মহানবীর রওজায় সালামের আদব

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্বোধন করে আল্লাহপাক বলেছেন, যারা আপনাকে ঘরের আড়াল থেকে ডাকে, তাদের অধিকাংশই অবুঝ। বনি তামিম গোত্রের একটি প্রতিনিধি দল হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে এসেছিল। তাদের মাঝে সভ্যতা ও শিষ্টাচারের অভাব ছিল। তাই যখন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশ্রামের সময় ছিল, তখন তারা তাঁর আবাসনের আড়াল থেকে তাঁকে ডাকাডাকি শুরু করে দিল যে, হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি বাইরে আসুন। আমরা আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছি। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, যে লোকেরা আপনাকে হুজরার আড়াল থেকে ডাকে, তাদের অধিকাংশই অবুঝ। যদি তারা আপনাকে ডাকাডাকি না করে ধৈর্য ধারণ করত, প্রতীক্ষা করত আর আপনি নিজে থেকে বের হয়ে আসতেন, এটা তাদের জন্য উত্তম হতো। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহতায়ালা এও বলেছেন যে, যেহেতু এই আমল তাদের থেকে অজ্ঞতার কারণে প্রকাশ পেয়েছে, তাই তাদের ক্ষমা করা হলো। আল্লাহতায়ালা অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়াময়। কিন্তু ভবিষ্যতের ব্যাপারে তাদের শিক্ষা দিয়ে দিয়েছেন।

কোনো মহান ব্যক্তিকে দূর থেকে ডাকা বেয়াদবি। চাই সে আহ্বান ঘরের বাইরে থেকে হোক অথবা অন্য কোথাও থেকে। যদি কোনো মহান ব্যক্তির কাছে আপনার প্রয়োজন থাকে, তাহলে তার কাছে গিয়ে আলাপ করবেন। সাধারণ মানুষের বেলায়ও এ আচরণ বেয়াদবির শামিল। যেমন, কোনো ছেলে তার পিতাকে এভাবে দূর থেকে ডাকল। অথবা কোনো লোক তার চেয়ে বড় কাউকে দূর থেকে ডাকাডাকি করল। এসবই বেয়াদবির শামিল। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপারে তো এ ধরনের বেয়াদবি আরও মারাত্মক। তাই কোরআন শরিফে এ পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন যে, দূর থেকে ডাকার পরিবর্তে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পাশে যাও। অতঃপর যা নিবেদন করার আছে, তা বিনীতভাবে ব্যক্ত কর। উলামায়ে কেরাম পবিত্র কোরআনের আয়াত থেকে এ মাসআলা উদ্ভাবন করেছেন যে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়া থেকে চলে যাওয়া সত্ত্বেও কবরে তিনি হায়াতুন্নবী। তাঁকে বিশেষ ধরনের জীবন দান করা হয়েছে। যেরূপ শহীদদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, তারা মরেন না। বরং তারা অমর। কিন্তু মানুষ তা অনুভব করতে পারে না। এমনিভাবে নবীদের ব্যাপারটি আরও উচ্চতর। তারাও অমর ও জীবিত। আল্লাহতায়ালা তাদের বিশেষ ধরনের জীবন দান করেছেন, যা আমরা অনুভব করতে পারি না। তাই আমাদের এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, যখন তোমরা রসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ‘রওজা আকদাসে’ যাবে, তখন ওখানে দাঁড়িয়ে বলবে, ‘আসসালাতু ওয়াসসালামু আলাইকা ইয়া রসুলাল্লাহ’ বলে তাঁকে সম্বোধন করে সালাম নিবেদন করবে। আর যখন রওজা পাক থেকে দূরে অবস্থান করবে, তখন এই বলে দরুদ পাঠ করবে; ‘আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মাদিন ওয়ালা আলি মুহাম্মাদ।’

সুতরাং উক্ত আয়াত শরিফের আলোকে বোঝা যায়, রওজা আতহার থেকে দূরে অবস্থানের সময় এভাবে বলা বৈধ নয়। কারণ, হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দূর থেকে ডাকা বেয়াদবি। এটা তাঁর সম্মান পরিপন্থী।

সুতরাং যেমনিভাবে তাঁর বাহ্যিক জীবদ্দশায় এই নির্দেশ ছিল যে, কোনো লোক তাঁকে সম্বোধন করতে চাইলে সে যেন তাঁর কাছে গিয়ে সম্বোধন করে, দূর থেকে যেন সম্বোধন না করে। এমনিভাবে তাঁর ওফাতের পরও যেহেতু তিনি কবর মোবারকে বিশেষ জীবন লাভ করেছেন, তাই ওখানেও এই  বিধান প্রযোজ্য হবে। কাছে গিয়ে ‘আস্সালাতু ওয়াস্সালামু আলাইকা ইয়া রসুলাল্লাহ’ বাক্য বলে সালাম পেশ করতে হবে। কিন্তু দূর থেকে সালাম পাঠাতে হলে দরুদ শরিফ পাঠ করুন। দূর থেকে উল্লিখিত বাক্যে সালাম বলা তাঁর সম্মান ও শিষ্টাচারবিরোধী।

লেখক : মুহতামিম, জামিয়া মদিনাতুল উলুম, পূর্ব নূরেরচালা ভাটারা, ঢাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *