বিদেশি বন্ধুদের মুক্তিযুদ্ধের সম্মাননা
[বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের অবিস্মরণীয় অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার যেসব বিদেশি বন্ধুদের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দিয়েছে, এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ]
প্রথম দফা (২৫.০৭.২০১১)
স্বাধীনতার ৪০ বছর পর বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অনন্য সাধারণ অবদান রাখার জন্য ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে দেওয়া হলো সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান। বঙ্গভবনের দরবার হলে এক আবেগঘন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কংগ্রেস নেত্রী ও ইন্দিরা গান্ধীর পুত্রবধূ সোনিয়া গান্ধীর হাতে তুলে দেন রাষ্ট্রীয় এই সম্মাননা। সৌহার্দ, শান্তি ও অর্জনের প্রতীক হিসেবে কদম ফুলের নকশা আঁকা ষোড়শ শতকের টেরাকোটার আদলে ১৮ ক্যারেটের ২০০ ভরি ওজনের স্বর্ণ দিয়ে তৈরি ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্মাননা’ গ্রহণের সময় সোনিয়া গান্ধী জড়িয়ে পড়েন আবেগে। বলেন, এই সম্মান ইন্দিরা গান্ধীর একার নয়, এটি ভারতের সবার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে প্রায় ১ হাজার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে ইন্দিরা গান্ধীর পুত্রবধূর হাতে সম্মাননা তুলে দিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধুকে তার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা প্রদানকারী একজনকে সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা জানাতে পেরে আজ আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী সেদিন বীর মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং আনুষঙ্গিক সহযোগিতা দেওয়ার পাশাপাশি কয়েকটি প্রধান শক্তিধর দেশের চ্যালেঞ্জ উপেক্ষা করে বাংলাদেশের জন্য ব্যাপক ও জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর অসামান্য অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, তিনি সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশের জনগণের একজন পরম হিতাকাক্সক্ষী ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদানের জন্য তাকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা প্রদান করতে পেরে আমরা নিজেরাও সম্মানিত বোধ করছি। তিনি ব্যক্তিগতভাবে তার এবং বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
দ্বিতীয় দফা (২৭.০৩.২০১২)
যেসব দেশের ব্যক্তি ও সংগঠন সম্মাননা পেয়েছে সেসব দেশ হচ্ছেÑ ভারত, রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, সাবেক যুগোস্লাভিয়া, ইতালি, জাপান, নেপাল, কিউবা, আর্জেন্টিনা, ভিয়েতনাম, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, ভেনিজুয়েলা, সুইজারল্যান্ড, ভুটান, সুইডেন, ডেনমার্ক, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা, নেদারল্যান্ডস, দক্ষিণ কোরিয়া, পোল্যান্ড, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া ও কানাডা।
তালিকার মধ্যে রয়েছেনÑ ভারতের সিদ্ধার্থ শংকর রায়, বিচারপতি সা’দাত আবুল মাসুদ, মহারানী বিভা কুমারী দেবী, সমর সেন, দেবদুলাল বন্দোপাধ্যায়, প-িত রবিশংকর, ওস্তাদ আলী আকবর খাঁ, ওয়াহিদা রেহমান, অভিনেতা সুনীল দত্ত, নার্গিস দত্ত, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, অন্নদাশংকর রায়, জগজীবন রাম, ভুপেন হাজারিকা, ফিল্ড মার্শাল এসএএম মানেকশ, লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা, লে. জেনারেল জ্যাকব, দশরথ দেব বর্মণ, শিল্পী লতা মুঙ্গেশকর, ডিপি ধর, জেনারেল উবান, গোলক মজুমদার।
অন্যান্য দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেনÑ রাশিয়ার আন্দ্রে গ্রোমিকো, আলেক্সি নিকোলায়েভিচ কোসিগিন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর অ্যাডওয়ার্ড মুর কেনেডি, রিচার্ড টেইলর, লিয়ার লেভিন, অ্যালেন গিন্সবার্গ, ব্রিটেনের স্যার অ্যাডওয়ার্ড রিচার্ড জর্জ হিথ, লর্ড হ্যারল্ড উইলসন, সায়মন ড্রিং, বিশ্ব খ্যাত গায়ক জর্জ হ্যারিসন, জুলিয়ান ফ্রান্সিস, মার্ক টালি, যুগোস্লাভিয়ার মার্শাল জোসেফ ব্রুজ টিটো, নেপালের বিপি কৈরালা, অস্ট্রেলিয়ার উইলিয়াম এসএস ওডারল্যান্ড প্রমুখ।
বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে রয়েছেÑ তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির পলিট ব্যুরো, ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (বিবিসি), ভারতের আকাশবাণী, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সহায়ক সমিতি, রেডক্রস, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর), বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অক্সফাম।
তৃতীয় দফা (২০.১০.২০১২)
‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ নেন ভারতের সাবেক কূটনীতিক শশাঙ্ক এস ব্যানার্জী, দক্ষিণ ভিয়েতনামের ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টের সাবেক নেতা নগুয়েন থি বিন, ভারতীয় সাংবাদিক দিলীপ চক্রবর্তী, হিরন্ময় কার্লেকার, পঙ্কজ সাহা ও মানস ঘোষ, ব্রিটিশ সাংবাদিক লরেন্স ক্লিফটন, ভারতীয় সমাজসেবক নারায়ণ দেশাই, অঞ্জলী লাহিড়ী ও আফজাল হোসেন, মার্কিন রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক জন এ ডাইন ও টমাস এ ডাইন, ভারতীয় চিত্রগ্রাহক ও সমাজসেবক আহম্মদ হোসেন, সুইডেনের রাজনীতিবিদ ও মানবাধিকার কর্মী লার্স লেইসনবার্গ, ও সাংবাদিক টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ভেন স্ট্রমবার্গ, ভারতীয় রাজনীতিবিদ ও অর্থনীতিবিদ ড. অশোক মিত্র, ভারতীয় নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন এমএনআর সামন্ত, ভারতীয় সাংবাদিক ও অধ্যাপক তরুণ স্যানাল, ভারতীয় শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার, ভারতীয় সাংবাদিক ও চিত্রগ্রাহক রবীন সেনগুপ্ত, ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার সান্ত সিং ও অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল অশোক তারা, ভারতীয় সাংস্কৃতিক কর্মী উপেন তরফদার এবং ব্রিটিশ সাংবাদিক ও লেখক মার্ক টালি। এরা সবাই নিজেরাই উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।
এ ছাড়া ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাবেক উপমন্ত্রী প্রয়াত মনসুর আলী, অধ্যাপক ও সমাজকর্মী প্রয়াত গৌরী আইয়ুব, কবি প্রয়াত কাইফি আজমী, লেখক ও সাংবাদিক প্রয়াত দীপেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজনীতিবিদ প্রয়াত শিবনাথ ব্যানার্জী, সাংবাদিক প্রয়াত অনীল ভট্টাচার্য ও প্রয়াত ভূপেন দত্ত ভৌমিক, চিকিৎসক প্রয়াত শিশির কুমার বোস, কবি প্রয়াত নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, ত্রিপুরার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও সিপিএম নেতা প্রয়াত নৃপেন চক্রবর্তী, সাহিত্যিক, সমাজসেবক প্রয়াত মৈত্রেয়ী দেবী, অধ্যাপক ও সমাজসেবক বিধু ভূষণ দত্ত, ১৪ গার্ড রেজিমেন্টের শহীদ ল্যান্সনায়েক আলবার্ট এক্কা, সাংবাদিক সন্তোষ কুমার ঘোষ, শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবক ড. ফুলরেণু গুহ, রাজ্যসভার সাবেক সদস্য প্রয়াত ভূপেশ গুপ্ত, গীতিকার গোবিন্দ হালদার, সমাজসেবক ও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেত্রী প্রয়াত কল্পনা দত্ত যোশী, সমাজসেবক প্রয়াত মাওলানা আবদুল লতিফ, গীতিকার প্রয়াত গৌরী প্রসন্ন মজুমদার, সমাজসেবক প্রয়াত দিলীপ মুখার্জী, প্রয়াত অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার কৌলাস প্রসাদ পান্ডে, ভারতের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত জগজীবন রাম, কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিআই) সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত চন্দ্র রাজেশ্বর রাও, ইতিহাসবিদ প্রয়াত অধ্যাপক নীহার রঞ্জন রায়, প্রয়াত ক্যাপ্টেন উইলিয়ামসন সাংমা, সাংস্কৃতিককর্মী প্রয়াত প্রণবেশ সেন, সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত ড. ত্রিগুনা সেন, চিত্রগ্রাহক প্রয়াত অমিয় তরফদার, যুক্তরাজ্যের রাজনীতিবিদ প্রয়াত ডোনাল্ড চেসওর্থ, অস্ট্রেলিয়ার চিকিৎসক প্রয়াত জিওফ্রে ডেভিস এবং ইতালির ধর্মযাজক ও সমাজসেবক ফাদার মারেনো রেগানের পক্ষে তাদের প্রতিনিধিরা সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন।
কাইফি আজমীর পক্ষে তার মেয়ে ভারতের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও সমাজকর্মী শাবানা আজমী এবং চন্দ্র রাজেশ^র রাওয়ের পক্ষে সিপিআইয়ের নেতা অর্ধেন্দু ভূষণ বর্ধন (এবি বর্ধন) এবং জগজীবন রামের পক্ষে তার নাতি আনসুল অভিজিৎ সম্মাননা স্মারক নেন। আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক অভীক সরকার এবং ওয়ার্ল্ড পিস কাউন্সিল ও রমেশ চন্দ্রের পক্ষেও তাদের প্রতিনিধিরা সম্মাননা নেন।
চতুর্থ দফা (১৫.১২.২০১২)
সম্মাননা পাওয়া এই বন্ধুদের মধ্যে রয়েছেন কমিউনিস্ট নেত্রী ইলা মিত্র, তার স্বামী রমেণ মিত্র, গণসংগীতের প্রবাদপুরুষ সলিল চৌধুরী, কণ্ঠশিলী হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও মান্না দে, চলচ্চিত্রকার ও সাহিত্যিক ঋত্বিক ঘটক ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শিল্পী মকবুল ফিদা হুসেন।
সম্মাননা পেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করে খেতাব অর্জনকারী একমাত্র বিদেশি ডব্লিউ এএস ওডারল্যান্ডও। একাত্তরে বাটা সু কোম্পানির কর্মকর্তা হিসেবে বাংলাদেশে থাকা অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত।
একাত্তরে বাঙালির পক্ষে কথা বলে নিজ দেশের শাসকদের রোষানলে পড়া পাকিস্তানি সাইয়েদ আসিফ শাহকারও এবার সম্মাননা নেন। বিপুল করতালির মধ্যে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে নিজ হাতে সম্মাননা পদক ও সনদ তুলে নেন বর্তমানে সুইডেনের নাগরিক আসিফ শাহকার।
‘নাচোলের রানী মা’ হিসেবে পরিচিত প্রয়াত ইলা মিত্র ও রমেন মিত্রের পক্ষে পদক নেন তাদের ছেলে রমেন্দ্রনাথ মিত্র মোহন। ইলা মিত্রের বাড়ি এ দেশেই। পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পর নির্যাতনের মুখে তিনি দেশত্যাগে বাধ্য হন। পশ্চিমবঙ্গে কমিউনিস্ট আন্দোলনে সক্রিয় ইলা মিত্র বামফ্রন্টের হয়ে ভারতের লোকসভায়ও প্রতিনিধিত্ব করেন।
মিলনায়তনে উপস্থিত অতিথিদের ব্যাপক করতালির মধ্য দিয়ে ভারতের সেনা কর্মকর্তা প্রয়াত গহৃর্ব নাগরার পক্ষে সম্মাননাপত্র নেন তার ছেলে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার এইচএস নাগরা। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর সকালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল নাগরা পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজীকে আত্মসমর্পণে রাজি হতে বাধ্য করেছিলেন। পাকিস্তানের পক্ষে আমেরিকার নীতির প্রতিবাদে ইউএসএআইডি থেকে পদত্যাগকারী টাউনসেন্ড সুয়াজি নিজে শেখ হাসিনার হাত থেকে সম্মাননাপত্র নেন। প্রয়াত মকবুল ফিদা হুসেনের পক্ষে তার ছেলে শামসাদ হোসেন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেন। ঋত্মিক ঘটকের পদক নেন তার মেয়ে সমহিতা ঘটক।
প্রয়াত সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পক্ষে তার ভাই অনীল গঙ্গোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের পক্ষে ছেলে জয়ন্ত মুখোপাধ্যায় পদক নেন।
ওডারল্যান্ডের পক্ষে পদক নেন ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার। এবার সম্মাননা পাওয়াদের মধ্যে ছিলেনÑ ভারতের রাজনীতিক বাঘা যতীন, নেপাল নাগ, নিবেদিত নাগ, নিখিল চক্রবর্তী, রেনু চক্রবর্তী, সৈয়দ আবুল মানসুর হাবিবুল্লাহ, নেপাল নাগ, জয়প্রকাশ নারায়ণ, শান্তিময় রায় ও একে গোপালান, সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত প্রবোধ চন্দ্র ও আবু বকর আতাউল গণি খান চৌধুরী।
সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদ তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়, কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ও লোকসভার সদস্য খগেন দাস, বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বোস, লেখক ও সাংস্কৃতিক কর্মী রিংকি রায় ভট্টাচার্য, সমাজসেবক আশরাফি বেগম, হাবুল ব্যানার্জী, বিদ্যানাথ মজুমদার ও হরি নারায়ণ চক্রবর্তী সম্মাননা পান।
সাংবাদিক কৃষা দেবনাথ, বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়, বাসব সরকার ও বরুণ সেনগুপ্ত, অধ্যাপক জিষু দে ও মীরা দে, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব প্রীতিশ নন্দী, সাংবাদিক ও সমাজসেবক অজিত কুমার দাস, চিকিৎসক সুজিত দে, অভিনেত্রী নারগিস জাহাঙ্গীর রেবাদ (শাম্মী), আইনজীবী ও সমাজসেবক আবদুস সালাম, অভিনেতা নীরেন সেনগুপ্তা, সংগীত পরিচালক কল্যাণজী ভিরজী শাহ, আনন্দজী ভিরজী শাহকে এবার সম্মাননা দেওয়া হয়।
বিএসএফের সাবেক প্রধান খসরু এফ রুস্তমজী, সেনাবাহিনীর সিপাহী আনসু প্রসাদও সম্মাননা পান।
সম্মাননা দেওয়া হয় মার্গারেট রোজ মাওলং, আমেরিকার চিকিৎসক ও সমাজসেবক লিঙ্কন সি চেন, সমাজসেবক মারথা অলার চেন, সাংবাদিক ড্যান কগিন, অধ্যাপক স্টিফেন অ্যালেন মার্গলিন, ফ্রান্সের চিকিৎসক পৃথীনান্দ মুখোপাধ্যায়, যুক্তরাজ্যের রাজনীতিক মার্টিন স্কট স্টিল, নেপালের রাজনীতিক অর্জুন নরসিংহ কেসি, সাবেক মন্ত্রী ও রাষ্ট্রদূত চক্র প্রসাদ বাস্তলা এবং সাবেক স্পিকার দামান নাথ ধুঙ্গানা, ভুটানের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সমাজসেবক দাসো কর্ম দর্জি এবং শ্রীলংকার সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত সেনারাত গুণাবর্ধনকে। ৬০ ব্যক্তির পাশাপাশি এবার সম্মাননা দেওয়া হয় দুটি প্রতিষ্ঠানকে। এর একটি হলো সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র প্রাভদা। সংবাদপত্রের প্রধান সম্পাদক বরিস ও কোমতস্কি প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেন। আরও সম্মাননা পেয়েছে আগরতলার গোবিন্দ বল্লভ পন্থ হাসপাতাল। মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা দেওয়া এই হাসপাতালের পক্ষে সম্মাননাপত্র নেন ত্রিপুরা রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক সত্যরঞ্জন দেব বর্মা। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা বিদেশি বন্ধুদের সম্মান জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
পঞ্চম দফা (০৪.০৩.২০১৩)
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখার জন্য ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিকে জাতি শ্রদ্ধাভরে ও কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করবে। জাতীয় ইতিহাসে তার নাম, অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে বলে উল্লেখ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান। রাতে বঙ্গভবনে প্রণব মুখার্জির সম্মানে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ প্রদান অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পাশে উপস্থিত ছিলেন।
ষষ্ঠ দফা (২৪.০৩.২০১৩)
কিউবার সাবেক প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রো ও যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লর্ড হ্যারল্ড উইলসনকে রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান পর্যায়ের ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ দেওয়া হয়। অবশিষ্টরা পেয়েছেন ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’। এবারের অনুষ্ঠানটি উৎসর্গ করা হয় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের নামে। তার স্মরণে অনুষ্ঠানের শুরুতেই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এবারের সম্মাননা অনুষ্ঠানে ১৩ পাকিস্তানি, যারা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন, তাদেরও সম্মাননা দেওয়া হয়। পাকিস্তানি বন্ধুরা বলেছেন, তারা বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারকে সমর্থন করেন এবং ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বাড়াবাড়ির জন্য বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়া উচিত।
জাপানি বন্ধুর বাংলায় বক্তব্য : অনুষ্ঠানে সম্মাননাপ্রাপ্তদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন জাপানের অধ্যাপক তোমিও মিজোকামি। তিনি বাংলায় দেওয়া বক্তব্যে বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে জাপানের পত্রিকায় লেখার জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে এভাবে সম্মানিত করা হবেÑ এমনটা তিনি স্বপ্নেও ভাবেন নি। ৪২ বছর পর এই সম্মান পেয়ে তিনি অভিভূত। তিনি বলেন, বাংলাদেশিরা ভাষার জন্য লড়াই করার কারণে বাংলা আজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত। বলাবাহুল্য, স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সর্বোচ্চ অবদান ছিল। অধ্যাপক মিজোকামি আরও বলেন, দেশপ্রেম ও ভাষার জন্য বিশ্বে বাংলাদেশ একটি আদর্শ। জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষার চর্চা হচ্ছে। তিনি বক্তব্য শেষ করেন এই বলে, ‘সোনার বাংলা, আমিও তোমায় ভালোবাসি, জয় বাংলা।’
পাকিস্তানি বন্ধুরাও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চান : মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন অধ্যাপক ও সাংবাদিক ওয়ারিস মীর ছাত্রদের একটি দল নিয়ে বাংলাদেশে এসে গণহত্যার দৃশ্য দেখে এবং বিস্তারিত বিবরণ শুনে ক্ষুব্ধ হয়ে দৈনিক জং পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এ কারণে তিনি পাকিস্তানে সমালোচনা ও নিন্দার শিকার হয়েছিলেন। পাকিস্তানের এই প্রখ্যাত সাংবাদিককে মরণোত্তর সম্মাননা দেওয়া হয়। তার পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন তার ছেলে পাকিস্তানের প্রথিতযশা সাংবাদিক হামিদ মীর। সম্মাননা গ্রহণের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তিনি বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারকে সমর্থন করেন। এই বিচারের মান নিয়ে পশ্চিমা কিছু গণমাধ্যম প্রশ্ন উত্থাপন করলেও তিনি মনে করেন, এখানে যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পাদন হওয়ার পর পাকিস্তানেও তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি উত্থাপন করবেন। হামিদ মীর আরও বলেন, পাকিস্তানের অনেক রাজনীতিবিদ বাংলাদেশের কাছে একাত্তর সালের বাড়াবাড়ির জন্য ক্ষমা প্রার্থনাকে সমর্থন করেন। তিনি আশা করেন, ২০১৩ সালে পাকিস্তানে নতুন নির্বাচনের পর নতুন সরকার পাকিস্তানের পার্লামেন্টে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাইবে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মালিক গোলাম জিলানি পশ্চিম পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতারের পর তিনি জেনারেল ইয়াহিয়া খানকে একটি খোলা চিঠি লিখে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি প্রদানের জোর দাবি জানান। এ জন্য তাকে কারাবরণ করতে হয়েছিল। এর স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশে তাকে দেওয়া হলো মরণোত্তর সম্মাননা। তার পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন তার মেয়ে বিশিষ্ট মানবাধিকার নেত্রী আসমা জাহাঙ্গীর। তিনি প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সব সমাজেই কিছু শুভবুদ্ধির মানুষ থাকেন, যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। বাংলাদেশের বন্ধুরা সেদিন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। আসমা জাহাঙ্গীর মনে করেন, কোনো বিলম্ব না করে এখনই বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের একাত্তরের ভূমিকার কারণে ক্ষমা চাওয়া উচিত।
যারা সম্মাননা পেলেন : রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান ক্যাটাগরিতে ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা’ পেয়েছেন দুজন। তারা হলেন কিউবার সাবেক প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রো ও যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লর্ড হ্যারাল্ড উইলসন (মরণোত্তর)। এই প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের ১৩ জন সম্মাননা পেয়েছেন। তারা হলেনÑ নাসিম আক্তার, জাফর মালিক, ড. ইকবাল আহমেদ (মরণোত্তর), মীর গাউস বকস বিজেনজো (মরণোত্তর), ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ (মরণোত্তর), হাবিব জালিব (মরণোত্তর), মালিক গোলাম জিলানি (মরণোত্তর), শামীম আশরাফ মালিক (মরণোত্তর), ওয়ারিস মীর (মরণোত্তর), কাজী ফাইজ মোহাম্মদ (মরণোত্তর), আনোয়ার পীরজাদো (মরণোত্তর) ও আহমেদ সালিম। ভারত থেকে সম্মাননা পেয়েছেনÑ হিরণ¥য় কুমার ভট্টাচার্য, মৃন্ময় ভট্টাচার্য, ড. রূপেন্দ্র চন্দ্র ভৌমিক, ড. অমীয় কে চৌধুরী, ধীরাজ চৌধুরী, হিমাংশু মোহন চৌধুরী পদ্মভূষণ, রাখাল চন্দ্র রায় চৌধুরী, জেনারেল শঙ্কর রায় চৌধুরী, সন্দীপ দাস, মিহির দেব, জগদীশ চন্দ্র দে, পিসি সরকার জুনিয়র, মুন্সী মোহাম্মদ ফজলে কাদের, ড. ধ্রুবজ্যোতি লাহিড়ী, উৎপলা মিশ্র, মোহনলাল সাহা, জ্যোতি প্রসাদ সাইকিয়া, চন্দ্রশেখর সামাল পদ্মশ্রী, প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি, চিমান সিং যাদব মহাবীর চক্র, লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা পদ্মভূষণ (মরণোত্তর), আবু সাঈদ আইউব (মরণোত্তর), জ্যোতি বসু (মরণোত্তর), পুর্ণেন্দু কুমার বসু (মরণোত্তর), কবিতা বোস (মরণোত্তর), পরশনাথ চৌধুরী (মরণোত্তর), হরিসাধন দাশগুপ্ত (মরণোত্তর), প্রিয়া দর্শন সেনশর্মা, ক্রিপেশ রঞ্জন ঘোষ (মরণোত্তর), ইপ্সিতা গুপ্তা (মরণোত্তর), শহীদ রাইফেলম্যান পাতি রাম গুরুং মহাবীর চক্র, মেজর জেনারেল অ্যান্থনি হ্যারল্ড মিশিগান মহাবীর চক্র (মরণোত্তর), রানু মুখার্জি (মরণোত্তর), বিজয় সিং নাহার (মরণোত্তর), জীতেন্দ্র চন্দ্র পাল, ভাইস অ্যাডমিরাল সরোজ প্রকাশ মহাবীর চক্র (মরণোত্তর), রঘু রাই পদ্মশ্রী, শহীদ সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট শমসের সিং শর্মা, অনীল কুমার সরকার, নন্দিনী সাদপতি (মরণোত্তর), ড. অর্জুন সেনগুপ্ত (মরণোত্তর), লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাগত সিং পদ্মভূষণ (মরণোত্তর)। সংগঠন ক্যাটাগরিতে সম্মাননা পেয়েছে ভারতীয় রেডক্রস সোসাইটি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য শাখা। নেপালের যারা সম্মাননা পেয়েছেন, তারা হলেনÑ ড. নারায়ণ খাদকা, দিল বাহাদুর শর্মা ও ড. রামশরণ মাহাত। জাপানের সম্মাননা পেয়েছেনÑ তোমিও মিজোকামি ও হেইজি নাকামোরা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্মাননা পেয়েছেনÑ ড. ডেভিড নালিন, অ্যালেন গিনেসবার্গ (মরণোত্তর), গোস্তাভ এফ পাপানেক ও হান্না পাপানেক, অস্ট্রেলিয়ার হার্বাথ ফেইথ (মরণোত্তর) এবং সুইডেনের সেভেন লেমপেল (মরণোত্তর) সম্মাননা পেয়েছেন।
সপ্তম দফা (০১.১০.২০১৩)
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ফাকরুদ্দিন আলী আহমদ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী আইকে গুজরালকে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ দেওয়া হবে। তাদের পক্ষে এই পদক নিতে আসছেন তাদের সন্তান যথাক্রমে ড. পারভেজ আহমদ ও ড. তিজাস নায়েক। এটি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার জন্য সপ্তম দফা মৈত্রী সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান। অন্য ৫৭ ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানকে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা মৈত্রী সম্মাননা’ দেওয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছেনÑ ভারতের ৪৮ জন, পাকিস্তানের ৩ জন, জাপানের ২ জন, মিসরের ১ জন, যুক্তরাজ্যের ২ জন, যুক্তরাষ্ট্রের ২ জন ও তুরস্কের ১ জন করে।
সম্মাননার তালিকায় রয়েছেনÑ ভারতের চিকিৎসক ও রাজনীতিবিদ ডা. জয়নাল আবেদীন, কলামিস্ট ও সমাজকর্মী স্বপন কুমার ভট্টাচার্য, শিক্ষক ও সমাজকর্মী শ্রীমতি মৃন্ময়ী বোস, প্রযোজক ও অভিনেতা বিশ্বজিৎ রঞ্জন চ্যাটার্জি, সমাজকর্মী শ্যামল চৌধুরী, সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব শ্রীমতি গৌরী ঘোষ, সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব শ্রী পার্থ ঘোষ, বিমান বাহিনীর উয়িং কমান্ডার স্বরপ কৃষ্ণ কউল, মরণোত্তর লেখন ও সমাজকর্মী ড. আসগর আলী ইঞ্জিনিয়ার, মরণোত্তর সমাজকর্মী ¯েœহাংশু কান্ত আচার্য, মরণোত্তর চিত্রশিল্পী সোমনাথ হোরে, মরণোত্তর রাজনীতিবিদ ও ইসলামিক চিন্তাবিদ মাওলানা সৈয়দ আসাদ মাদানী, মরণোত্তর রাজনীতিবিদ ও সাবেক মন্ত্রী ভিকে কৃষ্ণ মেনন, মরণোত্তর সংগীতশিল্পী সুচিত্র মিত্র পদ্মশ্রী, মরণোত্তর সমাজকর্মী এনবি মুখার্জি, মরণোত্তর সমাজকর্মী রবীন্দ্র মোহন চৌধুরী, মরণোত্তর আইনজীবী ও সমাজকর্মী আবুল ফজল গোলাম ওসমানী, মরণোত্তর ভারতীয় সেনাবাহিনীর লে. কর্নেল কুলওয়ান্ট সিং, মরণোত্তর সাংবাদিক ও ফটোগ্রাফার কিশোর পারেখ, মরণোত্তর সাবেক সরকারি কর্মকর্তা অশোক রায়, মরণোত্তর কবি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সুভাস মুখোপাধ্যায়, মরণোত্তর অর্থনীতিবিদ সমর রঞ্জন সেন, মরণোত্তর কূটনীতিক সমর সেন, ভারতীয় সেনা সদস্য শহীদ সুবেদার মালকিত সিং মহাবীর চক্র, মরণোত্তর সুকদেব সিং সান্ধু এবং মরণোত্তর লে. জেনারেল তপিশ্বর নারায়ণ রায়না মহাবীর চক্র। পাকিস্তানের মরণোত্তর রাজনীতিবিদ মাস্টার খান গুল, মরণোত্তর রাজনীতিবিদ খান আবদুল ওয়ালী খান এবং মরণোত্তর রাজনীনিতবিদ খান আবদুল গাফ্ফার খান। জাপানের সমাজকর্মী কেন আরি মিতসু ও মরণোত্তর সেনা কর্মকর্তা ও সমাজকর্মী লে. জেনারেল লইচি ফুজিওয়ারা। যুক্তরাজ্যের সমাজকর্মী এলিন কনেট ও অধ্যাপক ও সমাজকর্মী ড. পাউয়েল কনেট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমাজকর্মী ম্যারি ফ্রান্সিস ডুনহাম এবং অধ্যাপক ড. আলফ্রেড সোমের। তুরস্কের মরণোত্তর সাংবাদিক ও সমাজকর্মী কেটিন ওজব্যার্ক এবং মিসরের প্রতিষ্ঠান এ্যাফ্রো-এসিয়ান পিপলস সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (এএপিএসও)।
অষ্টম দফা (০৭.০৬.২০১৫)
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে ভারতে জনমত সৃষ্টিতে অসামান্য অবদানের জন্য ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অটল বিহারি বাজপেয়ীকে স্বাধীনতা সম্মাননা প্রদান করেছে বাংলাদেশ। বঙ্গভবনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাতে এই সম্মাননা তুলে দেন রাষ্ট্রপতি আবদুুল হামিদ। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে অটল বিহারি বাজপেয়ীর উদ্দেশে মানপত্র পাঠ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা। সম্মাননা তুলে দিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুুল হামিদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধে যে বিদেশিরা অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়েছেন, বাংলাদেশের জনগণ তাদের অবদান সব সময়ই সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করে। সম্মাননা গ্রহণ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, অটল বিহারি বাজপেয়ী অনেকের জন্য প্রেরণা। এমন একজন ভারতরতœকে বাংলাদেশ সম্মানিত করেছে। এ সম্মাননা গ্রহণ তার নিজের জন্য যেমন সৌভাগ্যের মুহূর্ত, তেমনি ভারতবাসীরও গৌরবের মুহূর্ত।
নবম দফা (১৭.০৯.২০১৬)
কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে এলিওট ট্রুডোর মরণোত্তর ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ তার ছেলের হাতে তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী মন্ট্রিয়ালের হায়াত রিজেন্সি হোটেলে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে পিয়েরে ট্রুডোর ছেলে কানাডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর কাছে ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ হস্তান্তর করেন বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানিয়েছেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন ও বিশেষ অবদান রাখায় কানাডার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডোকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়।
সংকলন : আশরাফ সিদ্দিকী বিটু