প্রধানমন্ত্রীর ‘প্রাক-নির্বাচনী’ প্রচার শুরু হচ্ছে সিলেটে আজ জনসভা
চলতি বছরের শেষদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এর আগে সিলেটসহ পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন হওয়ার কথা আগামী মার্চ-এপ্রিল মাসে। রাজনৈতিক দলগুলো ২০১৮ সালকে দেখছে ‘ভোটের বছর’ হিসেবে। এই ভোটযুদ্ধে জয়ী হতে সবার আগে প্রচারে নামছে আওয়ামী লীগ। ইতিমধ্যে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা জেলাভিত্তিক সাংগঠনিক সফর শুরু করেছেন। এবার ‘প্রাক-নির্বাচনী’ প্রচারে নামছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অতীতের ধারাবাহিকতায় পুণ্যভূমি সিলেট থেকে আজ মঙ্গলবার আগামী জাতীয় সংসদ ও সিটি নির্বাচনের প্রচার শুরু করবেন প্রধানমন্ত্রী। চলতি মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০১৬ সালের ২১ জানুয়ারি সিলেটে সর্বশেষ জনসভা করেন শেখ হাসিনা। ওই সভায় তিনি একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রথমবারের মতো নৌকা মার্কায় ভোট চান।
নগরীর ঐতিহাসিক আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের এ জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করার পরিকল্পনায় ক’দিন ধরেই নানা তৎপরতা চালাচ্ছে সিলেট আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ব্যানার-ফ্যাস্টুন-বিলবোর্ড-পোস্টারে ছেয়ে গেছে প্রধানমন্ত্রীর জনসভাস্থলসহ পুরো নগরী। গতকাল সোমবার বিকেলে জনসভাস্থলের আশপাশে সাঁটানো সকল বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন সরিয়ে ফেলা হয়। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবিব সমকালকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মকর্তাদের নির্দেশে পুলিশের সহায়তায় করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা সব সরিয়ে নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সিলেট সফর ও জনসভাকে সামনে রেখে নগরীতে চারস্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে বিমানে সিলেটে পৌঁছে তিনি পর্যায়ক্রমে হজরত শাহজালাল (রহ.), হজরত শাহপরাণ (রহ.) ও গাজী বুরহান উদ্দিনের মাজার জিয়ারত করবেন। এরপর সিলেট ভিআইপি সার্কিট হাউসে জোহরের নামাজ, মধ্যাহ্নভোজ ও বিশ্রামের পর বেলা পৌনে ৩টায় তিনি জনসভাস্থলে আসবেন। এ জনসভা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের সিলেট বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের শো-ডাউনে পরিণত হবে বলে মনে করছেন সকলে।
প্রধানমন্ত্রী এই প্রাক-নির্বাচনী জনসভায় আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশনে দলের মেয়র প্রার্থীর ব্যাপারে ইঙ্গিত দিতে পারেন বলে মনে করছেন কেউ কেউ। এ প্রসঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ সমকালকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় সব সময় দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী অতীতের এই নিয়ম এবারও বহাল রাখবেন বলে আশা করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে সিলেট নগরকে উৎসবের রঙে সাজিয়ে তোলা হয়েছে; নগরজুড়ে শতাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। গতকাল দিনভর জনসভাস্থলের আশপাশে উৎসুক জনতার ভিড় দেখা গেছে।
প্রধানমন্ত্রী জনসভায় বক্তৃতার আগে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের একপাশে একইসঙ্গে সিলেটের ৩৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। ইতিমধ্যে নৌকার আদলে নির্মিত মঞ্চের দক্ষিণ পাশে এসব প্রকল্পের অস্থায়ী উদ্বোধনী-ভিত্তিপ্রস্তর ফলকগুলো সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হজরত গাজী বুরহান উদ্দিনের (রহ.) মাজার উন্নয়ন, মহিলা ইবাদতখানা নির্মাণ ও সৌন্দর্য বর্ধন এবং মাজারের প্রধান রাস্তা প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন, সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছয়তলা বিশিষ্ট নতুন একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর অফিস, সিলেট বিভাগীয় ও জেলা এনএসআই কার্যালয় ভবন, দুটি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, সিলেট সিটি করপোরেশন ভবনসহ ২০টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন কার্যক্রম।
এছাড়া হজরত শাহজালাল (রহ.) মহিলা ইবাদতখানা ও অন্যান্য উন্নয়ন কার্যক্রম, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেগম ফজিলাতুন্নেছা হল নির্মাণ, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চতুর্থ তলা থেকে দশম তলার ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ, মেডিকেল কলেজে ছাত্র, ছাত্রী ও নার্সিং হোস্টেল, সিলেটে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতাল, সিলেট পুলিশ লাইনে এসএমপির ব্যারাক ও অস্ত্রাগার নির্মাণ, কোতোয়ালি থানার ডরমিটরি, তামাবিল ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ভবন, রেঞ্জ রিজার্ভ পুলিশ লাইনস নির্মাণ, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য হোস্টেল নির্মাণ, সম্প্রসারণসহ ১৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিলেট মহানগর সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, সিলেটের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী নিজেই আন্তরিক। তিনি বলেন, সিলেটের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে কিছু চাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। প্রধানমন্ত্রীকে সম্মান জানিয়ে আজকের জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।