প্রতিবেদন

বই উৎসব উদযাপিত

প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ৪ কোটি ২৬ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য ৩৬ কোটি ২১ লাখ নতুন ঝকঝকে পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হয়েছে। দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের হাতে টানা অষ্টমবারের মতো নতুন এই বিনামূল্যের পাঠ্যবই তুলে দেওয়ার ব্যতিক্রমী উৎসব সম্পন্ন হয়েছে। ১ জানুয়ারি সকাল ৯টায় রাজধানীর আজিমপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি হিসেবে ‘জাতীয় পাঠ্যপুস্তক উৎসব-২০১৭’ উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে আলাদা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উৎসব শুরু করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কেন্দ্রীয়ভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবারও আলাদা আলাদা স্থানে পাঠ্যপুস্তক উৎসব পালন করেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল প্রাঙ্গণে করলেও এবারই প্রথম স্কুলের বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে বই উৎসবের আয়োজন করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই উৎসবে যোগ দিয়েছে ঢাকার ৩১টি বিদ্যালয়ের ৫ হাজার শিক্ষার্থী। অন্যদিকে সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক উৎসবের উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমপি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এমপি।
শিক্ষার মানোন্নয়নে এগিয়ে আসুন : প্রধানমন্ত্রী
18প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনকারীদের উদ্দেশে বলেছেন, সমালোচনা না করে শিক্ষার মানোন্নয়নে এগিয়ে আসুন। সমালোচনা করেন অথচ মানের মাত্রাটা কী সেই ব্যাখ্যা তো আপনাদের কাছ থেকে এখনও পাইনি। যদি পেতাম তা হলে খুশি হতাম। মনে রাখবেন কোনো কিছুই রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব নয়। আগে আপনারা (সমালোচকবৃন্দ) ভলান্টিয়ার সার্ভিস দিন, সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য কিছু করুন, শিক্ষা দিন। তারপর কথা বলুন। সমালোচনা না করে সরকারকে সহযোগিতার মাধ্যমে দেশের শিক্ষা খাতকে এগিয়ে নিতে হবে।
১ জানুয়ারি বই উৎসব উপলক্ষে গত ৩১ ডিসেম্বর সকালে গণভবনে এক অনুষ্ঠানে সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২০১৭ শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। নতুন বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিতে গত কয়েক বছরের মতো এবারও উৎসবের আগের দিন বিনামূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী। সকালে গণভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্কুলপড়–য়া শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, বছরের শুরুতেই নতুন বই হাতে পাওয়ায় লেখাপড়ায় আগ্রহের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঝরে পড়ার হার কমে আসছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মান সবসময় পরিবর্তনশীল। বিশ্বের সবকিছু পরিবর্তনশীল। আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষাসহ সব ধরনের শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক চর্চার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি, যাতে আমাদের শিশুদের মেধা-মননের বিকাশ হয়। শিক্ষার্থীরা সব কিছুতেই পারদর্শী হয়ে উঠবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নতি একদিনে সব হয়ে যায় না। সেজন্য কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আমরা চাই সব ছেলেমেয়ে পরীক্ষা দেবে, এ জন্যই পঞ্চম-অষ্টম শ্রেণিতে পিইসি এবং জেএসসি পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছি। অথচ এই দুই পরীক্ষা নিয়েও অনেকে কথা বলেন। তিনি বলেন, পিইসি-জেএসসির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা-ভীতি কমছে। এতে তাদের মধ্যে সাহস জন্মাচ্ছে। দিন দিন রেজাল্টও ভালো হচ্ছে, পাসের হারও বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা সময় ছিল যখন ক্লাস থেকে কিছু ছেলেমেয়ে বেছে নিয়ে তাদের প্রস্তুত করা হতো বৃত্তির জন্য। তাদের ভালো টিফিন দেওয়া হতো, সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা সেটি পেত না। বৃত্তির জন্য শিক্ষকরা যাদের বাছলেন না, তাদের মধ্যেও তো মেধাবী থাকতে পারে। কেউ বৃত্তি পাবে, বাকিরা বঞ্চিত থাকবেÑ এ পদ্ধতি ঠিক করতেই পঞ্চম শ্রেণি ও অষ্টম শ্রেণিতে পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শিক্ষাকে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, তার সরকার এ লক্ষ্য অর্জনে বদ্ধপরিকর। পাশাপাশি জেন্ডার সমতা অর্জনেও কাজ করছে আওয়ামী লীগ সরকার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ সত্যিই একটি আনন্দের দিন। আজ আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়েছি। আপনারা জানেন, আমরা সরকার গঠনের পর থেকেই মানুষের মৌলিক অধিকার সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। কারণ আমরা বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আর সেই দারিদ্র্যের মুক্তি ঘটবে যদি আমরা সকলকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে পারি। আমি মনে করি, শিক্ষাই হচ্ছে দারিদ্র্য মুক্তির মূল ভিত্তি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত আমরা ২৪৩ কোটি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করেছি। এ বছরও ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার ২৪৫টি বই প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতগুলো বই একসাথে ছাপানো এবং বিতরণ করা একটি বিশাল ব্যাপার। এমনকি ২০১৪, ২০১৫ এবং ২০১৬ বিএনপির আগুন সন্ত্রাসের মাঝেও আমরা জানুয়ারি মাসের প্রথম দিনটিতেই সারাদেশের শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিতে সমর্থ হয়েছিলাম। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তার এই উদ্যোগ ব্যর্থ করার জন্য ছাপাখানা পুড়িয়ে দেওয়াসহ নানাবিধ ষড়যন্ত্রের কথাও উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী ঢাকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের কয়েকজন শিক্ষার্থীর পাশাপাশি দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পুস্তক তুলে দেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী তার দুই নাতনি শ্যামা (সায়মা হোসেন পুতুলের মেয়ে) এবং তানিতার হাতে প্রথম শ্রেণির বই তুলে দেন। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান এমপি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কর্মসূচি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে ‘বিশেষ উত্তরীয়’ পরিয়ে দেন শিক্ষামন্ত্রী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর হাতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের ব্রেইল বই এবং ৫টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষার বই এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি সংবলিত একটি অ্যালবাম প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *