বঙ্গবন্ধু শুধু একটি নাম

বঙ্গবন্ধু : তাঁর ভাষা ও মনোজগৎ

১৫ আগস্ট- বালাদেশ, বাঙালি এবং বিশ্ববাসীর কাছে শোকাবহ একটি দিন। ওই দিনের কষ্ট, যন্ত্রণাকে ব্যক্তিগতভাবে আমি কোনো নির্দিষ্ট সময়ের সীমানায় আনতে চাই না। যে-দুঃখ, হারানোর ক্ষত তৈরি করা হয়েছে, তা সব সময় মনে রাখতে হয়। যে বা যারা হারিয়েছে তারাই বোঝে এর বেদনার ভার কতটুকু। বঙ্গবন্ধু নির্মিত এ-দেশে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাঁকেই সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে।

প্রচলিত হত্যাকাণ্ডের উদাহরণ পৃথিবীতে অনেক রয়েছে। সেক্ষেত্রে শুধুই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বা নেতাকে হত্যা করা হয়েছে, যা আমরা লক্ষ্য করেছি। মূলত, সব হত্যাকাণ্ডই নির্মমতাকে ধারণ করে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ঘটনা আরও বেশি ব্যতিক্রম। এদিনেই তাঁর শিশুপুত্র রাসেলকেও হত্যা করা হয়। যেকোনো হত্যার ঘটনাকে বিশেষণে বিশেষায়িত করা না গেলেও বলা হয়ে থাকে ১৫ আগস্ট ঘটে ইতিহাসের জঘন্যতম, নির্মম এ-হত্যাকাণ্ড। অন্যদিকে কেউ কেউ বলে থাকেন যে, কিছু বিপথগামী সৈনিক এ-হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়- বিপথগামী শব্দের ব্যবহার প্রোপাগান্ডা মাত্র। চিন্তা-ভাবনার ক্ষেত্রে যারা অনগ্রসর আবার প্রকাশ্যে এ হত্যাকে সমর্থন করতে পারে না, তারা ইনিয়েবিনিয়ে, পরোক্ষে অনেক কথা বলতে চেষ্টা করে। অপরাধ চেপে দেওয়া এবং আদর্শিক সংঘাতের বিষয় সরিয়ে দিতে নতুন গল্পের অবতারণা প্রায়ই লক্ষণীয়। আমাদের মনে হয় বিশ্বের অনেক জায়গায়, অমূলক কথা বলার চর্চা চলমান আছে যুগ যুগ ধরে। কিছু বিবেচনা ও সময় নিয়ে থেমে যদি এ-হত্যাকা-কে নিয়ে ভাবি, খুঁজে দেখি সমকালীন রাজনীতি ও পরিবেশ, তাহলে প্রচারণামূলক এ-কথাটির সত্যতা থাকে না। এটি নিছক বিপথগামী সৈনিকদের স্খলন নয়। ভাবতে হয় আরও গভীরে, অতলে। তরল আড্ডা ও রাজনীতির বিতর্কে, জ্ঞানচর্চাহীন রাজনীতির মাঠে নানাকথা বলা যায়। মুখরোচক প্রচার ও বিজ্ঞাপন মানুষকে আপাত আকৃষ্ট করে। এর মধ্যে অনেক ক্ষতি হয়ে যায়, তা পূরণ করা হয়ে ওঠে দুঃসাধ্য। যা আমাদের হয়েছে। আমাদের ব্যর্থতার দায়ভার আমাদেরই বহন করতে হবে।

বাইরে তো রয়েছেই, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণকারী অনেকেই এ-বিষয়টির গভীরে গিয়ে ভাবেন না। যারা হত্যাকারী এবং তাদের সমর্থক ও  শুভাকাঙক্ষীদের ব্যক্তি-আদর্শ, বিশ্বাস, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি নির্দেশ করে স্পষ্টভাবে-  এ-হত্যাকাণ্ড সাধারণ রাজনৈতিক ঘটনা নয়। এটি একটি ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রকেন্দ্রিক প্রক্রিয়ার পরিণাম। যে-মানুষটি পরম মমতায় জাতিকে ভালোবাসে, সে-মানুষ দেশের প্রতিপক্ষ হতে পারে না। বলা বাহুল্য যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতাউত্তরকালে দেশগড়ার সংগ্রামে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে চেষ্টারত ছিলেন। বিশ্লেষণের প্রয়োজনই হয় না এ-কারণে, যে-আদর্শিক বিশ্বাস থেকে এ হত্যাকাণ্ড, এসব বিষয়ে হত্যাকারীরা বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে প্রকাশ্যে বলেছে। তারা কখনওই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বপ্ন, আকাক্সক্ষার সাথে নিজেকে মিলাতে পারেনি।

sopon-nath-2ধরা যাক, বিশ্বাসঘাতক খন্দকার মোশতাক আহমদের কথা। যদিও সে বঙ্গবন্ধুর দলে ও সাথে ছিল; কিন্তু সে কখনওই সততার সাথে বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করেনি। তা অবশ্য স্পষ্ট করে জানা যায় আরও পরে। অর্থাৎ, আমরা যে-কথা বলার জন্য মোশতাকের প্রসঙ্গ এনেছি তা হলো- বঙ্গবন্ধু ও তাঁর আদর্শিক অবস্থানের বিষয়ে এরা কেউ স্পষ্ট ছিল না। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর জনসম্পৃক্ততার ভয়ে মোশতাকের মতো ব্যক্তিরা কেউই প্রকাশিত হয়নি। তারা ব্যক্তিস্বার্থে বঙ্গবন্ধুর দলে যুক্ত ছিল, দেশসেবার উদ্দেশ্যে নয়। অবশ্য মোশতাকের গোপন যোগাযোগের বিষয়টি ১৯৭১-এর অক্টোবরেই ফাঁস হয়ে যায় এবং তাঁকে কার্যত গৃহবন্দি করে রাখা হয়। কলকাতায় মোশতাক ছিলেন যোগাযোগের মধ্যমণি। (মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকাণ্ড, পৃ. ২৮৩) ১৯৭৫ সালে তাদের এ-ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিক কার্যক্রমে তারা সফল হয়। ফলে, আমরা হারিয়েছি ইতিহাসের মহান নেতা, মহানায়ককে। শুধুই ব্যক্তি শেখ মুজিবুর রহমানকে হারাইনি। আমরা কত যে পিছিয়ে গেলাম-এর প্রায়শ্চিত্ত করতে কত যুগ যে যায়, তা এখনই বলা দুরূহ। এ-পাপ থেকে আমরা নিষ্কৃতি পাব কিনা, তা জানা নেই। কারণ, এ-বিশ্বাসঘাতকতার কোনো প্রতিকার হয় না। যিনি জীবনের সর্বস্ব সুখ, স্বাদ বিসর্জন দিয়ে দেশের স্বাধীনতা এনে দিলেন। একটি সুন্দর সমৃদ্ধ দেশ গড়তে সবাইকে বিশ্বাস করেছেন। জাতিরাষ্ট্র নির্মাণে সচেষ্ট ছিলেন, তাঁর ঋণ শোধ হয় না। তিনি অসামান্য, অদ্বিতীয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় আমি বলব, আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা।’ বাংলা, বাঙালিত্বে ছিল তাঁর অগাধ বিশ্বাস। ‘আমি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে একথা বলছি না, তোমাদের জাতির পিতা হিসাবে আদেশ দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী অনেক হবেন, অনেক আসবেন, প্রেসিডেন্টও অনেক হবেন, অনেক আসবেন। কিন্তু জাতির পিতা একবারই হন, দু’বার হন না। জাতির পিতা হিসাবেই যে আমি তোমাদের ভালোবাসি, তা তোমরা জানো। আমি তোমাদের আবার বলছি, তোমরা সৎ পথে থাকবে, মাতৃভূমিকে ভালোবাসবে। মনে রেখো তোমাদের মধ্যে যেন পাকিস্তানি মনোভাব না আসে। তোমরা পাকিস্তানের সৈনিক নও, বাংলাদেশের সৈনিক। তোমরা হবে আমাদের জনগণের বাহিনী।’ (নূহ-আলম- লেনিন সম্পাদিত, ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু, পৃ. ১৫৬)

sopon-nath-3বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য জীবন ও সংগ্রাম নিয়ে অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। অনেকে তাঁর জীবনের খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে জানতে গুরুত্বের সাথে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। অনেকে বই, প্রবন্ধ, কবিতা লিখেছেন, লেখা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। নির্মিত হয়েছে প্রামাণ্যচিত্র। মূলত, তাঁর জীবন বহুমাত্রিক ঘটনাবলির সমাবেশে এত বিচিত্র, তা যাঁরা কাছে থেকে জেনেছেন ও বুঝেছেন, তাঁরাই শুধু জানতে পেরেছেন কিছু কিছু। তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময়ই লড়াই সংগ্রামে কেটেছে। বিচিত্র ঘটনা ও বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত এ-জীবন। এর কতটুকুই বা আমরা জানতে পারি। যেটুকু জানার সুযোগ রয়েছে, তাঁর দর্শন ও কর্মের মাধ্যমে। ফলে, জানাবোঝার ঘাটতি থাকলে চকিতে কিছুই বলা যাবে না। অবশেষে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পাঠক, অনুরাগী ও আদর্শিকভাবে অনুপ্রাণিত ব্যক্তিবর্গের সাহায্য করেছে। পূর্ণাঙ্গ নয়, তারপরও এটি খুব কাজে লেগেছে সবার। যাঁরা তাঁকে দেখেননি, বইপত্রে, সংবাদ মাধ্যমে, বক্তৃতা, বিবৃতি শুনে, চলচ্চিত্র দেখে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে একটা সাধারণ ধারণা নিয়েছেন বা নিতে চেষ্টারত। তিনি মনের ও মুখের ভাষা বুঝে গণমানুষের প্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। বাঙালি, বাংলাদেশ, ও এদেশের সাধারণ মানুষের দাবি ও আকাঙক্ষকে তিনি মনেপ্রাণে ধারণ করেছিলেন বলেই তিনি বঙ্গবন্ধু, তা বলাই বাহুল্য। বঙ্গবন্ধু নিজের জীবনকে নিয়োজিত রেখেছিলেন জনগণের অধিকার আদায়ের দাবিতে। জনগণের সাথে থেকে তাদের ভাষা তিনি আয়ত্ত করেছিলেন। বস্তুত, বাঙালির স্বাধিকারের চেতনা তাঁর মনে হঠাৎ জন্ম হয়নি। তিনি অনেক আগে থেকেই ভাবতেন, চিন্তা করতেন এ বিষয়ে। ১৯৫৫ সালে পাকিস্তানের গণপরিষদে ভাষণে বলেছিলেন, ‘‘মাননীয় স্পিকার, সরকার পূর্ববাংলার নাম পরিবর্তন করে পূর্বপাকিস্তান রাখতে চায়। আমরা বারবার দাবি জানাচ্ছি, আপনারা ‘বাংলা’ এই নাম ব্যবহার করুন। বাংলা নামের ইতিহাস আছে। আছে নিজস্ব ঐতিহ্য। এই নাম বদলাতে হলে বাংলার জনগণের কাছে আগে জিজ্ঞাসা করতে হবে, তারা এই নাম বদল করতে রাজি আছে কি-না?’’

sopon-nath-4সংগ্রামে দৃঢ় থাকা এবং একটি দেশ নেতৃত্ব দিয়ে স্বাধীন করা এত সহজ কাজ নয়। বঙ্গবন্ধু কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন, নেতৃত্ব দিলেন মুক্তিযুদ্ধে, ’৭১-উত্তরকালে দেশগড়ার সংগ্রামে আবার তাঁর নিষ্ঠা ও সাহস ইত্যাদি জীবনের বিচিত্র কথা লিখেছেন শেখ সাদী তাঁর বঙ্গবন্ধু ভাষা ও মন (২০১৪) গ্রন্থে। তিনি যেভাবে বঙ্গবন্ধুর জীবনী এঁকেছেন- প্রাঞ্জল ভাষা এর মূল আকর্ষণ। তিনি বঙ্গবন্ধুকে উপস্থাপন করেছেন অতি সাধারণ বর্ণনা-কৌশলে। বঙ্গবন্ধু ও ইতিহাস বিষয়ক অনেক বইয়ের সারাংশ পরিভ্রমণ করে তিনি কাহিনির মতো, গল্পের ঢঙে উপস্থাপন করেছেন বঙ্গবন্ধুর জীবনের গল্প। যা পাঠ করতে ক্লান্তি আসে না। জীবনী লেখার ভিন্ন এক শৈলী। জটিলতাবর্জিত সাবলীল ভাষায় লিখেছেন বঙ্গবন্ধুর জীবনের বিশাল কর্মযজ্ঞ। তাঁর কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে যুক্ত করেছেন তথ্যসূত্রের উল্লেখ। অনেক তথ্য সংযোজন, কিন্তু তাঁর লেখার শৈলী কখনও বাধাগ্রস্ত হয়নি। তাঁর লেখার সহজ সরল ভাষা, যেন একটানে লিখেছেন। কিন্তু, তথ্য সংযোজন আরোপিত মনে হয়নি। গল্পবলার শৈলীতে নিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য কক্ষপথে। শেখ সাদী নির্ণিত করেছেন যেভাবে, ‘প্রকৃতি থেকে মানব, মানব থেকে স্বাধীনতা এবং বিশ্বপ্রকৃতি থেকে বিশ্বমানব- এই ব্যাপকতম উপলব্ধিই বঙ্গবন্ধু মনোজগতের কক্ষপথ।’ (পৃ. ১২)

শেখ সাদী দ্বৈতীয়িক উৎস থেকেই তাঁর ব্যবহৃত উপাত্ত গ্রহণ করেছেন। ফলে, তিনি মনগড়া বা অতিরঞ্জন কিছুই বলতে চেষ্টা করেননি। এখানে বঙ্গবন্ধুর কথা, বিবৃতি ও অন্যান্য উৎস থেকে তিনি জানা-বোঝার চেষ্টা করেছেন। কীভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাঁর নিজের, বাঙালি জাতিসত্তার লড়াই, বাংলাদেশ জাতি-রাষ্ট্রের কাঠামো নির্মাণ, জনগণের আকাঙক্ষকে একবিন্দুতে নিয়ে আসা ইত্যাদি তিনি একে একে বর্ণনা করে গেছেন। অখ- চেতনায় মানুষকে জাগিয়েছেন, তাঁর রাজনৈতিক ভাষা ও কৌশল  দিয়ে। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাঁর ব্যক্তিভাবনা ও জাতির নেতৃত্বদানে কী চিন্তা ছিল, তা স্পষ্টকরণে লেখক আন্তরিক থেকেছেন।

বাংলা ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদের নিরিখে জাতি গঠনে তিনি অনেক আগে থেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন। কারণ, তিনি দেখেছেন কীভাবে তাঁর অগ্রজ নেতৃবৃন্দ অন্যের কূটকৌশলের কাছে ব্যর্থ হয়েছেন। লক্ষ করেছেন, কীভাবে বাঙালি জাতিকে বারবার শোষণের শৃঙ্খলে বাধা হয়েছে। রাজনৈতিক অধিকারের সাথে বাঙালির ভাষা বাংলাকে বিকশিত হতে দেওয়া হয়নি। এসব পর্যবেক্ষণে তিনি বাঙালির প্রতিনিধিত্বশীল একটি রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখে ১৯৭১-এ বাস্তবায়ন করেন। এ থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তিনি বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও ইতিহাসকে ধারণ করেই স্বপ্ন দেখেছেন। কেন বঙ্গবন্ধু ভাষাকেন্দ্রিক জাতীয়তাবাদ চেয়েছেন, রাষ্ট্র নাম বাংলাদেশ এবং এ-রাষ্ট্র কেমন হবে, এসব স্বপ্নের কথা তিনি বহুবার উচ্চারণ করেছেন। এসবই পুনর্বার বলেছেন অন্নদাশঙ্কর রায়ের সাথে আলাপচারিতায়। সাদী এ-কথোপকথনের অংশবিশেষ উদ্ধৃত করেছেন, তা হলো :

‘‘… আমার স্বপ্ন কেমন করে পূর্ণ হবে সেই আমার চিন্তা। হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও ছিল না। লোকগুলো যা কমিউনাল! বাংলা চাই বললে সন্দেহ করত। হঠাৎ একদিন রব উঠল রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই। আমিও ভিড়ে যাই ভাষাআন্দোলনে। ভাষাভিত্তিক আন্দোলনকে একটু একটু করে চূড়ান্ত রূপ দিই দেশভিত্তিক আন্দোলনে। পরে এমন একদিন আসে, যেদিন আমি আমার দলের লোকদের জিজ্ঞাসা করি, আমাদের দেশের নাম কী হবে? কেউ বলে পাকবাংলা, কেউ বলে পূর্ববাংলা। আমি বলি, না, বাংলাদেশ। তারপর আমি স্লোগান দিই ‘জয় বাংলা’। তখন বিদ্রুপ করে বলে, ‘জয় বাংলা’ না জয় বাংলা কালী! কী অপমান! সে অপমান আমি হজম করেছি। আসলে ওরা আমাকে বুঝতে পারেনি। জয় বাংলা বলতে আমি বোঝাতে চেয়েছিলুম, বাংলা ভাষা, বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির জয়। যা সাম্প্রদায়িকতার উর্ধ্বে।’’ (পৃ. ২৪)

১৯৭১ সালের পর লক্ষণীয়, প্রাক-স্বাধীনতা ও স্বাধীনতা উত্তরকালে গড়ে ওঠা কিছু রাজনৈতিক দল এ-জয় বাংলা স্লোগানকে দলীয় চিহ্নিত করে আর গ্রহণ করতে পারছে না। বস্তুত, জয় বাংলা দলীয় স্লোগান ছিল না, এটি মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান এবং বঙ্গবন্ধু এ-স্লোগানে সমগ্র বাঙালি জাতিসত্তাকে একটি বিন্দুতে সমবেত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু যে বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, সে অন্য এক বাংলা। যথার্থভাবেই একটি আধুনিক রাষ্ট্র। যেখানে জাতি-ধর্ম- বর্ণ-গোত্র পরিচয় হবে গৌণ, মুখ্য হবে রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব। বহুত্বের মধ্যে ঐক্য, যা এদেশের প্রকৃতির বিচিত্র রূপেও প্রতিভাত। এ-বিষয়টি তিনি ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের মাধ্যমে বোঝাতে চেষ্টা করেছেন। শেখ সাদী বলেছেন, ‘‘স্বাধীনতার ব্রহ্মাস্ত্র ‘জয় বাংলা’ প্রথম ব্যবহার করলেন ৬ জুন ১৯৭০-এ। নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার দিন। বঙ্গবন্ধুর ভাষায় ‘জয় বাংলা স্লোগানের মধ্যেই এ দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি নিহিত আছে।’ ‘জয়’ শব্দের প্রতি বিশেষ টান। জয়ের উল্লাস দেখতে চেয়েছেন সারাটা জীবন। হেরে যাওয়ার দীর্ঘশ^াস নয়, সমুদ্র তরঙ্গের মতো উদ্ধত গর্জন করে ‘শীর্ষে আরোহণ’ করার অদম্য প্রাণশক্তি ছিল।’’ (পৃ. ২১)

লেখক বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণও বিশ্লেষণ করেছেন। বিশ্বব্যাপী এ-ভাষণের তো তুলনাই হয় না। লক্ষণীয়, বঙ্গবন্ধুর এ-ভাষণ অতি পরিমিত, সংযমী। কিন্তু, চেতনার জাগরণে উদ্দীপ্ত করল সমগ্র জাতি। প্রতিটি শব্দই অগ্নিস্ফূলিংগের মতো ছড়িয়ে গেলা সবখানে। এ-ভাষণে তিনি কোনো বিষয়ের পুনরাবৃত্তি করেননি। উল্লেখ্য যে, বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণ, বিবৃতি ও কথায় স্বনির্ধারিত কিছু শব্দাবলি প্রয়োগ করতেন।  যেসব শব্দ তাঁর চারপাশে সাধারণ মানুষ প্রাত্যহিক ভাব-বিনিময়ে ব্যবহার করতেন। ব্যবহৃত এসব শব্দ বঙ্গবন্ধুর মনোজগৎ বোঝাপড়া সহজ করে দেয়। অর্থাৎ, তিনি সাধারণ মানুষের মনের ভাষা বুঝতেন। শেখ সাদী এরকম বাছাইকৃত ১০১টি শব্দ এখানে উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ, তিনি ভাষণ, বিবৃতিতে সবসময় যেসব শব্দ প্রয়োগ করতেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে। যেগুলো বঙ্গবন্ধুর মনোভাব বোঝাপড়ায় সহায়ক হতে পারে। আমরা ধারণা করতে পারি যে, এসব শব্দ প্রয়োগে তাঁর বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। সাধারণ একটি লক্ষ ও উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি এসব ব্যবহার করতেন। স্পষ্টত, সাদীর বাছাইকৃত শব্দাবলিতে নির্ণয় করা যায় বঙ্গবন্ধুর সমাজ সচেতনতাবোধ,  দূরদৃষ্টি এবং তাঁর মনোজগতের বিশালত্ব। সাদীর বাছাইকৃত কয়েকটি শব্দ ও শব্দজোটের নমুনা নিচে বক্সে উল্লেখ করা হলো :

বঙ্গবন্ধুর ভাষা সম্পর্কে লেখক তাঁর বর্ণনার মাঝে মাঝে বিভিন্ন উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছেন। কর্মে শুধু নয় ভাষা ব্যবহারেও তিনি ছিলেন দৃঢ়। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনীতি, দৃষ্টিভঙ্গিতে খুব দৃঢ়তা দেখিয়েছেন। তাঁর কর্মই এর প্রমাণ। তিনি পূর্বাপর একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষ। তাঁর নিজস্ব চিন্তা, ভাবনায় ছিলেন প্রত্যয়ী। তিনি বারবার সে প্রমাণও দেখিয়েছেন। তাঁর আত্মবিশ্বাস আর মানুষের মনের ভাষা উচ্চারণে তাঁর আসন উচ্চকিত হয়েছে আন্তর্জাতিক পরিসরে। সিদ্ধান্ত ও সাথে সাথে কাজ সেরে ফেলার মতো তার দৃঢ়তা দেখি। তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘আমি অনেকের মধ্যে একটা জিনিস দেখেছি, কোনো কাজ করতে গেলে শুধু চিন্তাই করে। চিন্তা করতে করতে সময় পার হয়ে যায়, কাজ আর হয়ে ওঠে না। অনেক সময় করব কি করব না, এইভাবে সময় নষ্ট করে এবং জীবনে কোনো কাজই করতে পারে না। আমি চিন্তাভাবনা করে যে কাজটা করব ঠিক করি, তা করেই ফেলি। যদি ভুল হয়, সংশোধন করে নিই। কারণ, যারা কাজ করে তাদেরই ভুল হতে পারে, যারা কাজ করে না তাদের ভুলও হয় না।’ (শেখ মুজিবুর রহমান, অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃ. ৮০]

সাধারণ মানুষ যে ভাষায় মনের ভাববিনিময় করত তিনি সে ভাষা ও ভাষার বৈশিষ্ট্য বুঝেছেন, ধারণ করেছেন। তিনি মানুষের কথা, চিন্তা-ভাবনা ধারণ করেছেন বলেই ওই আলোকে রাষ্ট্র নির্মাণে ছিলেন তৎপর। শেখ সাদী এ-বিষয়ে লিখেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রগঠনের প্রচেষ্টায় ছিল আধুনিক মনোভঙ্গির প্রকাশ। যুক্তিভিত্তিক বিজ্ঞানানুগ বিশ^দর্শন। জাতীয় আত্মগৌরব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা বিশ্ববোধে পরিণতি পেয়েছিল সমাজদর্শনে। সে জন্য সাধারণ দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হয়েও বড় দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের চেয়ে গুরুত্ব পেয়েছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতির উঠোনে।’ (১৯) যুক্তির নিরিখেই সবকিছু বিশ্লেষণের চেষ্টা করতেন। তিনি যে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছেন এর পেছনে তাঁর বোঝাপড়া ছিল। নিছক রাজনীতির জন্য রাজনীতি-নির্ভর কথা তিনি বলেননি। আনুপাতিক জ্ঞান-চিন্তা থেকেই তাঁর রাজনীতিকে তিনি নির্মাণ করেছেন। আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন, ‘বাংলা পাকিস্তানের শতকরা ছাপ্পান্নভাগ লোকের মাতৃভাষা। তাই বাংলাই একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত। তবুও আমরা বাংলা ও উর্দু দুইটা রাষ্ট্রভাষা করার দাবি করেছিলাম। পাঞ্জাবের লোকেরা পাঞ্জাবি ভাষা বলে, সিন্ধুর লোকেরা সিন্ধি ভাষায় কথা বলে, সীমান্ত প্রদেশের লোকেরা পশতু ভাষায় কথা বলে, বেলুচরা বেলুচি ভাষায় কথা বলে। উর্দু পাকিস্তানের কোনো প্রদেশের ভাষা নয়, তবু যদি পশ্চিম পাকিস্তানের ভায়েরা উর্দু ভাষার জন্য দাবি করে, আমরা আপত্তি করব কেন? যারা উর্দু ভাষা সমর্থন করে তাদের একমাত্র যুক্তি হল উর্দু ‘ইসলামিক ভাষা’। উর্দু কি করে ইসলামিক ভাষা হল আমরা বুঝতে পারলাম না।’ (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃ  ৯৮)

বঙ্গবন্ধু শুধু রাজনৈতিক মাঠে নন, ব্যক্তিজীবনেও ছিলেন সৎ ও সাহসী। যা করতেন, বুঝে শুনেই করতেন। তিনি এ সততার চর্চা করেছেন তাঁর বাল্য-কৈশোর থেকেই। বঙ্গবন্ধুর স্কুল ও কলেজ জীবনের কিছু প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন লেখক সাদী। তাঁর নেতৃত্বের বিকাশমানপর্ব ও ব্যক্তি শেখ মুজিবের হয়ে ওঠার বিষয়টি স্পষ্টকরণে। ব্যক্তি বঙ্গবন্ধু কখনওই বিদ্যালয়ের চার দেয়ালের ভেতরে ও বইয়ের কালো অক্ষরের মধ্যে শুধু জীবনের মর্মার্থ  খোঁজেননি। চারপাশের প্রকৃতি ও মানুষকে জানা-বোঝার চেষ্টা করেছেন এবং সেভাবেই অবহেলিত সামষ্টিক মানুষের পাশে দাঁড়াতে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। এ-বিষয়টি তুলে আনার চেষ্টা করেছেন লেখক  শেখ সাদী। তিনি বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর মনোজগৎ বিকাশমান বাঙালি সভ্যতার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত। চিন্তার আখ্যান। জীবনের পর্ব থেকে পর্বান্তরে যা অনবরত প্রবাহিত।’ এমনকি বেঁধে দেওয়া নিয়মের বাইরে কোনো কাজ করলেও বঙ্গবন্ধু সহজে স্বীকার করে নিতেন, আত্মসমালোচনা করতেন। ফলে, এসব বিষয়ই সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করে। শেখ মুজিব সহজে, খোলামেলা অনেক কিছুই আলাপ করতেন। অধ্যাপক সাইদুর রহমান ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরাসরি শিক্ষক। শিক্ষক হিসেবে সাইদুর রহমান শেখ মুজিবকে কীভাবে দেখেছেন- তা উল্লেখ করেছেন তাঁর শতাব্দীর স্মৃতি গ্রন্থে। অনেক বিষয়ের সাথে এনেছেন শিক্ষার্থী ব্যক্তি শেখ মুজিবের প্রসঙ্গ। তখনই তিনি বঙ্গবন্ধুর মধ্যে সে আলো দেখেছিলেন- একদিন এ-শিক্ষার্থী জাতির নেতৃত্ব দেবে। ব্যক্তি হিসেবে তাঁর সততা দেখে তিনি অভিভূত হয়েছেন।  সাদী সেখান থেকে একগুচ্ছ বিবরণ উদ্ধৃত করে তাঁর বক্তব্যের সাপেক্ষ করে নিয়েছেন। ‘‘ছাত্রদের কাছ থেকে এই অভিযোগ কয়েকবার শোনার পর একদিন পিয়নকে দিয়ে তাঁর কক্ষে মুজিবকে ডেকে এনে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি নাকি দুজনের তরকারি একাই খেয়ে ফেলো?’ তিনি স্বীকার করলেন, ‘জী’। সাইদুর রহমান বললেন, ‘তুমি কি জানো, এটা একটা অপরাধ? এটা তোমার করা ঠিক হয়নি।’ মুজিব কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বললেন, স্যার, আমি জানি, কাজটা ঠিক নয়। কিন্তু কী করব, আমার যে এক পেয়ালাতে পোষায় না।’ তার এই স্পষ্ট ও বিনয়ী জবাব শুনে আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটানের কথা মনে পড়ে গেল। তিনিও নিঃসংকোচে তাঁর পিতার কাছে অপরাধ স্বীকার করেছিলেন, চেরি কেটে ফেলে। ডাইনিং হলে একাই দুই পেয়ালা গ্রহণ করলেও ওর সততা আমার অজানা ছিল না। জনসেবা থেকে ছাত্রসংগঠন, যা করতেন আন্তরিক এবং সৎভাবেই করতেন।’ (পৃ. ২৬) এ আন্তরিকতা নিয়েই তিনি দেশসেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন। মানুষের যে কোনো সংকটে তাঁর সক্রিয় উপস্থিতি তাঁকে কয়েক ধাপ এগিয়ে রাখে রাজনীতিতে। পাকিস্তানের উপনিবেশের মায়া তাঁকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। ভাষাআন্দালন থেকে ’৭১ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে সামান্য সময়ের জন্য অবকাশে যেতে দেখা যায়নি। লক্ষণীয়, এ-পর্বে কারাগার, আত্মগোপন আর আন্দোলন একাকার হয়ে ওঠে তাঁর জীবনে। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসনে বিপর্যস্ত রাজনীতি। ওই সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাহসের সাথে রাজনীতিকে পরিচালনা করেছিলেন। সে-সময় তিনি চলমান জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে ভিন্নমাত্রায় লক্ষের দিকে বহমান রেখেছিলেন। শিক্ষা আন্দোলনের পর ভারত- পাকিস্তানের সংঘাত থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক সরকার ফায়দা নিতে চেয়েছে। শেখ মুজিব এ-সুযোগ নিতে দেননি। সব বিভ্রান্তির বাইরে জনগণকে সচেতন ও সজাগ রেখেছিলেন। অত্যন্ত আত্মবিশ^াসের সাথে তিনি জনগণের কাছে ছয়দফা পেশ করেন ১৯৬৬ সালে। শেখ সাদী লিখেছেন, ‘‘ছয়দফা’ সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে পূর্ব বাংলার আনাচে-কানাচে ছুটে চললেন। মুজিবের জনপ্রিয়তার পারদ তখন ঝড়ের বেগে উর্ধ্বমুখি। কারণ, অসম্ভব রাজনৈতিক ক্ষমতা ছিল। সঠিক সময়ে সকল কর্মীর নাম মনে রাখতে পারতেন। শুধু তা-ই নয়,  কর্মীদের পারিবারিক দুঃখ-কষ্টের খবরও ছিল জানা। একাত্ম হতেন সবার সঙ্গে। এটি বঙ্গবন্ধুর একটি ঈর্ষণীয় ক্ষমতা এবং নেতৃত্বের মহৎ গুণ। জনপ্রিয়তার পারদ তাই আকাশমুখী, যা সহ্য করতে পারল না জান্তা। যেখানেই সমাবেশ করতে গেলেন, সেখানেই গ্রেফতার করা হলো।’’ (পৃ ৪৪) বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি আন্দোলনে চারদিক শুধুই প্রকম্পিত হতে থাকে শেখ মুজিবের নামে স্লোগানে- ‘তোমার নেতা-আমার নেতা, শেখ মুজিব শেখ মুজিব’ ।

sopon-nath-5

জনগণের ভালোবাসার চূড়ান্ত পরিণাম হিসেবে ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দিয়ে সম্মানিত করে ছাত্র জনতা। গণআন্দোলন থেকে গণঅভ্যুত্থান শেষে এল সাধারণ নির্বাচন। ইতিপূর্বেই তিনি নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালের ৬ জুন দলীয় কাউন্সিলে যেদিন প্রথম জয় বাংলা স্লোগান প্রথম উচ্চারণ করেন বঙ্গবন্ধু। এ-সম্পর্কে সাদী জানাচ্ছেন, ‘দলীয় কাউন্সিল অধিবেশন উপলক্ষে বৃষ্টিপ্লাবিত রেসকোর্স ময়দানে বিশাল জনসভা হলো। ময়দানে জমে থাকা পানি-কাদা উপেক্ষা করে লাখ লাখ মানুষ হাজির হলেন। বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘পাকিস্তানের প্রথম জাতীয় নির্বাচনে এটা ঠিক হয়ে যাবে জনসাধারণ আমার ছয়দফা মানতে চায় কিনা? আপনারা অধিকার রক্ষা করার জন্য সজাগ থাকুন।’

বাংলাদেশ জনগণের মুক্তি নিয়ে বঙ্গবন্ধু জনগণকে কথা দিয়েছিলেন, সেভাবে জনগণও তাঁর সাথে একাত্ম হয়েছিল। ’৭১ সালে পেছনে ফেরার কোনো পথ ছিল না। সমগ্র বাংলাদেশ একই লক্ষে বঙ্গবন্ধুর ডাকে ঐক্যবদ্ধ হয়। ওই সময় জনগণ বঙ্গবন্ধুর চূড়ান্ত আহ্বানের অপেক্ষায় ছিল শুধু। ঢাকাসহ বিভিন্ন শহর মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়। অন্যদিকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নির্যাতন চলছে সমানতালে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় তারা ব্যর্থ হয়। এমন একটি পর্যায়ে এগিয়ে এল ৭ মার্চ। লেখক বলেছেন, ‘মহাবার্তা ঘোষণার দিন’। সাদী লিখেছেন, ‘‘মহাবার্তা ঘোষণার দিন ৭ মার্চ। ১৯৭১। বঙ্গবন্ধু উচ্চারিত ‘বিগব্যাং’-এর শব্দগুলো আজ আবার নতুন করে প্রমাণ করল ‘শব্দই ব্রহ্মাস্ত্র’। পনেরোশ’ কোটি বছর আগে যে অসম্ভব-আওয়াজের মাধ্যমে বিশ্ব সৃষ্টি শুরু হয়েছিল, তেমনি ‘বিগ ব্যাং’ শুনল বিশ্ববাসী।… ’’  ওই দিনে বঙ্গবন্ধু কীভাবে দিনটি শুরু করেছিলেন। রেসকোর্সে আসার প্রস্তুতি, বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিবের সাথে ব্যক্তিগত কথপোকথন ইত্যাদি বিষয়ে শেখ সাদী বিস্তৃত লিখেছেন। লেখক বইয়ের নাম দিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু ভাষা ও মন। এ অনুযায়ী তিনি বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন কথা ও ভাষণের ব্যাখ্যা দিয়েছেন যথাসাধ্য। ভাষা থেকে চিন্তার পরিধি শনাক্ত ও তা থেকে বঙ্গবন্ধুর জীবনের পর্বগুলো সাজাতে চেষ্টা করেছেন। এ বিশ্লেষণের আলোকেই লেখক শেখ সাদী ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সরল ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেছেন। কীভাবে এ-ভাষণটি সময়োপযোগী এবং মানুষের কাছে ঐতিহাসিক ও চিরায়ত হয়ে গেল। বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে উচ্চারিত হলো তাঁর সারা জীবনের সাধনা ও সংগ্রামের নির্যাস। তাঁর কণ্ঠে উচ্চারিত হলো সমগ্র বাঙালি জাতির স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষার কথা। এত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণের উদাহরণ পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায় না। শেখ সাদী এখানে বেশ দীর্ঘ ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেছেন। হিসাব করে দেখিয়েছেন ভাষণে উচ্চারিত শব্দের ধরন, বাক্যচয়ন, বিষয়বস্তু ইত্যাদি। বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে কয়টি প্রশ্ন, কী কী দাবি তুলেছেন এসব বিষয়ও বিশ্লেষণ করেছেন। শেখ সাদী আবেগবর্জিত হতে পারেননি। সমগ্র বইয়ের ক্ষেত্রে তাঁর আবেগ ছিল। এক্ষেত্রে বোধহয় আবেগ ত্যাগ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে, ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বিশ্লেষণে তিনি বেশ সংযমী। সাদী বলেছেন, ‘প্রমিত বাংলায় আগুনতেজ ছড়াত না, বিষয়টি সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত ও  সচেতন ছিলেন। মহাবার্তার বিগব্যাং উচ্চারিত হলো মাত্র ১৮ মিনিট ৩৭ সেকেন্ড। মিনিটে গড়-উচ্চারণ ৫৭ থেকে ৫৯ শব্দ। এক হাজার ২০ শব্দের ভাষণে শব্দের উচ্চারণে কোনো পুনরাবৃত্তি হলো না। মজবুত গাঁথুনির জোড়া লাগানো প্রতিটি শব্দ দেশের প্রত্যেক মানুষের মনে উত্তেজনার আগুনে ঘি ঢেলে দেয়।… ভাষণটি হয়ে গেল তৎকালীন সাড়ে সাতকোটি বাঙালির অফুরন্ত প্রেরণার উৎস। আঞ্চলিক শব্দ মিশিয়ে বাংলার যে রূপ বঙ্গবন্ধু ব্যবহার করেছিলেন, তাতে ছিল ইতিহাস ও লোকসংস্কৃতির অপূর্ব মিশেল।… ৭ মার্চের ভাষণে লোকায়তিক উপাদান স্পষ্ট। আন্তর্জাতিক ও লোকায়তিক- এই দুইয়ের দারুণ সমন্বয়। এর পাশাপাশি সুফিবাদের বিশ্বাস থেকে উচ্চারণ করলেন ইনশাল্লাহ্।… এমন অসাধারণ বাক্যবোধের উচ্চারণ প্রস্তুতি নিয়ে বা মুখস্থ করে বলা সম্ভব না। ধ্যান-সাধনার মধ্য দিয়ে এই শক্তি উচ্চারণ করতে হয়। যা কেবল বঙ্গবন্ধুর পক্ষেই সম্ভব হয়েছিল।’ এরপরের ইতিহাস তো সবার জানা। তিনি নিরস্ত্র বাঙালিকে অসহায়ভাবে ফেলে চলে যাননি। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দেশের অভ্যন্তরে ব্যাপক হক্যাকা- শুরু করে। নির্বিচারে হত্যা বন্ধ করতে তিনি বারবার শাসকগোষ্ঠীর কাছে আহ্বান জানিয়েছেন। কোনো  ঘোষণা ছাড়াই সাজোয়া সামরিক বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর গণহত্যা চালিয়েছে। ইতিহাসে এর কোনো তুলনা নেই। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায়। মূলত, মার্চ মাসে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। তারা জোর-জবরদস্তি ও নির্যাতনের মাধ্যমে শাসন পরিচালনা করতে চেয়েছে। রেহমান সোবহান বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের অভ্যুদয় শিরোনামের লেখায় বলেছেন, ‘১৯৭১-এর মার্চে বাংলাদেশের গোটা প্রশাসনযন্ত্র বঙ্গবন্ধুর পেছনে কাতারবন্দি হলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের অপ্রতিদ্বন্দ্বী শাসক বা একচ্ছত্র অধিপতি হয়ে ওঠেন। পৃথিবীর আর কোনো দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনেই সংশ্লিষ্ট দেশটির জাতীয় স্বাধীনতা স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত প্রশাসনকে এভাবে তাদের আনুগত্য পরিবর্তন করতে দেখা যায়নি। কার্যত বাংলাদেশের স্বাধীনতা একটি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল;  যে প্রক্রিয়ায় ১ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত সব উপাদানই বাংলাদেশের কর্তৃত্বাধীনে ছিল। বঙ্গবন্ধুর আহূত অসহযোগ আন্দোলন এমনই ব্যাপক ও সর্বজনগ্রাহ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় যে, এতে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও অবকাঠামো সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়ার উপক্রম হয় আর এর ফলে এতদঅঞ্চলের জনগোষ্ঠীর জীবন বিপন্নের আশঙ্কাও তৈরি হয় বৈ কি!’ (ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু, (পৃ ৩২০)

বিজয় অর্জিত হলে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি দেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। বঙ্গবন্ধু নিশ্চিত ছিলেন বাঙালি অস্ত্রহীন হলেও জয় নিশ্চিত। বাঙালির মুক্তি হবেই- এ কথা তিনি বারবার বলেছেন। তারা বিচার করেছে, হত্যার পরিকল্পনা করে ব্যর্থ হয়েছে। বরং, তাঁর নেতৃত্বের জন্য ঈর্ষান্বিত হয়েছে, আফসোস করেছে। উলটো প্রশংসা করেছে যে, আমরা এরকম একজন মহান নেতাকে পেয়েছি। আমাদের ট্রাজেডি হলো-  আমরা এ মহান নেতাকে রক্ষা করতে পারিনি। শেখ সাদী পশ্চিম পাকিস্তানে থাকা অবস্থায় সেখানের কারাগারকর্মী হাবিব আলির কথা উদ্ধৃত করেছেন, ‘বন্দি থাকা অবস্থায় বিচারকাজ চলাকালীন সময়ে তোমাদের নেতার মুখ থেকে আমরা একটা কথাও বের করতে পারিনি। তোমরা মহাসৌভাগ্যবান এই জন্য যে, এমন একজন নেতাকে পেয়েছ। যিনি সত্যিই মহান। কারাগারের পাশে কবর খোঁড়া হয়েছিল, আমরা তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আত্মপক্ষ সমর্থন বা অন্তিম কোনো ইচ্ছা আছে কিনা? উত্তরে বলেছিলেন, আমার একমাত্র ইচ্ছা, আমার লাশটা যেন প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে পাঠানো হয়।’

বাংলাদেশ স্বাধীন হলো, কিন্তু ষড়যন্ত্র থামল না। বঙ্গবন্ধু সবাইকে আপন ভেবেছিলেন। তাঁর এ মহত্ত্বের মূল্য আমরা দিতে পারিনি। এটা আমাদেরই দুর্বলতা। তিনি ভেবেছিলেন দেশ গড়ার সংগ্রামে সবাই যে-যার অবস্থান থেকে আত্মনিয়োগ করবে। হয়েছে উলটো। যে-যেখানে পারে সেখানেই ব্যক্তিস্বার্থে অন্ধ হয়ে উঠেছিল। এমন পরিস্থিতিতে ১৯৭৪ সালে কৃত্রিম খাদ্য সংকট তৈরি করা হয়। অন্যদিকে প্রতিক্রিয়াশীল বিরোধী শক্তি সক্রিয় হয়ে ওঠে। ‘১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সিআইএর খাদ্য রাজনীতির শিকার।’ বাংলাদেশে এ খাদ্য রাজনীতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে অজনপ্রিয় করার বিভিন্ন কৌশলের একটিমাত্র। এ-সমস্ত কৌশল জানতে ও বুঝতে আমাদের অনেক দেরি হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ ও স্বাধীনতা অর্জনে অনেক দেশই খুশি হতে পারেনি। আমেরিকাসহ তার দোসরদের কূটকৌশলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করাই ছিল তাদের লক্ষ্য। তাদের পরিকল্পিত চক্রান্তে ও ‘আমেরিকার ইচ্ছায় জন্ম হলো স্মরণকালের ভয়াবহ খাদ্যসংকট’। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর অনেক দেশই স্বীকৃতি দেয় শর্তারোপ করে ও ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর। তাহলে এসব চক্রান্তের সাথে আন্তর্জাতিক ও কূটনৈতিক স্বীকৃতির হিসেব মেলানো যায়। শোষণ, উপনিবেশ, নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ ইত্যাদি নিয়ে তাদের কোনও কথা না থাকলেও প্রতিশোধ স্পৃহা ঠিকই ছিলো। প্রসংগত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথানুযায়ী তাদের বিভিন্ন দলিল কিছুদিন পর পর উন্মুক্ত করে দেয়। এসব দলিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চক্রান্ত, খাদ্য রাজনীতি ও সে সময় তাদের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে জানা যায়। মিজানুর রহমান খান তাঁর বই মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকা-’ (২০১৪)-এ উন্মুক্ত হওয়া মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের তথ্য উল্লেখ করেছেন। ‘১৯৭৪ সালের ৮ জুলাই হোসেন আলী (বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত) অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আথারটনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি বাংলাদেশ-পাকিস্তান উত্তেজনা প্রশমনে মুজিব-ভুট্টো শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠানের সাফল্য তুলে ধরেন।… বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত আলোচনাকালে স্বল্পমেয়াদে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও খাদ্যসংকট মোকাবিলায় মার্কিন সরকারের সহায়তা কামনা করেন।… আথারটন তাঁকে বলেন যে, ১৯৭৪ অর্থবছরে প্রদেয় সর্বশেষ ৭৩ টন গমের চালান যুক্তরাষ্ট্র থেকে শিগগিরই বাংলাদেশের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা। তবে আথারটন রাষ্ট্রদূত আলীকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, কিউবার সঙ্গে চটের বস্তা রপ্তানি ইস্যুর সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত পিএল ৪৮০-এর অধীনে বাংলাদেশের সঙ্গে নতুন কোনো চুক্তি করা যাবে না।’ (পৃ ২৭)

এসব থেকে কী মনে হয় যে, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে নির্বিঘ্নে  সময় পার করেছে? মোটেও নয়। ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তৃত হয়েছে সবখানে। বাংলাদেশ যারা মেনে নিতে পারেনি; বাংলাদেশ, বাঙালি জাতিসত্তা, বাঙালি সংস্কৃতি, লোকায়ত বাংলা, ভাষার বিকাশ যারা চায়নি; এরা একটি পক্ষ। অন্যটি যারা অবাধ লুণ্ঠনের একটি দেশ চেয়েছে, সমৃদ্ধি চায়নি; সাধারণ মানুষ ক্ষমতার অংশীদার হোক তা তারা চায়নি। এসব পক্ষ মিলেই তারা নানা অপকর্মের জন্ম দিয়েছে। বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেছে। ‘গোলকধাঁধায় মানুষ। আলো তো বিজ্ঞান ও গণিত। অন্ধকার রহস্যময়, অজানা-অচেনা কল্পনা। কিছুসংখ্যক মানুষ অন্ধকারের দিকে এগিয়ে চলল। পতঙ্গের মতো।’ বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন বাঙালি, বাংলাদেশের মানুষ তাঁকে খুব ভালোবাসে। ভালোবাসার পরিণামে আমরা এর মূল্য দিয়েছি বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস সৃষ্টি করে। শেখ সাদী লিখেছেন, ‘‘১৯৭৫ সালের এপ্রিল। কিংস্টনে কমনওয়েলথ সম্মেলনে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বললেন, বাংলাদেশে ভয়ংকর কিছু ঘটতে চলেছে। সাবধান হোন। বঙ্গবন্ধুর ত্বরিত উত্তর, ‘না না, সবাই আমার সন্তান।’ কোনো বাঙালি আমাকে হত্যা করতে পারবে না। বঙ্গবন্ধুর এই মজবুত বিশ্বাসের মর্যাদা রক্ষা করতে পারেনি বাঙালি ও বাংলাদেশ। বিশ্বাসঘাতকতার ‘উজ্জ্বল উদাহরণ’ হিসেবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনটি ইতিহাস বহন করবে অনন্তকাল।’’ বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম জানা বোঝা আমাদের খুব প্রয়োজন, নিজেদেরই তাগিদে। আমরা প্রায়শ্চিত্তে ফিরতে চেষ্টা করছি। কিন্তু ইচ্ছা, চেষ্টা হলেই আবার সেই সময়, স্বপ্ন আর আকাক্সক্ষায় ফিরে যাওয়া যায় না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা উল্লেখ  করেছেন শেখ সাদী, যাতে বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস রেখেছিলেন সারা জীবন। ‘মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *