দেশবাসীর ভালোবাসায় অভিষিক্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে যোগদান শেষে লন্ডন হয়ে প্রধানমন্ত্রী গত ৩ অক্টোবর দেশে ফেরেন। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভিভিআইপি ফ্লাইটটি রাতে লন্ডন থেকে ৩ অক্টোবর বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে সিলেট ওসমানি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। প্রধানমন্ত্রী বিমান থেকে নেমে ভিভিআইপি লাউঞ্জে সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতি করেন। এরপর দুপুর ১টা ৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমানের ফ্লাইট ‘আকাশ প্রদীপ’ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ঢাকায় পৌঁছানোর পর প্রধানমন্ত্রীকে বর্ণাঢ্য ও আন্তরিক গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়। জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ এবং ‘আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার’ পাওয়ায় তাকে গণসংবর্ধনা দিতে বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত জনতার ঢল নামে। দীর্ঘ এই রাস্তার দু’পাশে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ ও বিশিষ্টজনরা জাতীয় পতাকা হাতে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। অনেকটাই ‘মানব প্রাচীরের’ আদলে হাতে হাত ধরে বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত দীর্ঘপথে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করে নেন। এ সময় হাস্যোজ্জ্বল প্রধানমন্ত্রী গাড়ির ভেতর থেকে হাত নেড়ে লাখো জনতার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দনের জবাব নেন।
দীর্ঘ এই পথে জনতার অভিনন্দন, শুভেচ্ছা আর ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে প্রায় ৫০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দর থেকে গণভবনে পৌঁছান। বিমানবন্দর থেকে পথে পথে উপচেপড়া উচ্ছ্বসিত মানুষের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী দুপুর ২টা ৭ মিনিটে গণভবনে প্রবেশ করেন, এরপর গান আর ফুলে তাকে বরণ করে নেন লেখক-কবি, সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ, ক্রিকেটার, এভারেস্ট বিজয়ী চিত্র পরিচালকসহ অগণিত দলীয় নেতাকর্মী এবং দেশের বিশিষ্টজনরা। প্রধানমন্ত্রী গাড়ি থেকে নামার পর ফুল নিয়ে এগিয়ে যান সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। প্রধানমন্ত্রীর সাথে সৈয়দ শামসুল হকের কুশল বিনিময়ের সময় যোগ দেন চিত্রশিল্পী হাসেম খান। এ সময় দেশের খ্যাতনামা রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা প্রধানমন্ত্রীকে আলিঙ্গন করে গেয়ে ওঠেন ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’ গানটি থেকে ‘মহিমা তব উদ্ভাসিত…’ কলিটি। মুহূর্তের মধ্যে এই সুর ছড়িয়ে পড়ে কণ্ঠে কণ্ঠে। বন্যার সাথে গলা মিলিয়ে গেয়ে ওঠেন উপস্থিত সুধীজন। আর আর মুহুর্মুুহু আনন্দধ্বনিতে মুখরিত হয় গোটা গণভবন। এমনই এক মায়াবী ভালোবাসায় আবদ্ধ প্রধানমন্ত্রী স্তব্ধ হয়ে থাকেন বেশ কিছুক্ষণ।
গান শেষ হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শুধু এটুকু বলেন, ‘সবই জনগণের প্রাপ্য। দুটি পুরস্কারই পুরো জাতির ও দেশের জন্য সম্মানের।’ এ সময় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সেখানে দেশ বরেণ্য ব্যক্তিবর্গও উপস্থিত ছিলেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী গণভবনের মিটিং রুমে গিয়ে সবার সাথে কুশলবিনিময় করেন। এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা জাতির সম্মান, মানুষের সম্মান।’
প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা জানাতে ওই দিন সকাল থেকেই ১৪ দলীয় জোটের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ সড়কগুলোর দুপাশে সমবেত হয়। ১৪ দলের নেতাকর্মীরা আগে থেকেই বিভিন্ন ফেস্টুন, ব্যানার, পোস্টারসহ ঢাকঢোল নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে জড়ো হন। প্রধানমন্ত্রী ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য নিউইয়র্কে যান। নিউইয়র্ক সফরকালে প্রধানমন্ত্রী ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেন। ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেন। প্রধানমন্ত্রী ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) নির্বাহী পরিচালক আচিম স্টেইনারের কাছ থেকে পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন। শেখ হাসিনা ২৬ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) মহাসচিব হুলিন ঝাও-এর কাছ থেকে ‘আইসিটি টেকসই উন্নয়ন’ পুরস্কার গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর গণসংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ১৪ কিলোমিটার সড়কের দু’পাশ জনারণ্যে পরিণত হয়। চারদিকে উৎসবের আমেজে শুধু মানুষ আর মানুষ। জনতার ঢলে যেন জনসমুদ্র রাজপথ। প্রখর রৌদ্র উপেক্ষা করে মানুষের তীব্র ¯্রােত নেমেছিল এই সুদীর্ঘ সড়কপথে। লাখো মানুষ এই দীর্ঘপথে মানবঢাল রচনা করে ওই দিন দেশে ফিরে আসা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে পুষ্পবৃষ্টি আর হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় সিক্ত তাদের প্রিয় নেতাকে বরণ করেন।