প্রতিবেদন

বিশ্বনেতৃত্বে বাংলাদেশ

সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সংবর্ধনা সভায় প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বারবার বাধার মুখে পড়লেও এ দেশের গণতন্ত্র বিজয়ী হয়েছে। আমরা গণতন্ত্রের অভিযাত্রা সমুন্নত রাখতে পেরেছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই। প্রধানমন্ত্রী গত ২২ অক্টোবর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীর জমকালো সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) নির্বাহী কমিটির চেয়ারপারসন এবং সাবের হোসেন চৌধুরী ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় জাতীয় সংসদের পক্ষ থেকে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোনো রাজনীতিবিদকেই সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সঠিক সিদ্ধান্ত ও আত্মবিশ্বাস একটি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। আত্মবিশ্বাস নিয়ে চললে ও লক্ষ্যে স্থির থাকলে বিজয় অর্জন সুনিশ্চিত। ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও সাবের হোসেন চৌধুরীকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাত্র কদিনের ব্যবধানে সিপিএ ও আইপিইউর মতো দুটি আন্তর্জাতিক সংসদীয় ফোরামের শীর্ষ পদে বাংলাদেশের দুজন প্রার্থীকে বিজয়ী করে আমরা বিশ্বজয় করেছি। এ আমাদের গণতন্ত্রের বিশ্বজয়। অনেকে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। শত প্রতিকূলতা, ঘাত-প্রতিঘাত ও বাধা অতিক্রম করে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে শক্ত হাতে গণতন্ত্রের হাল ধরেছিলাম বলেই বাংলাদেশের এই বিশাল জয় সম্ভব হয়েছে। ওই নির্বাচনে ভোট দিয়ে দেশের সংসদীয় গণতান্ত্রিক ধারাকে বেগবান করার জন্য দেশবাসীর প্রতি অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে বিজয়ী না করলে এ অর্জন কোনোভাবেই সম্ভব হতো না। যোগ্য নেতৃত্ব, দৃঢ় আত্মবিশ্বাস এবং অভীষ্ট লক্ষ্য নিয়ে চললে কোনো অর্জনই যে অসম্ভব নয়, আমরা তা প্রমাণ করেছি। তিনি বলেন, সারাবিশ্বের আর কেউই এখন আর বাংলাদেশকে অবজ্ঞা, অবহেলা কিংবা করুণা করতে পারে না। বাংলাদেশ আজ আপন মহিমায় বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবই ইনশাআল্লাহ। সিপিএ ও আইপিইউর দুই শীর্ষ পদে বিজয়ের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুটি নির্বাচনে প্রার্থী করায় অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিল, দুটিতেই পরাজিত হতে হয় কি-না। তবে আমি বলেছিলাম, দুটিতেই আমরা জিতব। এ বিজয়ের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব নেতৃত্বে বরিত হয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশকে সমর্থনকারী দেশগুলোসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি অভিনন্দনও জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনীতি করি জনগণের জন্য। যে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এত জেল-জুলুম ও অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছেন, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার মাধ্যমে দেশকে স্বাধীন করেছেন, জীবন দিয়েছেনÑ সেই জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠাই তার একমাত্র লক্ষ্য। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার অঙ্গীকারও পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী, ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন ও ভারতীয় ডেপুটি হাইকমিশনার সন্দীপ চক্রবর্তী। অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ এবং ধন্যবাদ জানান সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আশরাফুল মকবুল। অনুষ্ঠানে সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, মন্ত্রিসভার সদস্য, ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকবৃন্দ ও সংসদের হুইপসহ সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সংবর্ধনা শেষে ছিল মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে আবেগাপ্লুত স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, এ বিজয়ে প্রমাণ হয়েছে, আমাদের অসাধ্য কিছুই নেই। ঐক্যবদ্ধ হলে যে কোনো অর্জন আমাদের পক্ষে সম্ভব। বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয়, ঘূর্ণিঝড় আর দুর্যোগপ্রবণ দেশ নয়; বরং দুর্যোগ মোকাবিলার রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। দারিদ্র্য নিরসনে অগ্রগতি অর্জন করছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, মাতৃস্বাস্থ্যের জন্য বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে এবং নেতৃত্ব দিচ্ছে। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। সিপিএর চেয়ারপারসন পদে গত নয় দশকে প্রথম নারী হিসেবে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর জয়লাভের বিষয়টি তুলে ধরে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, আইপিইউ এমন একটি সংগঠন, যার অবস্থান সব সময়েই সংসদীয় গণতন্ত্রের পক্ষে। এমন একটি ফোরামের প্রেসিডেন্ট পদে নিজের জয়লাভের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি বিশ্ব নেতাদের আস্থা রয়েছে। শুধু ২০২১ সাল নয়, আমাদের দৃষ্টি আরও বহুদূরে। শিরীন শারমিন ও সাবের হোসেনকে অভিনন্দন জানিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেন, এ বিজয়ে প্রমাণ হয়েছে বাংলাদেশে গণতন্ত্র আছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে না এবং সুশাসন বিরাজ করছে। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছিল, এ বিজয়ের পর আশা করি তা কেটে যাবে। হাসানুল হক ইনু বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা পেয়েছে। সংবিধান রক্ষায় অগ্নিপরীক্ষায় আমরা উত্তীর্ণ হয়েছি। ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, বাংলাদেশ গণতন্ত্রের পথে কতদূর এগিয়েছে, এ বিজয় তার একটি নিদর্শন। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় ডেপুটি হাইকমিশনার সন্দীপ চক্রবর্তী বলেন, বিশ্বের বড় দুটি সংসদীয় ফোরামের নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও জয়লাভের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সরকার দারুণ সাহসের পরিচয় দিয়েছে। তিনি বলেন, আজ অনেকেরই মনে হতে পারে, নির্বাচনে জেতা খুবই সহজ হয়েছে। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে তার নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে ভারত সমর্থন জানিয়েছে। এটা উপমহাদেশের গৌরব। বিশ্বসভায় বাংলাদেশ আজ বিরাট এক ভূমিকা রেখে চলেছে।
সিপিএর নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান হলেন স্পিকার
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। গত ৯ অক্টোবর এ পদের নির্বাচনে তিনি একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী পশ্চিম ক্যারিবীয় সাগরের কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জের আইনসভার স্পিকার জুলিয়ানা ও’কনর কনোলিকে পরাজিত করেন। নির্বাচনে শিরীন শারমিন পেয়েছেন ৭০ ভোট। জুলিয়ানা পেয়েছেন ৬৭ ভোট। ক্যামেরুনের রাজধানী ইয়াও-উন্দেতে
সিপিএর ৬০তম সম্মেলনে এই নির্বাচন হয়। শিরীন শারমিন প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সিপিএর নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন। সিপিএর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিনি তিন বছর ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। শিরীন শারমিন গত ৭ আগস্ট সিপিএর নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেন। তার মনোনয়নপত্রের প্রস্তাবক ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মনোনয়নপত্রে সমর্থন জানান ভারতের লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন ও সিঙ্গাপুরের আইনসভার স্পিকার হালিমাহ ইয়াকব। সিপিএতে কমনওয়েলথভুক্ত ৫৩টি দেশের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য মিলিয়ে মোট ১৭৫টি আইনসভার প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। এর ভোটার সংখ্যা ৩২১। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সিপিএর সদস্যপদ লাভ করে।
সাবের হোসেন চৌধুরী আইপিইউর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত
আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। গত ১৬ অক্টোবর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আইপিইউর ১৩১তম সম্মেলনে অন্য তিন প্রার্থীকে পরাজিত করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি। নির্বাচনে সাবের হোসেন চৌধুরী পেয়েছেন ১৬৯ ভোট এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টের স্পিকার ব্রনউইন বিশপ পেয়েছেন ৯৫ ভোট। এ পদে নির্বাচিত হওয়া সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া ও প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ অভিনন্দন জানিয়েছেন। আইপিইউ নির্বাচনে সাবের হোসেন চৌধুরী ছাড়াও ইন্দোনেশিয়ার এমপি নুরহায়াতি আলী আসিগাফ, অস্ট্রেলীয় আইনসভার স্পিকার ব্রনউইন বিশপ ও মালদ্বীপের আইনসভার সাবেক স্পিকার আবদুল্লাহ শহীদ প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *