন করলেন?
তৌফিক-ই-এলাহী : তিনি সেই সময় দেন নি। সুতরাং, তার ভিশন এবং নির্দেশ আমাদের ফোর্স করল। আমরা নতুন পথ খুঁজে বের করব। নতুন পথ আমরা ভালোভাবে জানিও না। কিন্তু পথ খুঁজতে হলে এটাই বলেনÑ নতুনত্ব সৃজনশীলতা। বড় মাপের নেতৃত্ব তারা কিছু পথকে খুঁজে বের করে।
একজন ফিনিশিয়ান জেনারেল ছিলেন, হ্যানিবেল। আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে। এই হ্যানিবেল রোম আক্রমণ করতে যে পথ দিয়ে যাবেন তখন সেই পথ দিয়ে তিনি যাবেন না। কারণ তার বাবা সেই পথে রোম আক্রমণ নিগৃত করে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি বললেন, আমি আল্পসের ওপর দিয়ে যাব। তখন তিনি যে হাতিটা নিয়ে যাচ্ছিলেন সৈন্য-সামন্তরা জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কীভাবে আল্পস ক্রস করবেন? তিনি বললেন, আমি পথ খুঁজে নেব, তা না হয় পথ বের করব। পথ is an either, when find on I make. পথ দেবে পথ। আমরা এভাবে ইন্সপায়ার হলাম। আমরা হয় পথ যদি থাকে তা হলে ওই পথে যাব, তা না হয় পথ বের করব। যখন দায়িত্বভার গ্রহণ করলাম সেই বের করার উদ্দেশ্যে তখন আমরা দেখলাম আমাদের গ্যাসের স্বল্পতা। ২০০৯ সালে পাওয়ার প্ল্যান্ট করার কোনো অবকাশ নেই। তা হলে কী করতে হবে। আমরা যদি কয়লা দিয়ে করতে চাই, তা হলে কয়লা আনতে অনেক সময় লাগবে। একমাত্র পথ হলো, আমরা আমদানি করে ফারনেস ওয়েল বা ডিজেল দিয়ে করতে পারব।

কিন্তু আমাদের করতে হবে অনেক। সে জন্য ওই সাহসের কথাটায় আবার আসছি। প্রধানমন্ত্রী বললেন আপনারা করেন। একটা উদাহরণ দেই, কতখানি সাহসিকতা তার। আমরা কতগুলো পিকিং প্ল্যান্ট তখন ছোট ছোট সব মিলে ৮০০ মেগাওয়াট হবে। এজন্য অর্থের প্রয়োজন ১ বিলিয়ন ডলার, প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। কোনো প্ল্যানিং বইতে ছিল না। কিন্তু আমাদের সবার এটা জানা ছিল। এটা প্রয়োজন আছে। আমরা কোনো প্রকল্প করার আগে লোকেশন ঠিক করে নিলাম। আমরা টেন্ডারে চলে গেলাম আর প্রকল্প তৈরি হচ্ছিল। এটা আমাদের পাবলিক সেক্টর টেন্ডার করে যখন আমরা পৌঁছলাম, আমাদের পারচেজ কমিটি বললÑ ঠিক আছে এটা অনুমোদন করলাম। তোমরা পরিকল্পনা কমিশন থেকে অনুমোদন নিয়ে নাও। পরিকল্পনা কমিশনে যখন যাওয়া হলো সবাই জানেন তখন দেশের অবস্থা কেমন। পরিকল্পনা কমিশন অনুমোদন দিল। যেদিন অনুমোদন করল তার পরদিন আমরা ওয়ার্কআউট করলাম। এই আমরা লার্জ স্কেলে অর্ডার দিলাম। ছোট ছোট প্রকল্প বাংলাদেশজুড়ে। শেষ পর্যন্ত আমাদের ৬৫টা প্রকল্প হয়েছিল।
সেই লার্জ স্কেলে যখন অর্ডার দিলাম। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই অর্ডারগুলো পেল। তার সাথে যা দরকার তার চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেশি অর্ডার দিলাম। সে যদি ফেল করে যাতে আমাদের substrate (স্তর) করে। এবং আল্লাহর রহমতে আমাদের বেসরকারি খাত। আমি বলব যে যথেষ্ট ক্রিয়েটিভিটি দেখিয়েছে। তাদের কারণে মোস্টলি তারা প্রথমে লোকাল ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া শুরু করল এবং আমি তো মনিটরিং করলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রেগুলার তদারকি করেছেন। আমার মনে আছে, চুক্তি শুরু হচ্ছে আমি প্রেসকে ডাকতাম। কনস্ট্রাকশন হচ্ছে তার ছবি দিয়ে প্রেসকে দেখাতাম, জাতিকে আশ্বস্ত করতাম। কিন্তু এরা সবসময় বলেছেÑ চুক্তি হচ্ছে এটা হবে না। কনস্ট্রাকশন হচ্ছে এটা শেষ হবে না। শেষ হলে বিদ্যুৎ হবে না। আর এ সময় কয়েকজন সিনিয়র জার্নালিস্ট আমাকে বলল, আপনারা যে বিভিন্ন জায়গায় অর্ডার দিচ্ছেন, আপনারা কি জানেন ওসব জায়গায় নিয়ে যাওয়া কত ডিফিকাল্ট। আপনারা সেই গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর জ্বালানি কীভাবে নেবেন, ফ্যাক্টরি, প্ল্যান্ট কীভাবে বসাবেন?
তারপর যখন একটা বড় পরীক্ষা এলো, আমাদের তেল আমদানি করতে হবে। তেল আমদানি করতে হলে অনেক টাকার প্রয়োজন। তখন আবার কিছু কিছু তথাকথিত বিজ্ঞ অর্থনীতিবিদরা বললেন, বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জে যাবে। আর দেশটা রসাতলে যাবে। এটা কুইক রেন্টাল তখন আপনি একটা প্রশ্নের উত্তর দিনÑ আমরা কেন অল্প সময়ের জন্য ঋণটা নিলাম। অল্প সময়ের জন্য ঋণটা নিলাম এই কারণে যে, আমরা ভাবলাম অল্প সময়ের জন্য ঋণ নিয়ে দেশি অন্য কোনো সল্যুউশন পাওয়া যায় কিনা। যদি না হয় প্ল্যান্টগুলো তো দেশে আছে। তা হলে আমরা এক্সচেঞ্জ করতে পারব। তা হলে আমি একেবারে বেশি দিলে তো পেছনে আসতে পারব না। সেই জন্য আমরা তিন বছর, পাঁচ বছর মেয়াদ দিয়ে দেখলাম যে অন্য অবস্থায় কোথায় আছে। সেই সময় যা বলা হলো ঠিকই আমাদের ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ নেমে গেল। তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজের উদ্যোগেই রিজার্ভ রিপ্ল্যান্ট করার উদ্যোগ নিল। তখন আমরা ইসলামি ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সাহায্য নিলাম। দেশে কিন্তু তখন টাকার দাম বেড়ে গেল। এবং অনেক জায়গায় কথা শুরু হলো। এই বলছিলাম এখন দেশ। আমরা দেখলাম, অর্থনীতি চালু আছে। আমাদের যে উদ্দেশ্য ছিলÑ এগুলো করে অর্থনীতি যদি চালু থাকে, যদি শিল্প চালু থাকে, যদি কৃষিকে সমর্থন দিতে পারি। তা হলে এরাই আমাদের ফিডব্যাক দেবে। সাপ্লাই রেসপন্স এলো এবং সেই সাথে আমাদের রেমিট্যান্স। ইমপ্রুভ করা শুরু করল। সেই যে শুভ সংবাদ আসা শুরু হলো, ইতিবাচক, এরপর চলতেই থাকল সেটা এবং আমাদের অর্থনীতির ৬ শতাংশ প্লাস গ্রোথ রেট থাকল। আমাদের এক্সপোর্ট বাড়তে থাকল। আমাদের রিজার্ভ বাড়তে থাকল। টাকা আবার স্ট্রং হলো। সেই রিজার্ভ বাড়তে বাড়তে এখন ২০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হলো। টাকা সেখানে ৮০-তে চলে গেল আবার টাকা ডলারের বিপরীতে হয়ে ৭০-৭৫-৭৮ পর্যন্ত উঠে আসে। যদিও রপ্তানিকারকরা টাকা সাসটেইনেবল হওয়া পর্যন্ত করে না তাদের তা হলে আয় কমে যাবে বা এটা ব্যালেন্স রাখার বিষয়। সুতরাং, যতসব সন্দেহ করা হয়েছিল সব মিথ্যা প্রমাণিত হলো। অংকের বেলায়ও হলো আমরা যেখানে জাতির কাছে। প্রধানমন্ত্রী জাতির কাছে বলেছিলেন, ৫০০০ মেগাওয়াট ২০১১ সালে সেখানে আমরা ২০১১ সালে ৭০০০ মেগাওয়াটে নিয়ে গেলাম। আর যখন বলা হয়েছিল ২০১৩ সালে ৭০০০ মেগাওয়াট সেখানে আমরা ১০০০০ মেগাওয়াটে নিয়ে গেলাম। এই অর্জনের ধারাটা রাখায় এবং সাহস দেওয়ায়, নেতৃত্ব দেওয়ায়। এখানে আরেকটা কথা আপনার এই যে, ১০০০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত যাওয়া হলো এখানে কিন্তু প্রায় ৮ মিলিয়ন ডলার, ৩টা পদ্মা ব্রিজের সমান ইনভেস্টমেন্ট মোবিলাইজড করা হলো। এতে বিশ্বব্যাংক, এডিবি এদের কন্ট্রিবিউশন ১ বিলিয়ন ডলার বেশি। বাকি কোথা থেকে এলো প্রসঙ্গেÑ আমরা কিছু লোকাল মার্কেট থেকে নিয়েছিলাম। এতে হলো কী বাইরের বিনিয়োগকারী যারা অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠান তারা উৎসাহিত হলো। সেখানে আমরা ইসিএ লোনটা আনার চেষ্টা করলাম। আল্লাহর রহমতে সেটা কার্যকর হলো এবং সেই ইসিএ, এক্সপোর্ট ট্রেডি এজেন্সি লোন। এই এক্সপোর্ট ট্রেডি এজেন্সি লোনটা আসা শুরু করল তখন বিনিয়োগ বাড়তে শুরু করল। প্রথমে দেশি অর্থের ওপর পরে বিদেশি লোন আসা শুরু হলো। এটা দিয়ে হলো কী একদিকে অর্থনীতির ধারা সচল থাকল। বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ল। বিদ্যুতে সে সুবিধাভোগী। আপনারা আগে সেখানে ছিল ৪০ শতাংশ, এখন তা ৬২ শতাংশ বাড়ল। শিল্প, কৃষি উৎপাদন হলো। ইমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন হলো। এতে সরকারের বাজেটের আকার বাড়তে থাকল। কেননা, ইনকাম হলেই তো বাজেটের আকার বাড়তে থাকে। এটাকে আমরা বলি ভারচুয়াল সাইকেল। বিশাল সাইকেল নিচের দিকে চলে যাওয়া। আর কয়েল ব্যাক করল ওপরের দিকে ওঠা। এই আমাদের ওপরের দিক ওঠা শুরু করল এবং সেটা কয়েল ব্যাক করল ওপরের দিকে। এই জায়গায় কিন্তু আমরা থেমে থাকি নি। থেমে থাকি নি এই কারণে আমাদের প্রধানমন্ত্রী সবসময় তার ২০১৪ সালে অর্থাৎ নতুন সরকারের যে ইশতেহার দিল, ওই সময়ের ইশতেহারে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশ। এখানে এটা নিয়ে গেলেন ২০৪০ সালে উন্নত দেশ।

রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র নিয়ে দেশবাসীর বিপুল কৌতূহল রয়েছে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করুন।
তৌফিক-ই-এলাহী : ১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে তখন এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ ফেজ রূপপুরে করার জন্য আবার একটা উদ্যোগ নেওয়া হলো International Atomic Energy Associationহ-এর সাথে আলাপ শুরু হলো। তারপর আবার পরের সরকারে নিয়ে আর কোনো আলাপ হলো না। এবার ক্ষমতায় এসে আবার তিনি এটাকে পুনরুজ্জীবিত করলেন। রাশিয়ানদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের সমর্থন নিয়ে আজকে এটা বাস্তবতার মুখ দেখতে যাচ্ছে। এবং সেই পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র করা যে কত বড় দুরদর্শিতা লাগে এবং এটা অনেক, এক সরকার যদি নিজের এক-দুই টার্মের কথা ভাবে তা হলে পরে এটা সম্ভব না। অনেক দূরের চেষ্টা থাকতে হবে, এবং এই দূরের চোখ কোথা থেকে আসে এটা আমি ব্যাখ্যাসুলভ যাচ্ছি। বারবার এক কথায় আসছি। যে একটা মেজর ডিফারেন্স আছে নেতৃত্বের মাঝে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিবর্তনও হয়েছে। আগের চেয়ে অনেক সাহসের সাথে এগিয়ে গেছেন। এবং যেটা বঙ্গবন্ধুর মধ্যে ছিল। জাতির পিতার মধ্যে ছিল দেশের মানুষের জন্য সহমর্মিতা, সেই সহমর্মিতা তার মধ্যে পুরোপুরি আছে। যে জন্য দূরের দিকে দৃষ্টি রাখা অর্থ হলোÑ বাংলাদেশের মানুষের জন্য কল্যাণ। আমরা গুটি কয়েকের জন্য কল্যাণ দেখলে তো হবে না, আমার বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণ দেখতে হবে। তা হলে আমাকে অনেক দূরে দৃষ্টি রাখতে হবে। এবং সেই পথে চলার জন্য সাহসের সাথে চলতে হবে। কোন সরকার থাকবে না থাকবে সেটা পরের কথা। এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এটা এরকম একটা উদাহরণ। একদিকে দেশে ২০ বছর পরে কী হবে সেটাকে সামনে রেখে এখন কী করা দরকারÑ এগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে সময় লাগে এই ২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে হতে আরও পাঁচ-সাত বছর লেগে যাবে। কারণ আমাদের ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট লাগবে, অনেক প্রস্তুতি আছে।
উত্তরণ : পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রথম পর্ব কবে উৎপাদনে আসবে?
তৌফিক-ই-এলাহী : এগুলো কাগজে বললে একরকম থাকতে পারে। আমি মনে করি ৭ থেকে ১০ বছর।

কয়লাকেন্দ্রিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পর্কে বিস্তারিত বলুন।
তৌফিক-ই-এলাহী : আমি এটাতে আসছিলাম। সেই সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চিন্তা করলেন আমাদের একটা মাস্টার প্ল্যান করার। এই যে ২০২১-এর কথা বলছেন। তাতে দেখা গেল, আমাদের যদি গ্যাসও থাকে তাও ২০০০ মেগাওয়াট যদি আমাদের সিসটেম হয় ২১ সালের মধ্যে। ১০০০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক করতেই হবে। এর মধ্যে ৫০০০ মেগাওয়াট গ্যাসফিল্ড, ৩০০০ মেগাওয়াটের মতো লিকুয়িড ফুয়েল। কিছু ইমপোর্ট হবে, রূপপুরও তখন চলে আসবে, পারমাণবিক হবে, কিছু সৌরবিদ্যুৎ হবে।
যেহেতু গ্যাস শেষ হয়ে যায় নি। এবং গ্যাসের সম্ভাবনা সেটা সামনেই দেখতে পাই। কিন্তু আমাদের রিজার্ভ যা আছে সেটার ওপরে প্ল্যান করতে হবে। সেই জন্য তিনি সাহস দিলেন আপনারা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করেন, আর ইমপোর্টেড করেন আমি কেন ইমপোর্টেড কয়লা আগে বলে নি, পরে আমাদের দেশীয় কয়লার কথায় আসছি। ইমপোর্টেড কয়লা এই কারণে সে ১০০০০ এবং এখন যেটা হচ্ছে ২০১৪ সালে সেটা দিয়েছে ২০৪০ সাল। সেখানে প্রায় ধরে ৪০০০০ মেগাওয়াট সেখানে প্রায় ২০০০০ মেগাওয়াট কয়লাই লাগবে। তা হলে আমরা ২০০০০ মেগাওয়াট কয়লার কথা যদি ভাবি এবং ১০০০০ মেগাওয়াট সামনে, তা হলে কী প্রস্তুতি নেব। ইমপোর্ট ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। এখন সেই ইমপোর্ট করা আমদানি করা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করা, এটা কিন্তু বলা সহজ। এখানে তিনি সাইড লাইনে যেটা করছিলেন সেটা হলো আঞ্চলিক একটা সহযোগিতা সৃষ্টি করা। আঞ্চলিক সহযোগিতা অর্থনীতির সাথে সাথে স্পেসিফিক কতকগুলো জিনিস সেগুলো আমরা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা করতে পারি, তা হলে আমাদেরও সুযোগের পরিধি বাড়ে এবং যখন দিল্লিতে প্রথম গেলেন ড. মনমোহন সিং এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেটা প্রথম শুরু করলেন। সেখানে বিদ্যুতের জন্য সাব-অরজিনাল কো-অপারেশন সেখানে বিদ্যুতের ব্যাপারে স্পেসিফিক হলো, আমরা ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করব, ঠিক হলো ৫০০ মেগাওয়াট আমরা আনব। এখানে দেখেন সাহসের কতখানি।
তিনি বললেন ঠিক আছে। আমাদের এখানে ২০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ লাগে স্টেশন টু স্টেশন। ওদিকে অত বেশি লাগে না। ২০০ মিলিয়ন ডলার আমরা ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, এডিবি আমাদের কাছে এসে তদবির শুরু করল। যে আমরা এটা করব। কারণ রিজিওনাল কো-অপারেশনে তারা যদি নাম লেখাতে পারে এটা তাদেরও ক্রেডিট। এই যে সাহস আমরা পেলাম, আমরা বললামÑ আমরা এখন শুরু করব। আমরা ডিজাইন শুরু করব। আমরা টেন্ডারিংয়ে যাব। ওদের নরমালি appraisal একটা লোন অ্যাপ্রুভাল হয়। তারপর আপনার কাজ শুরু হয়। আমরা বললাম আমরা এ কাজ আগে শুরু করব। এটা এমনি এমনি হয় না। তিনি এটা নেওয়ার পর আমরা প্রথম এলাম বিদ্যুতে ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট। তার সাথে রামপালে আমরা একটা যৌথ কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র সাহস করে নিলাম। এখন রামপাল নিয়ে কথা উঠলে বলবেন পরিবেশ, সুন্দরবন। আপনাদের জানা উচিত সুন্দরবন হলো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ। এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আমলেই হয়েছে। তার উদ্যোগেই হয়েছে। যদি পরিবেশের প্রতি সংবেদনশীল কিছু থাকে এটা আমাদের প্রধানমন্ত্রী এবং বারবার তার কাজের মধ্য দিয়ে বুঝিয়েছেন। তার কথার মধ্য দিয়ে বুঝিয়েছেন। সুতরাং আরও নির্দেশ ছিলÑ সুন্দরবন ও পরিবেশকে রক্ষা করে কীভাবে করা যায়। এবং এগুলোকে আমরা বেদবাক্য ধরেই রামপালকে নির্বাচন করেছি। তার প্রযুক্তি কী হবে তা নির্ধারণ করেছি। কোনোভাবে কোনোরকম ক্ষতি যাতে সুন্দরবনের না হয়। এসব বিবেচনা করে রামপালে আমরা মংলা থেকে সরে এখানে এসে আমরা যাতে মানুষেরও কোনো সমস্যা না হয় অনেক বড় এলাকা নিয়ে করছি তো। বাড়িঘর ছেড়ে দিতে হয় এবং আমরা ঠিক করলাম পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট প্রযুক্তি নেব। যেটা আজকের পৃথিবীতে সবচেয়ে ভালো কয়লা হয়। এবং সেই প্রযুক্তি আমরা নিচ্ছি। আমরা পোর্ট ট্রান্সপোর্টেশন, পুলিং পোর্ট সবচেয়ে ভালো কয়লা হয়। ট্রান্সপোর্টেশন সবচেয়ে উন্নতমানের হয়। নিরাপদ হয়। আমাদের যে owner engineer হয়। একটা ফিশনার বলে কোম্পানি। জার্মান কোম্পানি নির্বাচিত হয়েছে। আমরা তাদের বলেছিÑ দ্যাখ, তোমরা মনে করো না এটা বাংলাদেশের প্রযুক্তি আমরা এমন কয়লা প্রকল্প চাই, কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প যে, পৃথিবীর লোক এসে বলে যে বাংলাদেশের এই প্রকল্প সবচেয়ে ভালো। তুমি বাংলাদেশ মনে করো জোড়াতালির কথা। তা ভেব না। বারবার তাদের বলি, আমরা সবচেয়ে ভালো, যাতে পৃথিবীর মানুষ এসে বলে দেখে যাক। আপনারা ইন্টারনেট ব্রাউস করে দেখবেন পৃথিবীর বিভিন্ন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র কোথায় আছে। শহরের মধ্যে কয়লা বিদ্যুৎ কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে। পার্কের মধ্যে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে কিন্তু পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে না, কারণ হচ্ছে কী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেইন অবজেকশনটা হলো কার্বন-ডাই-অক্সাইড। উন্নত দেশে কার্বন হলে পরে পৃথিবীর যে গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কথা বলি। এটা CO2 দিয়ে গ্লোবাল ওয়ার্মিং করতে হয়। আমরা বাংলাদেশ তো পৃথিবীতে Co2 deviation করি না। সারা পৃথিবীতে আমাদের পার কেপিটা কার্বন নির্গমন .০২ টনস পার পারসেন্ট প্রতিবছর। এটা আমেরিকায় ২০ টন। আমরা তো কোনোরকম পরিবেশকে দূষণ করিনি। আমরা পরিবেশ দূষণের শিকার। তবুও কিন্তু আমরা বেশি ব্যয় করে আমরা বিদ্যুৎকেন্দ্র করছি। যেটা আমাদের পরিবেশবাদীরা হৈচৈ করে। তারা জানে না যে মেইন অবজেকটা হলো এটা Nox এবং Sox নির্গমন। নাইট্রাস অক্সাইড ও সালফার এটা থেকে নাইট্রিক এসিড ও সালফিউরিক এসিড দিয়েই পুরো ক্ষতি হয় পুরো পরিবেশের। মান বণ্টনের পর্যায়ে। আমেরিকায় যে প্রযুক্তি উন্নতি হয়েছে যখন তারা গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ে চিন্তা করছিল অক্সাইড বলত। এসিড বৃষ্টির কথা যখন তারা ভাবছিল। তখন তারা নাইট্রাস অক্সাইড, সালফার নির্গমন কমানোর জন্য প্রযুক্তি আনে। ওই সময় আমেরিকায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ বেড়েছে আর Nox, Sox ডাইভারশন কমেছে। সেখানে আজকে Nox, Sox নিয়ে আমেরিকায় কোনো কথা ওঠে না। আমাদের এখানে নিয়ে কোনো কথা উঠত তা হলে Nox, Sox নিয়ে কথা উঠত। Nox, Sox সেটা তার সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি, আমেরিকায় সেটা কিছু প্রকল্প যা আমরা এখানে আনছি। সে জন্য আমি বিভিন্ন শহরে বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখেছি এবং বুঝাও যায় না। আপনি জাপানে যান কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এখানে ওখানে বসে খেয়ে চলে আসবেন একটু টেরও পাবেন না, এটা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এমন কী আমাদের এখানেও।

আমাদের এখানেও স্বল্প পর্যায়ে বড় পুকুরিয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্র হয়েছে। কিন্তু ওখানে তো পরিবেশের তেমন সমস্যা করেনি।
তৌফিক-ই-এলাহী : ওখানে তো অত উন্নতমানের প্রযুক্তি নেই। আমাদের কয়লা খুব ভালো তো। কয়লা ভালো হওয়ায় নাইট্রাস অক্সাইড এবং সালফার অক্সাইড কম এখানে। সেজন্য আপনার প্রযুক্তি অত ভালো না; কিন্তু Nox, Sox এত নেই। সুতরাং, এসিড বৃষ্টি হয় নি। তার চেয়ে অনেক ভালো প্রযুক্তি দিয়ে করেছি। পরিবেশবাদীরা আমার প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে বেশি সংবেদনশীল না। সুতরাং আমি খুব দুঃখিত, আমাদের যে বা যারা বিভিন্ন বিষয় কথা বলে তারা সেই বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে হবে, তা হলে তো সমাজে তারা কন্ট্রিবিউট করতে পারবে। তারা বলবে এ কয়লা উড়ে যাবে। আজ-কালকার কয়লা জাহাজ থেকে নামার পথে কয়লা পরিবহন পর্যন্ত কয়লার কোনো মুখও দেখবে না। কারণ কয়লা আপনি নিয়ে আসছেন তের সমুদ্রে উড়তে দেবেন না-কি।
আপনি বুঝতেও পারবেন না। সাথে সাথে কভারড হয়ে যাবে। তারপর আবার পানি দেওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। পরিবেশের কোনোরকম ক্ষতি হবে না।
সুতরাং, আমাদের রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াট হবে। পরিবেশের কোনোরকম ক্ষতি হবে না ইনশাল্লাহ। কিন্তু আমরা যে বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল অর্থাৎ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল তারা অবহেলিত হয়েছে কিন্তু। সেই থেকে রামপাল থেকে আরো উত্তরে যখন যাব নতুন কর্মযজ্ঞ গড়ে উঠবে। মানুষের জীবনের মান উন্নত হবে। শিল্প এলাকা গড়ে উঠবে। সেই সাথে তারই ধারাবাহিকতা দেখেন আমাদের বড় বড় যে আমি বললাম ১০০০০ মেগাওয়াট করতে হবে আমরা সেজন্য কক্সবাজারের দক্ষিণে মহেশখালী, মাতারবাড়ি এসব জায়গা পছন্দ করলাম।

কক্সবাজারে কি দুটো প্ল্যান্ট হচ্ছে?
তৌফিক-ই-এলাহী : ওইখানে সর্বমোট ৮০০০ মেগাওয়াট করবে। সেখানে দেখেন আমাদের কর্মপরিকল্পনার ওপর কতখানি আস্থা জাপানের রয়েছে। জাপানিরা খুব কেয়ারফুল এবং ক্যালকুলেটিভ। সেই জাপান সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে, বর্তমান সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আপনারা দেখেন ওখানে প্রায় ৪ মিলিয়ন ডলার দিতে রাজি হয়েছে মাতারবাড়িতে। সেখানে ১৩২০ মেগাওয়াট একটা বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকবে। তারপর ১৩২০ মেগাওয়াটের আরেকটা বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকবে। co-yard হবে একটা বন্দর হবে। এই জায়গায় সমস্ত co-half হয়ে যাবে। আরেকটা আমরা পটুয়াখালীর ওদিকে পায়রা বন্দরের কাজে করব। ভিতরে ছোট ছোট কয়েকটা দেওয়া হয়েছে মুন্সিগঞ্জে। তারাও চেষ্টা করছে করার এবং এই পরিকল্পনা নেওয়ার কত রকম দেখেন কত রকম নোকন ইফেক্ট হয়। ধরেন মুন্সিগঞ্জে যদি হয় তা হলে আমার নদী সচল রাখতে হবে। ড্রেজিং করে চ্যানেল ঠিক রাখতে হবে। একদিকে যেমন জাপান এগিয়ে এসেছে। আমাদের এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য। সাথে চীনও এগিয়ে এসেছে। এবং চীনের সাথে ইতোমধ্যে দুটো প্রকল্প ১৩২০ মেগাওয়াট ও ১৩২০ মেগাওয়াট আমরা করতে যাচ্ছি। একটা মাতারবাড়ি মহেশখালী, আমরা আরেকটা করব পায়রা বন্দরের ওখানে। মালয়েশিয়ার সাথে আমরা একটা সই করতে যাচ্ছি। এই ঘুরে-ফিরে আমি একটা কথাই বলছি, দুরদর্শিতার সাথে যে নেতৃত্ব থাকে তা যখন ফললো, একটা দেশের মধ্যে থাকে তখন এই যে বিনিয়োগগুলো আসছে। এক একটা বিনিয়োগ আমাদের সব মিলে এক একটা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র। মানে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার। এরকম ১-২-৩-৪-৫টা তো।

ব্লু ইকোনমি নিয়ে যদি একটু বলেন?
তৌফিক-ই-এলাহী : এটা আপনি জানেন যে মেরিটাইম বাউন্ডারি যেটা আমাদের সমুদ্রসীমা। এটা প্রথম আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু একটা আইন করে একটা সীমানা করেছে। ২০০ নটিক্যাল মাইল বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা। এবং বাংলাদেশ প্রথম সিকিউরিটি হয় International law of the see.
তারপর আর কেউ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। প্রধানমন্ত্রী এবার ঠিক করলেন গত টার্মের সময়ে যে আমাদের সাথে ভারত এবং মিয়ানমার সমুদ্রসীমা ঠিক করতে হবে। কারণ আমাকে যদি সমুদ্রসম্পদ আহরণ করতে হয় দুই প্রতিবেশীর সাথে আমার ঠিক করতে হবে। শান্তিপূর্ণভাবে আপনি এখনো পূর্ব এশিয়া আপনার আমি নাম বলতে চাই না অনেক দেশেই একটা উত্তপ্ততা রয়েছে। যেমন দুই কোরিয়া, ভিয়েতনাম, জাপান, চীন এগুলো মিলে উত্তপ্ততা। এখানে তিনি খুব সূক্ষ্ম কূটনৈতিক কৌশলে অগ্রসর হওয়ার কারণে আমরা প্রথমে মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা ঠিক হলো, তারপর ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা ঠিক হলো। এবং আমরা যে জলভাগ পেলাম বাংলাদেশের স্থলভাগের প্রায় ৮০ শতাংশ সমান। আমাদের ভারতের সাথে যে বিতর্কিত পার্টটা ছিল তা ছিল ২৫ হাজার বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে ১৯ হাজার বর্গকিলোমিটার আমরা পেয়েছি। এখন আমাদের সমুদ্রসীমা ঠিক হয়ে যাওয়ার পর যেগুলো যে সম্ভাবনার দাগ যেটা ব্লু ইকোনমি বলে সেটা কতগুলো দিক আছে। একটা হলো যে আপনার কিছু সম্পদ রয়েছে সেগুলো আপনি আহরণ করবেন। তেল, গ্যাস, মৎস্য, সামুদ্রিক খনিজ। আর আরেকটা হলো আপনি ডেভেলপ করবেন। সেটা পর্যটন হতে পারে। মাছের কালচার হতে পারে, আপনার শিপ ব্রেকিং হতে পারে। বিভিন্ন জিনিস ডেভেলপ হতে পারে। আমরা এটা পাওয়ার পরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ নিয়েছেন, একটা সমুন্নত কর্মসূচি নিতে হবে। এবং সেই সমুন্নত কর্মসূচির জন্য কাজ শুরু হয়েছে। যেটার উদ্দেশ্য হচ্ছে আমরা সম্পদকে আহরণ করব। ব্লু ইকোনমি যেটা বলে। আপনি গ্রিন ইকোনমি শুনেছেন, সেটা টেকসই অর্থনীতি জলভাগ, সমুদ্র যদি টেকসই অর্থনীতি যেটাকে ব্লু ইকোনমি বলে। স্থলভাগ হলো গ্রিন আর সমুদ্র হলো ব্লু। এখানে মাছ আহরণ করবেন, যেন মাছের সংখ্যা কমে না যায়। এখানে আপনি খনিজসম্পদ আহরণ করবেন যেন পরিবেশের ক্ষতি না হয়। এখানে আমরা তেল গ্যাস উত্তোলন করি, এমনভাবে করব যেন পরিবেশ পানি এগুলোর ক্ষতি না হয়। যাতে আমরা অন্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হই। এই ব্লু ইকোনমি যেটা এটার আমাদের প্রথম আমরা সত্যি কথা বলতে কি প্রথম আমাদের জেলাগুলো। যদিও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় করার সিদ্ধান্ত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিয়েছেন এবং আগেরবার তিনি মেরিন ইনস্টিটিউট করেছেন। ফিশারিজ ইনস্টিটিউট সবই সব সময় সমানতালে থাকতে পারেনি। সেটা স্বীকার করতে হবে সবাইকে আমি নিজে স্বীকার করি। এই এতদূর আমার পরে এখন আমাদের সবাই দৃষ্টি খুলেছে। তা হলে আমরা সবাই একসাথে সমুন্নত উপায়ে এটাকে আহরণ করা বা উন্নয়ন করা। যদি আপনি জানেন আমাদের একটা সার্ভে যান বিশেষ করে ফিশারিজের জন্য আমরা অতি সম্প্রতি ছয় মাসের মধ্যে কাজ শুরু করব। এই সার্ভে জাহাজগুলো যে সম্পদ এগুলো হলো মৎস্যসম্পদ আমাদের অন্যান্য খনিজসম্পদ বা তেল গ্যাস আহরণের জন্য আরম্ভ।
আরও যেসব ব্লক সেগুলোকে আমরা নতুন করে সাজাচ্ছি। সাজিয়ে দুভাবে অগ্রসর হব। একটা হলো যে, যেগুলো অন্য দেশের পাশে সেখানে আমাদের দূত Production share in contact দিতে হবে। কারণ অন্যান্য দেশ ওখানে সার্ভে শুরু করে আর আমরা যদি পিছে যাই তা হলে আমরা জানতেও পারব না যে, আমাদের এখানে আছে। তা হলে যদি প্রকৃতি তো একরকম পারে না প্রকৃতি আপনার হয়তো একটা গ্যাসফিল্ড হলো দুই দেশের মধ্যখানে। আমাকে তো জানতে হবে আগে কোথায় আছে। তারপর যাব Proccdure Unitization Procedure বলে যেগুলোর মাধ্যমে এটা ভাগ করতে হবে। সে জন্য আমরা যেভাবে যাচ্ছি কৌশলগত। যেগুলো পাশে আছে সেগুলো আমাদের প্রাধান্য বেশি। যেগুলো পাশে নাই সেগুলোকে আমরা চাচ্ছি আমরা নিজেরা আবার সার্ভে করব। ভূ-তাত্ত্বিক সার্ভে বলে। এই ভূ-তাত্ত্বিক সার্ভে করলে লাভটা হবে আমরা সম্ভাবনা জানলাম, সম্ভাবনা জেনে আমাদের প্রয়োজন অনুসারে কোনটাকে ঠিক করব। এখন করব না পরে করব কারণ আমাদের তো যে সম্পদ আছে এটাকে আমাদের জন্য আমাদের পরের প্রজন্মের জন্য তার পরের প্রজন্মের জন্য তো কিছু রেখে যেতে হবে। আমরা সবাই তো একেবারে শেষ করলে হবে না। সে জন্য ওটা কীভাবে ফ্লিডওয়াইজ করব সেটার আমরা পরিকল্পনা নেব।

ভারত থেকে ইতোমধ্যে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি হচ্ছে, আরও বিদ্যুৎ আমদানি এবং নেপাল, ভুটান, মিয়ানমারের সাথে যৌথ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন বা জলবিদ্যুৎ আমদানির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বলুন।
তৌফিক-ই-এলাহী : আমরা যে ভারতের সাথে যে একটা করলাম ৫০০ এমডাব্লিউর সাথে আবার কিন্তু পার্লাটোনাতে ত্রিপুরায় সেখানে আবার ১০০ এমডাব্লিউর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা সেটা প্রযুক্তিগত কীভাবে হবে সেটা করছি এবং সবচেয়ে বড় সেটা ব্রেক থ্রু হয়েছে নেপাল এবং ভুটানের সাথে জলবিদ্যুৎ। সেটা ভারত রাজি হয়েছে এবং ভারত বলেছে তাদের কোনো আপত্তি নেই। সে জন্য আমরা আলোচনা এখনও অগ্রসর হচ্ছি যে ভুটানে হয়তো একটু আগে আসতে পারে কিন্তু প্রকল্প থেকে কারণ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তো প্রায় ১০ বছরের মতো লেগে যায়। এবং নতুন করে করতে হবে যেগুলো আছে সেগুলো তো শেয়ার করা যাবে না। আমরা বলেছি যে দরকার হয় আমরা যেভাবে তোমরা চাই। আমরা সবাই একসাথে মিলে। বেসিক উদ্দেশ্য হলো আমরা সবাই একসাথে মিলেমিশে একটা পরিবারের মতো থাকি। একে অন্যের প্রতি মহানুভূতিশীল হই। সাহায্য করি তা হলে একটা। এটা একটা বড় সমাজ হিসেবে যদি দেখি সে জন্য আমরা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যেগুলো হাইড্রো পাহাড় আছে। আমরা তাদের বলছি চল আমরা একসাথে মিলে করি। মিলে করে সেখান থেকে আমাদের প্রয়োজন সেটাই তোমাদের তোমরা নও। মিয়ানমারের সাথে আমাদের আলোচনা শুরু হয়েছে। একটা জলবিদ্যুৎ নিয়ে আগে আলোচনা ছিল। এখন আমরা মিয়ানমারের কাছে বলতে চাই যে তোমরা আমাদের যদি গ্যাস দিতে পার তা হলে আমরা পাইপ লাইনের সাহায্যে আনতে পারব। এখানে বলে রাখা উচিত যে গ্যাসের কথা বলছি মিয়ানমারের সেমতুং বলে একটা গ্যাসফিল্ড। এখানে গত বিএনপি জোট সরকারের সময় মিয়ানমার রাজি হয়েছিল কিন্তু ভারত মিয়ানমার বাংলাদেশ যে চুক্তি হয়েছিল সে চুক্তিতে কিছু নিয়ে যাবে ভারত। আর কিছু আমরা নেব। সেটা মন্ত্রী পর্যায় ঠিক হয়ে গেছিল। কিন্তু এখানে তখন খালেদা জিয়া এখানের প্রধানমন্ত্রী তিনি এটা নাকচ করে দিল। সেই যে গ্যাস চলে যায় চিনের কুনমিংয়ে। এখন আমরা মিয়ানমারের সাথে কথা বলছি তারা শুনতে রাজি হয়েছে। সে ওইখান থেকে কিছু গ্যাস যদি আমাদের দাও তা হলে আমরা চিটাগাংয়ে নিয়ে আসব। আপনি জানেন চিটাগাংয়ে গ্যাসের দারুণ অভাব। সে অভাবটা আমরা মিটাতে পারি।
উত্তরণ : ইতোমধ্যেই দেশের ৬২ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে, কবে নাগাদ দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎসেবার আওতাভুক্ত হবে?
তৌফিক-ই-এলাহী : দেশের স্কাউট, স্কুলের ছেলেমেয়ে এদের সবাইকে বলা হচ্ছে তোমরা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হও। এই একটা সামাজিক আন্দোলন শুরু হয়েছে। সেটা দিয়ে আমরা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হওয়ার চেষ্টা করতেছি। সেই সাথে নবায়নযোগ্য জ্বালানি এটার ওপর আবার তিনি চলতেছে। উদাহরণস্বরূপ দেখেন নবায়নযোগ্য জ্বালানি সমর্থন থাকার কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আজকে বাংলাদেশে প্রায় ৩০ লাখ বাড়িতে সোলার এবং পৃথিবীতে সবচেয়ে ফাস্টেড গ্রোইং সোলার হোম সিস্টেম হলো বাংলাদেশে। এটা দেখেন কত বড় সাফল্য। যে আমি সোলার হোম সিস্টেম ও যাতে এই বিকল্প বিভিন্ন রকম সুযোগ সৃষ্টির জন্য এটা এবং সেই সোলার হোম সিস্টেম করার সাথে গ্রাম-গঞ্জে ছোটখাটো মেরামতের কাজ এরা শিখছে। তারাও আয় উপার্জন করতে পারছেÑ এসব মিলে বাংলাদেশে যেখানে ৪০ শতাংশ লোক বিদ্যুৎ পেত আজকে ৬২ শতাংশ লোক বিদ্যুৎ পাচ্ছে। এবং আমাদের সরকারের একটা লক্ষ্য হলো ২০২১ সালের মধ্যে সবার কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে। শতভাগ মানুষ ২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যুতের আওতায় চলে আসবে।

যেখানে বলা হচ্ছে দেশে কয়লা মজুদ ৫০ বছরের জন্য রিজার্ভ আছে, ওপেন পিট যে সিস্টেম আমরা কি সমালোচকদের ভয়ে কি ওপেন পিট বন্ধ রাখছি?
তৌফিক-ই-এলাহী : মোটেও না, এখনও আমরা বড়পুকুরিয়া একটি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে, সেখানেও আমরা কয়লা গভীরে হয় underground mine-এ নিচে।underground mine-এ গিয়ে যদি আপনি দেখেন নিচে ফ্রিজ করা হয়, তার তুলনায় নিচে যে পরিমাণ পানিটা খালি ওপরে একুইফার আছে। যে পরিমাণ পানি আছে এবং পানি পাম্প প্রক্রিয়া পানি এবং মিথেন মিলে আমাদের underground mine, risks mile in the world আল্লাহর রহমতে এখনো কোনো দুর্যোগ ঘটে নি। ওই থেকে কিছু বাড়িয়ে আমরা আরও একটা প্রোডাক্টশন করে বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
উত্তরণ : ওটা কী ওপেন পিট সিস্টেমই?
তৌফিক-ই-এলাহী : না ওই সিস্টেমই, সে সাথে আপনার বড়পুকুরিয়া উত্তরে যে ভাগ আছে সেখানে আমরা পাইলট বিসিস এ আমরা একটা কয়লাটা একটু ওপরে চলে আসছে, ওখানে একটা উন্মুক্ত কয়লা খনি করার পরিকল্পনা করার জন্য হাতে নিয়েছি। এখানে বলে রাখা দরকার, এইunderground mine যখন শুরু হয় তখন এটিতে বলা হয়নি যে কোনো রকম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ। ২০০৯ সালে দেখা গেল যে আপনার ভূমিধস শুরু হয়েছে এবং মানুষজন খুব সন্ত্রস্ত হয়ে পুরোপুরি বাড়ি ভেঙে যাচ্ছে, যেখানে পানি ছিল ক্ষেত ছিল আমরা গিয়ে যখন তাড়াতাড়ি সমীক্ষা করলাম তখন তারা যারা এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ তারা বলল, যে স্যার নিচেunderground mine-এ ভূমিধস হবেই এবং আস্তে আস্তে এটাকে পরিত্যক্ত করতে হবে।
তা হলে দেখেন underground mine এটা নিরাপদ না কারণ ভূমিধস হচ্ছে, আবার নিচে থেকে আমরা miximum ২০-৩০ শতাংশ পরিমাণ কয়লা আহরণ করতে পারছি। তা হলে দেখেন শেষে প্রধানমন্ত্রী কিন্তু ওই যে বললাম সাধারণ মানুষের প্রতি সমাঝোতা করায় তিনি বললেন, তাদের নিয়ে আসেন আমরা বাসে করে ওখানকার বড়পুকুরিয়ার লোকজনকে নিয়ে এলাম, সংসদে তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বসে তাদের উদ্দেশ্যে বললেন, তোমাদের যা ক্ষতি হয়েছে এটা আগের সরকার কোনো বরাদ্দ রাখেনি এটা আমরা বরাদ্দ রেখে তোমাদের দেব। তারপর আমরা বরাদ্দ রেখে যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিয়েছি। শুধু তাই না ওখানে যাদের কোনো ভিটা-মাটি-জমি ছিল না তারা কিন্তু কোনো ক্ষতি পূরণ পায় না এবং নেয় নি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বললেন যে না তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে তাদের প্রত্যেককে টাকা দিয়ে আশ্রয়নের অধীনে প্রকল্প বানিয়ে তাদের বাড়িঘর বানিয়ে দেওয়া 17হয়েছে। সুতরাং, আমাদের একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে যে,underground mine হলে একটা subsidence হবে। জমিটা চলে যাবে। পানি বিরাট একটা সমস্যা, সে জন্য আপনি বারবার শুনবেন যে, কয়লা খনির মধ্যে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিটা মোটামুটি ওপেন পিট মাইন করা যার গভীরতার ভিত্তিতে। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে যে কয়লার ওপরে পানি রয়েছে। যেটাকে আমরা বলি (একুইফার্ম) সেই পানি হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগরে পানি প্রবাহ হচ্ছে এবং সেই পানি কিন্তু আমাদের জামির উর্বরতায় নদী সবকিছুই। শুধু এখানেই যদি কোনো ওপেন পিট মাইন হয়, তা হলে পানিটাকে আমাকে বাঁধের মতো করতে হবে, আটকিয়ে দিতে হবে, পানি বাধাগ্রস্ত হবে। আমরা হিসাব করে দেখছি ইমপোস্টেড কয়লা হলে বর্তমান দামে হলে আমাদের ৬ টাকার মতো পড়ে, সেই ইমপোস্টড কয়লা এখানে যদি কয়লাগুলো, তারপরও কিন্তু আমদানি করতে হবে কয়লা।

কুইক রেন্টাল তো একটা স্বল্পমেয়াদি ব্যাপার ছিল। প্রথমে যা বলা হয়েছিল যে পাঁচ বছর মেয়াদি কিন্তু ওই মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও আবার নতুন করে তাদের সাথে চুক্তি হচ্ছে আবার নতুন নতুন কুইক রেন্টাল চুক্তিও ২-৪টা করা হচ্ছে, এর পক্ষে যুক্তিটা কী?
তৌফিক-ই-এলাহী : এখন নতুন চুক্তি করব, প্রথমে যখন আমরা কুইক রেন্টাল করলাম যে এত এক্সপেনসিভ জ্বালানি আমরা দুই-তিন-পাঁচ বছর দেখি, আমাদের অন্য কোনো সাধারণ হয় কিনা যেমন একাধিক সমাধান আমরা ৫০০ মেগাওয়াট ভারত থেকে আনছি, অন্যদিকে যদি আনা যায় আমরা এককভাবে এটার মাঝে কমিটমেন্ট হতে চাইনি, এটা কুইকরেন্টাল এসব কিন্তু পার্থক্যটা হলো তেল। তেলের জন্য এটার দাম বেশি কিন্তু যেহেতু সরকারের সৎ উদ্দেশ্য সেই জন্য আমরা লাভবান হলাম কীভাবেÑ লাভবান হলাম, আমাদের যখন তিন বছর পাঁচ বছর শেষ হচ্ছে, আমরা দেখলাম আমাদের অন্য কোনো অপশন নেই। কিন্তু এখনো পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো বাংলাদেশেই আছে। আমি তাতে যদি নবায়ন করি তা হলে (negotiate) করে তার দাম কমাচ্ছি না। তা হলে কি আমি যদি নতুন করে টেন্ডার করতাম, যে দামে পেতাম তার চেয়ে কম দামে দিতাম। কারণ সে ইতোমধ্যে তারও ঠেকা আছে, সে কম দামে negotiate করত। আমাদের কাছে মানে সাপে বড় হয়েছি আমরা নিছি। সে জন্য সৎ উদ্দেশ্য থাকলে আল্লাহ মানুষকে সাহায্য করে এবং আমরা তিন, চার, পাঁচ বছর করছি।
উত্তরণ : মূলত কয়লা প্ল্যান্টগুলো চালু না হওয়া পর্যন্ত?
তৌফিক-ই-এলাহী : না, এটা ঠিক না, কারণ কয়লা প্ল্যান্টগুলো যখন চালু হবে, হিসাব করে দেখছি যদি ২০০০০ মেগাওয়াট হয় তখন আমাকে ৩-৪ মেগাওয়াট রাখতে হবে, কুইক রেন্টাল না লিকুইড বা ফুয়েল বেইজড রাখতে হয়, সুবিধা হচ্ছে আমি যদি আবার করি তাতে আবার কমে যাবে, কিন্তু এই জ্বালানি থেকে বের হওয়া যাবে না কিছু রাখতেই হবে। কিন্তু আমরা বলি জ্বালানিকে ব্যালেন্স করার জন্য দরকার।

দেশের বিদ্যমান গ্যাসক্ষেত্র সম্পর্কে বিস্তারিত বলুন।
তৌফিক-ই-এলাহী : এটা প্লাস শেভরন সবচেয়ে বড় প্রাইভেট সেক্টরে প্রায় আমাদের অর্ধেক বিদ্যুৎ তারা ঠিকাদার হিসেবে আমাদের দিল, তাদের বলা হলো যে তোমরা গ্যাসের ক্ষেত্রকে কূপ না করে কতখানি বাড়াতে পার, তারা একটা পরিকল্পনা নিল গ্যাসকে বাড়ানো, আমাদের বাপেক্স থেকে পরিকল্পনা নেওয়া হলো যে আমাদের যেসব ক্ষেত্র আছে সেখানে কীভাবে বাড়ানো যায়। তারপর আমরা দেখলাম যে বাপেক্সের ৪টা রিড মিনিমাম চলতে পারে। কিন্তু আমাদের প্রয়োজন তাড়াতাড়ি, কিন্তু সেজন্য আমরা গ্যাস প্রমোর সাথে চুক্তি করলাম যে তোমরা আমাদের সাথে এসে কিছু উন্নয়ন কূপ বা সংস্কার কূপ গড়ে তোল এবং শেভরনকে বল তোমরা বাড়িয়ে দাও এই সুবাধে কিন্তু আমাদের ১৭৫০-এর মতো ছিল আগের টার্মের গ্যাস সেটা আজকে বেড়ে ২৩৫০-এর মতো হয়েছে। কিন্তু আপনি শুনবেন যে, গ্যাসের এখনও অভাবটা যেমন আমাকে পীড়া দেয়, সবাইকে পীড়া দেয় কারণ আমরা চাই শিল্পÑ গ্যাস সবাই ভালোভাবে পাক। শিল্প, বাণিজ্য, আবাসিক, সেখানে এত বেশি ডিমান্ড বেড়ে গেছে যে আমরা প্রায় ৫০০ এমএনসিএফটি বাড়িয়েছি। কিন্তু প্রয়োজনে মনে হয় যেন তুলনায় অপর্যাপ্ত এখনো ইনশাল্লাহ একটা বড় প্রকল্প হাতে নেওয়ায় আমরা শেভরন থেকে এই আগামী দু-এক মাসের মধ্যে আস্তে আস্তে ১০০ থেকে শুরু করে ৩০০ এমএনসিএফটি পর্যন্ত গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো হবে। ভোলায় আমাদের শাহবাজপুরে যে গ্যাসক্ষেত্র আছে সেখানে আমরা এতদিন কিছু করা সম্ভব হয়নি। সেখানে আমরা ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সাহায্য নিয়ে সেখানে একটা ২৫০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্টে বছরের শেষের দিকে বা আগামী বছরের শুরুর দিকে সেটা করব। সেখানে আমরা কিন্তু কূপ খনন করার জন্য, কেননা গ্যাস ওঠানো লাগবে সম্ভাবনার ক্ষেত্র আছে অন্বেষণ কূপ না ওটা ডিভেলপমেন্ট কূপ উন্নয়ন কূপ। দ্রুত একটা জায়গা আছে সেখান থেকে একটা, তিনটায় আরও দুটি কূপ বেশি আছে। কিন্তু সীমাবদ্ধতা মানে ওই যে কূপের মধ্যে ক্ষতি না করা স্টাকচারে সেটা দিয়ে আমরা ওখানে চালু হওয়া এবং আমরা ওই বিদ্যুৎ ভোলায় তো লাগবে না সেই বিদ্যুৎকে আমরা জাতীয় গ্রিডে নিয়ে আসব।
উত্তরণ : এলএনজি গ্যাস আমদানির কথা শোনা যায়, এ সম্পর্কে কিছু বলবেন কি?
তৌফিক-ই-এলাহী : এলএনজি গ্যাস আমদানির জন্য সমুদ্রে গ্যাস টার্মিনাল তৈরি করা হচ্ছে। প্রথমটা হচ্ছে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ভাসমান টার্মিনাল। এই গ্যাস কনডেন্সড ফর্মে থাকে। সমুদ্র পানির মাধ্যমে রিসাইকেল করে একে বায়বীয় করতে হয়। আরও ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ধারণ করার জন্য স্থায়ী টার্মিনাল নির্মিত হবে। এই টার্মিনাল চালু হলে আমরা এলএনজি গ্যাস আমদানি করতে পারব এবং এতে দেশের গ্যাসের অভাব অনেকটা পূরণ করা যাবে।
উত্তরণ : বিস্তারিতভাবে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও কয়লা খাত নিয়ে কথা বলার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
তৌফিক-ই-এলাহী : আপনার মাধ্যমে উত্তরণের পাঠকদেরও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

সাক্ষাৎকার গ্রহণ : আনিস আহামেদ
ছবি : তপন দে
বাণীবদ্ধ : মো. আরিফুল ইসলাম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *