বন্যা-উত্তর ত্রাণ কর্মসূচি অব্যাহত
রাজীব পারভেজ: আগস্ট মাসের প্রথমার্ধে প্রবল বর্ষণ ও গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র অঞ্চলে নদ-নদীর ঢলে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বন্যার প্রাদুর্ভাব পরিদৃষ্ট হয়।
প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ বিতরণ
উত্তরাঞ্চলের সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি গাইবান্ধা ও বগুড়া সফর করেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে ধানের বীজ বিতরণকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি কেউ খাদ্যের অভাবে কষ্ট পাবে না। আমরা চাই দেশের মানুষ যাতে কোনোভাবেই কষ্ট না পাক, সে ব্যাপারে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। তিনি বলেন, যে সমস্ত এলাকায় ধান ছাড়াও অন্যান্য ফসল হতে পারে সেগুলোর জন্য সাহায্য দেওয়ার আমরা বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছি। যেমনÑ গম, সরিষা ও ডালসহ রবি শষ্যের আবাদ যেন আপনারা করতে পারেন তার ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। ’৯৮ সালে দেশের বন্যার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তখন থেকেই আমরা বর্গাচাষিদের কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে বিনা জমানতে কৃষিঋণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করি। কাজেই এই কৃষিঋণ বিতরণ আমাদের অব্যাহত থাকবে এবং যেসব এলাকায় বন্যায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের কৃষিঋণের সুদ যাতে না নেওয়া হয় এবং বিনা জামানতে যেন আবারও প্রয়োজনে কৃষিঋণ নিতে পারেন সেই ব্যবস্থাও আমরা করার নির্দেশ দিয়েছি। তাছাড়া, আমরা ইতোমধ্যে ১২ জেলার ৭ হাজার ৭৮০ কৃষকের প্রত্যেককে এক বিঘা করে জমির ধানের চারা বিতরণের কার্যক্রম ২৪ আগস্ট থেকে শুরু করে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ৩৭টি হর্টিকালচার সেন্টার এবং ১৬টি এটিআইতে বিএডিসির ১১টি খামারে আমন ধানের চারা চাষ করা হয়েছে। এ বছর ১ হাজার বেডের ভাসমান বীজতলাও তৈরি করা হয়েছে। তার সরকার সারাদেশে মাসকলাই, গম, ভুট্টা, সরিষা, চীনাবাদাম খেসারি, বেগুন, মুগ ও তিল উৎপাদন বৃদ্ধি যাতে হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে ক্ষুদ্র প্রান্তিক কৃষকদের জন্য প্রণোদনা কার্যক্রম হাতে নিয়েছি।
৫১ কোটি ৭৭ লাখ ১৯ হাজার ৩১৫ কোটি টাকার প্রণোদনা কৃষকদের মাঝে প্রদান করা হবে, যাতে এই ফসল তারা লাগাতে পারেন। ৫ লাখ ৪১ হাজার ২০১ কৃষক এই সহায়তা পাচ্ছেন। তাছাড়া প্রায় ১ কোটি কৃষক ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ পেয়েছেন। ভর্তুকির টাকা যেন সরাসরি কৃষকদের হাতে পৌঁছতে পারে সেজন্য। একজন কৃষক যদি একবিঘা জমির জন্য (ক্ষেত্রভেদে) সর্বনি¤œ ১ কেজি থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২০ কেজি ডিএপি সার এবং সর্বনি¤œ ৫ কেজি থেকে সর্বোচ্চ ১৫ কেজি এমওপি সার পাবেন।
যাতে সহজভাবে কৃষকরা চাষাবাস করতে পারেন সেজন্যই সরকারের এই উদ্যোগের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রণোদনার আওতায় একজন কৃষক ১ বিঘা জমির জন্য ২০ কেজি গমবীজ অথবা ২ কেজি ভুট্টা বীজ অথবা ১ কেজি সরিষার বীজ অথবা ১ কেজি চীনাবাদাম বীজ অথবা ৫ কেজি মুগ বীজ অথবা ৮ কেজি খেসারি বীজ অথবা ৮ কেজি মাসকলাই বীজ অথবা ৭ কেজি হেলন বীজ অথবা ১ কেজি তীল বীজ অথবা ১০ গ্রাম ভিটি বেগুনোর বীজ বিনামূল্যে পাবেনÑ সেই ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন আবাদি জমি খালি পড়ে থাকবে না। সবটা যাতে চাষবাস হয় সে ব্যবস্থাও তার সরকার নেবে এবং ভিজিডি-ভিজিএফের মাধ্যমেও তার সরকার এই সময়ে খাদ্য বিতরণ অব্যাহত রাখবে। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই তার সরকারের লক্ষ্য উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, আর নদীর ভাঙন থেকে সমগ্র বাংলাদেশকে রক্ষার বিভিন্ন প্রকল্প তার সরকার হাতে নিয়েছে। তিনি বলেন, এসব এলাকার জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নদী ভাঙন রোধে ৩টি প্রকল্প আমরা হাতে নিয়েছি। তাছাড়া সড়ক ও জনপদ বিভাগে বগুড়া-সারিয়াকান্দি রাস্তা যাতে সম্প্রসারণ হতে পারে সে ব্যবস্থাও তার সরকার করবে।
সোনাতলায় যে ব্রিজের কথা বলা হয়েছে সেই গার্ডার ব্রিজসহ সমস্ত ব্রিজ নতুনভাবে করে দেওয়ার পদক্ষেপ নেবে তার সরকার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করতে চাই এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন হলে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। মানুষের কর্মসংস্থান হয়। কাজেই আপনাদের কাছে আমার আহ্বান থাকবে আপনারাও আমাদের সহযোগিতা করেন। বাংলাদেশকে নদী মাতৃক দেশ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্যা মাঝে মাঝে আসবে। তাই নৌকা ছাড়া আসলে গতি নাই বাঙালির। নৌকা আমাদের সময় সময় কাজে লাগবেই। এটা হলো বাস্তবতা। আর এই নৌকা মার্কা যখন ক্ষমতায় আসে তখনই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। সরকারপ্রধান দেশবাসীসহ বন্যাদুর্গতদের প্রতি দেশের প্রতি ইঞ্চি ভূখ- উৎপাদনের কাজে ব্যয় করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ১ ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। কারণ ভিক্ষা চাইলে ভিক্ষুক জাতির কোনো ইজ্জত থাকে না, তা জাতির পিতাই বলে গেছেন।
প্রত্যন্ত অঞ্চলেও যাতে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছায় তার সরকার সেজন্য ইতোমধ্যেই অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি অঞ্চলেই খাদ্য পৌঁছে যাবে। ওষুধ পৌঁছে যাবে। চিকিৎসার ব্যবস্থা হবে, একটি মানুষ যাতে কষ্ট না পায় আপনারাও সেটা লক্ষ্য রাখবেন। আমাদের সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আমি বলব এ বিষয়টি লক্ষ্য রাখার জন্য। তিনি বলেন, আমরা দেশের সেবা করি, মানুষের সেবা করি। তাই তো আজকে ছুটে এসেছি আপনাদের মাঝে, আপনাদের স্বচক্ষে দেখতে। আমি জানি সারা বাংলাদেশের যেখানে যেখানে বন্যা সেখানে মানুষ কত কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু আল্লাহর রহমতে এটুকু কথা দিতে পারি এই বন্যায় কাউকে আমরা কষ্ট পেতে দেব না। আপনাদের যাদের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে তাদের প্রত্যেককে আমরা ঘরবাড়ি তৈরি করে দেব। আমরা টিন দেব, নগদ টাকা আমরা ইতোমধ্যে দেওয়া শুরু করেছি, আরও দেব। সরকারপ্রধান বলেন, নদীতে যাদের ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে যারা নিঃস্ব, ভূমিহীন হয়ে গেছেন তাদের প্রত্যেককে আমরা সরকারের পক্ষ থেকে জমি দেব। যেসব স্কুল-কলেজ ধ্বংস হয়েছে সেগুলো আমরা মেরামত এবং তৈরি করে দেব।