বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে ভারতকে হারাল দ:আফ্রিকা

জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্সে বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে ডার্ক ওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে ভারতকে ৫ উইকেটে পরাজিত করে ছয় ম্যাচের সিরিজে নিজেদের টিকিয়ে রাখলো স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা। এর আগে সিরিজের প্রথম তিনটি ম্যাচেই পরাজিত হয়ে শঙ্কায় ছিল প্রোটিয়ারা। তবে কালকের ম্যাচে নিজেদের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভুলে কার্যত ভারতের সিরিজ জয় নিশ্চিত করা হয়নি।
একই ওভারে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান ডেভিড মিলারের দুটি ক্যাচের সুযোগ নষ্ট করাই মূলত ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট ছিল বলে উল্লেখ করেছেন ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি। এই ধরনের ম্যাচে নিজেদের সুযোগগুলো শতভাগ কাজে লাগাতে হবে বলেই মন্তব্য করেছেন কোহলি। মিলারের ক্যাচগুলো মিস হবার সময় ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পুরোটাই ভারতের দখলে ছিল।
প্রথমে ব্যাটিং থেকে ভারতের সংগৃহীত ৭ উইকেটে ১৮৯ রানের জবাবে বৃষ্টির কারনে দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে জয়ের নতুন লক্ষ্য নির্ধারিত হয় ২৮ ওভারে ২০২। যদিও প্রোটিয়ারা ১৫ বল বাকি থাকতে ৫ উইকেটে ২০৭ রান সংগ্রহ করলে গুরুত্বপূর্ণ জয় নিশ্চিত হয়। অথচ চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে ১৭তম ওভারে এবি ডি ভিলিয়ার্স ফিরে গেলে দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে তখনো জয়ের জন্য ৬৭ বলে ১০০ রানের প্রয়োজন ছিল। অনেকটা নিশ্চিত পরাজয়ের দিকেই যখন স্বাগতিকদের ভাগ্য ধাবিত হচ্ছিল তখনই পরের ওভারে লেগ স্পিনার যুজভেন্দ্র চাহালের বলে স্কয়ার লেগে মিলার প্রথমে শ্রেয়াশ আয়ারের হাতে জীবন ফিরে পান। এ সময় মিলারের রান ছিল ৬। একই ওভারে বোল্ড হবার পরে রিপ্লেতে দেখা গেছে চাহালের বলটি নো-বল ছিল। শেষ পর্যন্ত মিলার ৩৯ রানে ঐ চাহালের বলেই এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে পড়ে বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু যাবার আগে পঞ্চম উইকেটে হেনরিক ক্লাসেনের সাথে দ্রুতগতিতে ম্যাচ জয়ী ৭২ রানের পার্টনারশীপ খেলে গেছেন। ২৭ বলে ঝড়ো গতিতে ৪৩ রানে অপরাজিত থেকে ম্যাচ সেরা হয়েছেন ক্লাসেন।
কালকের ম্যাচে দু’বার বৃষ্টির কারনে খেলা বন্ধ থাকায় ম্যাচে বিঘ্ন ঘটেছে। প্রথমবার ৩৪.২ ওভারে ভারতের সংগ্রহ যখন ২ উইকেটে ২০০ তখন একবার বজ্রপাতের কারনে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। এসময় ভারতীয় ওপেনার শিখর ধাওয়ান ১০৭ রানে অপরাজিত ছিলেন। পুনরায় ম্যাচ শুরু হলে ধাওয়ান মাত্র ২ রান যোগ করেছেন। এরপর অবশ্য ভারত খুব একটা এগুতে পারেনি। ৮৯ রানে দ্রুত ৫ উইকেটে পতন ঘটলে ভারতের স্কোর দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ২৮৯।
জবাবে ৭.২ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর যখন ১ উইকেটে ৪৩ তখন আবারো প্রচন্ড বজ্রপাতের সাথে সাথে বৃষ্টিও শুরু হয়। এসময় বেশ কিছুক্ষন খেলা বন্ধ ছিল। এরপর প্রোটিয়ারা মাঠে ফিরলে তাদের সামনে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২০.৪ ওভারে ১৫৯ রান।
কোহলি বলেছেন, ‘এটি মূলত টি২০ ম্যাচে পরিণত হয়েছিল। আমরা নিজেদের সুযোগ কাজে লাগাতে পারিনি, সে কারনেই আজকের ম্যাচে জয় আমাদের প্রাপ্য ছিলনা।’
প্রথম তিন ম্যাচে ভারতীয় দুই স্পিনার চাহাল ও বাঁ-হাতি কুলদ্বীপ যাদব নিজেদের মধ্যে ২১টি উইকেট ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। শনিবার তারা দুজন মিলে ১১.৩ ওভাওে ১১৯ রান দিয়েছেন। প্রোটিয়াদের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের বিপরীতে তারা ভেজা মাঠে নিজেদের বোলিং নিয়ন্ত্রন করতে পারেননি।  দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক এইডেন মার্করাম বলেছেন, শেষ পর্যন্ত ভারতের উপর কিছুটা চাপ সৃষ্টি করতে পেরেছি। এটা স্বস্তির বিষয়।
সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে যাবার পিছনে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়া ভারতীয় অধিনায়ক কোহলি কালও ৭৫ রানে দারুন একটি ইনিংস উপহার দিয়েছেন। দ্বিতীয় উইকেটে তিনি ধাওয়ানের সাথে ১৭৮ রানে জুটি গড়ে তুলেছিলেন। ৮৩ বলে তার করা ৭৫ রানের ইনিংসে সিরিজে তার রানসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯৩। ধাওয়ান ও কোহলি মিলে এই নিয়ে তৃতীয়বারের মত চলমান সিরিজ সর্বোচ্চ রানের পার্টনারশীপ গড়লেন। সেঞ্চুরিয়ানে দ্বিতীয় ম্যাচে অপরাজিত ৯৩ রানের পার্টনারশীপের পরে কেপ টাউনে তৃতীয় ম্যাচে ১৪০ রান যোগ করেছিলেন। তবে কালকের ম্যাচে শততম ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করে কিছুটা হলেও এগিয়ে ছিলেন ধাওয়ান। ১০৫ বলে দুটি ওভার বাউন্ডারি ও ১০টি বাউন্ডারির সহায়তায় ধাওয়ান ক্যারিয়ারের ১৩তম সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত ৭ উইকেটে ২৮৯ (ধাওয়ান ১০৯, কোহলি ৭৫, ধোনী ৪২*: রাবাদা ২-৫৮, এনগিদি ২-৫২)
দক্ষিণ আফ্রিকা ৫ উইকেটে ২০৭ , ২৫. ৩ ওভার (ক্লাসেন ৪৩*, মিলার ৩৯: যাদব ২-৫১)
ফল : দক্ষিণ আফ্রিকা ৫ উইকেটে জয়ী (ডার্ক/ওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে)
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : হেনরিক ক্লাসেন (দক্ষিণ আফ্রিকা)
সিরিজ : ৬ ম্যাচের সিরিজে ভারত ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে।বাসস।

Leave a Reply

%d bloggers like this: