বিশ্বশান্তির প্রত্যাশা নিয়ে পালিত হলো দুর্গোৎসব
বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে গত ১১ অক্টোবর শেষ হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। সেদিন প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় পাঁচ দিনের এই মহা আয়োজন। পূজার শেষ দিনে রাজধানীর পুরান ঢাকাসহ সারাদেশেই ম-পগুলোতে ছিল মানুষের ঢল। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া এবারের দুর্গাপূজা নির্বিঘেœ অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি পূজাম-পে ছিল নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অনেক বছর পর এবারের পূজায় মানুষের মধ্যে ছিল এক ধরনের উচ্ছ্বলতা। ভয়ভীতিহীন ছিল পরিবেশ। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, মানুষের মনের আসুরিক প্রবৃত্তি যেমনÑ কাম, ক্রোধ, হিংসা, লালসা বিসর্জন দেওয়াই মূলত বিজয়া দশমীর মূল তাৎপর্য। এই প্রবৃত্তিগুলো বিসর্জন দিয়ে একে অন্যের সাথে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই এ আয়োজনের উদ্দেশ্য।
পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, এবার সারাদেশে ২৯ হাজার ৩৯৫টি স্থায়ী ও অস্থায়ী ম-পে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়, যা গত বছরের তুলনায় ৩২৪টি বেশি। আর রাজধানী ঢাকায় পূজা অনুষ্ঠিত হয় ২২৯টি ম-পে। মানুষের মধ্যে নিরন্তর শান্তি-সম্প্রীতির আকাক্সক্ষা নিয়ে গত ৬ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে এই উৎসব শুরু হয়েছিল। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তার পরিসমাপ্তি হয়। বিজয়া দশমী উপলক্ষে ১১ অক্টোবর ছিল সরকারি ছুটি। বিজয়া দশমীর দিন সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বঙ্গভবনে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
দশমীর দিন প্রতিমা বিসর্জনের আগে সকাল থেকে ঢাকার মন্দিরে মন্দিরে চলে সিঁদুর খেলা আর আনন্দ উৎসব। প্রতিমা বিসর্জনের উদ্দেশে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গন থেকে কেন্দ্রীয় বিজয়া শোভাযাত্রা বের হয়। দুপুরে পূজা উদযাপন পরিষদ এবং মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির যৌথ উদ্যোগে বের হয় বর্ণাঢ্য বিজয়া শোভাযাত্রা। এই শোভাযাত্রা ও প্রতিমা বিসর্জনে অংশ নিতে ঢাকার বিভিন্ন স্থানের পূজাম-প থেকে আসা প্রতিমা নিয়ে ট্রাকগুলো সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যায় রাস্তায়। বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ নেচে-গেয়ে শোভাযাত্রাকে আরও বর্ণিল করে তোলে। অনেকেই দুর্গা, শিব ও মহিষাসুরসহ পৌরাণিক চরিত্রের নানা সাজে শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। যাত্রাপথে রাস্তার দুপাশে এবং আশপাশের ভবনের ছাদ-বারান্দায় দাঁড়িয়ে অসংখ্য মানুষ শোভাযাত্রাকে স্বাগত জানায়। ঢাকেশ্বরী থেকে শুরু হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা পেরিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, দোয়েল চত্বর, জাতীয় প্রেসক্লাব, মুক্তাঙ্গন, গোলাপ শাহ মাজার, গুলিস্তান হল, নবাবপুর, বাহাদুর শাহ পার্ক ও স্টার সিনেমা হল হয়ে বুড়িগঙ্গার ওয়াইজ ঘাটে গিয়ে পৌঁছায়। বিশাল এই শোভাযাত্রা এগিয়ে চলার সাথে সাথে লোক সমাগম ও ট্রাকে প্রতিমার সংখ্যাও বাড়তে থাকে। বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিমা নিয়ে মিছিলে যোগ দিতে থাকে ভক্তরা।
বিজয়া দশমীর মিছিলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল সতর্ক অবস্থায়। শেষমেশ আনন্দঘন এবং নির্বিঘেœ পালিত হয়েছে এবারের শারদীয় দুর্গাপূজা।