ইতিহাস : প্রবন্ধ

‘বীরাঙ্গনা’ বঙ্গবন্ধুর দেওয়া খেতাব

কেয়া চৌধুরী: ‘মুক্তির মন্দিরে সোপান তলে কত       প্রাণ হল বলিদান, লিখা আছে অশ্রুজলে’
৩০ লক্ষ শহীদের রক্তে ভেজা মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। হৃদয়ে রক্তক্ষরণে লিখা হয়েছে, দীর্ঘ সময়ের, দীর্ঘতম এই ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধক্ষেত্রে বীরত্ব, ত্যাগ, অসীম সাহসিকতার স্বীকৃতি হিসেবে, রাষ্ট্রীয় সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন, অনেক মুক্তিযোদ্ধা। বীরশ্রেষ্ঠ, বীরউত্তম, বীরবিক্রম, বীরপ্রতীক, নানা উপাধি পাওয়া বীর সেনানীদের বীরত্ব গাথা ইতিহাস আমাদের গর্বিত সম্পদ। কিন্তু মুক্তির সোপান তলে যে মানুষগুলো সবচেয়ে বেশি ত্যাগের মহিমায়; জীবনের সম্ভ্রম বিসর্জন করতে বাধ্য হয়েছেন। সেই বীর সেনানীরা হলেন একাত্তরের বীরাঙ্গনা। যাদের যুদ্ধ ছিল প্রতিদিনের প্রতি মুহূর্তের। দেশের জন্য বীরাঙ্গনাদের আত্মবলিদান এক অসম যুদ্ধের উপাখ্যান। একাত্তরের পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকারদের হাতে যারা নির্যাতিত হয়েছিলেন, তাদের আত্মত্যাগের অনুঘটিত অধ্যায়, এখনও ‘মর্যাদাহীন সংস্কৃতির’ মানুষিকতায় নীরবে নিভৃতে কাঁদে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী এ দেশের রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বাহিনীর সহযোগিতায়, বাংলার নিরীহ নারী-পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ নির্বিশেষে হত্যা চালায়। নিরস্ত্র মানুষের ওপর এমন গণহত্যা বিশে^ বিরল। পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক চাপিয়ে দেওয়া এই অন্যায্য; সমর যুদ্ধ, নিরস্ত্র বাঙালি জাতিকে আত্মপ্রত্যয়ী করে তুলেছিল; মুক্তির সংগ্রামে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশের সকল পর্যায়ের মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। পাকিস্তানি বাহিনীর পৈশাচিত দানবীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে।
‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ রণধ্বনি দিয়ে বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তির সংগ্রামে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ প্রতিটি মানুষের জীবনের যুদ্ধ। পাকবাহিনী, যেখানেই আক্রমণ করেছে, সেখানেই বাঙালি রুখে দাঁড়িয়েছেন। রুখে দাঁড়াবার এই সাহসিকতায়, বাংলার নারীর বীরত্ব, অতুলনীয় এক মহাকাব্য। শান্ত নিরীহ গৃহকোণের বাঙালির রমণীরা যেভাবে যার যার অবস্থান থেকে শত্রুসেনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন ’৭১-এ। মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার, পানি, আশ্রয় দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে সংবাদদাতা হিসেবে নানারূপে জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন সেই সময়ের নারী মুক্তিযোদ্ধারা। যা ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সম্মুখযুদ্ধের চেয়েও অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। একাত্তরে নারীদের যুদ্ধ ছিল অসম ও নিরস্ত্র যুদ্ধ। নারীরা যুদ্ধক্ষেত্রে পুরুষ মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবলকে শানিত করেছেন।
