বঙ্গবন্ধু হত্যার আগে খাদ্যকে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার মার্কিনিদের
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতা এবং পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেছেন, ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দাঁড়িয়ে মার্কিন দোসরদের আগ্রাসনের সমালোচনা করেছিলেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের আগে খাদ্যকে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করেছিল সেই সময়কার মার্কিন প্রশাসন।
বিশ্বব্যাপী শোষিত শ্রেণির প্রতি ছিল তার অকুণ্ঠ সমর্থন ও নিস্বার্থ ভালোবাসা। যা অনেকেই তখন মেনে নিতে পারেনি। শনিবার এক গণমাধ্যমের সাথে আলাপচারিতায় এই আওয়ামী লীগ নেতা আরও বলেন, তখন বিশ্ব দুই ভাগে ভাগ ছিল। একদল শোষক, আরেক দল শোষিত। বঙ্গবন্ধু সবসময় শোষিতের পক্ষে রাজনীতি করেছেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের কুনজরে পড়েছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু ছিলেন তাদের একমাত্র শত্রু। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের আগে খাদ্যকে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করেছিল সেই সময়কার মার্কিন প্রশাসন। তারা দেখেছে শেখ মুজিবের মতো সাহসী নেতৃত্ব যদি এ এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে তাদের দীর্ঘদিনের নীলনকশা ভেস্তে যাবে। তাদের নিরাপত্তাবলয় অকার্যকর হবে। এ জন্য তারা বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধুকে টার্গেট করেছিল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরাক্রমশালী তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার মুক্তিযুদ্ধের পর বলেছিলেন, ‘যে দেশটির অভ্যুদয় ঘটতে যাচ্ছে, সেটা হবে তলাবিহীন ঝুড়ি।’ মার্কিনিদের এই টার্গেট বাস্তবায়নের জন্য তারা বেছে নিয়েছিল স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি, ধর্মান্ধ ও মৌলবাদী গোষ্ঠী, প্রতিক্রিয়াশীল ও উগ্র চীনাপন্থিদের। এর সঙ্গে জড়িত ছিল স্থানীয় কতিপয় রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী চক্র, সামরিক-বেসামরিক আমলা। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে গণমাধ্যমের ভূমিকা বিষয়ে সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের আগে ও পরে মদদ দিয়েছিল কিছু দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। এর মধ্যে অন্যতম ছিল হলি ডে, হককথা। এ ছাড়াও বেশ কিছু দেশি-বিদেশি দৈনিক এবং সাময়িকী।
পাকিস্তানের পত্রিকা তো বিপক্ষে কাজ করেছেই। এ ছাড়া ছিল পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের পৃষ্ঠপোষকতায় মুসলিম বাংলা বেতার কেন্দ্র, যেটা বাংলাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম এলাকা থেকে সম্প্রচার করা হতো। তখন স্থানীয় কিছু পত্র-পত্রিকা দেশের মানুষকে বিভাজিত করতে কাজ করেছে। একটা সদ্য স্বাধীন দেশে যেখানে সংবাদপত্রের দায়িত্বশীল ভূমিকা জরুরি ছিল, সেখানে কিছু সংবাদপত্র তা না করে দায়িত্বহীন দেশদ্রোহিতামূলক কর্মকাণ্ড করেছে। তারা বঙ্গবন্ধুর সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগেছিল।
তিনি বলেন, সে সময় দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুকে আগেই তথ্য দিয়েছিল ভারত সরকার। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সব সময় মনে করতেন বাঙালিরা কোনো দিন তার রক্ত ঝরাবে না।সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন ।