ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে ঈদুল ফিতর উদযাপন
যথাযোগ্য মর্যাদায় ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে এবং ব্যাপক উৎসব-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে মুসলিম উম্মাহর বড় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। পবিত্র রমজানের সিয়াম সাধনার পর গত ১৮ জুলাই মুসলিম সম্প্রদায় তাদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপন করে। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের ধর্মপ্রাণ লাখো লাখো মুসলমান বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঈদগাহ, মসজিদ ও খোলা মাঠে নামাজ আদায় করেন। রাজধানী ঢাকায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় ১৮ জুলাই সকাল সাড়ে ৮টায় সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। এ ছাড়া জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় ঈদগাহে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুুল হামিদ, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিগণ, ঊর্ধ্বতন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এবং বিভিন্ন মুসলিম দেশের কূটনীতিক এবং সর্বস্তরের জনগণ জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে নামাজ আদায় করেন। সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় ঈদগাহে এই জামাত শুরু হয়। তবে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল ৭টা থেকেই নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা জাতীয় ঈদগাহের জামাতে অংশ নিতে শুরু করেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে আয়োজিত এই ঈদ জামাতে এবার ইমামতি করেন চট্টগ্রামের জমিয়াতুল ফালাহ জামে মসজিদের খতীব অধ্যাপক মাওলানা জালালুদ্দিন আল কাদেরী।
রাষ্ট্রপতি জাতীয় ঈদগাহে পৌঁছলে তাকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন স্বাগত জানান। ঈদগাহে পৌঁছেই রাষ্ট্রপতি ইমামের মাধ্যমে উপস্থিত মুসল্লিদের ঈদ শুভেচ্ছা জানান। নামাজ শেষে তিনি মুসল্লিদের সাথে কোলাকুলি করেন। প্রতিবারের মতো এবারও জাতীয় ঈদগাহে মহিলাদের জন্য আলাদা নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা ছিল। ঈদের নামাজ শেষে দেশের শান্তি ও উন্নয়ন, জনগণের কল্যাণ এবং মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর ঐক্য কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
ঢাকা দক্ষিণ ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ২২৮টি এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ১৫১টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এসব ঈদ জামাতে পুলিশ ও র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিলেন। কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া মাঠে সকাল ১০টায় দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। লাখো ধর্মপ্রাণ মুসলমান ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ করেন। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথকভাবে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের প্রতিনিধি এবং সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ সর্বস্তরের মানুষের সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
পালিত হলো রথযাত্রা উৎসব
গত ২৬ জুলাই উল্টোরথের মধ্য দিয়ে পালিত হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা। ১৮ জুলাই শুরু হয় এই রথযাত্রা এবং ২৬ জুলাই উল্টোরথের মধ্য দিয়ে শেষ হয় উৎসবটি। এ উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন ও মন্দির নানা মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। রাজধানী ঢাকায় আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) রথযাত্রা উপলক্ষে ৯ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
প্রতিবারের মতো এবারও দেশের সবচেয়ে বড় রথযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হয় মানিকগঞ্জের ধামরাইয়ে। ১৮ জুলাই সকালে হরিনাম সংকীর্তন, বিশ্বশান্তি ও মঙ্গল কামানায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আলোচনা সভা, পদাবলী কীর্তন, আরতি কীর্তন, ভাগবত কথা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শ্রীমদ্ভাগবত গীতা পাঠ, ধর্মীয় চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও ধর্মীয় নাটক মঞ্চায়নসহ বিভিন্ন মাঙ্গলিক আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে শুরু হয় রথযাত্রার অনুষ্ঠান। রথযাত্রা উপলক্ষে স্বামীবাগ ইসকন আমে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার। আলোচনা শেষে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য সুজিত রায় নন্দী মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে রথযাত্রা উৎসবের উদ্বোধন করেন। পরে ইসকন মন্দির থেকে বর্ণাঢ্য সাজে ৩টি বিশাল রথে জগন্নাথ দেব, শুভদ্রা ও বলরামের প্রতিকৃতিসহ বিশাল শোভাযাত্রা বের হয়।
শোভাযাত্রাটি রাজধানীর টিকাটুলি, ইত্তেফাক মোড়, শাপলা চত্বর, দৈনিক বাংলা হয়ে পুরানা পল্টন, প্রেসক্লাব দিয়ে দোয়েল চত্বর ঘুরে টিএসসি ও জগন্নাথ হলের সামনে দিয়ে পলাশী হয়ে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এসে শেষ হয়। রথযাত্রা উপলক্ষে ঢাকেশ্বরী মেলা প্রাঙ্গণসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে নানা ধর্মীয় আয়োজন ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়। শ্রী শ্রী রাধাগোবিন্দ জিউ মন্দির ও শ্রী শ্রী রাধাকান্ত জিউ মন্দিরও যৌথভাবে উৎসব উদযাপনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
দেশের বিভিন্ন স্থানসহ গাজীপুরে ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী মাণিক্য মাধবের রথযাত্রা ও রথমেলা পালিত হয়েছে। ১৮ জুলাই সকালে জেলা শহরের রথখোলায় রথটানের মধ্য দিয়ে এর উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। ৯ দিনব্যাপী রথযাত্রা ২৬ জুলাই উল্টো রথযাত্রায় মাণিক্য মাধবের নিজ বাড়ি ফেরার মধ্য দিয়ে শেষ হয়। রথযাত্রা উপলক্ষে ১২ দিনব্যাপী রথমেলা শুরু অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় শিশুদের মনোরঞ্জনের জন্য নাগরদোলাসহ নানা রকমের পসরা নিয়ে বসেছে দোকানিরা। হাজারো পুণ্যার্থী এবং সকল ধর্মের মানুষ রথমেলায় অংশ নেয়। দেড়শ’ বছর আগে গাজীপুরের ভাওয়াল রাজারা এ মাণিক্য মাধবের রথযাত্রা ও রথমেলার প্রচলন করেন। এ ছাড়াও সারাদেশে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ২৬ জুলাই উল্টোরথের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা।