বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে আজকের বাংলাদেশ- কেয়া চৌধুরী
আজ বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে ১৯৭২ সালের ৮ই জানুয়ারি মুক্ত হন, প্রত্যাবর্তন করেন স্বদেশের মাটিতে ১০ই জানুয়ারি ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, সাড়ে ৭ কোটি বাঙালি ফিরে পায় তাদের জনককে। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর, বাঙালি তার বিজয় অর্জন করে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের চাপে পাকিস্তানি স্বৈরাচারী শাসক গোষ্ঠী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিঃর্শত মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। একটি জাতির বীরত্বপূর্ণ জন্ম এবং একজন আত্মত্যাগীর জাতির জনকের অভিষেক সেদিন বাঙালিকে বিশ্বের কাছে আপন মহিমায় মহিমান্বিত করে তুলেছিল। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
তিনি “যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা” করার ডাক দেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করতে জনগণকে আহ্বান জানালে, নজিরবিহীন ত্যাগ ও সাহসিকতায় বীর বাঙালি জীবনের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনে রক্তিম স্বাধীনতা। এটিই ছিল, বঙ্গবন্ধু তার স্বপ্নকে বাস্তবায়নে স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের প্রথম পদযাত্রা। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে আবারো বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখানো শুরু করলেন। যে স্বপ্নের নাম বঙ্গবন্ধুর মুখে উচ্চারিত হওয়া ‘সোনার বাংলা’। ‘সোনার বাংলা’ গড়ার লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর জাতীয় সংসদে সংবিধান পাস হয়। আর এই সংবিধান ছিল বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর রক্ষাকবচ। অনাগত নতুন প্রজন্মকে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার জন্য, এই সংবিধান মূল ভিত হিসেবে দাঁড়াবার প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান। ১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর সংবিধান বিলের উপর বঙ্গবন্ধু বলেন, “বাংলার মানুষের কাছে ওয়াদা করেছিলাম বাংলার মানুষকে মুক্ত করতে হবে, বাংলার মানুষ সুখী হবে, বাংলার সম্পদ বাঙালিরা ভোগ করবে। সেই জন্য সংগ্রাম করেছিলাম”। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল দুঃখী বাঙালির মুখে হাসি ফোটানো। সেই স্বপ্ন পূরণে ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে একটি শোষণহীন সমাজভিত্তিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করতে বঙ্গবন্ধু সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন। শোষণহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা ছিল; বঙ্গবন্ধুর অনুভূতিতে শহীদের রক্তদানের সার্থক বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর বিশ্বাসের ‘গণতন্ত্র’ ছিল সাধারণ মানুষের কল্যাণ সাধন করা। আর বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে জনগণের কথা বলে। জনগণের কল্যাণে কাজ করে। এটাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক রাজনৈতিক দর্শন। কারণ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কোনো সামরিক জান্তার পৃষ্ঠপোষকতায় বা ‘মার্শাল ল’ জারি করে বসিয়ে দেয়া রাজনৈতিক দল নয়। শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ অসাম্প্রদায়িক মানসিকতায়, বাংলাদেশের মানুষের মনের আকাঙ্ক্ষার অনুভূতিকে সম্মান জানিয়ে জনগণের মৌলিক অধিকার নিয়ে কাজ করা গণমানুষের দল। দেশের মানুষের ক্ষতি হয়, দেশের স্বার্থ নষ্ট হয়, এমন কোনো কাজ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ করতে পারে না। কারণ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে। মাত্র নয় মাসের মাথায়, জনগণকে পবিত্র সংবিধান উপহার দিয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আদর্শ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ। বাংলার কৃষ্টি, বাংলার ঐতিহ্য, বাংলার রক্ত দিয়ে লেখা-আমাদের বাংলা জাতীয়তাবাদ। আর সেই কারণে, আওয়ামী লীগের ধারাবাহিক রাজনীতি বঙ্গবন্ধু কন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে জনগণকে এগিয়ে চলার শক্তি যোগাচ্ছে। উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় লাল সবুজের নিশানা নিয়ে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সিঁড়ি’ বেয়ে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আজকের ১৬ কোটি জনগণের আস্থা ও সমর্থনের প্রতীক হয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা। তারই হাত ধরে নিশ্চিতভাবে, বাংলাদেশ ২০৪১ সালের আগেই উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পরিণত হবে। আত্ম সম্মানবোধ নিয়ে আমাদেরকে বায়ান্নোর ও একাত্তরের অর্জিত গৌরবের পথ ধরে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আর এটি সম্ভব হতে পারছে, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ধারাবাহিক রাষ্ট্র পরিচালনা। ১৯৯৬ সাল থেকে শেখ হাসিনা সরকার জনকল্যাণে নানামুখী কর্মসূচি হাতে নেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায়; দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই, ব্যক্তি শেখ হাসিনা, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা সর্বোপরি বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার এক ও অভিন্ন লক্ষ্য। মানবসম্পদ উন্নয়ন সহ সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের মানুষের আয় বেড়েছে, সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। শিক্ষা, প্রযুক্তি, গবেষণা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য, অবকাঠামোর উন্নয়নে বাংলাদেশের মানুষের আত্মবিশ্বাস তৈরিতে দিনে দিনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশ আজ নিজস্ব অর্থায়নে, পদ্মা সেতুর মতো দীর্ঘতম সেতু নির্মাণ করার সাহস নিতে পারে। একটি মানুষও গৃহহীন না থাকার প্রত্যয়ে, “আশ্রয়ণ প্রকল্প”, “একটি বাড়ি একটি খামার” দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাচ্ছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বালিয়ে, শেখ হাসিনার সরকার প্রতিটি নাগরিকের মনে “আকাঙ্ক্ষার প্রদীপ” জ্বালিয়ে তুলছে। নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বে প্রশংসিত বাংলাদেশ। প্রতিটি নারীকে আরো বেশি এগিয়ে যেতে সাহস যোগাচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ঘরের কাছে স্বাস্থ্যসেবা, ৩২ পদের বিনামূল্যে সরকারি ওষুধ; বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭১ বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে। বছরের পহেলা দিন, শেখ হাসিনার সরকার শিক্ষার বৈষম্য দূরীকরণে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিচ্ছে, ৩৬ কোটি ২২ লাখ নতুন বই। একাত্তরে দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু শূন্য হাতে দেশ গড়ার কাজ শুরু করেছিলেন। জনগণের অন্তরে আদর্শের প্রদীপ জ্বালিয়ে, সকলকে নিয়ে, একটি নতুন রাষ্ট্র গঠনের প্রতিটি স্তরে স্তরে বীজ বপন করেছিলেন, উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। কিন্তু ৭৫-এর ১৫ই আগস্ট বিষবাষ্পে “সোনার বাংলাদেশ”-এর অগ্রগতিকে অঙ্কুরে নষ্ট করে দেয়, খলনায়কের দায়িত্বে থাকা অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী সামরিক সরকার জিয়াউর রহমান। কণ্ঠরুদ্ধ ছিল “জয়বাংলা”। কফিনবন্দি হয়েছিল, “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি”। শহীদের রক্তে ভেজা অর্জিত “লাল সবুজ” পতাকা জঙ্গিবাদের কালো নিশানার আড়ালে; যুদ্ধাপরাধীদের উত্থানের অধ্যায়। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়, পুরস্কারে, পদ-পদবিতে, রঙ্গমঞ্চে মুখোশধারী নেতা-পাতি নেতার মিথ্যাচারের “রাজনীতির মহোৎসব”। এ ছিল অন্ধকার গলিতে প্রবেশের এক “অচেনা বাংলাদেশ”! দিশাহারা, আদর্শহীন, কঙ্কালসার, মেধাহীন বেড়ে ওঠা এক নতুন প্রজন্ম। যারা জাতীয় সংগীতের মূর্ছনায় অশ্রুসিক্ত হয় না। যাদের কালিমাযুক্ত হাত বাংলাদেশকে কলঙ্কিত করে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শুনে যে প্রজন্মের বুক গর্বে ভরে ওঠে না! বঙ্গবন্ধুর খুনি আর যুদ্ধাপরাধীরা যখন বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেয়! সেই দৃশ্য দেখে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ স্বজনদের চোখে অশ্রুর বদলে রক্ত ঝরে! সেই অন্ধকার বাংলাদেশকে; ২১ বছরের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা শেকড়ের কাছে ফিরিয়ে আনেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে গণতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার এই বিজয়; আবারো বাংলাদেশকে নতুন করে স্বপ্ন দেখার সাহস যোগায়। বাঙালি জাতি আবার ঘুরে দাঁড়ায়। শুরু হয় বাংলাদেশের নতুন গল্প। এই গল্প জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতে লাল-সবুজের নিশানা নিয়ে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে যাওয়ার অধ্যায়।
জনগণকে সরকারের কাজে সম্পৃক্ত করে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে “স্বচ্ছতা” “জবাবদিহিতা” ও জনগণের প্রতি “দায়বদ্ধতায়” আওয়ামী লীগ সরকার বদ্ধপরিকর। আর, এই এগিয়ে যাওয়া হবে; বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে, আমাদের এগিয়ে যাওয়ার “কাঙ্ক্ষিত উন্নত সোনার বাংলাদেশ”।
সংসদ সদস্য ও সমাজকর্মী