১৯৭১ সালে সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত গণহত্যায় ৩০ লক্ষাধিক মানুষ শহীদ হন। ১ কোটি মানুষ শরণার্থী হয়ে ভারতে পালিয়ে যান। দেশে ৩ কোটি মানুষ নিরাপত্তাহীনভাবে টিকে থাকেন। দেশের ভিতরে সবচেয়ে অরক্ষিত ছিলেন নারী ও শিশু। কিন্তু নাজুক এই অবস্থায় থেকেও প্রতিনিয়ত নারীরা লড়ে গেছেন। আশ্রয় দিয়ে, খাবার দিয়ে, ওষুুধ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের রান্না করে, দিনের পর দিন মুক্তিযোদ্ধাদের বাঁচাতে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, যেভাবে বাঙালি নারীরা বীরত্ব দেখিয়েছেন, তা বিশ^ ইতিহাসের কোনো যুদ্ধ কাহিনিতে আজ অবধি পাওয়া যায় নি। মুক্তিযুদ্ধ প্রেক্ষাপটে নারীর এই অবদান একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে যখন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। ঠিক তখনই মুক্তিকামী বাঙালির মনোবলকে দুর্বল করতে গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের পাশাপাশি, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত রেখে যে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিল; সেটি হচ্ছে ধর্ষণ। পাকিস্তানিদের আক্রমণকে রুখে দাঁড়াবার জন্য, দলে দলে যখন বাংলার পুরুষরা ভারতে পাড়ি জমাচ্ছিল। ট্রেনিং নিয়ে, যুদ্ধকৌশল শিখে, সামরিক জান্তাদের একের পর এক টার্গেটকে বিফল করে তুলছিল। ঠিক তখনই দেশীয় রাজাকারদের সহযোগিতায়, আমাদের মা-বোনদের পৈশাচিক নৃশংসতার শিকার হতে হয়েছে। এসব নির্যাতিতা নারীদের লেখা উঠে এসেছে নীলিমা ইব্রাহীমের ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’, কথাসাহ্যিতিক সেলিনা হোসেনের ‘গেরিলা’ ও ‘বীরাঙ্গনা’ বইটিতে। মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নারীর ঐতিহাসিক ভূমিকা এই বইগুলোতে লেখকবৃন্দ প্রকৃতভাবেই তুলে ধরতে পেরেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময় বঙ্গবন্ধু তার জীবদ্দশায় বীরাঙ্গনাদের পুনর্বাসনে কাজ শুরু করেছিলেন। সামাজিকভাবে তাদের পুনর্বাসনে হাত দেন বিভিন্ন কর্মসূচির। মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়েও অধিক বীরত্বের মূল্যায়নে, বঙ্গবন্ধু একাত্তরের পাকসেনাদের দ্বারা নির্যাতিত নারীদের ‘বীরাঙ্গনা’ খেতাবে ভূষিত করেন।
পাকবাহিনীর ৯ মাসের নির্যাতনে বীরাঙ্গনা নারীরা নানারকম রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হন। জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন অনেকেই। ধর্ষিতা অনেক গর্ভবতী মহিলা যুদ্ধশিশু জন্মদানের পর হয় মারা গেছেন, নয় তো নিজেকে আড়াল করেছেন তার চারপাশের মানুষ থেকে। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে অনেকেই বিদেশ পাড়ি দিয়েছেন। এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু সরকারের একটি যুগান্তকারী উদ্যোগের কথা উল্লেখ করতে হয়। এটি হলো, বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদের্শ বলে- The Bangladesh Abandoned Children (Special Provisions) ঘোষণা করেন। এই অর্ডারের পর থেকেই যুদ্ধশিশুরা আশ্রয় পেতে থাকে বিদেশি মায়েদের কাছে। অর্থাৎ, যুদ্ধশিশু জন্মদানের পর যে মায়েরা মারা গিয়েছিলেন বা জীবনের ভিন্ন বাঁকে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাদের সন্তানদের রক্ষায় আওয়ামী লীগ সরকারের এই উদ্যোগ ছিল অত্যন্ত কার্যকরী। যে কারণে যুদ্ধশিশুদের আশ্রয়ে এগিয়ে এসেছিল, কানাডাসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষ।
তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, যুদ্ধশিশুর বিষয়ে ত্রুটিহীন কোনো পরিসংখ্যান আজও আমাদের জানা নেই। তবে ইতিহাস বলে, যুদ্ধশিশুদের অধিকার রক্ষায় দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুই একমাত্র নেতা, যিনি ‘জেনেভা ইন্টারন্যাশনাল সোস্যাল সার্ভিস’কে অনুরোধ করেছিলেন। যুদ্ধশিশুদের জন্য একটা কিছু করার। যাতে বিদেশি নাগরিকরা সহজে দত্তক নিতে পারেন। এরপর থেকেই বহু দম্পতি বাংলাদেশের যুদ্ধশিশুদের দত্তক নিয়ে সন্তানের ¯েœহে গড়ে তুলেছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এমন সময় উপযোগী উদ্যোগের কারণেই জাতি হিসেবে আমরা যুদ্ধশিশুকে স্বাধীনতার এক অবিচ্ছেদ্ধ অংশ হিসেবে শিকার করে নিয়েছি। তবে বাস্তবতা হলো, আমাদের সামাজিক ব্যবস্থাপনায়; বীরাঙ্গনাদের বীরত্ব ও তাদের আত্মত্যাগের মূল্যায়নে আমরা মানসিকভাবে এখনও প্রস্তুত হতে পারি নি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ধর্ষিত হওয়া নারীদের খেতাব দেওয়া হয়েছিল ‘বীরাঙ্গনা’। রাষ্ট্র দ্বারা বীরাঙ্গনা শব্দের অর্থ বীর নারী। জাতির পিতা যুদ্ধকালীন সময়ের নির্যাতিত নারীদের বীরাঙ্গনা খেতাব দিয়েছিলেন। ‘বীরাঙ্গনা’ বাঙালি জাতির এক সম্মানজনক খেতাব। ১৯৭২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযুদ্ধকালীন নির্যাতিত নারীদের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার মহিলা পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণ করেন। ধর্ষিতা মহিলাদের পুনর্বাসন কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের সামাজিক মর্যাদা সম্মুন্নত করার প্রয়াস চলে ব্যাপক পরিসরে বঙ্গবন্ধু সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়।
এক্ষেত্রে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসার একটি অগ্রগামী ভূমিকা ছিল। তার নেতৃত্বে সেই সময়ের প্রগতিশীল নারী নেত্রীরা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে এগিয়ে এসেছিলেন এসব নির্যাতিত নারী পুনর্বাসন কেন্দ্রে। তাদের মানসিকভাবে শক্তি জুগিয়েছিলেন। পুনরায় জীবন গড়ার জন্য পথ দেখিয়েছিল মানবিক বিপর্যস্ত বীরাঙ্গনাদের।
১৯৭১ সালে পাকবাহিনীর দ্বারা ৪ লাখেরও বেশি নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। পূর্ব পাকিস্তানে পশ্চিম পাকসেনা দ্বারা পরিচালিত এসব ঘটনা সম্বন্ধে বিশ^ প্রচারণায় খবর প্রকাশ হলে বিশ^ নেতাদের নজরে আসে, যুদ্ধকৌশল হিসেবে পাকিস্তান কীভাবে বাঙালি নারীদের ওপর ধর্ষণের অপরাধটি বাচ-বিচারহীনভাবে সংগঠিত করে চলছে। রক্ষা পাচ্ছে না শিশুকন্যা বা বয়োবৃদ্ধা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে অনন্য বিষয়টি ছিল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রথমবারের মতো উপলব্ধি করতে পেরেছিল, মানুষকে সন্ত্রাসিক করতে, লড়াকু বাঙালি জাতিকে দুর্বল করতে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী অন্যায়ভাবে ‘নিয়মানুগ ধর্ষণ’ নামক অপরাধটি প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে একটি অস্ত্র হিসেবে গ্রহণ করেছিল, যা পৃথিবীর ইতিহাসে নজরবিহীন এক কলঙ্কিত অধ্যায়। দমন-পীড়নের শত গ-ি পেরিয়ে পৈশাচিক এসব নির্যাতনের খবর যখন বিশ^ সংবাদে শিরোনামে উঠে এলো তখন বিশ^ মানবতা যেন থমকে দাঁড়াল।
এ প্রসঙ্গে বলতে হয়, উল্লিখিত কারণে ১৯৭২ সালে ভারতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী পূর্ব পাকিস্তানে মিত্রবাহিনী হিসেবে ভারতীয় সৈন্য প্রেরণের স্বপক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেছিলেন, ‘আমরা কি বসে বসে বাংলাদেশের নারীদের ধর্ষিত হতে দেখব।’ অর্থাৎ, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির স্বাধীনতার সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়ার অপরাধে যখন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী, পথে-ঘাটে পাখির মতো মানুষ মেরে উৎসব চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তানিরা। শিশু-বৃদ্ধ আর নারীদের নির্যাতনের হোলি খেলায় দেশীয় দোসরদের সহযোগিতায় পশ্চিম পাকিস্তান সরকার নির্যাতনের লৌহ মানব হিটলারের অত্যাচারকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। বাঙালির মুক্তির সংগ্রামকে সেলুট জানিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভুটানসহ একের পর এক বন্ধুপ্রতীম দেশ বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি জানিয়েছে।
মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একাত্তরের নারীদের রয়েছে এক মহিমান্বিত বীরত্বের অধ্যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে এই অধ্যায়টি জানার কৌতূহলে আমার মন বারংবার ছুটে গেছে নানা পাঠাগারের নানা বইয়ের পাতায়। মন স্থির হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান বিষয়ক পড়াশোনায়।
সময়টা তখন ২০০৬ সালের প্রথম দিকে কোনো এক মাসে। আমার আব্বা বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরীর ‘সিলেটের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা’ বিষয়ক একটি সাক্ষাৎকার আমার হাতে এসে পৌঁছায়। সাক্ষাৎকারটি পড়ে আমি আবিষ্কার করি সিলেটের মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রামের ইতিহাসে চা-শ্রমিকের এক অনন্য বীরত্বপূর্ণ অধ্যায় রয়েছে। ’৭১-এর বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে নির্দেশনার পর কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরীর উদ্যোগে সিলেটের চা-বাগান শ্রমিকদের নিয়ে গড়ে ওঠে এক অপ্রতিরুদ্ধ তীরন্দাজ বাহিনী। ৮ মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার বার্তা পৌঁছে দিয়ে মানিক চৌধুরী তার নির্বাচনী এলাকা হবিগঞ্জ মহকুমার বাহুবল, শ্রীমঙ্গল ও চুনারুঘাট আসনের চা-বাগান শ্রমিকদের ব্যবহারিত তীর-ধনুক দিয়ে ঢাকা-সিলেট সড়কসহ মৌলভীবাজার-সিলেটের শেরপুর-সাদিপুর যুদ্ধ পূর্ববর্তী প্রতিরোধযুদ্ধ শুরু করেন। চা-শ্রমিকরা স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লে পুরুষ শূন্য চা-বাগানগুলোতে হানা দেয় পাকবাহিনীর সৈন্যরা। ২৯ এপ্রিলে হবিগঞ্জে প্রথম প্রবেশ করে পাকবাহিনী। শহরে একদিকে আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ-লুটপাট চলে, আর অন্যদিকে বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে সাধারণ মানুষকে সারিবদ্ধ করে হত্যা চালায়। সমানতালে চলে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ আর নারী ধর্ষণ।
আমার আব্বার সাক্ষাৎকারটি পড়ে আমি সিদ্ধান্ত নেই, মুক্তিযুদ্ধে পাকসেনা দ্বারা নির্যাতিত হবিগঞ্জের নারীদের খুঁজে বের করার। আইনবিষয়ক পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষানবিস হিসেবে যুক্ত হয়েছি হবিগঞ্জের একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর চেম্বারে। একদিন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ছুরুক আলী চাচার সাথে দেখা। তার কাছ থেকে প্রথম জানতে পারলাম, চুনারুঘাটের ধোপাবাড়িতে একাত্তরের বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের ১২ তারিখে পাঁচ পুরুষকে হত্যার পর সেই বাড়ির নারীদের পাকসেনারা ধরে নিয়ে যায়। এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এক অজানা পথে আমি যাত্রা শুরু করি। ২০০৬ সালের শরতের এক বিকেলে আমি হাজির হই গুছাপাড়া ধোপাবাড়িতে। প্রথম সাক্ষাৎ হয় মালতী রানী ও পুষ্প রানীর সাথে। সদ্য ফোটা রজনীগন্ধার মতো শুভ্র পবিত্র দুটি মুখ। বাড়ির উঠানজুড়ে বরই গাছের পাতার ছায়ায় আলপনা আঁকা। হাতের নিপুণ ছোঁয়ায় সাদা মাটির লেপা ঘরের সামনের ছোট্ট বারান্দায় বসা মালতী রানী ও পুষ্প রানী। মাসি মা বলে আমি আমার পরিচয় দিয়ে কথা শুরু করলাম। যতক্ষণ বাড়িতে ছিলাম তাদের আন্তরিকতায় আমি সিক্ত হয়েছি। কিন্তু আমার মনে হয়েছে এক অজানা হতাশার বালুচরে প্রতিদিন-প্রতিক্ষণ ডুবে যেতে যেতে তারা যেন জীবনের তরে ফিরে আসেন। একটু একটু বিশ^াস, একটু একটু আস্থার পথ ধরে মালতী রানী, পুষ্প রানী মাসি মা’দের সাথে আমার দীর্ঘ পথ চলায় আমি খুঁজে পাই আরও অজানা সব তথ্য। আব্বার যুগভেরীতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চাঁনপুরের তীরন্দাজ বাহিনীর অন্যতম সৈনিক পাবণ কাকার সাথে দেখা করি। তিনিই আমাকে জানালেন, মানিক চৌধুরীর নেতৃত্বে সিলেটের চা-বাগানগুলোতে তীর-ধনুক নিয়ে প্রশিক্ষণ শেষে তারা যখন শেরপুর-সাদিপুর যুদ্ধে অংশ নিতে চাঁনপুর চা-বাগান ছাড়েন, তখনই বুভুক্ষু পাকবাহিনী কুকুরের মতো গন্ধ শুঁকে শুঁকে হানা দেয় চা-শ্রমিকদের ঘরে। নিরীহ চা-শ্রমিক পিতামাতার সামনে নির্যাতন করে যুবতী নারীদের। এমনই এক নির্যাতিত নারী সাবিত্রী নায়েক। অবিবাহিত উচ্ছ্বল সাবিত্রী নায়েকের পরিণতি হলো, পাকসেনাদের চাঁনপুর চা-বাগানের ডাকবাংলোর ক্যাম্পে। এক নয়, দুই নয়Ñ গোটা সাত মাস তাকে থাকতে হয়েছে হবিগঞ্জ মহকুমার পাকিস্তানিদের বিভিন্ন ক্যাম্পে। নির্যাতন সহ্য না করতে পেরে কয়েকবার পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন সাবিত্রী। সন্ত্রাসিক মানসিকতায় লাগাতার শারীরিক নির্যাতনে সাবিত্রী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু তারপরও তিনি তার জীবনের সম্ভ্রম দিয়ে ব্যাকুল আকুতিতে ধর্ষক পাকিস্তানি সেনাদের অনুরোধ জানান, আর কোনো চা-শ্রমিক নারী যেন এমন লাগামহীন নির্যাতনের শিকার না হন। কিন্তু তারপরও নির্যাতনের সীমা কমেনি; বরং বেড়েছে বহু গুণে। চাঁনপুরে লোহারপুর লাইনে লক্ষ্মণ সাঁওতালের স্ত্রী হীরামণি সাঁওতাল। লক্ষ্মণ সাঁওতালের প্রথম স্ত্রী সিতা সাঁওতাল মারা গেলে ছোট ছোট দুটি বাচ্চাকে দেখভালের জন্য বিয়ে করে ঘরে আনেন হীরামণি সাঁওতালকে। নতুন সংসারের পুরনো দায়িত্ব নিয়ে ভালোই চলছিল লক্ষ্মণ আর হীরামণি সাঁওতালের কুঁড়েঘরের একটি ছোট্ট সংসার। একাত্তরের এক সকালে নববধূ হীরামণি সাঁওতালের ঘরে হানা দেয় পাকসেনারা। ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরীহ হীরামণি সাঁওতালের ওপর। চা-শ্রমিক লক্ষ্মণ সাঁওতাল কাজ শেষে বাড়িতে ফিরে মুমূর্ষু হীরামণি সাঁওতালকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পেয়ে ছুটে যান হাসপাতালে। বিকৃত নির্যাতনে হীরামণি সাঁওতাল হয়ে পড়েন মানসিক ভারসাম্যহীন। এ দুজন চা-শ্রমিকের তথ্য সংগ্রহের কাজ করতে গিয়ে আমাকে ভিন্নতর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। দুর্গম পথ বেয়ে যতবার আমি হীরামণি এবং সাবিত্রী নায়েকের বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করেছি, ততবারই বিভ্রান্তকর তথ্য দিয়ে যুদ্ধকালীন সময়ে শত্রুপক্ষ দ্বারা এই নারী চা-শ্রমিকদের অসহনীয় নির্যাতন ও ত্যাগের মূল্যায়নে খাটো করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। যা আমাকে শুধু ব্যথিত করেনি, অবাক করেছে। নিশ্চয়ই আমাকেও স্বীকার করতে হবে চা-বাগানের পুরুষ শ্রমিকদের কথা। যারা অকপটে স্বীকার করেছেন, চাঁনপুর চা-বাগানের হীরামণি ও সাবিত্রী নায়েকের আত্মত্যাগের বিনিময়ে গোটা বাগানের অনেক মানুষের জীবন রক্ষা পেয়েছে। হবিগঞ্জ উবাহাটার রাজিয়া খাতুনের সাহসিকতা, একাত্তরের ভারতের খোয়াই-এ অবস্থিত ট্রেনিং ক্যাম্পে সব মুক্তিযোদ্ধারই জানা। ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রান্না সেরে দিনের বেলায় গুপ্তচর হয়ে পাকসেনাদের অবস্থান বুঝে নানা তথ্য পৌঁছে দিতেন রণক্ষেত্রের মুক্তিযোদ্ধাদের। ৩নং সেক্টরের অনেক যোদ্ধাকে রাজিয়া শুধু রান্না করে খাওয়ান নি। রণকৌশলেও রাজিয়ার দেওয়া তথ্য কাজে এসেছে মুক্তিকামী মুক্তিযোদ্ধাদের। শত্রুপক্ষের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে সেই রাজিয়াকে সম্ভম দিতে হয়েছে। বানিয়াচংয়ের হলদারপুর গ্রামে মাত্র ১৩ বছর বয়সে বিমান সেলিংয়ে পঙ্গু হন কৃষক আবদুল হেকিমের কন্যা ফারিজা। ফুটফুটে সুন্দর ফারিজা খাতুনকে চিকিৎসা করতে নিজের ভিটাবাড়ি বিক্রি করেছেন পিতা আবদুল হেকিম। এ খবর জানতে পেরে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আওয়ামী লীগ নেতা মানিক চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর হাতে স্বাক্ষরিত একখানা স্বীকৃতিপত্র ও ২ হাজার টাকা তুলে দেন পঙ্গু ফারিজা খাতুনের বাবা আবদুল হেকিমের হাতে। সিলেটের বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠশিল্পী রোকেয়া জয়বাংলার পক্ষে নানা বক্তব্য প্রচার করায় তাকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়। ছয় মাস বয়সী দুধের শিশু মিল্লাতের মা জোছনা বেগম। তিনি একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের স্ত্রী। ফেঞ্চুগঞ্জের কচুয়াবহর গ্রামে পাকবাহিনী ঢুকেই আক্রমণ করল জোছনার সাজানো সংসারে। বুকের শিশুকে ছুড়ে ফেলে। জোছনা পাকসেনা দ্বারা ধর্ষিত হলেন স্বামী ছোয়াব আলী মাস্টারের চোখের সামনে। এত বড় অপমান সহ্য করতে না পেরে ছোয়াব আলী মাস্টার রাতের অন্ধকারে যুদ্ধে চলে গেলেন। শিশু মিল্লাত আর স্ত্রী জোছনার কাছে ছোয়াব আলী মাস্টার আর ফিরে এলেন না। যুদ্ধ করে শহীদ হলেন। শহীদ জায়া জোছনা বেগম বিএনপি সরকারের আমলে বহুবার চেষ্টা করেও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নিজ নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন নি। পোষা ছাগল বিক্রি করা অর্থ ঘুষ দিয়েও পথে পথে ঘুরেছেন জোছনা বেগমসহ মনোয়ারা, মিনারা বেগমের মতো অনেক বীরাঙ্গনা। ২০০৬ সাল থেকে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলা থেকে মাঠ পর্যায়ে আমি তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করি। হবিগঞ্জ জেলায় “চেতনায় ’৭১ হবিগঞ্জ” সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ২০০৯ সালে, মার্চের ২৭ তারিখ এসব বীরাঙ্গনাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতির জন্য আবেদন করি। এ ছিল অজানা পথে আমার গন্তব্যহীন পথচলা। ভরসা বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আমার বিশ^াস ছিল, বাংলার মাটিতে মিশে যাওয়া এসব রতেœর সন্ধান পেলে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা তাদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করবেন। ২০০৯ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে একাত্তরের পাকসেনা দ্বারা নির্যাতিত বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতির জন্য আবেদন করি, তখন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এ বিষয়ে কোনো রেফারেন্স ছিল না। দুবছর শুধু নীতিমালাহীন অবস্থায় বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের টেবিল টেবিলে ঘুরেছে। আশাহীন লক্ষ পথে আমি হাল ছাড়ি নি। চেতনার শক্তি থেকেই আমার মন বলতÑ বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার নজরে বিষয়টি একবার পড়লে নিশ্চিত হবে বঙ্গবন্ধুর সরকারের স্বীকৃতি দেওয়া বীরাঙ্গনাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা। একদিকে মালতী রানী, রাজিয়া খাতুন, পুষ্প রানী, সাবিত্রী নায়েক, হীরামণি সাঁওতাল, জোছনা বেগম, মনোয়ারাদের চোখে একাত্তরের ফেলে আসা দুঃস্মৃতির বিপরীতে নতুন করে স্বপ্ন দেখা এক একটি হিমালয় পর্বত। অন্যদিকে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় বীরাঙ্গনারা মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাবেন কিনাÑ এ বিষয়ে নীতিমালাহীন এক গন্তব্যহীন পথ চলা। সত্যের পথে আলোর প্রভাত আসবেই। ঠিক তা-ই হলো। ২০১১ সালে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মিজানুর রহমান সাহেব আমাকে জানালেন, বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা বীরাঙ্গনাদের একাত্তরের ত্যাগের স্বীকৃতি প্রদানে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার। খবরটি শোনার পর আমি এতটাই আবেগতাড়িত হয়েছিলাম যে, সেই মুহূর্তের কথা মনে হলে এখনও আমার দুচোখ ঝাপসা হয়ে ওঠে। সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর হবিগঞ্জের বীরাঙ্গনা ও পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা শেখ হাসিনা সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে গেজেট অন্তর্ভুক্ত হন। এই ছয়জন বাংলাদেশে প্রথম গেজেটভুক্ত বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা।
বঙ্গবন্ধু যাদের বীরাঙ্গনা খেতাবে ভূষিত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা সেসব বীরাঙ্গনাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সব সুযোগ-সুবিধা প্রদান করার ব্যবস্থা করেছেন। সংসদ সদস্য হওয়ার পর আমি শেখ হাসিনা সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প ‘জমি আছে ঘর নাই’-এর আওতায় এদের দুজনকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘর করে দিয়েছি। রাষ্ট্রের সরকারি দিবসে তারা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে তাদের কথা ব্যক্ত করতে পারেন।
গত ৪ মার্চ ২০১৬, বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হিরামণি সাঁওতাল প্রয়াত হলে, তাকে লাল সবুজের পতাকায় রাষ্ট্রীয় সম্মাননায় সমাহিত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, হিরামণি সাঁওতাল ও সাবিত্রী নায়েক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অন্যতম বীরত্বের জন্য প্রথম গেজেটভুক্ত চা-শ্রমিক নারী মুক্তিযোদ্ধা। ‘দুটি কুড়ি একটি পাতা’ চায়ের দেশ সিলেটসহ এসব বীর নারীদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় স্বীকৃত দিয়ে বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা তার পিতার অসমাপ্ত কাজকে পরিপূর্ণতায় ভরে তুলছেন।
শেখ হাসিনা শুধুমাত্র একজন সফল রাষ্ট্রের নায়ক নন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাতিঘর, যে বাতিঘরের আলোর মশাল নিয়ে আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরাÑ চেতনায় শানিত হয়ে খুঁজে ফিরি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অনুদঘাটিত অধ্যায়ের ইতিহাস ¯্রষ্টাদের। এসব বীর নারীদের সম্মান জানাতে জাতি আজ সদা প্রস্তুত।

লেখক : জাতীয় সংসদ সদস্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *