বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের অনন্য স্বীকৃতি
বাংলাদেশ বিশ্বকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপহার দিয়েছে। আমরা গর্বের সঙ্গে উচ্চারণ করি- ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা, বায়ান্ন থেকে একাত্তর। ইতিহাসের কী বিস্ময়কর পরম্পরা- বিশ্বকে আবার বাংলাদেশ উপহার দিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সে সময়ের রেসকোর্স ময়দানে প্রদত্ত ঐতিহাসিক ভাষণ, যেখানে উচ্চারিত হয়েছিল কবি নির্মলেন্দু গুণের ভাষায়, ‘অমর কবিতাখানি- এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ কালজয়ী এ ভাষণে জনগণকে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান ছিল, দিকনির্দেশনা ছিল। প্রকৃত অর্থেই এ ভাষণ ছিল ইলেকট্রিফাইং, যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুকে মোকাবেলার জন্য সাড়ে সাত কোটি মানুষকে উজ্জীবিত করেছিল, অনুপ্রাণিত করেছিল। ভাষা ছিল সাবলীল, একই সঙ্গে জাদুবিস্তারি। তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে বলেছেন, একই সঙ্গে বলেছেন মুক্তির কথা- শোষণ-বঞ্চনা-নিপীড়ন থেকে মুক্তি আমাদের পেতেই হবে। মঙ্গলবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউনেস্কো এ ভাষণকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এখন থেকে তা গণ্য হবে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রস্তাবগুলো দু’বছর ধরে পর্যালোচনার পর এ মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে বিশেষজ্ঞ কমিটি। বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় সুনিশ্চিত ও ত্বরান্বিত করেছিল। ৩০ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম অমরগাথা বিশ্বের মুক্তিকামী জনগণের জন্য অনুপ্রেরণা- এটা স্বীকৃত। স্বাধীনতাকামী বিশ্ব মর্যাদার আসনে বসিয়েছিল। ইউনেস্কো বিশ্বপ্রামাণ্য ঐতিহ্যের তালিকায় এ ভাষণ অন্তর্ভুক্ত করায় বিশ্ববাসী এখন আমাদের মহান মুক্তি ও স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং তার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানার সুযোগ পাবে। একই সঙ্গে তারা জানবে, আমাদের প্রিয় স্বদেশ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের সোনার বাংলা বাংলাদেশকে- যে দেশের জনগণ একসময়ে হতদরিদ্র, উন্নত বিশ্বের কিছু পণ্ডিতের কাছে ‘বাস্কেট কেস’ হিসেবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও অবজ্ঞার শিকার- ইতিমধ্যেই নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের সারিতে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। সামনে রয়েছে উন্নত বিশ্বের সারিতে উন্নীত হওয়ার এবং একই সঙ্গে মুক্তির লক্ষ্য অর্জনের সংগ্রাম- এ ক্ষেত্রেও প্রেরণা হয়ে আছেন এবং থাকবেন ৭ মার্চের ভাষণের রৃপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তবে এটাও মনে রাখা চাই- বিশ্ব তার দায়িত্ব পালন করেছে। এখন আমাদের দায়ভার- বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা কায়েমে সচেষ্ট থাকা, এ পথে যত বাধাবিঘ্ন আসুক, তা জয় করে দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে যাওয়া।