বিএনপি নেতা নুরুলসহ ৬ জনের মৃত্যুদ- বহাল
জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক এমপি আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলার ছয় আসামির মৃত্যুদ- বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। মৃত্যুদ-প্রাপ্তরা হলেনÑ বিএনপির যুবদলের তৎকালীন কেন্দ্রীয় নেতা নুরুল ইসলাম সরকার, নুরুল ইসলাম দিপু (পলাতক), মাহাবুবুর রহমান মাহবুব, শহিদুল ইসলাম সিপু, হাফিজ ওরফে কানা হাফিজ ও সোহাগ ওরফে সরু।
এ ছাড়া বিচারিক আদালতে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত সাত আসামির দ- হ্রাস করে যাবজ্জীবন কারাদ- দেওয়া হয়েছে। এরা হলেনÑ মোহাম্মদ আলী, সৈয়দ আহমেদ মজনু (পলাতক), আনোয়ার হোসেন আনু (পলাতক), রতন মিয়া ওরফে বড় রতন, কাশেম মাতবরের ছেলে জাহাঙ্গীর (পলাতক), মশিউর রহমান মশু (পলাতক) ও আবু ছালাম। নি¤œ আদালতে যাবজ্জীবন দ-প্রাপ্ত নুরুল আমীনের সাজা বহাল রাখা হয়েছে।
খালাস পেয়েছেন ১১ আসামি। এদের মধ্যে আমীর, জাহাঙ্গীর ওরফে বড় জাহাঙ্গীর, মেহের আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর, ফয়সাল (পলাতক), লোকমান হোসেন বুলু, রনি ফকির (পলাতক), খোকন (পলাতক) ও দুলাল মিয়াকে বিচারিক আদালত মৃত্যুদ- দিয়েছিলেন। এ ছাড়া যাবজ্জীবন দ-প্রাপ্ত রকিবউদ্দিন সরকার ওরফে পাপ্পু সরকার, আয়ুব আলী ও মনিরকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।
ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের ডিভিশন বেঞ্চ গত ১৫ জুন এই রায় ঘোষণা করেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেছে, আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যাকা-টি নিঃসন্দেহে একটি জঘন্যতম ঘটনা। দেশের ইতিহাসে এ ধরনের হত্যাকা- খুব কমই সংঘটিত হয়েছে। রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে তা এই হত্যাকা-ের ঘটনা থেকে উপলব্ধি করা যায়। হাইকোর্ট বলে, দেশের রাজনৈতিক দলগুলো উচ্ছৃঙ্খলকর্মীদের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল, যা সুষ্ঠু রাজনীতি বিকাশের ক্ষেত্রে বিরাট অন্তরায়। সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ না ঘটলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা যাবে না, গণতন্ত্রও মুখ থুবড়ে পড়বে।
আদালত বলেছে, যে স্থানে যেভাবে এই হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে এরূপ হত্যাকা-কে এক কথায় মাস কিলিং বলা চলে। তিন দিক থেকে আক্রমণের ফলে ঘটনাস্থলে অনেক লোক মৃত্যুবরণ করতে পারত। একটি নিরস্ত্র জনসভা বা বৃহৎ সমাবেশে মানুষ হত্যার উদ্দেশে যখন আক্রমণ করা হয় এবং সেখানে যদি অসংখ্য লোক নিহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং সেখানে যদি একজন লোকও নিহত হয়Ñ এ ধরনের হত্যাকা-কে মাস কিলিং বলা যায়। আর এই হত্যাকা-ের জন্য নুরুল ইসলাম সরকার, নুরুল ইসলাম দিপু এবং তার সহযোগীরা সরাসরি জড়িত।
তৎকালীন বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময় ২০০৪ সালের ৭ মে নোয়াগাঁও এমএ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় আহসান উল্লাহ মাস্টারকে। ঘটনার পরদিন তার ভাই মতিউর রহমান বাদী হয়ে টঙ্গী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০০৫ সালে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ২২ জনকে মৃত্যুদ- এবং ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ- প্রদান করেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিল করেন। মামলাটি ডেথ রেফারেন্স আকারে হাইকোর্টে আসে। ওই ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের আইনজীবীদের দীর্ঘ শুনানি শেষে হাইকোর্ট ১৫ জুন উপরোক্ত রায় ঘোষণা করেন।
রায়ের সাজার আদেশের অংশ ঘোষণা করেন বিচারপতি কৃঞ্চা দেবনাথ। রায়ে বলা হয়, আহসান উল্লাহ মাস্টারের স্ত্রী, পুত্র, কন্যাগণ এই হত্যাকা-ের সঠিক বিচার যেমন চান, একইভাবে ওমর ফারুক রতনের পিতা-মাতা ও তাদের প্রিয়জন সঠিক বিচার আশা করেন। অন্যদিকে ২০০৫ সালের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর রায় প্রদান করার দিন থেকে বা তারপর থেকে যারা কারাগারে আছেন তারাও ন্যায়বিচারপ্রার্থী। প্রত্যেক সাজাপ্রাপ্ত আসামির ঘটনার সাথে তার সম্পৃক্ততা সাক্ষ্য পর্যালোচনা করে অপরাধের গভীরতা ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে বিবেচনা নিয়ে এই রায় প্রদান করা হলো।