মুজিবনগর দিবস উদযাপিত
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ এগিয়ে নেওয়ার দৃঢ় অঙ্গীকার
উত্তরণ প্রতিবেদন : স্বাধীনতা-বিরোধী গণশত্রুদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নেওয়ার দৃঢ় অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে গত ১৭ এপ্রিল রাজধানীসহ সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় ও ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালিত হয়েছে। দেশের প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণ ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠের ৪৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে ঐতিহাসিক এ দিনটি স্মরণে রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি স্মৃতিবিজড়িত মেহেরপুরের মুজিবনগরের বৈদ্যনাথতলার আ¤্রকাননেও জাতীয়ভাবে পালিত হয় নানা কর্মসূচি। দিবসটি পালনে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে সর্বস্তরের জনতার ঢল নামে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে দলীয় প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শেখ হাসিনা। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ ও আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণ ত্যাগ করার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ সারিবদ্ধভাবে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সকাল সাড়ে ৭টায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বনানী কবরস্থানে শহীদ জাতীয় তিন নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ ও ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর কবরেও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। একই সময়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রাজশাহীতে আরেক শহীদ জাতীয় নেতা এএইচএম কামারুজ্জামানের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। এর আগে ভোর সাড়ে ৬টায় রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি শুরু হয়।
মুজিবনগরে জনসভা
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসে মুজিবনগরের আ¤্রকাননে গত ১৭ এপ্রিল আয়োজিত এক জনসভায় জাতীয় নেতৃবৃন্দ যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে বিএনপি-জামাতের ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করার জন্য মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিসহ জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। মুজিবনগরের শেখ হাসিনা মঞ্চে আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন দলের প্রবীণ নেতা শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এমপি। প্রধান বক্তা ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি। আমির হোসেন আমু বলেন, বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই যুদ্ধ করে জাতি স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে এনেছিল। কিন্তু দেশ স্বাধীন হলেও স্বাধীনতা-বিরোধীদের চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র থামেনি। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। বিএনপি-জামাত যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সকলকে সজাগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, স্বাধীনতা-বিরোধীদের এ দেশে কোনো জায়গা নেই। তাদের পাকিস্তানে পাঠানোর শপথই হবে মুজিবনগর দিবসের শপথ। মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বিএনপি-জামাত যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা আন্দোলনের নামে সারাদেশে পেট্রলবোমা হামলাসহ সহিংসতা চালিয়ে দেড়শ মানুষ হত্যা করেছে। এখন বিএনপি সংলাপের কথা বলছে। তাদের সাথে কোনো সংলাপ হবে না। নির্বাচনের জন্য ২০১৯ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আর ওই নির্বাচনেও জয়লাভ করবে আওয়ামী লীগ। খালেদা জিয়ার উদ্দেশে তিনি বলেন, সন্ত্রাসের পথ পরিহার করে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পথে থাকুন। কিন্তু আপনার নির্দেশে যদি দেশে আর কোনো সন্ত্রাসী কর্মকা- পরিচালিত হয়, তাহলে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি বলেন, মুজিবনগর সরকারই বাংলাদেশের প্রথম সরকার। অস্থায়ী নয়, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই মুজিবনগর সরকার প্রথম সরকার। তিনি বলেন, ইতিহাসকে নানাভাবে বিকৃত করা হচ্ছে। জনসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এমপি, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, জাতীয় সংসদের হুইপ সোলাইমান হক জোয়ার্দার সেলুন, এমএ খালেক, মকবুল হোসেন এমপি, সেলিনা আক্তার বানু এমপি।
দিবসটি উপলক্ষে এর আগে স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। পরে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের পর শেখ হাসিনা মঞ্চে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।