দেশের প্রতিটি মানুষের মুখে হাসি ফোটাব
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশাল জনসভায় দাঁড়িয়ে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। জনসভায় লাখো মানুষের ¯্রােত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে রীতিমতো জনসমুদ্রে রূপ দিয়েছিল। সভাপতির বক্তব্য রাখতে গিয়েও প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের উন্নয়ন-সফলতা, অগ্রগতি তুলে ধরার পাশাপাশি ক্ষমতার বাকি দুই বছর মেয়াদে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাও জাতির সামনে তুলে ধরেন।
ঐতিহাসিক ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ১০ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ আয়োজিত এই জনসভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ আজ সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষ শান্তি ও স্বস্তিতে রয়েছে। কিন্তু দেশের মানুষ যখন শান্তিতে থাকেন, তখন খালেদা জিয়ার মনে অন্তরজ্বালা শুরু হয়। যিনি (খালেদা জিয়া) এতিমের টাকা চুরি করে খায়, শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে, তার কাছ থেকে রাজনীতি শিখতে হবে, গণতন্ত্রের ভাষা শিখতে হবেÑ এটা কখনোই দেশের জনগণ মেনে নেবে না।
তিনি বলেন, আমরা প্রমাণ করেছি আওয়ামী লীগ কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। দেশের জনগণের কাছে যে ওয়াদা করি, তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করি। বঙ্গবন্ধু ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘোষণা দিয়েছিলেন ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত দেশ গড়ার। আমরা জাতির পিতার সেই লক্ষ্য ও স্বপ্ন পূরণে তার আদর্শ বুকে ধারণ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা দেশের প্রতিটি গ্রামকে নগর হিসেবে গড়ে তুলব। সমগ্র বাংলাদেশ হবে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলায়। আজকের ঐতিহাসিক এই দিনে আমাদের প্রতিজ্ঞাÑ জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। আমরা বাংলাদেশকে তার স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলব, দেশের প্রতিটি মানুষের মুখে হাসি ফোটাব।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এমপি, উপদেষ্টাম-লীর সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এমপি, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এমপি, সভাপতিম-লীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এমপি, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক, দক্ষিণের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত, সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, যুবলীগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোল্লা মো. আবু কাওছার, শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার, কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন প্রমুখ। দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি স্বাগত বক্তৃতা করেন। প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপি ও উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন জনসভা পরিচালনা করেন।
২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামাত জোটের দেশজুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা ও নাশকতার বিবরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার আন্দোলন মানেই মানুষ হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ আর নাশকতা। নির্বাচন ঠেকানোর নামে নির্বিচারে পুড়িয়ে তিনি মানুষ খুন করিয়েছেন। হত্যাযজ্ঞ চালিয়েও নির্বাচন ঠেকাতে না পেরে ২০১৫ সালে আবার শুরু করলেন তা-ব। গুলশানের বাসা ছেড়ে গুলশানের অফিসে উঠলেন এবং খালেদা জিয়া বললেন, সরকার উৎখাত না করে উনি ঘরে ফিরবেন না। এরপরই উনি মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু করলেন। ২৩১ জন মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করিয়েছেন খালেদা জিয়া।
সেই ভয়াবহ তা-বের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, শুধু হত্যাযজ্ঞই নয়, আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামাত ২৯টি রেলের বগি, ১১টি লঞ্চে অগ্নিসংযোগ করেছে, ফিশপ্লেট উপড়িয়ে নাশকতা চালিয়েছে, ২৩ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে পর্যন্ত তারা হত্যা করেছে। এমনকি বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে আগুন দিয়ে শত শত কোরআন শরিফ পুড়িয়েছে। এটাই ছিল খালেদা জিয়ার আন্দোলন। কিন্তু জনগণ যখন তাদের প্রতিহত করা শুরু করল, জনগণের ধাক্কায় খালেদা জিয়া দলীয় কার্যালয় ছেড়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করে ঘরে ফিরে যেতে বাধ্য হন। যারা এভাবে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে, জঙ্গিবাদ উসকে দেয়, নাশকতা চালায় তাদের মুখে দেশের মানুষ গণতন্ত্রের কথা শুনতে চায় না।
আবেগজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১০ জানুয়ারি বাঙালির জীবনে একটি ঐতিহাসিক দিন। এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাধারণ মানুষ অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছিল। ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে বঙ্গবন্ধু যে নির্দেশ দিতেন, বাঙালি জাতি তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেন। তিনি বলেন, ইয়াহিয়া খান ফাঁসি দিয়ে জাতির পিতাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। বিশ্বজনমতের চাপে তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু পরিবারের কাছে নয়, ছুটে গিয়েছিলেন এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, তার প্রিয় জনগণের কাছে।
তিনি বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, বঙ্গবন্ধু যদি বেঁচে থাকতেন তবে বাংলাদেশ ২৫-৩০ বছর আগেই উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠত। দেশের মানুষ উন্নত জীবন পেত। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে যখন বঙ্গবন্ধু গড়ে তুলছিলেন তখনই তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এর পরই শুরু হয় হত্যা-ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দিয়ে মুক্তি দেয়, যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী-উপদেষ্টা বানিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেন। প্রতিরাতে কারফিউ দিয়ে দেশ চালান এবং হাজার হাজার সেনা অফিসারকে হত্যা করেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারা কখনও বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়নি। কারণ তারা বাংলাদেশে অবস্থান করলেও মনে-প্রাণে ছিল পাকিস্তানি। পরাজিত হানাদারদের পদলেহন করেই ক্ষমতায় থেকেছে।
প্রধানমন্ত্রী তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে বলেন, জাতির পিতা এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে রূপরেখা দিয়েছিলেন। বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে দেশকে অধিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। আমরা বাংলাদেশকে ঠিক সেভাবেই উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব। ২০২১ সালে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। এই সুবর্ণজয়ন্তী আমরা পালন করতে চাই দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে, যেখানে স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধিসহ প্রত্যেক ছেলেমেয়ে শিক্ষিত হবে, উন্নত জীবন পাবে, সবার মুখে হাসি ফুটবে। প্রতিটি গ্রামেই একটি নগর হিসেবে গড়ে উঠবে। গ্রামের মানুষও উন্নত জীবন পাবে। সমগ্র বাংলাদেশই হবে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার দেশ। বঙ্গবন্ধুর কাছে আমাদের অঙ্গীকার ও প্রতিজ্ঞাÑ আমরা এই দেশকে তার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবই ইনশাল্লাহ।