বঙ্গবন্ধু শুধু একটি নামমুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা

বীর প্রতীক ডা. আখতার আহমেদ-এর প্রয়াণ দিবসের শ্রদ্ধাঞ্জলি

একাত্তরের মে মাসে আগরতলার মতিনগরে ‘বাংলাদেশ হাসপাতাল’ নামে যে অস্থায়ী হাসপাতাল চালু হয়েছিলো, তার অন্যতম উদ্যোক্ত ছিলেন তখনকার সেনাবাহিনীর ডা. আখতার আহমেদ।

মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পাশাপাশি সে সময় তিনি সম্মুখ সমরেও অংশ নেন। ডাক্তার হয়েও ক্যাপ্টেন আখতার যুদ্ধক্ষেত্র একটি কোম্পানির কমান্ডার হিসেবে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন বলে দুই নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক খালেদ মোশাররফ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন।

১৯৭০ সালে ডাক্তারি পাস করে ঢাকা মেডিকেলের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে আখতার আহমেদের কর্মজীবন শুরু। পরে যোগ দেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরে।

সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন পদে তাঁর প্রথম কর্মস্থল ছিলো কুমিল্লা সেনানিবাস। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে আগে চতুর্থ ইস্ট-বেঙ্গল রেজিমেন্টকে সেনানিবাসের বাইরে পাঠানো হয়। একটি ইউনিটের সঙ্গে আখতার আহমেদকে পাঠানো হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।

২৭ মার্চ মেজর শাফায়াত জামিলের (পরে সেনাবাহিনীর কর্নেল হয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য পান বীর বিক্রম খেতাব) নেতৃত্বে সেনাবাহিনীতে বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন একদল সেনা কর্মকর্তা। ওই বিদ্রোহে আখতার আহমেদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

খালেদ মোশাররফ পরে ক্যাপ্টেন আখতারকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ডেকে পাঠান এবং ঢাকা থেকে আগরতলায় আশ্রয় নেওয়া কয়েকজন শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে সঙ্গে নিয়ে একটি হাসপাতাল গড়ে তোলার নির্দেশ দেন।

এরপর ক্যাপ্টেন আখতারের নেতৃত্বে আগরতলার মতিনগরে কয়েকটি তাঁবুতে চালু হয় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রথম বাংলাদেশ হাসপাতাল। অবশ্য পরে নিরাপত্তার জন্য হাসপাতালটি সীমান্ত এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য আখতার আহমেদকে ১৯৭৩ সালে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করে বাংলাদেশ সরকার।

বাঙালির স্বাধীনতার আন্দোলন যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, সেই দিনগুলোতে সেনানিবাসে বাঙালি কর্মকর্তা ও সৈনিকদের মানসিক সঙ্কট আর বিদ্রোহের পটভূমির কথা আখতার আহমেদ লিখে গেছেন তার ‘বারবার ফিরে যাই’ বইতে।

১৯৭৬ সালে স্বৈরশাসক খুনী জিয়ার অধীনস্থ না থাকার অভিপ্রায়ে তিনি সেনাবাহিনীর মেজর পদ থেকে স্বেচ্ছা অবসরে যান। পরে চিকিৎসক হিসেবে তাঁর বেশ কয়েক বছর কাটে লিবিয়ায়।

দেশে ফিরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে যোগ দিলেও পরে চাকরি ছেড়ে মন দেন ব্যবসায়। ‘গাড়িতে ইউরোপ ভ্রমণ’ নামে একটি ভ্রমণ কাহিনীও লিখেছেন তিনি।

পরম শ্রদ্ধেয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আখতার আহমেদ (বীর প্রতীক)-এর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ; অন্য আলোয় ভালো থাকুন আমাদের এই বীর সন্তান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *