বাংলাদেশ সরকারের প্রথম আদেশপত্র-১৯৭১
Laws Continuance Enforcement Order-Mujibnagar
Dated 10th day of April, 1971
I Syed Nazrul Islam, the Vice President and Acting President of Bangladesh, in exercise of the powers conferred on me by the Proclamation of Independence dated tenth day of April, 1971 do hereby order that all laws that were in force in Bangladesh on 25th March, 1971 shall subject to the proclamation aforesaid continue to be so in force with such consequential changes as may be necessary on account of the creation of the sovereign independent state of Bangladesh formed by the will of the people of Bangladesh and that all government officials- civil, military, judicial and diplomatic who take the oath of allegiance to Bangladesh shall continue in their offices on terms and conditions of service so long enjoyed by them and District Magistrates, in the territory of Bangladesh and all diplomatic representatives elsewhere shall arrange to administer the oath of allegiance to all government officials within their jurisdiction.
This order shall be deemed to have come in to effect from 26th day of March, 1971.
Syed Nazrul Islam
Acting President
আইনের অব্যাহত কার্যকরণ আদেশ মুজিবনগর
১০ এপ্রিল, ১৯৭১
আমি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল তারিখে স্বাধীনতার ঘোষণার দ্বারা ক্ষমতাবান হয়ে এতদ্দ¦ারা আদেশ করছি যে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পূর্বে যে সকল আইন কার্যকর ছিল তা কার্যকর থাকবে। তবে জনগণের ইচ্ছা অনুসারে গঠিত সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ সৃষ্টির কারণে যে আইন পরিবর্তন প্রয়োজন তা করা হবে। বেসামরিক, সামরিক, বিচার বিভাগ এবং কূটনীতিবিদগণ যারা বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন, তারা সকল দপ্তরের চাকরির যে সকল শর্তাধীনে চাকরি করতেন সেভাবে তারা চাকরিরত থাকবেন। জেলা জজ, ম্যাজিস্ট্রেট, দূতাবাসের প্রতিনিধিগণ তাদের এলাকার সরকারী কর্মকর্তাদের শপথের আয়োজন করবেন।
এ আদেশ ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ হতে কার্যকর হবে।
স্বাক্ষর
সৈয়দ নজরুল ইসলাম
ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি
শপথ অনুষ্ঠানের পর বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ ১৭ এপ্রিল প্রেসে এক বিস্তারিত বিবরণ দেন। তিনি বলেন
ÒBangladesh is at war. It has been given no choice but to secure its right of self-determination through a national liberation struggle against the colonial oppression of West Pakistan. ………….. Pakistan is now dead and buried under a mountain of corpses. ……. Yahya’s genocide is thus without political purpose. It serves only as the last act in the tragic history of Pakistan which Yahiya has chosen to write with the blood of the people of Bangladesh. The objective is genocide and scorched earth before his troops are either driven out or parish ….. Bangladesh will be the eighth most populous country in the world. Its only goal will be to rebuild a new nation from the ashes and carnage left behind by Yahiya’s occupation army.
In our struggle for survival we seek the friendship of all people, the big powers and the small. We now appeal to the nations of the world for recognition and assistance both material and moral in our struggle for nationhood. …….
This we now present to the world as the case of the people of Bangladesh. No nation has a greater right to recognition, no people have fought harder for this right.
Joy Bangla.
স্বাধীন বাংলার সংগ্রামী জনগণের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশাবলী
হানাদার পাকিস্তানী পশুশক্তিকে বাংলাদেশের পবিত্র মাটি থেকে হটিয়ে দেবার ও বাঙালীকে শোষণমুক্ত করে একটি নতুন সুখী-সমৃদ্ধ সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার দৃপ্ত শপথ ও ব্রত নিয়ে বাঙালীর প্রাণপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও নেতৃত্বে গত ১২ এপ্রিল রাতে স্বাধীন বাংলাদেশ বেতার থেকে বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করা হয়েছে। এ ঘোষণার পর থেকে মুক্তি সংগ্রাম ঠিক পূর্বের মতোই এক সুস্পষ্ট গতিতে চলছে। প্রতিটি বাঙালী আজ নিজ নিজ ঘরে প্রতিরোধের দুর্গ গড়ে সঙ্কল্প দৃঢ় থেকে আরও দৃঢ়তর করে তুলছে।
জনযুদ্ধের আশু সাফল্য অর্জনের উদ্দেশে সরকার সম্প্রতি কতগুলো নির্দেশ জারি করেছে।
নির্দেশাবলী
১. প্রতি শহর, গ্রাম, মহল্লায় একজন অধিনায়ক নির্বাচিত করে সমাজ জীবনে শৃঙ্খলা রক্ষা, অসহযোগ, প্রতিরোধ ও দুর্বার সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।
২. নিজ নিজ এলাকায় খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির চাহিদা মিটাবার জন্য খাদ্যশস্য সংগ্রহ ও উৎপাদন বাড়াতে হবে।
৩. চুরি, ডাকাতি, কালোবাজারি ইত্যাদি সমাজবিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কঠোর দৃষ্টি রাখতে হবে।
৪. দৈনন্দিন জীবনে সংযম ও কৃচ্ছ্র চালিয়ে যেতে হবে। সর্বপ্রকার বিলাসিতা ত্যাগ করে জাতির বৃহত্তর কল্যাণে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বের হাতকে দৃঢ়তর করতে হবে।
৫. শত্রুকে চিনতে হবেÑ দেশদ্রোহীকে শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৬. গ্রামে গ্রামে রক্ষীবাহিনী গড়ে তুলতে হবে। শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার সাথে মুক্তিবাহিনীর সাথে প্রতিরোধ সংগ্রামে অংশগ্রহণ করতে হবে।
৭. গ্রাম, শহর, মহল্লায় নেতা নির্বাচন করে যোগাযোগ ও পণ্য বিনিময়ের ব্যবস্থা করবে। উপরের স্তরে শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকবে প্রাদেশিক ও জাতীয় পরিষদে নির্বাচিত সদস্যদের হাতে।
৮. মুক্ত এলাকায় সরকারী-আধা সরকারী কর্মচারীরা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নির্দেশে কাজ করবে। শত্রুকবলিত এলাকায় নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
৯. সকল সামরিক, আধা সামরিক, কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত বাঙালী কর্মচারীরা নিকটতম মুক্তিসেনা শিবিরে যোগ দেবেন এবং কোন অবস্থাতে শত্রুর সহযোগিতা করবেন না।
১০. যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিশেষভাবে নৌ-চলাচল সংস্থার কর্মচারীরা শত্রুর সাথে সহযোগিতা করবেন না।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয় শেখ মুজিব।
১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য বিশ্বের সকল দেশের সরকারের নিকট মুজিবনগর সরকার পত্র প্রেরণ করে।
২৮ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের প্রতি অস্ত্র সাহায্য ও স্বীকৃতি প্রদানের জন্য অনুরোধ জানান। তিনি বিদেশে বসবাসরত সকল বাঙালীকে মুক্তিযুদ্ধে সাহায্যের আবেদন জানান।
বাংলাদেশ সরকার দেশবাসীর প্রতি নি¤œলিখিত নির্দেশাবলী জারি করেÑ
পাক সরকার ও দখলদার বাহিনীকে কোন প্রকার সহযোগিতা করা চলবে না। সকল প্রকার খাজনা, শুল্ক পাক সরকারকে দেয়া চলবে না।
ষ আঠারো থেকে ত্রিশ বছরের যুবকরা অবিলম্বে মুক্তিফৌজের অধিনায়ক বা প্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ স্থাপন করবেন।
ষ পাটের পরিবর্তে আউস ধান চাষ করতে হবে।
ষ গণধিকৃত দখলদার নিঃশেষ করতে হবে। সংগ্রামবিরোধী গোয়েন্দাদের নির্মূল করা প্রত্যেকটি বাঙালীর কর্তব্য।
ষ মুক্তিফৌজের সাথে সর্বপ্রকার সহযোগিতা এবং দখলদার বাহিনীর প্রতিপদে বাধা দিতে হবে।
ষ সকল সরকারী-বেসরকারী কর্মচারীদের পাক সরকারের অধীনে কাজে যোগ না দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করে মুক্তি সংগ্রামের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
Ñ স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রচার দপ্তর থেকে প্রচারিত।