মুন্সিগঞ্জের নাটেশ্বর হবে নতুন পর্যটন কেন্দ্র
প্রাচীন বৌদ্ধনগরী পরিদর্শনে দুই মন্ত্রী
মুন্সিগঞ্জ তথা বিক্রমপুরে পর্যটন শিল্পের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মেচিত হচ্ছে। টঙ্গীবাড়ি উপজেলার নাটেশ্বরে মাটির নিচে আবিষ্কার হওয়া হাজার বছরের প্রাচীন বৌদ্ধমন্দির পরিদর্শন করে সরকারের দুই মন্ত্রী গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এমন আভাস দিয়েছেন। অতীশ দীপঙ্করের জন্মভিটার কাছাকাছি প্রাচীন সভ্যতা ঘিরে পর্যটন খাতে এই সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে এই খননে ইতোমধ্যেই আবিষ্কার হয়েছে প্রাচীন নানা দুর্লভ স্থাপনা। সবশেষে পাওয়া মন্দির কমপ্লেক্সটির চারদিকে ৪টি বড় হলঘর রয়েছে। এসব হলঘরে রয়েছে প্রায় স্তূপাকারে ১৬টি পিলার। আর মাঝে রয়েছে মূল মন্দিরের অংশবিশেষ। মন্দির কমপ্লেক্স থেকে প্রাপ্ত উপকরণ যুক্তরাষ্ট্রের বেটা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এতে নিশ্চিত হওয়া গেছেÑ এসব স্থাপনা হাজার বছরের প্রাচীন। অর্থাৎ প্রাপ্ত কাঠকয়লা পরীক্ষা করে দেখা গেছে এখানকার এই প্রতœস্থানে দুটি পর্যায়ের মানব বসতি ছিল। প্রথম পর্যায় ৭৮০-৯৫০ খ্রিস্টাব্দ এবং দ্বিতীয় পর্যায় ৯৫০-১২২৩ খ্রিস্টাব্দ। আবিষ্কৃত মৃৎপাত্রগুলো লাল এবং কালো শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে। মৃৎপাত্রের মধ্যে অধিকাংশ সঞ্চয় আধার, রান্নার হাঁড়ি, গামলা, পানির পাত্র, প্রদীপ প্রভৃতি। মৃৎপাত্রগুলো বিভিন্ন নকশায় পরিলক্ষিত হয়। ভাঙা মৃৎপাত্র অংশ থেকে গত জুন মাসে চীন থেকে আগত তিনজন মৃৎপাত্র বিশেষজ্ঞ প্রায় এক মাস কাজ করে ১০০ মৃৎপাত্র জোড়া লাগিয়েছেন। এগুলো ২৭ ফেব্রুয়ারি খনন স্থাপনের পাশেই প্রদর্শন করা হয়। এর আগে প্রাপ্ত দুর্লভ নৌকা এবং নানা মূর্তিও স্থান পায় এখানে। পরিদর্শন শেষে পুরাকীর্তির পাশের মঞ্চে আলোচনায় বক্তব্য রাখেনÑ বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সংস্কৃতি সচিব আক্তারী মমতাজ ও চীনা দূতাবাসের ডেপুটি মিশনপ্রধান ইয়াং সিচাও। প্রকল্প পরিচালক নূহ-উল-আলম লেনিনের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন খননকাজে নেতৃত্বদানকারী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতœতত্ত্ব \বিভাগের অধ্যাপক ড. সুফি মুস্তাফিজুর রহমান। পরে প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। এতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন দুই মন্ত্রী। পর্যটনমন্ত্রী বলেন, খননকাজ সম্পন্ন হলেই নাটেশ্বরকে পর্যটক উপযোগী করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশে পর্যটকের সংখ্যা আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে ১০ লাখে উন্নীত করা হবে। পর্যটন থেকে জিডিপি ২ থেকে ৪ শতাংশে উন্নীত করা হবে। তিনি বলেন, একজন পর্যটকের আগমনে ১১টি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। পর্যটক যেখানে গমন করেন, সেই স্থানটির অর্থনৈতিক কর্মকা- বিস্তৃত হয়। পর্যটনের বিভিন্ন দিক রয়েছে। এর মধ্যে ধর্মীয় তীর্থস্থান অন্যতম। তাই নাটেশ্বরের বৌদ্ধদের প্রাচীন তীর্থস্থানের স্থাপত্যটি ঘিরে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, সরকার নিয়ন্ত্রকের কাজ করছে, সুযোগ ও ক্ষেত্র তৈরি করছে, বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ, সহায়তা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে দেয়; আর ভালো কাজের সাথে স্বাধীনভাবে জনগণকে সম্পৃক্ত করেÑ তা হলেই সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে। বিভিন্ন সংগঠন ভালো কাজ করছে। সবার একটিই লক্ষ্য অসাম্প্রদায়িক, সংস্কৃতিমনস্ক ও উদার মুক্তচিন্তার বাংলাদেশ গড়ে তোলা। এই উদ্দেশে যারা কাজ করছেন, তারা সবাই আমাদের সহযাত্রী। তাদের নিয়েই আমরা অগ্রসর হতে চাই। আর সেরকম প্রতিষ্ঠান হচ্ছে অগ্রসর বিক্রমপুর ও ঐতিহ্য অনে¦ষণ। খননে নাটেশ্বরে যে প্রাচীন স্থাপত্য আবিষ্কার হয়েছে, তা বাংলাদেশের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে। এই সম্পদ সুরক্ষা এবং গবেষণাসহ যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে তার মন্ত্রণালয়।
গিরিশ চন্দ্র সেনের বাড়ি সংরক্ষণ কাজের উদ্বোধন
নরসিংদী সদর উপজেলার পাঁচদোনা গ্রামে পবিত্র কোরআন শরিফের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাংলা অনুবাদক ভাই গিরিশ চন্দ্র সেনের বাড়ির প্রতœতাত্ত্বিক সংরক্ষণ ও জাদুঘরের নির্মাণকাজ গত ১৬ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করা হয়েছে।
ভারতীয় হাইকমিশনের অর্থায়নে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ঐতিহ্য অন্বেষণ নামের একটি প্রতœতাত্ত্বিক গবেষণা কেন্দ্র বাড়িটি সংরক্ষণ ও জাদুঘর নির্মাণের এই কাজ করবে। প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী প্রধান অতিথি হয়ে এর উদ্বোধন করেন।
উত্তরাধিকারী না থাকায় সংস্কারের অভাবে গিরিশ চন্দ্রের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি নিশ্চিহ্ন হতে চলছিল। ২০০৮ সালে তৎকালীন ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বাড়িটি দেখে দুঃখ প্রকাশ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২৪ মে জেলা প্রশাসন ও ঐতিহ্য অন্বেষণের মধ্যে বাড়িটি সংরক্ষণ ও জাদুঘর নির্মাণের চুক্তি হয়। সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ও দিক-নির্দেশনায় ঐতিহ্য অন্বেষণ কাজ করবে। মূল অবকাঠামো অক্ষুণœ রেখে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বাড়িটি মেরামত ও সংরক্ষণ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ভারতীয় হাইকমিশন ঐতিহ্য অন্বেষণকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা অনুদান দিচ্ছে।
ঐতিহ্য অন্বেষণ সূত্রে জানা যায়, ভাই গিরিশ চন্দ্র সেন ১৮৩৪ সালের এপ্রিল-মে’র দিকে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯১০ সালের ১৫ আগস্ট তিনি ঢাকায় মারা যান।