প্রতিবেদন

বাল্যবিবাহ আইনের বিরোধিতাকারীদের বাস্তবতা সম্পর্কে ধারণা নেই

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাল্যবিবাহ আইনটি ‘অত্যন্ত বাস্তবসম্মত’ দাবি করে বলেছেন, ১৮ বছর বয়সের আগে আদালত ও পরিবারের অনুমতি নিয়ে বিয়ের বিষয় সংবলিত বাল্যবিবাহ আইনটি অত্যন্ত বাস্তবসম্মত চিন্তা থেকে করা হয়েছে। সব কিছু বিবেচনা করে ও বাস্তবতাকে সামনে রেখেই আইনটি করা হয়েছে। যারা এর বিরোধিতা করছে তাদের গ্রাম-গঞ্জের সামাজিক-পারিবারিক বাস্তবতা সম্পর্কে কোনোই ধারণা নেই। ঢাকা শহরে বাস করে গ্রামের অবস্থা জানা যায় না।
গত ৭ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বাল্যবিবাহ আইনে সংযুক্ত এই বিধানের যুক্তি তুলে ধরে বলেন, অত্যন্ত বাস্তবসম্মত একটা চিন্তা এটি। যেটা সম্পর্কে বিরোধিতাকারীদের কোনো ধারণা নেই। ঢাকা শহরে বাস করে গ্রামের অবস্থা জানা যায় না। গ্রামে যার একটা উঠতি বয়সী মেয়ে আছে সে জানে প্রকৃত বাস্তবতা কী।
শেখ হাসিনা বলেন, বাল্যবিবাহ আইন নিয়ে ঘাবড়ানো কিংবা চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় নিতে হবে। যারা কোনো দিন গ্রামে বাস করেনি, গ্রামের সমাজ সম্পর্কে জানে না, শুধু একবার গেলাম আর দেখলাম, কথা বললামÑ এসব করে সমাজ সম্পর্কে জানা হয় না। দিনের পর দিন গ্রামে বসবাস করলে গ্রামের বাস্তব অবস্থা ও গ্রামের আর্থ-সামাজিক অবস্থা সেটা উপলব্ধি করা যায়, জানা যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সব কিছু বিবেচনা করে এই বাল্যবিবাহ আইনটি করেছি। বাস্তবতাকে সামনে রেখেই করা হয়েছে। কিছু কিছু আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এটা নিয়ে অনেক কথা বলছে। যারা কথা বলছেন তারা কিন্তু একটানা দু-চার বছর গ্রামে বসবাস করেন নি। তাই এ সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণাই নেই। তিনি বলেন, আমাদের দেশে কিছু বিষয় আছে, সে বিষয়গুলো নিয়ে তারা কখনও ভাবে না। যেহেতু বাস্তবতা থেকে তারা অনেক ঊর্ধ্বে। রাজধানীতে বসবাস করে, রাজধানীর পরিবেশ তারা দেখেন। বাস্তব অর্থে গ্রামীণ অবস্থা সম্পর্কে তারা জানে না।
যুক্তি উপস্থাপন করে সরকার প্রধান বলেন, প্রত্যেক আইনেই যদি কোনো অনাকাক্সিক্ষত অবস্থার সৃষ্টি হয়, তা হলে সেখানে কি করণীয় তার একটা সুযোগ অবশ্যই দিতে হবে। সেটা যদি না দেওয়া হয় তা হলে এই সমাজের জন্য অনেক বড় একটা বিপর্যয় নেমে আসবে। তিনি বলেন, আমরা ১৮ বছর বিয়ের বয়স নির্দিষ্ট করে দিয়েছি। কিন্তু আপনারা চিন্তা করেন, একটা মেয়ে যে কোনো কারণেই হোক যদি ১৩-১৪ বছর বয়সে প্রেগনেন্ট (গর্ভবতী) হয়ে গেল, তাকে এ্যাবরসন করানো গেল না। যে শিশুটি নেবে সেই শিশুটির অবস্থানটা কোথায় হবে? তাকে কি সমাজ গ্রহণ করবে? তাকে কি বৈধভাবে নেবে? বাস্তবতা হচ্ছে নেবে না।
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, এ রকম যদি কোনো একটা ঘটনা ঘটে তা হলে কি হবে? যে শিশুটার জন্ম হলো তার কি হবে? যে মেয়েটা সন্তান জন্ম দিল তার অবস্থাই বা কি হবে? এ ধরনের যদি কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে সেখানে যদি বাবা-মা এবং কোর্টের মতামত নিয়ে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় তা হলে মেয়েটা বেঁচে গেল। আর যে বাচ্চাটা হলো সেও বিধাতা পেল। এই শিশুটি একটা ভবিষ্যৎ পেল।
তিনি বলেন, ওয়েস্টার্ন কান্ট্রির (পশ্চিমা বিশ্বে) অনেক দেশে ১৪ বছর বিয়ের বয়স। কোথাও আছে ৯ বছর বিয়ের বয়স। সেই সব জায়গায় বিশেষ করে ইউরোপ-ইংল্যান্ড-আমেরিকায় টিনএজ মাদারের সংখ্যা অসংখ্য। এটা একটা সামাজিক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে গেছে। কারণ এই সমস্ত বাচ্চা মেয়েরা ১২-১৩-১৪ বছরে মা হয়ে যায়। কারণ তারা কিন্তু এ্যাবরসন করাতে চায় না। বাচ্চাটাকে যদি লেখাপড়া করাতে হয়, তা হলে ওই দেশে কিন্তু প্রশ্ন করে না বৈধ সন্তান না অবৈধ সন্তান। বাবা-মায়ের নাম কী এটা কিন্তু জিজ্ঞেস করবে না। কিন্তু আমাদের দেশে আগে জিজ্ঞেস করবে বাপের নাম কি, মায়ের নাম কি? বাচ্চাকে বিয়ে দিতে গেলে ছেলে হোক মেয়ে হোক, অবৈধ সন্তান বিয়ে হবে না। চাকরি দেবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওয়েস্টার্ন কান্ট্রিতে এটা কোনো বিষয় না। আমাদের দেশে এটা নেই। বাবা-মা অবৈধ সন্তান জন্ম দেওয়া মেয়েটাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে, ভবিষ্যতে মেয়েটাকে পতিতালয়ে যেতে হবে। আমাদের এখানে যারা বাল্যবিবাহ আইন নিয়ে কথা বলছেন, তারা কি এই বাস্তবতাটা চিন্তা করেন? তারা তো এই বাস্তবতা চিন্তা করেন না বলেই নানা কথা বলেন।
ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা দুইটা এনজিও করে পয়সা কামায়। আমি যতক্ষণ সরকারের আছি, আমি মনে করি এটা আমার দায়িত্ব যে, সমাজে সেই সন্তানটাকে জায়গা করে দেওয়া। এ কারণেই বাল্যবিবাহ আইনে এই বিশেষ বিধানটা আমি রেখেছি। এটা অত্যন্ত একটা বাস্তবসম্মত চিন্তা, যেটা সম্পর্কে এনাদের (বিরোধিতাকারী) কোনো ধারণা নেই। আমরা এ ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *