মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মে দিবস
‘শ্রমিক-মালিক গড়ব দেশ; এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ’Ñ এই প্রতিপাদ্যে রাজপথে মিছিল ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও রাষ্ট্রীয়ভাবে সারাদেশে উদযাপন হয়েছে মহান মে দিবস। দিবসটি পালন উপলক্ষে সরকারি বিভিন্ন দফতরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে। গত ১ মে সকাল থেকেই রাজধানীর পুরানা পল্টন, জাতীয় প্রেসক্লাব, বিজয়নগর, মুক্তাঙ্গন, বায়তুল মোকাররম, দৈনিক বাংলা, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা, শাহবাগসহ বিভিন্ন স্থানে শ্রমিকরা সভা-সমাবেশ করেছেন। হাতে লাল পতাকা আর মাথায় লাল ফেটি বেঁধে এসব সমাবেশে যোগ দিয়েছেন শ্রমিকরা। ১৮৮৬ সালে আমোরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটের ম্যাসাকার শহীদদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে দিবসটি পালিত হয়। গানে গানেও তারা তাদের দাবি তুলে ধরেন। এ ছাড়া মুখে ছিল অধিকারের স্লোগান। এ সময় তাদের তুলে ধরা অধিকারগুলো মধ্যে রয়েছেÑ বাঁচার মতো মজুরি ও নিরাপদ কর্মস্থল। প্রায় সব সংগঠনের দাবিগুলোর মধ্যে এই দাবি রয়েছে প্রথমে।
মে দিবসের চেতনা মাথায় রেখেই দেশকে ধীরে ধীরে শিল্পায়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃঢ়-প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, শ্রমিক ভাই-বোনদের এটুকু বলব, আপনারা মে দিবসের চেতনা ধারণ করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করবেন। ভরসা রাখবেন, আমার রাজনীতি আপনাদের জন্য, আমি আছি আপনাদের সঙ্গে। ১ মে বিকেল ৪টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মে দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, মে দিবসের যে সংগ্রামী চেতনা, সেই চেতনা মাথায় রেখেই দেশকে আমরা ধীরে ধীরে শিল্পায়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব। বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ হবে। ২১ সালে সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত দেশ হবে, সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। শ্রমিকদের জন্য, বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমার থেকে অন্য কারও দরদ বেশি, এটা বিশ্বাস করি না। আওয়ামী লীগের রাজনীতি খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্যÑ এমনটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। শ্রমিকের বাসস্থানের নিশ্চিয়তার জন্য প্রতিটি কারখানায় আবাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
তিনি কোনো বিষয়ে শ্রমিকদের বিভ্রান্ত হতে মানা করে বলেন, আমি নিজেই তো আপনাদের অধিকার নিয়ে দরকষাকষি করি মালিকদের সঙ্গে। গার্মেন্ট শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতনের জন্য মালিকদের সঙ্গে আমিই শ্রমিকদের প্রতিনিধি হয়ে কথা বলেছি। আইএলও’র নীতি অনুসরণ করে শ্রমিক আইন এবং নীতিমালা করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, শ্রমিকের স্বার্থ রক্ষাই সরকারের কাজ। শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশের শ্রমিকদের বেতন যে হারে বাড়িয়েছে, সেই হারে বিশ্বের অন্য কোনো দেশের সরকার শ্রমিকদের বেতন বাড়াতে পারেনি। ১৯৯৬ সালে এসে দেখলাম শ্রমিকরা মাত্র ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি পেত। তখনই আমরা শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর ব্যবস্থা নেই। পরে শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো হয়েছে। কাজে ঢুকলেই তাদের বেতন প্রথমে ৩ হাজার, পরে ৫ হাজার ৩০০ টাকায় আনা হয়েছে। এটা কেউ ভাবতে পারেনি।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি ১ মে সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে জাতীয় শ্রমিক লীগ আয়োজিত এক সমাবেশে বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে উন্নয়নের মডেল হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। এতে শ্রমিকদের অবদান বেশি, তাদের শ্রম ও ঘামের বিনিময়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হচ্ছে।
স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সাল থেকেই বাংলাদেশে বিপুল উদ্দীপনা নিয়ে মে দিবস পালিত হচ্ছে। ওই বছরই সদ্য স্বাধীন দেশে পহেলা মে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়।