নেতা-কর্মীদের আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতির নির্দেশ
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, তিন বছর পূর্ণ করে সরকার চার বছরে পা রেখেছে। আগের নির্বাচনে আমরা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, তার অধিকাংশই পূরণ করেছি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতির চেয়েও বেশি কাজ করেছি। সামনের নির্বাচনের আর বেশি বাকি নেই। এখনকার ‘কঠিন পথ’ পাড়ি দিতে অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে হবে। এখন থেকেই নির্বাচনের কাজ করতে হবে। আমাদের আগামী নির্বাচনী ইশতেহার ঠিক করব। সেগুলো আমাদের এখনই চিন্তা-ভাবনা করতে হবে।
গত ১৪ জানুয়ারি বিকেলে ধানমন্ডিতে তার কার্যালয়ে দলের কেন্দ্রীয় এবং সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাদের সাথে মতবিনিময়ের সময় সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আগামী নির্বাচনের জন্য দলীয় ইশতেহার তৈরির লক্ষ্যে বিষয়ভিত্তিক আলাদা আলাদা সেল গঠন করতে তিনি উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের নির্দেশও দিয়েছেন।
নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলার পাশাপাশি নিজের কার্যালয়ের সবকিছুর বিষয়ে খোঁজখবরও নেন প্রধানমন্ত্রী। কার্যালয় ঘুরে দেখেন এবং স্টাফদের সাথেও কুশলবিনিময় করেন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ অধিকাংশ কেন্দ্রীয় ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সরকারের তিন বছর পার হয়েছে, আমরা চার বছরে পা রেখেছি। সামনে আরও কঠিন সময় মোকাবিলা করতে হবে। তবে আত্মবিশ্বাসের সাথে চলতে হবে, সততা নিয়ে কাজ করতে হবে। মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করতে হবে, মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করতে হবে।
বিএনপি ক্ষমতায় এলেই দেশে খুন-খারাবি বেড়ে যায়। আর আওয়ামী লীগ এলেই উন্নয়ন হয়। তিন বছরে যে কাজ করার কথা ছিল, তার চেয়ে বেশি কাজ আমরা করেছি। আওয়ামী লীগ যা বলে, তা-ই করে। দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনাদের আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ়তার সাথে দেশের জন্য কাজ করতে হবে। দেশের জন্য আত্মত্যাগ করতে হবে।
২০২১ সাল পর্যন্ত ইতোমধ্যে আমরা কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। অনেক কিন্তু হয়ে গেছে। ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে কী কী করণীয় এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নের কাজ চলছে। তিনি বলেন, আমি বিশ্বের যেখানেই যাই অন্য দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানরা বাংলাদেশের ‘দ্রুত উন্নয়ন’ কীভাবে হলো তা জানতে চান।
তিনি বলেন, আমি আমার বাবাকে দেখেছি, বাবার কাছ থেকে শিখেছি। মাকে দেখেও শিখেছি। আমার মাকেও দেখেছি তিনি অনেক আত্মত্যাগ করেছেন। কিন্তু কখনোই তিনি কোনো জিনিসের জন্য আফসোস করেননি। বরং এই দলের জন্য তিনি নিজের গহনাটি পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। সব সময়ই আমার বাবার পাশে পাশে থেকেছেন। প্রতিটি কাজেই তিনি বঙ্গবন্ধুকে সহযোগিতা করেছেন। কাজেই আমিও তো সেই পরিবার থেকে এসেছি। আমাদের কাজই হচ্ছে দেশের মানুষের জন্য কাজ করা।
কেন্দ্রীয় ও উপদেষ্টাদের সাথে বৈঠক : সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাদের সাথে বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী দলের কেন্দ্রীয় ও উপদেষ্টাদের সাথেও আলাদা বৈঠক করেন।
সন্ত্রাস ও গুপ্তহত্যার পথ ছেড়ে গণতন্ত্রে ফিরে আসুন
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তৃতীয় বছর পূর্তির দিন গত ৫ জানুয়ারি সারাদেশে গণতন্ত্রের বিজয় দিবস পালন করেছে আওয়ামী লীগ। এ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সংগঠনের সকল জেলা, মহানগর ও উপজেলা পর্যায়ে সমাবেশ ও বিজয় শোভাযাত্রা কর্মসূচি পালন করা হয়। বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এবং ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে দুটি পৃথক সমাবেশে জনতার ঢল নামে। এ সমাবেশ দুটি থেকে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা সন্ত্রাস-নাশকতা-গুপ্তহত্যা ও জঙ্গিবাদের পথ ছেড়ে গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একই সাথে নেতৃবৃন্দ জনগণকে সাথে নিয়ে সন্ত্রাস-নাশকতা-জঙ্গিবাদ রুখে দিয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
আন্দোলনের নামে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার জন্য খালেদা জিয়াকে জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, সব দিক থেকে ব্যর্থ হয়েও ষড়যন্ত্রের পথ থেকে সরে আসেনি একাত্তরের পরাজিত শত্রুদের পেতাত্মা ও তাদের দোসর বিএনপি; কিন্তু দেশের জনগণ আর কোনো দিন কাউকে গণহত্যা চালাতে দেবে না, উন্নয়ন-অগ্রগতির চাকা স্তব্ধ হতে দেবে না।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি হাজী আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এমপি। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপদেষ্টাম-লীর সদস্য মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক এমপি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি, একেএম এনামুল হক শামীম, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস এমপি, যুবলীগের ইসমাইল চৌধুরী স¤্রাট প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ।
এদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম রহমতউল্লাহ এমপির সভাপতিত্বে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন এমপি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি এমপি, জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপি, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. রোকেয়া সুলতানা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি, দলের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা এমপি, আসলামুল হক আসলাম এমপি, কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
বিএনপি এখন গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারবিরোধী আন্দোলন করে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি-জামাত এখন গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে। আসলে মানুষ হত্যা করা বিএনপি-জামাতের চরিত্র। তারাই তো বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দায়মুক্তি দিয়েছিল। তাই তাদের ব্যাপারে দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ আমরা জানি না, ওদের (বিএনপি-জামাত) আরও কী পরিকল্পনা আছে। গত ৪ জানুয়ারি সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের এক যৌথসভায় সূচনা বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চরিত্রটাই হচ্ছে অপরাধীদের মদত দেওয়া, লালন-পালন করা।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এখন থেকেই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে, জনগণের কাছে যেতে হবে। নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে সরকারের উন্নয়ন ও সফলতাগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। একই সাথে বিএনপি-জামাত জোটের নাশকতা-সন্ত্রাস, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা এবং জঙ্গি-সন্ত্রাসী কর্মকা-গুলোও দেশবাসীর সামনে তুলে ধরে জনসচেনতা সৃষ্টি করতে হবে।
৪ সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ
অবশেষে আওয়ামী লীগের চার সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ১৬ জানুয়ারি বিকেলে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি সহযোগী সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে আগামী ৪ মার্চ মহিলা আওয়ামী লীগ, ১১ মার্চ যুব মহিলা লীগ, ১৯ মার্চ তাঁতী লীগ ও ২৯ এপ্রিল আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করেন। এক যুগেরও বেশি সময় পর এসব সংগঠনের সম্মেলন হতে যাচ্ছে।
বৈঠকে অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান এমপি, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা এমপি, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুসারে বর্তমানে ৭টি সহযোগী সংগঠন রয়েছে। এর মধ্যে ২০০৩ সালের ১২ জুলাই মহিলা আওয়ামী লীগ, ২০০৪ সালের ১৫ মার্চ যুব মহিলা লীগ, ২০০০ সালের ২০ জুলাই আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ এবং ২০০৪ সালের ৮ আগস্ট তাঁতী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় কাছাকাছি সময়ে সম্মেলন অনুষ্ঠানের পর ২০১২ সালের ১১ জুলাই স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ১৪ জুলাই যুবলীগ এবং ১৯ জুলাই কৃষক লীগ আরেক দফা কেন্দ্রীয় সম্মেলন করে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করে।
খুলনা বিভাগের প্রতিনিধি সভা
খুলনা বিভাগের বিশেষ প্রতিনিধি সভার মধ্য দিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার কার্যক্রম শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। গত ১৯ জানুয়ারি বেলা ১১টায় নগরীর একটি ক্লাবে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এ ধরনের সভা এই প্রথম। এরপর পর্যায়ক্রমে প্রতিটি বিভাগে এই প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় প্রধান বক্তা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এমপি বলেন, বিএনপি সরকার আমলে ১২৯টি মৌলবাদী জঙ্গি সংগঠনের উত্থান হয়েছিল। রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় ওই সব সংগঠন জঙ্গি কর্মকা- পরিচালনা করেছে। উন্নয়নের কোনো কাজ তারা দেশের জন্য করেনি। আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার যখন দেশকে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছে তখন তাদের গাত্রদাহ হচ্ছে। তারা দেশকে নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করতেও দ্বিধাবোধ করছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান এমপির সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন দলের সভাপতিম-লীর সদস্য পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য। এ ছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন, কেন্দ্রীয় সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপি, এসএম কামাল হোসেন, পারভীন জামান কল্পনা, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ হারুন রশীদ, মহানগর সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক এমপি, জেলা সাধারণ সম্পাদক এসএম মোস্তফা রশিদী সুজা এমপি, নগর সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান এমপি, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক এমপি, খুলনা বিভাগের সংসদ সদস্যরা, খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন।
রংপুর বিভাগীয় কর্মী সভা
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকার শুধু রুটিন দায়িত্ব পালন করবে। উন্নয়নমূলক কোনো কাজে সরকার অংশগ্রহণ করবে না। আমরা প্রমাণ করব, আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মতো মডেল নির্বাচন। গত ২৯ জানুয়ারি রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আওয়ামী লীগের রংপুর বিভাগীয় কর্মী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
সার্চ কমিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার প্রতি আওয়ামী লীগের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। রাষ্ট্রপতির প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। রাষ্ট্রপতির সাথে সংলাপ করার পর বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ও মির্জা ফখরুল খুব খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি যখন সার্চ কমিটি দিলেন তখন তারা বেজার হলেন। সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপির মধ্যেও দ্বিমত রয়েছে।
দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এখন থেকে ভাষণ কম অ্যাকশন বেশি। মঞ্চে বিশেষণ ও বক্তা কমান। নেতাদের সকাল ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে ঘুম থেকে ওঠার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সুশৃঙ্খল আওয়ামী লীগ চাই। এখন বিলবোর্ডে বাড়াবাড়ি নেই। কোনো নেতার ছবি নেই। এখন পোস্টার-বিলবোর্ডসহ সব ধরনের প্রচারণায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি থাকবে।
তিনি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার মতো মানুষের ভালোবাসা অর্জন করুন। রাজনীতিক জীবনে মানুষের ভালোবাসা ছাড়া বিকল্প কিছু নেই। তিনি নিজের উদাহরণ টেনে বলেন, আদর্শের রাজনীতি করলে একদিন না একদিন মূল্যায়ন পাবেন। ত্যাগের মূল্যায়ন হবে। যেমন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মূল্যায়ন করে দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগে দিন দিন নেতা বাড়ছে কর্মী কমছে। তাই কর্মী বাড়াতে হবে। নেতা উৎপাদনের কারখানা দরকার নেই, কর্মী উৎপাদনের কারখানা দরকার।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপির সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন উপদেষ্টাম-লীর সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন, চৌধুরী খালেকুজ্জামান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এমপি, কোষাধ্যক্ষ এইচএন আশিকুর রহমান এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক এমপি, বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি ও খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, অর্থবিষয়ক সম্পাদক টিপু মুন্সী এমপি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য মির্জা আজম এমপি, এসএম কামাল হোসেন, হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদে পল্টু, বাসেত ও মুকুল বোস
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে মনোনয়ন পেলেন প্রবীণ নেতা মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট বাসেত মজুমদার। আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিল কর্তৃক প্রদত্ত ক্ষমতাবলে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা তাদের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে মনোনয়ন প্রদান করেছেন।
এরপর গত ৩০ জানুয়ারি মুকুল বোসকে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয়। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সংখ্যা দাঁড়াল ৪১-এ।
আবদুল বাসেত মজুমদার বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান। ১৯৬৬ সাল থেকে আইন পেশা শুরু করেন তিনি। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান, সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক, বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের সভাপতি, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও দু-দুবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সিনিয়র আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার।
অন্যদিকে মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রবীণ এই রাজনীতিক আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও ক্রীড়া সংগঠনের সাথে তিনি যুক্ত। বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মুকুল বোস বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।